মুহতারাম মুফতি সাহেব,
আসসালামু আলাইকুম ।
হালাল - হারাম, জায়েয - নাজায়েয বিষয়ক আমার কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে ।
১)
আমাদের দেশে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রচলিত আছে যেগুলোর নাম গ্রীক পুরাণের অনেক চরিত্র (যেমন: বিভিন্ন দেবদেবী) অনুসারে করা হয়েছে । যেমন: স্পোর্টস ব্র্যান্ড নাইকি (nike) - এটার নামকরণ নাইকি নামক তথাকথিত বিজয়ের দেবীর নামানুসারে করা হয়েছে । রেফারেন্স লিংক: Swoosh - Wikipedia https://share.google/nScCN9vW1CoZfcjIy
আবার, ঘড়ির ব্র্যান্ড 'টাইটান' এটাও পুরাণের একটা দেবতা টাইপের চরিত্র ।
এসব ব্র্যান্ডের নাম এবং/অথবা লোগো সম্বলিত কোন সামগ্রী কেনা, কাউকে উপহার দেওয়া ও নিজে ব্যবহার করা আমাদের মুসলিমদের জন্য কী জায়েয ?
২)
জাপানি মোটরসাইকেল কোম্পানি হোন্ডার লোগোতেও নাইকির ডানার ছবি আছে ।
রেফারেন্স : History of the Honda Wing logo https://share.google/p9JouW4fuJgUK7ocg
হোন্ডা কোম্পানির মোটরসাইকেল কেনা এবং মোটরসাইকেল চালানো শেখার সময়ে ব্যবহার করা কী জায়েয হবে?
৩)
আমার বর্তমান পেশাগত যোগ্যতার (কলেজে শিক্ষকতা) পাশাপাশি বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন এবং পরবর্তীতে অনলাইনে আয় করার জন্য সাইবার সিকিউরিটির উপরে কোর্স করার ইচ্ছে আছে আমার । ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট শেখার প্রতিও আমার অনেক আগ্রহ । বৈধ ও হালাল কাজের ক্ষেত্রে সেসব জ্ঞান ব্যবহারের নিয়্যাত আছে আমার ।
আমার কলেজটিতে শিক্ষকতার পরিবেশ এবং নিরাপত্তা বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ বলা যায় । এ কারণে মৌলিকভাবে হালাল এবং আমার আগ্রহ আছে এমন কিছু কাজ আমি শিখে রাখতে চাচ্ছি যাতে কলেজটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোন ভালো পেশার সাথে যুক্ত থেকে আয় করতে পারি ।
এর জন্য লিনাক্স ভিত্তিক বেশ কিছু জিনিস বা টুলস আমাকে শিখতে হবে । এর মধ্যে আছে Kali linux । ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখলাম যে, kali শব্দটা হিন্দুদের দেবীর নামানুসারে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাখা হয়েছে ।
চ্যাটজিটিপিকে জিজ্ঞেস করে যেটা জানা গিয়েছে তার লিংক: https://chatgpt.com/share/68baae5d-5ec4-8008-9c1a-77180f438a3b
আবার, লিনাক্স শিখতে গেলে Wine -এর ব্যবহার এসে যায় ।
wine -এর প্রতীক বা চিহ্ন হিসেবে মদসহ একটি গ্লাসের ছবিও দেওয়া হয়েছে ।
রেফারেন্স : Wine (software) - Wikipedia https://share.google/mXRQdWHX8hpKbDHKy
আমি কালি দেবীতে বিশ্বাস করি না, মদ খাইনা, সমর্থনও করি না । কিন্তু, ঐ কোর্সগুলো বা ওরকম কোন কোর্স করতে চাইলে এরকম শব্দগুলো আমার সামনে আসবে, কাজের সুবিধার্থে আমাকে শব্দগুলো বলতে হবে, ব্যবহারও করতে হবে ।
Chatgtp নামক AI কে জিজ্ঞেস করার পরে লম্বা একটি লিস্ট দিয়েছে । এখানে, গ্রীক ও হিন্দু পুরাণের চরিত্রের নামানুসারে যেসব সফটওয়ার / টুলস -এর নামকরণ করা হয়েছে সেগুলোর বর্ণনা আছে ।
যেমন-
গ্রিক পুরাণ থেকে নামকরণ করা সফটওয়্যার/টুলস
1. Apollo – NASA-র স্পেস মিশন, পরে সফটওয়্যার নামেও ব্যবহৃত হয়েছে।
2. Zeus – বিভিন্ন সিকিউরিটি টুল ও Zeus Banking Trojan (ম্যালওয়্যার)।
3. Prometheus – মনিটরিং সিস্টেম (DevOps এ বহুল ব্যবহৃত)।
4. Hermes – মেসেজিং সিস্টেম (Facebook ডেভেলপ করেছে)।
5. Athena – AWS Athena (serverless query service)।
6. Ares – গেম ইঞ্জিন এবং কিছু হ্যাকিং টুলের নাম।
7. Helios – সোলার/প্যারালেল কম্পিউটিং সিস্টেম।
8. Orion – নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট টুল (SolarWinds Orion)।
