আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
38 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (64 points)
আমি ফেসবুকে একজনের লেখা দেখলাম। আমি জানতে চাচ্ছি পোস্ট টির সত্যতা আছে কিনা

"কোরান অবমাননা একটা আপেক্ষিক বিষয়"। এই কথাটা আমাকে বলেছিলেন একজন মুফতি। তার কথা শুনে আমি ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আপেক্ষিক মানে? তখন তিনি যা বলেছিলেন তা এখনো আমার মস্তিষ্কে ঘুরে।
তিনি বলেছিলেন, আমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছি, মুফতি হয়েছি এবং পরবর্তীতে মাদ্রাসারই প্রিন্সিপাল হয়েছি। কোরানের সাথে আমার ডিরেক্ট সম্পর্ক প্রায় ৩০ বছরের উপরে। তো আমি প্রথমবার যেবার হজে গেলাম, সেবার সৌদি আরবের বিভিন্ন ছোট বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম ভিজিট করতে। সেখানে গিয়ে দেখেছি তারা পায়ের উপরে কোরান রেখে ঢুলে ঢুলে সুর করে কোরান পাঠ করে।
আমি চমকালাম, জিগ্যেস করলাম- পায়ের উপরে মানে?
তিনি বললেন- পায়ের উপরে মানে, আমরা যেভাবে রেহালের উপরে কোরান রেখে পড়ি ওরা সেভাবে পা শটান করে ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ফ্লোরে বসে পায়ের উপরে কোরান রেখে সুর করে কোরান পড়ে।
আমি বললাম- বলেন কি? এতে কোরান অবমাননা হয় না?
তিনি বললেন, আমাদের দেশে হলে অবমাননা হতো, ওদের দেশে অবমাননা হয় না।
- কেন?
- কারন আমাদের দেশে আমরা কোরান মানে বুঝি 'ত্রিশ পারা গ্রন্থ/বই' । ওরা কোরান মানে বোঝে আল্লাহর বানী।
আমি তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। আমি যে তার কথা বুঝিনি তিনি ধরে ফেললেন। তখন তিনি আরও বিস্তারিত আলাপে গেলেন।
- কোরান নাজিল হয়েছে কবে? প্রায় ১৪০০ বছর আগে? তখন কি বই আকারে ছিলো? না। কিন্তু কোরান ছিলো। তখন কোরান ছিলো মুখে মুখে সাহাবীদের মুখস্থ। এরপর খেজুর পাতায় লেখা হয়েছে, পাথরে লেখা হয়েছে, মাটির টেরাকোটায় লেখা হয়ে অবশেষে কাগজের বইয়ে রুপান্তরিত হয়েছে। এখন থেকে ৪০০-৫০০ বছর আগেই পুস্তক আকারে কোরান ছিলো না, কিন্তু কোরান কিন্তু কোন না কোন ফর্মে ছিলোই। তাই ফর্ম যাই হোক কোরান একটা সার্বজনীন বিষয়। কোরান মানে বই না, পাথর না, পোড়া মাটি না, খেজুর পাতাও না। কোরান মানে আল্লাহর বানী। যেটা যে কোন ভাবেই থাকতে পারে। এখন ২০১৫ সালে এসে কোরানের আয়াত লেখা কোন পাথরের টুকরা কেউ ভাঙলে আপনার কি মনে হবে কোরান অবমাননা হয়েছে? সম্ভবত না। কিন্তু পুস্তক আকারের কোন কোরানের কোন পৃষ্ঠা ছেড়া হলে নিশ্চয় আপনার গায়ে আগুন ধরে যাবে?
- তা তো যাবেই।
তিনি আরও বললেন, আমি সৌদি আরবে দেখেছি বাচ্চারা কোরান পড়তে পড়তে খুলে রেখেই চলে যাচ্ছে। আমাদের দেশে হলে বলতো, "কোরানশরিফ খুলে রাখলে শয়তানে পড়ে"।  কোরানশরিফ শয়তানে পড়া তো ভালো কথা। শয়তান তাহলে ইমানদার হয়ে যেতো কোরান পড়ে। এই বলে তিনি নিজের জোক্সে নিজেই কিছুক্ষণ হাসলেন।
সেখানে কোরান মসজিদের ফ্লোরে পরে থাকে, কেউ কোরান মাথায় দিয়ে ফ্লোরে ঘুমিয়ে থাকে, কেউ কোরান শরীফের পাতা ছিড়ে পকেটে করে নিয়ে যায় পরে পড়বে বলে। আরও অনেক কিছু করে। এসব বললে আপনার হজম করতে কষ্ট হবে। অতএব সৌদিতে পিচ্চি পোলাপাইন কোরানশরিফের সাথে যা যা করে তা যদি বাংলাদেশে করা হয় দাঙ্গা লেগে যাবে।
আমি বুঝলাম না, তাকে কি বলবো। তিনি আবার বললেন,
আল্লাহ নিজে প্রতিজ্ঞা করেছেন- "নিঃসন্দেহে আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমি তা সংরক্ষণকারী।" অতএব কোরান অবমাননা করা সম্ভব না। আপনি যাই করেন না কেন কোরানের অবমাননা হবে না। কোরান বিষয়টা অত্যন্ত ব্যপক। যেমন: একজন বাঙ্গালীর কাছে কোরান যাহ, একজন আরবের কাছে তা না। একজন কোরান পাঠ করতে পারে এরকম সাবালকের কাছে যা, একজন শিশু যে পাঠ করতে পারে না তার কাছে তা নয়। একজন পাগলের কাছে কোরান যা, একজন সুস্থ্য মানুষের কাছে তা না। একজন মুসলিমের কাছে কোরান যা, একজন অমুসলিমের কাছে তা না। কোরান একটা ব্যপক জিনিস। আল্লাহ সবার উপরে কোরান নাজিল করেছেন। কিন্তু সবার কাছে কোরানের অর্থ একই ভাবে ধরা দেবে না। কারন কোরানকে সবাই একই ভাবে অনুধাবন করতে পারবে না। তাই একই কাজ একজন সুস্থ্য মানুষ করলে যাহ, একজন অসুস্থ্য মানুষ করলে তা নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে ভিন্ন।
কোরান মানে বানী। আপনি বানীকে অসম্মান করতে পারবেন না। কোরানের মতো আরেকটা আয়াত লিখতে পারবেন না। অতএব কোরান, অবমাননাকর কিছু নাই। কেউ যদি কোরান না পড়ে, না শেখে এটা তার ক্ষতি। কোরানের নয়। কোরান এতোটাই উদারপন্থী গ্রন্থ যে আপনাকে সর্বোচ্চ ফ্রিডম দিয়ে রেখেছে এটা ব্যবহারের। এর বাইরে আমরা নামাজ, কালাম, কোরান, ধর্ম নিয়ে যে কনজার্ভেটিভ ফাইট করি এটা নিতান্তই কোরান সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতার ফল। এর সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক নেই।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে:

