আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
28 views
in যাকাত ও সদকাহ (Zakat and Charity) by (56 points)
১) আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ। আমার ভাই অন্যের জমিন চাষ করে জীবন যাপন করে। নিজের অল্প কিছু জমিন আছে, আর অন্যের টা চাষ করেন। এছাড়া আর কোন ইনকাম নাই। ওনার ছেলে কিছু ইনকাম করে, কিন্তু অভাব অনটনের সংসার। ওনাকে কি যাকাতের টাকা দেয়া যাবে?

যাকাতের শর্ত অনুযায়ী, একজনের যদি নিসাব পরিমান সম্পদ থাকে তাহলে যাকাত দেয়া যাবে না। এখন কথা হলো নিসাব পরিমান সম্পদ বা টাকার পরিমান কথার কথা ৬০/৭০ হাজার, যদি লাখ খানেক টাকাও ধরি টাকা আনুমানিক। কিন্তু একজন মানুষের যদি নিয়মিত ইনকাম না থাকে, তারা যদি অভাব অনটনে দিনপার করে, আত্নীয়র মধ্যেই এমন অবস্থায় থাকে,তাদেরকে যাকাত না দিয়ে কি সেই টাকা অন্যদের দিতে হবে?

২)আমার বোন,বা অন্যান্য আত্নীয়দের অবস্থাও কম বেশি এমন হালত। ইনকাম কিছু করেন, কিন্তু সেটা দিয়ে তাদের অভাব অনটন সারে না। অপারেশন করার জন্য লাখ খানেক টাকার প্রয়োজন ছিল। সেটাও তারা সম্পূর্ন দিতে পারে নি। সহযোগিতা করতে হয়েছে। সারাজীবন ধরেই সহযোগিতা করতে হয়েছে বিভিন্ন ভাবে।

নিসাব এর হিসাব ধরতে গেলে তারা সেই ক্যাটাগরি তে আসে না। আর যাকাতের টাকা ছাড়াও যে আমরা তাদের নিয়মিত দিবো, আমাদেরও তেমন ব্যবস্থা নেই। তাহলে আমরা কি করব? যাকাতের টাকা নাকি কল্যানকর সকল খাতেই ব্যয় করা যায় এমন বিষয়ও পড়েছিলাম। সেটা নিচে উল্লেখ করেছি।

এমন অনেক খাত আছে, যেমন মানুষকে দ্বীন পালনে উপকারী বই কিনে হাদিয়া দিলে মানুষ গ্রহন করে। কিন্তু তারা নিজেরা কিনবে না সামর্থ্য থাকলেও। এসব খাতে কি যাকাতের টাকা খরচ করা যায়?

বইটাতে আরো উল্লেখ আছে, অন্তর জয় করার জন্য খরচ করা, তারা যদি ধনীও হয়। এগুলো ফি সাবিলিল্লাহ খাত৷ এখানে ছবি দেয়া যাচ্ছে না।না হলে ছবি দিতাম।

নিজের পরিবারেই তো এমন মানুষের অভাব নেই। তারা অভাব অনটনেও থাকে। তাদের প্রয়োজনও পূরন করতে হয়।

৩) আমার আত্নীয়, ওনার জমা টাকা আছে ১ লাখ+ টাকার মত। সেটার উপর ওনার যাকাত দিতে হয়। সে টাকা ইসলামী ব্যাংকে রেখেছেন খুব সম্ভবত। ওনারও কোন ইনকাম নাই। ওনার তো নিসাব পরিমান টাকা আছে, তাহলে ওনার উপর কুরবানী ওয়াজিব হলে ওনি কিভাবে কুরবানি দিবেন,যাকাত দিবেন? সেই এক দেড় লাখ টাকা ভেঙে খরচ করে?

৪) স্বামী স্ত্রীকে যদি লোকমাও তুলে খাওয়ায় সেটাও সাদাকায়। সব ভাল কাজ সাদাকাহ। সব যদি সাদাকা হয় একে অপরকে, বাবা মা সন্তানকে, অর্থাৎ সবাই একে অপরের পিছনের কি সাদাকার নিয়তে খরচ করতে পারবে?



ফি সাবিলিল্লাহ (আল্লাহর পথে ব্যয় করা)

'ফি সাবিলিল্লাহ'র অর্থ 'আল্লাহর পথে'। এ বিষয়ে কয়েকটি মত পরিলক্ষিত হয়ঃ

১) আলিমগণ একমত যে, 'আল্লাহর রাস্তায়' মানে জিহাদকে পছন্দ করা। অতএব, মুজাহিদ ও মুজাহিদদের অস্ত্র-শস্ত্রের জন্য যাকাত থেকে ব্যয় করা যাবে, যদিও তারা ধনী হয়। অতএব, যুদ্ধের বিমান ঘাটি তৈরি করা, শত্রুদের সন্ধানদাতাদের বেতন ইত্যাদিও এ খাতের অন্তর্ভুক্ত। শাফেয়ী ও হাম্বলী ফকীহগণ শর্ত করেছেন যে, এমন মুজাহিদদের দেওয়া যাবে, যাদের জন্য সরকারি বেতন-ভাতা বরাদ্দ নেই।

২) হানাফী আলিমগণ 'ফি সাবিলিল্লাহ'কে এক্ষেত্রে অনেক ব্যাপকতা আরোপ করেছেন, কল্যাণকর প্রত্যেক খাতে যাকাত ব্যবহার করা বৈধ, যদিও এটি বেশ দুর্বল মত।

৩) হযরত ইবনে উমার (রা.) থেকে ইবনে তাইমিয়া (রহ.) পর্যন্ত একদল মনীষী মনে করেন, হজ্জও এ খাতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, হজ্জ আল্লাহর রাস্তায় এক প্রকার জিহাদ।

