জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কুরআনের কোনো আয়াত,মহান আল্লাহর নাম,রাসুলুল্লাহ সাঃ, হাদীস, ও শরীয়তের কোনো জরুরি বিধান নিয়ে হাসি ঠাট্রা,গালি গালাজ করলে ঈমান চলে যায়।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ أَبِاللهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُوْلِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُوْنَ، لاَ تَعْتَذِرُوْا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيْمَانِكُمْ
‘আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে তাঁর হুকুম-আহকামের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, ঈমান আনার পর তোমরা যে কাফির হয়ে গেছ’ (তওবা ৬৫-৬৬)।
فَنَذَرُ الَّذِيْنَ لاَ يَرْجُوْنَ لِقَاءَنَا فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ
‘সুতরাং যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে ব্যতিব্যস্ত করে রাখি’ (ইউনুস ১১)।
এ ধরনের লোকদের সাথে উঠাবসা, চলাফেরা ত্যাগ করতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা উক্ত আচরণ পরিত্যাগ না করে।
وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلاَ تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتَّى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِثْلُهُمْ إِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا-
‘আর কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারী করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহর আয়াত সমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রূপ করতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে। অন্যথা তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদেরকে জাহান্নামে একই জায়গায় সমবেত করবেন’ (নিসা ১৪০)।
আরো জানুনঃ-
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(১-২)
হ্যাঁ, প্রশ্নে উল্লেখিত ব্যাক্তির ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ আছে।
খালেস দিলে তওবা করে ফিরে আসলে উক্ত ব্যাক্তিকে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দিবেন,ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
قُلۡ یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِہِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِیۡعًا ؕ اِنَّہٗ ہُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ﴿۵۳﴾
বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ; আল্লাহ্র অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(সুরা যুমার ৫৩)
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧] وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا [٤:١٨
অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী,রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে,এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়,তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। {সূরা নিসা-১৭-১৮}
عَنْ أَبِي عُبَيْدَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ»
হযরত ইবাদা বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, গোনাহ থেকে তওবাকারী গোনাহ করে নাই ব্যক্তির মত হয়ে যায়। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২৫০]
তওবা তিনটি জিনিসের সমন্বয়-
(বান্দার হক থাকলে আগে সেটি আদায় করে আসতে হবে,বা তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে আসতে হবে।)
এক. পূর্বের গোনাহের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া। আর অপরের হক নষ্ট করলে তা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া বা মাফ চেয়ে নেওয়া।
দুই. ভবিষ্যতে গোনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা।
তিন. আল্লাহ্ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।
★সুতরাং উপরোক্ত তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে এক্ষেত্রে খালেস দিলে তওবা করতে হবে।
(০৩)
হ্যাঁ,ঈমান নবায়ন হবে।
(০৪)
হ্যাঁ, তিনি জান্নাতে যেতে পারবেন।
তার গুনাহ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা না করলে কিছুকালের জন্য তাকে জাহান্নামে যেতে হবে।
কৃতকর্মের শাস্তি ভোগের পর পরবর্তীতে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবেই।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ ” يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ شَعِيرَةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ بُرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ ”. قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ قَالَ أَبَانُ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ حَدَّثَنَا أَنَسٌ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم ” مِنْ إِيمَانٍ ”. مَكَانَ ” مِنْ خَيْرٍ ”
আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও পুণ্য বিদ্যমান থাকবে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি গম পরিমাণও পুণ্য বিদ্যমান থাকবে তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকী থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।
আবূ ‘আবদুল্লাহ বলেন, আবান (রহ.) বর্ণনা করেছেন, আনাস (রাযি.) হতে এবং তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে নেকী -এর স্থলে ‘ঈমান’ শব্দটি রিওয়ায়াত করেছেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৯৩]
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ يُعَذَّبُ نَاسٌ مِنْ أَهْلِ التَّوْحِيدِ فِي النَّارِ حَتَّى يَكُونُوا فِيهَا حُمَمًا ثُمَّ تُدْرِكُهُمُ الرَّحْمَةُ فَيُخْرَجُونَ وَيُطْرَحُونَ عَلَى أَبْوَابِ الْجَنَّةِ . قَالَ فَيَرُشُّ عَلَيْهِمْ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْمَاءَ فَيَنْبُتُونَ كَمَا يَنْبُتُ الْغُثَاءُ فِي حِمَالَةِ السَّيْلِ ثُمَّ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ
জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিছু তাওহীদবাদী লোককেও জাহান্নামের শাস্তি প্রদান করা হবে। এমনকি তারা তাতে পুড়তে পুড়তে কয়লার মতো হয়ে যাবে। তারপর আল্লাহ তা’আলার রহমতে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং জান্নাতের দরজায় নিক্ষেপ করা হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতে বসবাসকারীরা তাদের উপর পানি ছিটিয়ে দিবে। যার ফলে তারা সজীব হয়ে যাবে যেমনটি বন্যার স্রোত চলে যাবার পর মাটিতে উদ্ভিদ গজায়। তারপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। [জামে তিরমিজী, হাদীস নং-২৫৯৭]
হাদীসটি সহীহ।
وأهل الكبائر من أمة محمد صلى الله عليه وسلم فى النار لا يخلدون إذا ماتوا وهم موحدون….. وإن شاء عذبهم فى النار بعد له، ثم يخرجهم منها برحمته وشفاعة الشافعين من أهل طاعته، ثم يبعثهم إلى جنته (شرح العقيدة الطواوية، دار الكتب العلمية0369-370(
উম্মতে মুহাম্মদীর মাঝে কবীরা গোনাহকারীরা জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে না যদি মৃত্যুর সময় একত্ববাদে বিশ্বাসী থাকে। আল্লাহ চাইলে তাদের শাস্তি প্রদান করবেন। তারপর আল্লাহর রহমাত এবং আল্লাহর আনুগত্যশীল সুপারিশকারীগণের সুপারিশের ভিত্তিতে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। তারপর তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। [শরহুল আকীদাতিত তাহাবিয়্যাহ৩৬৯-৩৭০]