আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+3 votes
1,064 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (8 points)
closed by
শরীয়তের বিধান তথা ফরয ওয়াজিব সুন্নত মাকরুহ মুবাহ ইত্যাদির ব্যখ্যা জানতে চাই!

........................................................................................................................................................................................................
closed

1 Answer

0 votes
by (714,480 points)
selected by
 
Best answer
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে বান্দার আমল সংক্রান্ত প্রদত্ত বিধানসমূহ আট প্রকার।

(১) ফরয, (২) ওয়াজিব, (৩) সুন্নত, (৪) মোস্তাহাব, (৫) হারাম, (৬) মাকরূহে তাহরীমী, (৭) মকরূহে তানযিহী, (৮) মোবাহ বা জায়েয।

ফরযের সংজ্ঞা ও হুকুম: যে কাজ আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে সুনিশ্চিতরূপে করার আদেশ করা হয়েছে তাকে ফরয বলে। যেমন: কালিমা, নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ্ব ইত্যাদি।

ফরয দুই প্রকার।
(১) ফরযে আইন
(২) ফরযে কিফায়া।

  • ফরযে আইন: যে কাজ প্রত্যেক বালেগ-বুদ্ধিমান নর-নারীর উপর সমভাবে ফরয তাকে ফরযে আইন বলে। যেমন- নামায পড়া, ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা ইত্যাদি।
  • ফরযে কিফায়া: যে কাজ কিছু লোক পালন করলে সকলেই গোনাহ হতে বেঁচে যায় তাকে ফরযে কিফায়া বলে, কিন্তু যদি কেউ পালন না করে তবে সকলেই ফরয তরকের জন্য গোনাহগার হবে। যেমন- জানাযার নামায পড়া, মৃত ব্যক্তিকে কাফন-দাফন করা ইত্যাদি। ফরয কাজ যে না করে তাকে ফাসিক বলা হয় এবং আখিরাতে সে শাস্তির উপযোগী হবে। ফরয অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যাবে।

ওয়াজিবের সংজ্ঞা ও হুকুম: শরীয়তের যে সকল হুকুম দলীলে যন্ত্রী দ্বারা সাব্যস্ত হয় সেগুলোকে ওয়াজিব বলা হয়। ওয়াজিব কাজ ফরযের মতই অবশ্য কর্তব্য। ফরয তরক করলে যেমন ফাসেক ও গুনাহগার হয়ে যায়, ওয়াজিব তরক করলে তেমনি ফাসেক হয়ে যায় এবং শাস্তির উপযুক্ত হয়, তবে পার্থক্য এতটুকু যে, ফরয অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যাবে, কিন্তু ওয়াজিব অস্বীকার করলে কাফের হবে না, ফাসেক হবে। যেমন- বেতেরের নামায, কোরবানী, ফিত্রা, ঈদের নামায ইত্যাদি।

সুন্নতের সংজ্ঞা ও হুকুম: যে কাজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা তাঁর সাহাবাগণ করেছেন তাকে 'সুন্নত' বলে। সুন্নত দুই প্রকার: (১) সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ (২) সুন্নতে গায়ের মুয়াক্কাদাহ।

সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এর সংজ্ঞা ও হুকুম: যে কাজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা তাঁর সাহাবাগণ সব সময় করেছেন, বিনা ওযরে কোন সময় ছাড়েননি তাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বলে, যেমন- আযান, ইকামত, খতনা, নেকাহ ইত্যাদি।

সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ আমলের দিক দিয়ে ওয়াজিবের মত, অর্থাৎ যদি কেউ বিনা ওযরে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ ছেড়ে দেয় অথবা ছেড়ে দেয়ার অভ্যাস করে, তবে সে ফাসেক ও গোনাহগার হবে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খাছ সাফায়াত হতে বঞ্চিত হবে। কিন্তু ওয়াজিব তরকের গোনাহ অপেক্ষা কম গোনাহ হবে এবং কখনও ওযরবশতঃ ছুটে গেলে তা কাযা করতে হবে না। ওয়াজিব ওযরবশতঃ ছুটে গেলে কাযা করতে হবে।

সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ-এর সংজ্ঞা ও হুকুম: যে কাজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা তার সাহাবাগণ করেছেন, কিন্তু ওযর ছাড়াও কোন কোন সময় ছেড়ে দিয়েছেন, তাকে সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ বা সুন্নতে যায়েদাহ বলে। এটা করলে সওয়াব আছে, কিন্তু না করলে গুনাহ নেই।

