আসসালামু আলাইকুম
সম্মানিত উস্তাজ,
১/
আমি (অবিবাহিত) গতকাল ফজরের পর ঘুমানোর পর স্বপ্ন দেখি যে আমার বাসায় অনেক মেহমান এসেছে। সবটা স্পষ্ট নয়, তবে এতটুকু স্পষ্ট মনে আছে যে আমি দেখি যে আমার বিয়ে হয়েছে গিয়েছে আগেই এবং আমি কাউকে জিজ্ঞেস করছি আমার স্বামী কই। পরে দেখি স্বামীর ৪ চাচা এবং তার বাবা এসেছেন। পরে দেখলাম আমি আমার বাসায় পড়ার বোরকা পড়ে স্বামীর সামনে গেলাম এবং সে আমায় আমাদের বাসার টেবিলে কোরআন পড়ে শোনাচ্ছে, মনে হলো সে আমায় কোরআন শিখাচ্ছেন , আরবি পড়ছেন এবং অর্থ বলছেন। একজায়গায় তিলাওয়াত একটু ভুল হলে আবার ঠিক করে পড়লেন। আমি সামনে বলে শুনছি সবটা। যদিও তিলাওয়াত কি করছিলেন বা আয়াত স্পষ্ট নয়।
এ স্বপ্নের কি কোনো ব্যাখা আছে উস্তাজ?
২/
উস্তাজ, আমি কয়েকবার ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছি। যেমন আজ স্বপ্নে দেখি আমি আমার বাসার ছাদে এবং আকাশ থেকে বিদ্যুৎ চমকিয়ে আগুনসহ মেঘের টুকরো আমাদের ছাদে পড়ে, আমি সাথে সাথে সরে যাই ছাদের বাথরুমে লুকায় থাকি আর আয়াতুল কুরসি পড়তে থাকি। ওই মেঘের পোড়া ধোয়া থেকে বাঁচার চেষ্টা করি। পরে দেখি রাতে আমি একা ঘুমাই আর কেউ আমাকে মায়ের রূপে দরজা খুলতে ডাকে কিন্তু আমি রুমে ঢুকেই জোরে জোরে সূরা ফাতিহা, তিন কুল, আয়াতুল কুরসি পড়ছিলাম, ওই ডাক শুনে দরজা না খুলে তিলাওয়াত করতেই থাকি, সেটা আবার জানালা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে আর আমি দ্রুত জানালা তিলাওয়াত করতে করতে লাগায় দিই। তারপর জোরে জোরে তিলাওয়াত করতে থাকি, ঘুমের মধ্যে মনে হয় আমার গলা ব্যথা হয়ে যাচ্ছিলো। পরে ভয় পাওয়া অবস্থায় ঘুম ভেঙে যায়।
এরকম স্বপ্ন এর আগেও দেখেছি উস্তাজ, যে, কোনো একটা কিছু ক্ষতি করার চেষ্টা করছ বা ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। আর কোনো না কোনোভাবে আমার ঘুম ভেঙে যায় ভয় পেয়ে নাহয় আমি পালাতে থাকি এবং একসময় ঘুম ভাঙে নাহয় আমার কাছে আসলেও ক্ষতি করতে পারেনা ওসব কোনোভাবে।
একবার এমন স্বপ্ন দেখি যে কোনো একটা বাচ্চা মেয়েকে আমি আয়াতুল কুরসি পড়ে ফু দিয়ে দিচ্ছি আর একটা কালো কিছু চিৎকার দিয়ে ওই মেয়ের থেকে আমার ভেতর ঢুকতে নেয়, কিন্তু কোনোভাবেই ঢুকতে পারেনা, আর তিলাওয়াত করতে করতে আমার ঘুম ভেঙে যায় আর আমি ভয়ে কাঁদতে থাকি।
আর অনেকবার এমন হয় যে আমি চিৎকার দিয়ে উঠি কিন্তু মনে থাকে না যে কি দেখলাম।
এরকম কেনো হচ্ছে উস্তাজ, এগুলা থেকে বাঁচবো কিভাবে?
