আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
39 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (54 points)

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি ভালো আছেন। 
 

১) কুফরে আকবার ও কুফরে আসগার কিভাবে নির্ধারিত হয়? মানে কোরআন ও হাদীসে এ সম্পর্কে লেখা আছে যে এটিই কুফরে আকবার বা কুফরে আসগার। বা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যপারে কি বলে গিয়েছিলেন?

 

২) একটি বইয়ে লেখা আছে কুফরে আসগার দ্বারা সে সমস্ত কবিরা গুনাহকে বোঝানো হয় যেগুলোকে কুরআন ও সুন্নাহতে কুফর বলা হয়েছে। এই প্রকারের কুফর মানুষকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে না। যেমন এক মুসলিম অপর মুসলমানের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। এখন কুরআন ও সুন্নাহতে যা কুফর বলা হয়েছে তাও যদি বড় কুফর না হয় তবে বড় কুফর কিভাবে নির্ধারিত হয়।  


 

৩) আমাকে একজন বলেছেন বৃদ্ধ মহিলাদের পর্দা করতে হয় না। তিনির বয়স ৮০+।  এ সম্পর্কে কোরআন হাদিসের আলোকে বললে উপকৃত হতাম। 

 

৪) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ  বৃদ্ধ অবস্থায় পর্দা ও মাহরাম ও গায়রে মাহরাম মানার ব্যাপারে কি রককম ছিলেন?


 

জাযাকাল্লাহু খাইরান

1 Answer

0 votes
by (616,290 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

কুফরে আকবর (বড় কুফরী) তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলাম হতে বহিষ্কার করে ফেলে, যাকে ‘কুফরে ই’তিকাদী’ (বিশ্বাসগত কুফরী)ও বলা হয়। এই কুফরী বহু প্রকার, তন্মধ্যে কিছু নিম্নরূপঃ

১। মিথ্যায়নের কুফর। আর তা হল কুরআন (সহীহ) হাদীস অথবা উভয়ে বর্ণিত কিছু বিষয়কে মিথ্যাজ্ঞান করা। এর দলীল আল্লাহ তাআলার এই বাণী,

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِالْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُ ۚ أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْكَافِرِينَ

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে অথবা তার নিকটে আগত সত্যকে মিথ্যাজ্ঞান করে তার অপেক্ষা অধিক সীমালংঘনকারী আর কে? কাফেরদের আশ্রয়স্থল জাহান্নামে নয় কি? (সূরা আনকাবুত ৬৮ আয়াত)

তিনি আরো বলেন, (أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ) অর্থাৎ, তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস (ঈমান) রাখবে এবং কিছু অংশে অবিশ্বাস (কুফরী) করবে? (সূরা বাক্বারাহ ৮৫ আয়াত)।

২। সত্যজ্ঞান সত্ত্বেও প্রত্যাখ্যান এবং ঔদ্ধত্য প্রকাশ করার কফ। আর তা হল সত্য স্বীকার করা সত্ত্বেও তার অনুবর্তী না হওয়া; যেমন ইবলিসের কুফর। এর দলীল আল্লাহ তাআলার এই বাণী,

وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ

অর্থাৎ, আর স্মরণ কর, যখন আমি ফিরিস্তাবর্গকে বললাম যে, তোমরা আদমকে সিজদা কর। তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদাবনত হল। সে অস্বীকার করল এবং ঔদ্ধত্য প্রকাশ করল। আর সে ছিল কাফেরদের দলভুক্ত। (সূরা বাকারাহ ৩৪ আয়াত)

৩৷ কিয়ামত দিবসের ব্যাপারে সন্দেহ ও সংশয় করার, অথবা ঐ দিবসকে অস্বীকার ও অসত্যজ্ঞান করার কুফর। এর দলীল আল্লাহ তাআলার এই বাণী,

وَمَا أَظُنُّ السَّاعَةَ قَائِمَةً وَلَئِن رُّدِدتُّ إِلَىٰ رَبِّي لَأَجِدَنَّ خَيْرًا مِّنْهَا مُنقَلَبًا * قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ سَوَّاكَ رَجُلًا

অর্থাৎ, (দুই বাগান-মালিকের একজন বলল, আমি মনে করি না যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর আমার প্রতিপালকের প্রতি যদি আমাকে প্রত্যাবৃত্ত হতেই হয়, তবে নিশ্চয়ই আমি এ অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্থান পাব।” বাদানুবাদের সাথে তার সঙ্গী তাকে বলল, তুমি কি তাকে অস্বীকার করছ যিনি তোমাকে মাটি হতে ও পরে শুক্র বিন্দু হতে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর তোমাকে সুন্দর মনুষ্য-আকৃতি দান করেছেন? (সূরা কাহফ ৩৬-৩৭ আয়াত)