9. Medusa – পাসওয়ার্ড ব্রুট-ফোর্স টুল।
10. Cerberus – সিকিউরিটি সফটওয়্যার, ম্যালওয়্যার উভয়ের নামেই পাওয়া যায়।
11. Perseus – ডেটা সিকিউরিটি সম্পর্কিত কিছু প্রকল্প।
12. Hercules – IBM মেইনফ্রেম এমুলেটর।
হিন্দু পুরাণ থেকে নামকরণ করা সফটওয়্যার/টুলস
1. Kali – Kali Linux (বিশ্বখ্যাত পেন-টেস্টিং/এথিকাল হ্যাকিং ডিস্ট্রো), নাম এসেছে কালী দেবী থেকে।
2. Agni – ভারতের ডিফেন্স সম্পর্কিত সফটওয়্যার/মিসাইল সিস্টেমের নাম।
3. Indra – নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি টুল/প্রজেক্ট (কিছু ক্ষেত্রে ম্যালওয়্যারও এই নামে পাওয়া যায়)।
4. Ravana – কিছু গবেষণা সফটওয়্যার/টুল এই নামে আছে।
5. Sita / Ram / Hanuman – লোকালাইজড প্রজেক্ট বা ছোট ছোট সফটওয়্যার টুলস বিভিন্ন ইনডিয়ান টেক কমিউনিটিতে দেখা যায়।
6. Maya – Autodesk Maya (বিশ্বখ্যাত 3D মডেলিং ও অ্যানিমেশন সফটওয়্যার); নাম এসেছে মায়া ধারণা থেকে।
7. Lakshmi – কিছু ফিনান্সিয়াল টুল ও ক্রিপ্টো প্রকল্প এই নামে চলে।
8. Shakti – ওপেন-সোর্স RISC-V প্রসেসর প্রজেক্ট (IIT Madras)।
9. Vishnu – কিছু ডাটাবেস সিস্টেম ও টুলস এই নামে পাওয়া যায়।
10. Yama – সিকিউরিটি টুল ও প্রজেক্টে ব্যবহার হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, গ্রিক পুরাণভিত্তিক নাম আন্তর্জাতিক টেক জগতে অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়েছে (বিশেষ করে ওপেন সোর্স, নেটওয়ার্কিং, সিকিউরিটি টুলস), আর হিন্দু পুরাণভিত্তিক নাম মূলত ভারতীয় প্রজেক্ট ও কিছু বিশ্বখ্যাত সফটওয়্যার (যেমন Kali Linux, Maya, Shakti)-তে দেখা যায়।
(Chatgtp -এর উদ্ধৃতির সমাপ্তি) ।
এরকম সফটওয়্যার ও টুলস ব্যবহারের শরয়ী হুকুম কী? আমি কী এগুলো শিখতে পারব?
৪)
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) -এর বিষয়ে আমার জানার ও কাজ করার আগ্রহ আছে । কিন্তু, কোথাও কোর্স করতে গেলে, কোন বই কিনতে গেলে তাদের বিজ্ঞাপনে বা বইতে এরকম লেখা দেখা যায় - "Learn AI magic", "AI -এর যাদুতে বদলে যাবে জীবন" ইত্যাদি ধরনের কথাবার্তা ।
আমি যাদুতে সন্তুষ্ট নই, যাদু করা সমর্থন করি না । যারা এরকম বলে বা লিখে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের বিষয়বস্তু সম্পর্কিত তথ্য ও শেখানোর ধরনটা সাবলীল হয় কিন্তু তাদের শব্দচয়ন আমার কাছে ভীতিকর ।
এখন,
এই ম্যাজিক, যাদু এসব শব্দ যারা ব্যবহার করছে তাদের কোর্স করলে কী আমি যাদু সমর্থনকারী ও সহায়তাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হব?
৫)
আমাদের কলেজে পুরুষ ও মহিলা শিক্ষকরা একই টিচার্স রুমে বসে । মহিলাদের সংখ্যাই বেশি । তারা কাজের ফাঁকে গল্প করে, নিজেরা হাসাহাসিও করে ।
আমি ঐ পরিবেশে আল্লাহর জিকির চালিয়ে যেতে চাই ৷ কিন্তু, মনে ভয় হয় যে, এরকম অবাধ্যতার পরিবেশে আল্লাহর জিকির করলে আল্লাহ নারাজ হবেন কী না? গায়ের মাহরামদের কণ্ঠস্বর কানে আসছে, ছাত্রীরা কোলাহল করছে ।
দুই কানে আঙ্গুল দিয়ে যদি জিকির করি তবে কলেজে এই কাজের সমালোচনা হবার সম্ভাবনা আছে, আবার নিজের সিট থেকে উঠে গিয়ে অন্য জায়গায় বেশিক্ষণ থাকাটাও অসুবিধাজনক কারণ টিচার্স রুমে লেখাপড়া বিষয়ক কথাবার্তাও হয়, ছাত্ররাও আমাকে বিভিন্ন কারণে খোঁজ করে, আমাকে ক্লাসের প্রস্তুতির জন্য পড়াশোনাও করতে হয় সেখানে ।
এখন, এমন পরিস্থিতিতে টিচার্স রুমে আমি যদি বিভিন্ন দু'আ, দুরুদ পড়তে থাকি এবং আমার কানে সেসব আওয়াজও আসতে থাকে,
তাহলে দু'আ কালামের প্রতি বেয়াদবির গুনাহ আমার হবে কী?
আমলের সওয়াব ও ফাযায়েল পাওয়ার আশা করা যাবে কী?
মুহতারাম, আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম ।