আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
24 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (6 points)
السلام عليكم و رحمة الله و بركاته.

উস্তাদ

কুরাইশরা কাফের এবং মুশরিক ছিলেন।
সিরাত বইয়ে কখনো কুরাইশ বলা হচ্ছে আবার কখনো কাফের বলা হচ্ছে, কখনো মুশরিক বলা হচ্ছে। আমি এ বিষয়গুলো গুলিয়ে ফেলতেছি । কেন মুশরিক বলতেছে একবার কেন কাফের বলতেছে একবার আবার কেন কুরাইশ বলতেছে? কোন জায়গায় কোনটা ব্যবহার করতেছে? কেন?

1 Answer

0 votes
by (683,400 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

সিরাত পড়তে গিয়ে কারো কারো ক্ষেত্রে এমন বিভ্রান্তি হয়। আসলে “কুরাইশ”, “কাফের” আর “মুশরিক”—এই তিনটি শব্দ বলতে সীরাতের কিতাবে মক্কার মুশরিকদের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

১. কুরাইশ (قريش)
এটি একটি গোত্র বা জাতির নাম।
মক্কার প্রধান আরব গোত্র ছিল কুরাইশ।
রাসুলুল্লাহ ﷺ নিজেও কুরাইশ গোত্রের ছিলেন।
সুতরাং, “কুরাইশ” শব্দটি ধর্ম নয়, জাতিগত পরিচয় বোঝায়।

উদাহরণ: “কুরাইশরা বাণিজ্যে পারদর্শী ছিল।” – এখানে শুধু ওই গোত্রের মানুষদের বোঝানো হয়েছে, তাদের বিশ্বাস নয়।

২. মুশরিক (مشرك)

মুশরিক মানে যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে—অর্থাৎ এক আল্লাহর উপাসনা না করে অন্য দেব-দেবীরও উপাসনা করে।

ইসলামের ভাষায় একে বলা হয় শিরককারী।

রাসুলুল্লাহ ﷺ নবুয়তের আগে ও নবুয়তের শুরুর সময় মক্কার অধিকাংশ কুরাইশরা লাত, উজ্জা, মানাত ইত্যাদি মূর্তি পূজা করত, তাই তারা ছিল মুশরিক।

উদাহরণ: “মুশরিকরা কাবার চারপাশে মূর্তিপূজা করত।”

৩. কাফের (كافر)

কাফের মানে যে সত্যকে ঢেকে দেয় বা অস্বীকার করে।

নবী ﷺ-এর দাওয়াতের পর যেসব লোক ইসলামকে অস্বীকার করেছিল, তাদের বলা হয় কাফের।

সব মুশরিক কাফের ছিল, কিন্তু প্রত্যেক কাফের মুশরিক নয়—কারণ কেউ ইসলাম মানেনি কিন্তু মূর্তিপূজা করত না (যেমন কিছু ইহুদি ও খ্রিস্টান)।

উদাহরণ: “কাফেররা নবীর বার্তা অস্বীকার করল।” – এখানে ধর্মীয় অবিশ্বাস বোঝানো হয়েছে।

কেন সিরাত বইয়ে কখনো কুরাইশ, কখনো মুশরিক, কখনো কাফের বলা হয়?

“কুরাইশ” বলা হলে বোঝায় কোন গোত্রের মানুষরা ঘটনায় জড়িত।

“মুশরিক” বলা হলে বোঝায় তাদের ধর্মীয় অবস্থা (মূর্তিপূজক)।

“কাফের” বলা হলে বোঝায় তারা ইসলামকে অস্বীকার করেছে।

উদাহরণ:
বদর যুদ্ধের সময় “কুরাইশ” বলা হলে মক্কার সেই গোত্রের সেনাদের বোঝানো হয়েছে।
তাদের “মুশরিক” বলা হয়েছে কারণ তারা মূর্তিপূজক ছিল।
আর “কাফের” বলা হয়েছে কারণ তারা নবীর প্রতি ঈমান আনেনি।

★অতএব, এক ব্যক্তি একই সাথে কুরাইশি (গোত্রগতভাবে), মুশরিক (বিশ্বাসগতভাবে), এবং কাফের (আকিদাগতভাবে) হতে পারে। এজন্য সিরাত বইয়ের লেখক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করেন।

কুরআনে সরাসরি কুরাইশ গোত্রকে উদ্দেশ্য করে একটি সূরা নাজিল হয়েছে:

 سورة قريش (সূরা কুরাইশ)
“لِإِيلَافِ قُرَيْشٍ إِيلَافِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَذَا الْبَيْتِ”
— সূরা কুরাইশ ১–৩

অর্থ: “কুরাইশের নিরাপদ বাণিজ্য সফরের জন্য… তারা যেন এই ঘরের (কাবা) রবের ইবাদত করে।”

এখানে “কুরাইশ” বলতে মক্কার ওই গোত্রকে বোঝানো হয়েছে, যাদের সঙ্গে আল্লাহ বাণিজ্য সফরের অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

২. মুশরিক — আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা

“فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا”
— সূরা জিন ১৮

অর্থ: “অতএব আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে আহ্বান করো না।”

“إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ”
— সূরা নিসা ৪:৪৮

অর্থ: “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না।”

“وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ… يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ”
— সূরা লুকমান ৩১:১৩

এসব আয়াতে “শিরক” ও “মুশরিক” শব্দ এসেছে যারা মূর্তিপূজা বা আল্লাহর সাথে শরিক করেছে তাদের জন্য।
মক্কার কুরাইশদের বড় অংশ তখন মূর্তিপূজক ছিল, তাই তাদের মুশরিক বলা হয়েছে।

৩. কাফের — সত্য অস্বীকারকারী

“إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَأَنْذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنْذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ”
— সূরা বাকারা ২:৬

অর্থ: “নিশ্চয় যারা কুফরি করল—তুমি তাদের সতর্ক করো বা না করো—তারা ঈমান আনবে না।”

“وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَسْمَعُوا لِهَذَا الْقُرْآنِ”
— সূরা ফুসসিলাত ৪১:২৬

অর্থ: “আর কাফেররা বলল: এই কুরআন শুনো না…”

সিরাতের কয়েকটি সুপরিচিত ঘটনা থেকে উদাহরণঃ

(যাতে বোঝা যায় কখন “কুরাইশ”, কখন “মুশরিক” আর কখন “কাফের” বলা হয়েছিল।)

১. হিজরতের আগের মক্কার অবস্থা

“কুরাইশরা কাবার চারপাশে ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করেছিল।”

এখানে কুরাইশ শব্দটি গোত্র বোঝাচ্ছে — মক্কার প্রধান গোত্র।

তাদের মূর্তিপূজা করার কারণে তারা ধর্মীয়ভাবে মুশরিকও ছিল।

২. দাওয়াতের শুরুতে বিরোধিতা

“মুশরিকরা নবীর বার্তা শোনামাত্র তীব্র বিরোধিতা শুরু করল।”

এখানে মুশরিক বলা হয়েছে কারণ নবী ﷺ তখনও কাউকে যুদ্ধ করেননি;
শুধু যারা আল্লাহর সাথে শরিক করছিল, সেই মূর্তিপূজকদের প্রতিক্রিয়া বোঝানো হয়েছে।

৩. ইসলামের আহ্বান অস্বীকার

“কাফেররা বলল, ‘আমরা তোমার আনা কিতাব মানি না।’”

এখানে কাফের বলা হয়েছে কারণ তারা সত্যকে অস্বীকার করেছে।

এমনকি কুরআন গ্রহণ না করে নবী ﷺ-এর প্রতি বিদ্বেষ দেখিয়েছে।

৪. বদর যুদ্ধ (২ হিজরি)

“বদরের ময়দানে কুরাইশের ১০০০ সৈন্য এগিয়ে এল।”

এখানে কুরাইশ বলা হয়েছে কারণ যুদ্ধ করতে আসা বাহিনী ছিল মক্কার কুরাইশ গোত্রের।

এই বাহিনী একই সাথে মুশরিক ও কাফেরও ছিল, কিন্তু যুদ্ধের ক্ষেত্রে তাদের গোত্রগত পরিচয় জরুরি ছিল বলে “কুরাইশ” বলা হয়েছে।

৫. হুদাইবিয়ার সন্ধি (৬ হিজরি)
“কুরাইশরা নবীর সঙ্গে শান্তি চুক্তি করল।”

এখানে কুরাইশ বলা হয়েছে কারণ চুক্তি স্বাক্ষরকারী পক্ষ ছিল গোত্রটি নিজেই।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
একই ব্যক্তিকে বিভিন্ন ঘটনার প্রসঙ্গে ভিন্ন শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে — কখনো গোত্রগতভাবে (কুরাইশ), কখনো বিশ্বাসগতভাবে (মুশরিক/কাফের)।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

...