আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
23 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
reopened by
আমি একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী। গত 2 বছর 3 মাস থেকে মালয়েশিয়া তে আছি। আমি বর্তমানে কিছু বিষয় নিয়ে ভীষন জটিলতার মধ্যে পড়ে আছি, দয়া করে আমাকে ইসলামের আলোকে সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আমার উদ্দেশ্য জান্নাত দয়া করে আমাকে সহায়তা করুন।
এখন আমার বয়স 23 বছর। আমি দেশে থাকতেই বিভিন্ন ভাবে পর্ণগ্রাফি ও মাস্টারবেশন এ আসক্ত হয়ে পড়ি। এবং এই আসক্তি আমাকে সার্বক্ষণিকভাবে ডিপ্রেশনে মধ্যে রাখতো। তাই আমি এটা থেকে বাঁচার জন্য অনেক ভাবে চেষ্টা করতাম কিন্তু ছাড়তে পারতাম না। এমনকি আমি ইসলাম পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার চেষ্টা করতাম সব স্থানে অর্থাৎ চোখের হেফাজত বা গায়েরে হারামের সাথে চলাফেরা সবকিছুতে কন্ট্রোল আনার চেষ্টা করেও আমি সে অবস্থা থেকে বেরোতে পারিনি। পরবর্তীতে আমি সিদ্ধান্ত নেই সহশিক্ষার যে পরিবেশ সেটা ছেড়ে দিয়ে ইসলামিক একটা পরিবেশ থেকে শিক্ষা লাভ করার এবং সকল ধরনের ফেতনার পরিবেশ থেকে দূরে থাকার জন্য আমি পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে বাসায় চলে যায়। তখন আমি কলেজে উঠেছিলাম এবং একটা শহরে থাকতাম। আমি পরবর্তীতে গ্রামে চলে যাই এবং যাওয়ার পরে আমার ফ্যামিলি বিষয়টা পজেটিভ ভাবে না নিয়ে সেটা নেগেটিভ ভাবে নিয়ে ফেলে। তখন মূলত আমার উদ্দেশ্য ছিল যে কোন ভাবে দ্বীনি কিছু শিক্ষা অর্জন করে ছোটখাটো একটা ব্যবসা শুরু করে খুব দ্রুত বিয়ে করার। কিন্তু ফ্যামিলিকে বিষয়টা ঠিকমত আমি বুঝাতে পারিনি বরঞ্চ তারা আমার কথা শুনতো না তারা অন্য কিছু মনে মনে করে আমাকে বাধ্য করে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়। আমি মূলত আসতে চাইনি কারণ আমি আসক্তি থেকে বাঁচার জন্য অন্য একটি পরিবেশ চাইছিলাম। কিন্তু বাসাতে প্রতিদিন বিভিন্ন ভাবে কলহ লেগে থাকত আমার জন্য তাই বাধ্য হয়ে আমি বিদেশ আসি।
দেশে থাকতে আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করতাম এবং অনেকটা ঠিক মতন নামাজ আদায় করা যেত। এবং সকাল সন্ধ্যার দোয়া কলমের আমলও করা হতো। কুরআন তেলাওয়াত করা থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছু করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু এখানে চলে আসার পরে প্রায় ১৫ ঘণ্টার মতো ডিউটি হয়ে যেত সব মিলিয়ে ফলে প্রায় এক বছর আমি ঠিকমত নামাজ আদায় করতে পারেনি এবং পরবর্তীতে নামাজ পুরোপুরিভাবেই বন্ধ হয়ে যায়। এবং আমার যে পর্নোগ্রাফি বা মাস্টারবেশন এর আসক্তি সেটা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এখনো আমি চেষ্টা করে নিজেকে বিরত রাখার কিন্তু কোনভাবেই সম্ভব হয় না। কারণ বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়েও এখানের পরিবেশ আরো বেশি নগণ্য। এখানে চাইনিজরা থাকে তারা প্রায় অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় চলাফেরা করে যার কারণে আমার আসক্তি আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নিজের ভেতরের যে ঈমানের বা নজরের হেফাজত করার বিষয়টা পুরোপুরি লোপ পেয়েছে। এই পরিবেশে আমি নিজেকে কোন ভাবেই ঠিক করতে পারছি না তাই এখন আমি মানসিকভাবে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত এবং সব সময় ডিপ্রেশনের মধ্যে থাকতে হয়।
এখন প্রায় দুই বছর পার হয়ে গিয়েছে এবং আমার চুক্তির মেয়াদ ৩ বছর অর্থাৎ আমার চুক্তি শেষ হতে আরো নয় মাসের মত বাকি। আমি হিসাব করে দেখলাম এ নয় মাস শেষ করে আমি যদি দেশে চলে যাই তাহলে আমি মোটামুটি চার পাঁচ লাখ টাকার মত পুঁজি নিয়ে দেশে চলে যেতে পারবো। এবং আমি বাড়িতে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছি আমার আম্মাকে অর্থাৎ আমাকে বিবাহ করতে হবে আমি অশ্লীল জিনিসের প্রতি আসক্ত হয়ে গিয়েছি তাই আমি দেশে যাব। কিন্তু বর্তমানে সমস্যা হলো আমার বাবা কোনভাবেই রাজি না যে আমি দেশে যাই। তিনি চান আমি আরো দুই তিন বছর বিদেশ থেকে মোটামুটি ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে দেশে যায়। যেহেতু চুক্তি বাড়ানো যায়।  যেন আমি দেশে গিয়ে বড় করে ব্যবসা শুরু করতে পারি। এমতাবস্থায় আমি কি করবো কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।
আমি অলরেডি ঈমানহারা দের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছি বলে আমার মনে হয়। আমার নামাজ কালাম সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি। অন্তরের ভিতরে কিছুটা যে ঈমান বাকি আছে আরো দুই তিন বছর থাকলে সম্ভবত এটুকু আর টিকবে না। আমার এমন অবস্থা যে আমি রমজান মাসেও নিজেকে এই জঘন্যতম পাপ থেকে বিরত রাখতে পারিনি। কয়েকটি রোজাও আমি নষ্ট করে ফেলেছি এই আসক্তির কারণে। আমি সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি এর বেশি কোনভাবেই হয় না, কোন না কোন ভাবে আবার আমি পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ি।
এখন আমার কি করা উচিত আমি কি যেকোনো ভাবে দেশে গিয়ে ছোটখাটো একটা ব্যবসা শুরু করে হলেও বিয়েটা করব? নাকি বাবা মাকে খুশি করে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী আরো দীর্ঘ সময় এই প্রবাসের মাটিতে পড়ে থাকব? প্রবাসের মাটিতে পড়ে থাকাটা আমার কাছে দুনিয়াকে অধিকভাবে আঁকড়ে ধরার মত মনে হচ্ছে। কিন্তু এটা আমার উদ্দেশ্য না। আমি যে কোনভবে আমার পরকালকে বাঁচাতে চাই। যেকোনো মূল্যে আমার নিজেকে বাঁচাতে চাই।
আপনি হয়তো বলবেন যে সেখানেই নিজেকে পরিবর্তন এর চেষ্টা করো। কিন্তু আমি পারছি না , এখানে না আছে মসজিদ না আছে ইসলামিক কোন পরিবেশ। আশেপাশে মসজিদ অনেক বেশি দূরে। মসজিদ থাকলে হয়তো নামাজটা কোনভাবে আগ্রহ জাগত কিন্তু সেটা হচ্ছে না। এমনকি আমি প্রায় কোন ওয়াক্তের আজানো শুনতে পায় না। চারিপাশে অর্ধউলাঙ্গ নারীদের চলাফেরা কিভাবে আমি নিজেকে বাঁচাবো। যতবারই নিজেকে পুরোপুরি কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছি বারবার ব্যর্থ হয়েছি।
দয়া করে ইসলামের আলোকে আমাকে জানাবেন আমার এই মুহূর্তে কি করা উচিত দুনিয়াকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত নাকি আখেরাতকে বাঁচানোর জন্য দেশে গিয়ে বিবাহ করে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা উচিত?