মুস্তাহাবের সংজ্ঞা ও হুকুমঃ যে কাজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তাঁর সাহাবাগণ কোন কোন সময় করেছেন সর্বদা করেননি তাকে 'মুস্তাহাব' বলে। এটা করলে সওয়াব আছে না করলে গোনাহ নেই। মুস্তাহাবকে নফল বা মন্দুবও বলা হয়।

হারামের সংজ্ঞা ও হুকুম: যা দলীলে কেতয়ী দ্বারা হারাম বলে প্রমাণিত। হারাম ফরযের বিপরীত। যদি কেউ হারাম কাজ অস্বীকার করে অর্থাৎ যদি কেউ হারাম কাজকে হালাল এবং জায়েয মনে করে তবে সে কাফের হবে। আর যদি বিনা ওযরে হারাম কাজ করে কিন্তু অস্বীকার না করে, অর্থাৎ হারামকে হালাল মনে না করে তবে সে কাফের হবে না, বরং ফাসেক হবে এবং শাস্তির উপযুক্ত হবে। হারাম কাজ, যথা-যিনা, চুরি, ডাকাতি, মিথ্যা বলা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, ইলমে দ্বীন শিক্ষা না করা, নামায না পড়া, যাকাত না দেওয়া, রোযা না রাখা, হজ্জ না করা ইত্যাদি।

মাকরূহে তাহরীমীর সংজ্ঞা ও হুকুম: মাকরূহে তাহীরমী ওয়াজিবের বিপরীত। মাকরূহে তাহরীমী অস্বীকার করলে কাফের হবে না, ফাসেক হবে। যদি কেউ বিনা ওযরে মাকরূহে তাহরীমী কাজ করে, তবে সে ফাসেক হবে এবং আযাবের উপযুক্ত হবে।

মাকরূহে তানযীহীর সংজ্ঞা ও হুকুম: যে কাজ মাকরূহে তানযীহী তা না করলে সওয়াব আছে, করলে গোনাহ নেই।

মোবাহ বা জায়েয-এর সংজ্ঞা ও হুকুম: আল্লাহ তা'আলা মানুষকে যে কাজ করা বা না করার এখতিয়ার দান করেছেন তাকে মোবাহ বলে। যথা-মাছ-গোস্ত খাওয়া, দেশ ভ্রমণ করা, আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টি দর্শন করা ইত্যাদি।

ফরয এবং ওয়াজিবের মধ্যে পার্থক্যঃ
ইমাম আযম রহ. (শরয়ী) বিধানের জন্য ফরয এবং সুন্নতের মধ্যবর্তী আরও একটি স্তর নির্ধারণ করেছেন, যাকে 'ওয়াজিব' বলে। ওয়াজিবের মর্যাদা ফরয ও সুন্নত থেকে ভিন্ন। ওয়াজিবের মর্যাদা ফরযের নিচে এবং সুন্নতের উর্ধে। কিন্তু অন্য ইমামগণ ফরয ও সুন্নতের মধ্যবর্তী তৃতীয় কোনো শ্রেণি মানেন না। অবশ্য অন্যান্য ইমামের ব্যবহারেও ওয়াজিব শব্দ পাওয়া যায়। কিন্তু তাঁরা ওয়াজিব শব্দ ফরয-অর্থে ব্যবহার করে থাকেন।

ইমাম আযম রহ. নামাযের কাজগুলোর কয়েকটিকে ফরয, কয়েকটিকে ওয়াজিব আর কয়েকটিকে সুন্নত ও মুস্তাহাব বলেন। তার দৃষ্টিতে ফরয ছাড়লে নামায বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু ভুলে ওয়াজিব ছেড়ে দিলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। সাহু সিজদা করলে নামায ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু সাহু সিজদা যদি না করে অথবা ইচ্ছা করে কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দেয়, তা হলে নামায পুনরায় পড়া ওয়াজিব হবে। (সুন্নত অথবা মুস্তাহাব ইচ্ছায় কিংবা ভুলে ছেড়ে দিলে যদিও নামাযে কমতি হয়, কিন্তু মূল নামায ঠিকই থাকে, সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না।) অন্য ইমামগণ যদিও ওয়াজিব নামে ভিন্ন কোনো শ্রেণি মনেন না, কিন্তু নামাযের অনেক কাজ এমন বলে স্বীকার করেন, যা আদায় না করলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার রায় প্রদান করেন। এ কাজগুলোর কিছুকে তারা ওয়াজিব মানে ফরয আর কিছুকে সুন্নত গণ্য করেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...