২/
উস্তাজ,
আমি গতবছর এই সময়ে জেনারেল পড়াশোনা ছেড়ে দিই আলহামদুলিল্লাহ, পরিবার কোনো জোর জবরদস্তি করেনি এ বিষয়ে।
আমার হয়তো জাদুর সমস্যা আছে, আমি রুকিয়াহ করলেও একটানা না করতে পারায় এ বিষয়ে শেফা আসেনি এখনও। এই জাদুর সমস্যাটাও একটা করণ হতে পারে বার বার দ্বীন থেকে বিমুখ হওয়া বা পড়াশোনায় অমনোযোগী হওয়ার ক্ষেত্রে।
আবার ইদানীং আমার কাছে মনে হয় আসলে এরকম কিছুই না। মনে হয় যে এটা আমার মানসিক সমস্যা যার ফলে বার বার আমি নিজেকে রোগী বা জাদু আক্রান্ত ভাবছি। যদিও কিছু লক্ষণ দেখা যায় ( যেমন- মাঝে মাঝে রাতে ভয়ে কাদি বা চিৎকার করি।) কিন্তু আমি কিছুতেই রুকিয়াহ দৃঢ়ভবে একটানা অনেকদিন করে যেতে পারিনা। আর একটা রুকিয়াহ সেন্টারে গিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে সেখানে সামর্থ্যের বাইরে খরচ পড়বে দেখে দ্বিতীয় বার আর যেতে পারিনি।
আবার মনে হয় আমার গুনাহের জন্য সব হচ্ছে।
আমি কয়েকদিন দ্বীন মানি, স্বাভাবিক থাকি, সব কাজ ঠিকঠাক করি। তারপর আবার কয়েক দিন কি যেনো হয় চরম হতাচ হয়ে যাই, গুনাহে ডুবে যাই, কোনো কাজ পড়াশোনা একদমই করিনা, অনেক কাদি, নিজের ওপর ঘৃণা হয়। তারপর আবার স্বাভাবিক হয়ে যাই, তারপর কদিন গেলে আবার আগের মতো হয়....এমনই চলছে কয়েকবছর ধরে।
ফরজ সুন্নত বা যেকোনো কাজ ই, ভালো বা খারাপ বা যেকোনো কাজ একটানা করতে পারিনা,,,,
যখন স্বাভাবিক থাকি তখন দৃঢ় ভাবে করলেও,,কদিন পর সারাদিন শুধু শুয়ে বসে থাকি, কাদি, সময় নষ্ট করি, কিচ্ছু করিনা।
গত সপ্তাহে হিজামা করাই সমস্যার জন্য, তখন হিজামার আপু বলেন আমার নাকি জাদুর সমস্যা আছে এবং অনেক পুরোনো।
এ বিষয়টা থেকে কিভাবে আমি মুক্তি পাবো উস্তাজ?
৩/ আর আরেকটা বিষয় উস্তাজ,
আমি জেনারেল ছাড়ার পর ভেবেছিলাম অনলাইনে দ্বীন নিয়ে পড়বো, কিন্তু সেটাও ধরে রাখতে পারিনি। কোনো কিছুই ধরে রাখতে পারছিনা। ফলে সারাদিনে ঘরে বসে থাকাটা নারী হিসেবে আমার জন্য একটা বিরাট নিয়ামত ও সুযোগ হলেও আমি এটাকে কাজে লাগাতে পারছিনা।
স্বাভাবিক অবস্থায় সারাদিন রান্না ও ঘর সাফ করি আর গাফেল সময় কাটাই বেশিরভাগ। সকালে ঘুম থেকে উঠি দেরীতে, কোনোমতে শুধু ফরজ নামাজ পড়ি, প্রায়ই তাও মিস হয়ে যায় গাফলতির জন্য।
ইদানীং এটা ভেবে অনেক হতাশ হচ্ছি যে জেনারেল পড়াশোনায় থাকলে অন্তত খারাপ কাজগুলা বা গাফলতি তো কম হতো আল্লাহ চাইলে। খুব কনফিউশান এ ভুগছি।
আবার মা বৃদ্ধা, বয়স হয়েছে, বাসায় একা থাকেন, যদিও আমি অনেক কাজ করিনা, কিন্তু অন্তত আমি রান্না, ঘর সাফ করি ফলে আম্মুর অনেকটা সাহায্য হয়, আম্মু অনেক খুশি হন।
অপরদিকে আমি যে সেলাই বা অন্য কিছু শিখবো, আমার কোনো কিছুতেই মন বসে না, লেগে থাকতে পারছিনা কিছুতেই।
আমার মা বলছেন আমি নাকি সারাদিন কিছু করিনা দেখে আরো খারাপ লাগে। আম্মু বলছেন আমি চাইলে আবার ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিবেন। এখন আমি এখন অনেক কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি যে কি করা সঠিক হবে...
একবার ভয় হয় যে আল্লাহ যখন হারাম থেকে ফিরিয়েছেন আবার যদি যাই তখন যদি আল্লাহ নারাজ হন!
আবার ভাবি নাকি ওই সীদ্ধান্তটা আমার ছিলো যেটা ভুল করেছিলাম...তাহলে এখন আবার ওখানে যাবো? তাহলে মায়ের খেদমতের কি হবে? আবার আমি যদি লেগে থাকতে না পারি আবার পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে ছেড়ে দেই তখন তো অনেকগুলা টাকা আবার আগের মতো নষ্ট হবে...
(আগেরবার মূলত এরকম কদিন ভালো কদিন খারাপ এই অস্থির অবস্থায় মনোযোগ ধরে রাখতে না পেরেই পড়াশোনা ছেড়ে দেই। অনার্স ১ম বর্ষে ১ম সেমিস্টার পরীক্ষার আগ মুহুর্তে বাদ দেই, গতবছর। অনলাইনে পড়বো ভাবলেও একই কারনে এখানেও ছেড়ে দেই।)
(গতবছর ভার্সিটিতে থাকতে এমন হতো, যেকদিন স্বাভাবিক থাকতাম তখন সমস্যা হতো না, তবে মাঝেমাঝে যখন পাগল পাগল হয়ে যেতাম তখন ভার্সিটি থেকে ফিরে আর পড়তাম না শুধু ফোন দেখতাম, হারাম কন্টেন্ট দেখতাম এমন। আর এখনও আমি ঘরে নসে বসে ফোন দেখি নাহয় অন্য কিছু করি, কিন্তু গাফলতি করি।)
এখন আমার কি করা উচিত উস্তাজ?