৪। বৈমুখ হওয়ার কুফর। আর তা হল ইসলামের অভীষ্ট বিষয় থেকে। বৈমুখ্য প্রকাশ করা ও তা বিশ্বাস না করা। এর দলীল আল্লাহর এই বাণী,

وَالَّذِينَ كَفَرُوا عَمَّا أُنذِرُوا مُعْرِضُونَ

অর্থাৎ, কিন্তু কাফেরদেরকে যে বিষয়ে সাবধান করা হয়েছে তা হতে তারা (অবজ্ঞাভরে) মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আহক্বাফ ৩ আয়াত)

৫৷ নিফাক (মুনাফেকী বা কপটতা)র কুফর। আর তা হল, মুখে ইসলাম প্রকাশ করা (বাহ্যতঃ মুসলিম বলে দাবী করা) এবং অন্তর ও আমলে। (কার্যতঃ) তার বৈপরীত্য করা।

ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ آمَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا فَطُبِعَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُونَ

অর্থাৎ, তা এই জন্য যে, ওরা ঈমান আনার পর কুফরী (মুনাফেকী) করেছে, ফলে ওদের অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছে তাই তারা বুঝে না। (সূরা মুনাফিকূন ৩ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ

অর্থাৎ, মানুষের মধ্যে এমন কতক লোক রয়েছে যারা (মুখে) বলে আমরা আল্লাহ ও পরকালে ঈমান এনেছি অথচ (প্রকৃতপক্ষে) তারা মুমিন নয়। (সূরা বাক্বারাহ ৮ আয়াত)

৬। অস্বীকার ও অগ্রাহ্য করার কর। আর তা হল, দ্বীনের সর্বজন -বিদিত কোন বিষয় যেমন ঈমান অথবা ইসলামের কোন রুকনকে অস্বীকার করা। তদনুরূপ যে ব্যক্তি নামায ফরয হওয়াকে অস্বীকার ও অগ্রাহ্য করে তা ত্যাগ করে সে কাফের এবং ইসলামী গন্ডির বহির্ভুত হয়ে যায়।

তদনুরূপ সেই বিচারপতি যে আল্লাহর বিচার ও সমাধানকে অস্বীকার করে সেও কাফের। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ

অর্থাৎ, এবং আল্লাহর অবতীর্ণ আইনানুসারে যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফের। (সূরা মায়েদাহ ৪৪ আয়াত)

ইবনে আব্বাস বলেন, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা যে অস্বীকার করে সে অবশ্যই কাফের হয়ে যায়।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(১-২)
কুফরী দুই প্রকার।

ক. কুফরে আকবার : যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘কুফরে আকবার হ’ল আল্লাহ ও রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন না করা অথবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করা বা সংশয় রাখা অথবা আল্লাহ কিংবা রাসূল (ছাঃ)-কে অস্বীকার করা’।
(মাজমু‘ ফাতাওয়া ১২/৩৩৫ পৃ.।)

খ. কুফরে আছগার : যা দ্বীন ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ- ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী ও পরস্পরে যুদ্ধ করা কুফরী’।
(বুখারী হা/৪৮; মুসলিম হা/৬৪; মিশকাত হা/৪৮১৪।)

এই কুফরী অর্থ মহাপাপ। যা তওবা ব্যতীত মাফ হয় না।

এটাই হলো বড় কুফর আর ছোট কুফর নির্ধারনের মূলনীতি।  

(০৩)
সকল নারীই ঢেকে রাখার বস্তু।  তবে অতি বৃদ্ধা মহিলার জন্য পর্দা ফরয নয়। সে বেগানা পুরুষকে দেখা দিতে পারে। তবে শর্ত হলো, সে যেন সাজসজ্জা গ্রহণ করে বের না হয়।
অন্য কেউ আকৃষ্ট হয়,এমন পোশাকে বের হওয়া যাবেনা,সুগন্ধি দিয়ে বের হওয়া যাবেনা।

তবে তাক্বওয়াবান নারীর জন্য সকল বয়সেই পর্দা মেনে চলা উচিত।
এটাই তাক্বওয়ার চাহিদা।

এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ- 

(০৪)
তারা তাকওয়ার দৃষ্টিকোন থেকে গায়রে মাহরামদের সামনে পর্দা করেছেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...