ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/4573/ নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি
যে,
মিথ্যা কথা বলা শরীয়ত অনুমোদিত নয়।
নিঃসন্দেহে মিথ্যা বলা হারাম। শরিয়তে সত্যকে সর্বত্রই উৎসাহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সত্য মুক্তি
দেয়, মিথ্যা ধ্বংস আনে। যদিও শরয়ী কিছু ওযরের
কারনে বিশেষ শর্তসাপেক্ষে তা বৈধ।
তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে সত্য বলাই
শরিয়তের মৌল দর্শনের দাবি।
,
পবিত্র কুরআন শরিফে এসেছে
لَّعْنَتَ
اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ
তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি
যারা মিথ্যাবাদী। {সূর আলেইমরান-৬১}
,
হাদিস শরিফে এসেছে,
সাফওয়ান ইবন সুলাইম বলেন,
قِيلَ
لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ : أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ جَبَانًا ؟ فَقَالَ: ( نَعَمْ ) ،
فَقِيلَ لَهُ: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ بَخِيلًا؟ فَقَالَ: ( نَعَمْ ) ، فَقِيلَ
لَهُ: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ كَذَّابًا ؟ فَقَالَ: ( لَا )
রসুলুল্লাহ ﷺ -কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি কাপুরুষ হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস
করা হয়েছে, মুমিন কি কৃপণ হতে পারে। তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস
করা হয়েছে, মুমিন কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন, না। (মুয়াত্তা
মালিক ২/৯৯০) অর্থাৎ মুমিনের বিভিন্ন চারিত্রিক ত্রুটি থাকতে পারে, তবু সে মিথ্যা
বলতে পারে না।
,
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
«مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا»
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। {মুসান্নাফ ইবনে
আবী শাইবা, হাদীস নং-২৩১৪৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৫৮৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৯০৫}
,
আবুল ফরয ইবনুল জাওযী রাহ বলেনঃ
ﻭﺿﺎﺑﻄﻪ
ﺃﻥ ﻛﻞ ﻣﻘﺼﻮﺩ ﻣﺤﻤﻮﺩ ﻻ ﻳﻤﻜﻦ ﺍﻟﺘﻮﺻﻞ ﺇﻟﻴﻪ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻜﺬﺏ، ﻓﻬﻮ ﻣﺒﺎﺡ ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻤﻘﺼﻮﺩ ﻣﺒﺎﺣﺎ، ﻭﺇﻥ
ﻛﺎﻥ ﻭﺍﺟﺒﺎ، ﻓﻬﻮ ﻭﺍﺟﺐ
প্রত্যেক ঐ ভালো উদ্দেশ্য যে পর্যন্ত
মিথ্যার আশ্রয় ব্যতীত পৌছা প্রায় অসম্ভব, সেখানে মিথ্যা
বলা বৈধ। মাকসাদ (উদ্দেশ্য) মুবাহ হলে, মিথ্যা বলা মুবাহ। মাকসাদ ওয়াজিব হলে মিথ্যা বলা ওয়াজিব (ফাতাওয়া দারাল ইফতা আল-মিছরিয়্যাহ)
,
★ব্যাখ্যাঃ
কোন সৎ উদ্দেশ্য যদি মিথ্যার আশ্রয় ব্যতিরেকে সাধন
সম্ভবপর হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া বৈধ নয়। পক্ষান্তরে সে
সৎ উদ্দেশ্য যদি মিথ্যা বলা ছাড়া সাধন সম্ভব না হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে মিথ্যা
বলা বৈধ। পরন্তু যদি বাঞ্ছিত লক্ষ্য বৈধ পর্যায়ের হয়, তাহলে মিথ্যা
বলা বৈধ হবে।
আর যদি অভীষ্ট লক্ষ্য ওয়াজেবের পর্যায়ভুক্ত
হয়, তাহলে তা অর্জনের জন্য মিথ্যা বলাও ওয়াজেব হবে। যেমন কোন মুসলিম
এমন অত্যাচারী থেকে আত্মগোপন করেছে, যে তাকে হত্যা করতে চায় অথবা তার মাল-ধন ছিনিয়ে নিতে চায় এবং
সে তা লুকিয়ে রেখেছে। এখন যদি কেউ তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয় [যে তার ঠিকানা জানে], তাহলে সে ক্ষেত্রে
তাকে গোপন [ও নিরাপদ] রাখার জন্য তার পক্ষে মিথ্যা বলা ওয়াজেব।
,
অনুরূপভাবে যদি কারো নিকট অপরের
আমানত থাকে, আর কোন জালেম যদি তা বলপূর্বক ছিনিয়ে নিতে চায়, তাহলে তা গোপন
করার জন্য মিথ্যা বলা ওয়াজেব। অবশ্য এ সমস্ত বিষয়ে সরাসরি স্পষ্টাক্ষরে মিথ্যা না বলে
‘তাওরিয়াহ’ করার পদ্ধতি অবলম্বন করাই উত্তম।
তাওরিয়াহ’ হল এমন বাক্য ব্যবহার
করা, যার অর্থ ও উদ্দেশ্য শুদ্ধ তথা তাতে সে মিথ্যাবাদী নয়; যদিও বাহ্যিক
শব্দার্থে এবং সম্বোধিত ব্যক্তির বুঝ মতে সে মিথ্যাবাদী হয়।
,
হযরত আসমা বিনতে ইয়াযিদ রাঃ থেকে
বর্ণিত,
ﻋَﻦْ ﺃَﺳْﻤَﺎﺀَ ﺑِﻨْﺖِ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ
ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ( ﻟَﺎ ﻳَﺤِﻞُّ
ﺍﻟْﻜَﺬِﺏُ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺛَﻠَﺎﺙٍ : ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗَﻪُ ﻟِﻴُﺮْﺿِﻴَﻬَﺎ ، ﻭَﺍﻟْﻜَﺬِﺏُ
ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﺮْﺏِ ، ﻭَﺍﻟْﻜَﺬِﺏُ ﻟِﻴُﺼْﻠِﺢَ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ)
তরজমাঃ নবীজী সাঃ বলেনঃ তিনস্থান
ব্যতীত অন্য কোথাও মিথ্যা বলা জায়েয নয়, ১/স্ত্রীর সাথে ভালবাসার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে। ২/যুদ্ধের
ময়দানে কাফিরের সাথে যুদ্ধ বিষয়ে। ৩/দু-ভাইয়ের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করতে। (তিরমিযি-১৯৩৯,আবু-দাউদ-৪৯২১)
,
আরো জানুনঃ
https://www.ifatwa.info/644
,
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!
,
আপনি প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাওরিয়াহ
করে বলবেন। ‘তাওরিয়াহ’ হল এমন বাক্য ব্যবহার করা, যার অর্থ ও উদ্দেশ্য
শুদ্ধ তথা তাতে সে মিথ্যাবাদী নয়;
যদিও বাহ্যিক শব্দার্থে এবং সম্বোধিত ব্যক্তির বুঝ মতে সে মিথ্যাবাদী
হয়।
যেহেতু ফোনটি স্বামী কিনে
দিয়েছে এবং তিনিও মাঝে মধ্যে ব্যবহার করবেন। তাই এভাবে বলা যাবে।