রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে ভালোবাসা, তাঁর প্রশংসা ও গুণগান করা ইসলামে অনুমোদিত — বরং এটা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কুরআন ও সহীহ হাদীসে রাসূল ﷺ-কে সম্মান করা, তাঁর গুণাবলি তুলে ধরা, এবং তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার স্পষ্ট দলিল রয়েছে।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ
“নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।”
(সূরা আল-কালাম: ৪)
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا
“নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে।”
(সূরা আল-আহযাব: ৪৫)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
قال النبي ﷺ: لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده وولده والناس أجمعين
“তোমাদের কেউ পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান এবং সব মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হই।”
(সহীহ বুখারী: ১৫, সহীহ মুসলিম: ৪৪)
সাহাবীগণ রাসূল ﷺ-এর প্রশংসা করতেন
হাসান ইবনে সাবিত (রাঃ) রাসূল ﷺ-এর প্রশংসায় বহু কবিতা রচনা করেন, যেগুলোর অনুমোদন রাসূল নিজেই দেন:
أحسن إليهم حسان بن ثابت في شعره، فقال له النبي ﷺ: أجبهم، وروح القدس يؤيدك
“হাসান ইবনে সাবিত তাদের জবাবে কবিতা বলেন। তখন রাসূল ﷺ বলেন: তাদের জবাব দাও, রূহুল কুদস (জিবরাইল আ.) তোমাকে শক্তি যোগাবেন।”
(সহীহ বুখারী: ৩২১৩)
কুসিদায়ে বুরদাহ ইমাম বুসাইরী (রহ.) রচিত এক বিখ্যাত প্রশংসাগান — রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সান্নিধ্যে লেখা। অনেক মুসলিম একে ভালোবাসা, ভক্তি ও দুআর অংশ হিসেবে পাঠ করে থাকেন।
রচনা করেছেন: ইমাম আল-বুসাইরি (রহ.), মিশরের একজন প্রসিদ্ধ সুফি ও আলেম (১৩তম শতাব্দী)।
তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় এই কাসিদা লিখে রাসূল ﷺ-কে স্বপ্নে দেখেন, যেখানে নবীজি তার গায়ে চাদর (بُردة) জড়িয়ে দেন। পরদিন সকালে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন।
এই কাসিদা ইসলামি ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার পাঠ করা ও মুখস্থ করা প্রশংসাগানগুলোর একটি।
কাসিদায় নবীজি ﷺ-এর গুণাবলি, চরিত্র, জীবন, দয়ালুতা, ও উম্মতের প্রতি করুণার কথা বলা হয়েছে।
★শরীয়তের বিধান মতে কুসিদায়ে বুরদাহ পাঠ করা ও শোনা জায়েজ আছে।
★দারুল উলুম দেওবন্দ এর 169083 নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ-
কুসিদায়ে বুরদাহ পাঠ করা ও শোনা জায়েজ আছে, সুতরাং তাহা শোনা ও পাঠ করার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই।
★জামিয়া বিন নুরী করাচীর 144003200365 নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ-
"কাসীদা বুরদা শরীফ"-এ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা রয়েছে এবং নিঃসন্দেহে শরীয়তের সীমার মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা এবং বর্ণনা করা একটি সওয়াব এবং একটি নেক কাজ, এবং এতে কোন পাপ নেই।
কুসিদায়ে বুরদাহ পাঠ করে খতমও করা যেতে পারে, এটি বরকত লাভের কারন হতে পারে, তবে কোনও নির্দিষ্ট পদ্ধতিকে আবশ্যক মনে করা উচিত নয়।
তবে সালাফি মতাদর্শের উলামায়ে কেরামগন বলেছেন, কুসিদায়ে বুরদাহ এর কিছু অংশে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসার প্রকাশ আছে, যেমন: "তিনি যদি না হতেন, জগৎ সৃষ্টি হতো না" — এসব বক্তব্যের ব্যাখ্যা করতে হয় ইসলামী আকীদার আলোকে।
কবিতার কিছু লাইনে অতিরঞ্জনা থাকায় সতর্কতা অবলম্বন করতে বলে। বুঝে পড়তে বলে।
শুদ্ধ আক্বীদা নিয়ে পড়তে হবে – নবী ﷺ দোয়ার মাধ্যম, উপাস্য নয়।