৪) আবার আধুনিক ইসলামী পণ্ডিতদের অনেকে মনে করেন, দীনের পথে যেকোনো বাধা মোকাবিলার জন্য এ খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা বৈধ। তবে মসজিদ তৈরি, রাস্তা সংস্কার ইত্যাদির জন্য যাকাতের অর্থ খরচ করা বৈধ নয়, বরং এগুলো জন্য ওয়াকফ, হেবা, ওসিয়ত ও সাদাকাহর মতো খাত থেকে খরচ করা যেতে পারে।

(যাকাতের বিধিবিধান czm বই থেকে উল্লেখ করা হয়েছে)

1 Answer

0 votes
by (656,550 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/71830/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে, 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলছেন

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

যাকাত হল কেবল (১)ফকির, (২)মিসকীন, (৩)যাকাত উসূলকারী ও (৪)যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক (৫)এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে ও (৬)ঋণগ্রস্তদের জন্য, (৭)আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং(৮) মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান।আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।(সূরা আত-তাওবাহ-৬০)

কে যাকাত খেতে পারবে?

وَلَا يُشْتَرَطُ النَّمَاءُ إذْ هُوَ شَرْطُ وُجُوبِ الزَّكَاةِ لَا الْحِرْمَانِ كَذَا فِي الْكَافِي. وَيَجُوزُ دَفْعُهَا إلَى مَنْ يَمْلِكُ أَقَلَّ مِنْ النِّصَابِ، وَإِنْ كَانَ صَحِيحًا مُكْتَسَبًا كَذَا فِي الزَّاهِدِيِّ.

অর্থাৎ-নেসাব পরিমাণ মাল(নামী তথা বাড়ন্ত হোক বা না হোক,শরীয়তে নামী মাল চার প্রকার যথা-স্বর্ণ,রূপা বা টাকা,ব্যবসার মাল,গবাদি পশু)
এর মালিক না হলে যাকাত খাওয়া যাবে যদি প্রয়োজন থাকে।তাই গায়রে নামী বা অবাড়ন্ত মালের নেসাব পরিমাণ কেউ মালিক হলে যদিও তার উপর যাকাত আসবে না তথাপিও সে যাকাতের মাল খেতে পারবে না।আর কোনো প্রকার মালই যদি কারো কাছে নেসাব পরিমাণ না থাকে তাহলে সে সুস্থ উপার্জন স্বক্ষম হওয়া সত্তেও তার জন্য যাকাতের মাল খাওয়া জায়েয আছে।
(ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/১৮৯) 

যে ব্যাক্তি নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক নন,সেই ব্যাক্তি শরীয়তের পরিভাষায় ধনী নয়,সে ফকির।
সুতরাং সেই ব্যাক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে।

আরো জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার ভাই যদি নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক না হয়ে থাকেন,সেক্ষেত্রে তাকে যাকাত দেয়া যাবে।

বরং এক্ষেত্রে দ্বিগুন ছওয়াব রয়েছে।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
 الصَّدَقَةُ عَلَى الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ، وَهِيَ عَلَى ذِي الرَّحِمِ اثْنَتَانِ: صِلَةٌ، وَصَدَقَةٌ-
‘সাধারণ মিসকিনকে সাদাকাহ দিলে তা শুধু সাদাকাহ; আর অভাবী-আত্মীয়কে দেওয়া একই সঙ্গে দুটি সৎকর্ম— সাদাকাহ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা।’ (সুনান নাসায়ী, হাদীস নম্বর: ২৫৮২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নম্বর: ১৬২৩৫; শায়খ আলবানি ও শু‘আইব আরনাউত এর গবেষণায় হাদিসটি ‘সহিহ’)

আরো জানুনঃ- 

যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, তার সে সম্পদ যদি এখন তার কাছে নাও থাকে, তারপরও তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না। হ্যাঁ যদি সে ঋণগ্রস্ত হয় সেক্ষেত্রে তার মাসয়ালা আলাদা হবে।

(০২)
আপনার বোন বা অন্যান্য আত্মীয় স্বজনরা যদি নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক না হয়ে থাকেন,সেক্ষেত্রে তাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে।

বরং এক্ষেত্রে দ্বিগুন ছওয়াব রয়েছে।

যারা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত তাদেরকে যাকাতের টাকা দিয়ে বই কিনে দেওয়াও জায়েজ আছে।

(০৩)
এক্ষেত্রে তার বিষয়টি ইচ্ছাধীন থাকবে।
তিনি চাইলে তার সে দেড় লক্ষ টাকা ভেঙ্গে কোরবানি ও যাকাত দিতে পারেন।

অথবা চাইলে অন্য কারো থেকে খরচ নিয়ে কোরবানি ও যাকাত দিতে পারেন।

অথবা চাইলে তার অন্য কোন সম্পদ বিক্রয় করে কুরবানী বা যাকাত দিতে পারেন।

অথবা তাকে যদি কেউ কুরবানী ও যাকাতের জন্য টাকা হাদিয়া দেয় সে টাকা দিয়েও তিনি যাকাত কোরবানি আদায় করতে পারেন।

(০৪)
এতে মূলত ছওয়াব উদ্দেশ্য। 

কোনোভাবেই এক্ষেত্রে যাকাত বা ওয়াজিব দান সদকাহ উদ্দেশ্য নেয়া যাবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (56 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। ভাইয়ের নিসাব পরিমান সম্পদ নেই, কিন্তু ভাবীর আছে। এমতাবস্থায় ভাইকে কি যাকাতের টাকা দেয়া যাবে? 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...