1 Answer

0 votes
by (683,130 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

অমুসলিম রাষ্ট্রে লেখাপড়া বা চাকরির জন্য যেতে হলে অবশ্যই দুটো প্রধান শর্ত মেনে চলতে হবে।

প্রথম শর্ত: বসবাসকারীকে স্বীয় দ্বীনের ব্যাপারে আশঙ্কামুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ তার এমন ‘ইলম, ঈমান ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে, যা তাকে দ্বীনের ওপর অটল থাকার মতো এবং বক্রতা ও বিপথগামিতা থেকে বেঁচে থাকার মতো আত্মবিশ্বাসের জোগান দেয়। আর কাফিরদের প্রতি তার অন্তরে শত্রুতা ও বিদ্বেষ থাকতে হবে। অনুরূপভাবে কাফিরদের সাথে মিত্রতা ও তাদের প্রতি ভালোবাসা থেকে তাকে দূরে থাকতে হবে। কেননা তাদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করা এবং তাদেরকে ভালোবাসা ঈমানের পরিপন্থি।
সমস্ত প্রকার অন্যায় অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে।
মহান আল্লাহ বলেছেন,

 لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ 

“তুমি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী এমন কোনো জাতিকে পাবে না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল বিরোধীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে; যদিও তারা তাদের পিতা, অথবা পুত্র, অথবা ভাই, কিংবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়।” [সূরাহ মুজাদালাহ: ২২]

দ্বিতীয় শর্ত: নিজের দ্বীনকে প্রকাশ করার মতো সক্ষমতা থাকতে হবে। অর্থাৎ, বসবাসকারী ব্যক্তি কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই ইসলামের নিদর্শনাবলি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন। নামাজ, জুমু‘আহ ও জামা‘আত—যদি তার সাথে জামা‘আতে নামাজ ও জুমু‘আহ প্রতিষ্ঠা করার মতো কেউ থেকে থাকেন—প্রতিষ্ঠা করতে বাধাগ্রস্ত হবেন না। অনুরূপভাবে জাকাত, রোজা, হজ ও অন্যান্য শার‘ঈ নিদর্শন প্রতিষ্ঠা করতে বাধাগ্রস্ত হবেন না। যদি এসব কাজ করার সক্ষমতা না থাকে, তাহলে তখন হিজরত ওয়াজিব হয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে বসবাস করা জায়েজ হবে না।

বিস্তারিত জানুনঃ  

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,   
আপনি উক্ত দেশে থাকতে চাইলে উপরে উল্লেখিত শর্তাবলী পূর্ণ ভাবে মেনে চলতে হবে।

আপনি যেহেতু সেখানে দ্বীনের উপর থাকতে পারছেননা,পাশাপাশি দেশের সেখানে আরো বেশি গুনাহে জড়িয়ে পড়ছেন, আপনার উপএ যেহেতু বিবাহ ওয়াজিব হয়ে গিয়েছে,সুতরাং এমতাবস্থায় আখেরাতকে বাঁচানোর জন্য দেশে গিয়ে বিবাহ করে কোনো চাকরি বা ব্যবসা করে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা উচিত।

অন্যথায় আপনি দেশে এসে বিবাহ করে স্ত্রীকে উক্ত দেশে নিয়ে যেতে পারেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...