১। পোস্টের তথ্য গুলো কি ইসলামি শরীয়ত সম্মত?

২। কুরান কি সত্যিই অবমাননা করা যায়না?

৩। কুরান অবমাননার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?

৪। পায়ের উপর কুরান রেখে পড়া, কুরান এর উপর ঘুমানো এগুলো কি জায়েজ?

1 Answer

0 votes
by (683,400 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

কুরআনের অসম্মানী হয়,এমন কোনো কাজ করা যাবেনা।
সেটি আদবের খেলাফ।

কুরআনের নির্দেশ:

ذَٰلِكَ وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ

“আর যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, তা হৃদয়ের তাকওয়ার অংশ।”
(সূরা হাজ্জ 22:32)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: إِنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهٰذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِه اٰخَرِينَ

উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা এ কিতাব কুরআনের মাধ্যমে কোন কোন জাতিকে উন্নতি দান করেন। আবার অন্যদেরকে করেন অবনত।

(মুসলিম ৮১৭, ইবনু মাজাহ ২১৮, আহমাদ ২৩২, দারিমী ৩৪০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫১২৫, শু‘আবূল ঈমান ২৪২৮, সহীহাহ্ ২২৩৯।)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে।
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ( ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻨﻬﻰ ﺃﻥ ﻳﺴﺎﻓﺮ ﺑﺎﻟﻘﺮﺁﻥ ﺇﻟﻰ ﺃﺭﺽ ﺍﻟﻌﺪﻭ؛ ﻣﺨﺎﻓﺔ ﺃﻥ ﻳﻨﺎﻟﻪ ﺍﻟﻌﺪﻭ )

রাসূলুল্লাহ সাঃ কুরআন সাথে নিয়ে শত্রু দেশে সফর করতে নিষেধ করেছেন।যাতেকরে শত্রুরা কুরআনকে নিয়ে গিয়ে কোনোপ্রকার অসম্মান না করতে পারে।(মুয়াত্তা মালিক-৫/২,মুসনাদু আহমাদ-২/৬,৬৩, সুনানু নাসাঈ-৮৫,সুনানু ইবনি মা'জাহ২৮৮০)

الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (1 / 655):
" و) كما كره (مد رجليه في نوم أو غيره إليها) أي عمدا لأنه إساءة أدب قاله منلا ناكير (أو إلى مصحف أو شيء من الكتب الشرعية إلا أن يكون على موضع مرتفع عنالمحاذاة) فلايكره، قاله الكمال  (قوله: مرتفع) ظاهره ولو كان الارتفاع قليلاً ط قلت: أي بما تنتفي به المحاذاة عرفاً، ويختلف ذلك في القرب والبعد، فإنه في البعد لاتنتفي بالارتفاع القليل والظاهر أنه مع البعد الكثير لا كراهة مطلقاً، تأمل".
সারমর্মঃ
ঘুমের মধ্যে বা জাগ্রত অবস্থায় কুরআনের দিকে ইচ্ছাপূর্বক ভাবে পা দেওয়া মাকরুহ,কেননা এটি আদবের খেলাফ ।
কিন্তু যদি উঁচু জায়গায় হয়,অথবা দূরে হয়,তাহলে মাকরুহ হবেনা।

ইমাম নওয়াবী (রহ.) – আত্-তিবিয়ান ফি আদাব হামলাতিল কুরআন

“কুরআনকে সর্বদা পরিষ্কার, উঁচু ও সম্মানজনক স্থানে রাখা উচিত।
যদি কেউ বসে তেলাওয়াত করে, তাহলে কোলে বা হাঁটুর উপর রাখা জায়েজ—যদি তা পরিচ্ছন্ন থাকে এবং অসম্মানের উদ্দেশ্যে না হয়।”

ইমাম নবহানী – শারহু ইবন আবিদিন (হানাফি ফিকহ)

“কুরআন শরীফকে এমন জায়গায় রাখা উচিত যেখানে নাপাকির আশঙ্কা নেই।
পায়ের ওপরে রাখা কেবল তখনই অপমান হবে, যদি তা অপমানের নিয়তে হয় বা মানুষের চোখে হেয় প্রতীয়মান হয়।”

দারুল ইফতা, দারুল উলূম দেওবন্দ এর ফতোয়াঃ
“কুরআন যদি কোলে বা হাঁটুর ওপর রেখে পড়া হয় এবং পা সোজা করে রাখা হয়—তাতে কুরআনের প্রতি অসম্মান হয় না, যতক্ষণ না তা অপমানজনক মনে হয় বা অপবিত্র হয়।”

শাইখ ইবনে উসাইমীন (রহ.), সৌদি আরব:

“যদি কুরআন পা বা উরুর ওপর রাখা হয় কেবল আরাম বা সুবিধার জন্য, এবং মাটি স্পর্শ না করে, তাহলে এতে কোনো গুনাহ নেই।”

الفتاوى الهندية (5 / 322):
"مد الرجلين إلى جانب المصحف إن لم يكن بحذائه لايكره، وكذا لو كان المصحف معلقاً في الوتد وهو قد مد الرجل إلى ذلك الجانب لايكره، كذا في الغرائب"
সারমর্মঃ
কুরআনের মুসহাফের দিকে পা দেয়ার ক্ষেত্রে যদি এটি সরাসরি সামনা-সামনি না হয়,তাহলে মাকরুহ হবেনা।
অনুরুপভাবে মুসহাফ যদি উপরে লটকানো থাকে,তাহলে তার দিকে পা দেওয়া মাকরুহ হবেনা।   

শাইখ বিন বায রহঃ কে প্রশ্ন করা হয়, মসজিদে মুসল্লিদের সামনের দিকে রেহাল/আলমারিতে কুরআন থাকে। মুসল্লিরা কুরআনের দিকে পা ছড়িয়ে বসে। এতে কোন গুনাহ হবে কি?
তিনি বলেন,
ما يضر، ما يضر، ما هو المقصود الاستهانة، المقصود الاستراحة.
“ক্ষতি নেই, ক্ষতি নেই। কারণ এতে কুরআনকে অপমান করা উদ্দেশ্য নয় বরং উদ্দেশ্যে আরাম করা।”

শাইখ আব্দুর রাহমান নাসের আল বাররাক বলেন,
وأما مد الرجل إلى المصحف فإن كان مرفوعاً في دولاب ونحوه أو بعيداً فلا حرج في ذلك، وإن كان على الأرض قريباً من القدم فلا يجوز؛ لأن ذلك صورة امتهان للمصحف وإن لم يقصد من يمد رجله ذلك، فإن امتهان المصحف لا يقصده مسلم،

“আর কুরআনের দিকে পা ছড়ানোর ব্যাপারে কথা হল, কুরআন যদি আলমারি বা অন্য কিছুর উপরে অথবা দূরে থাকে তাহলে তাতে কোনও অসুবিধা নেই। আর যদি তা মাটিতে পায়ের কাছেই থাকে তাহলে তা জায়েজ নাই। কারণ এটি কুরআনকে অপমান করার একটি রূপ-যদিও সে দিকে পা ছড়ানো দ্বারা এটা তার উদ্দেশ্য না থাকে। কারণ কুরআনকে অপমান করার নিয়ত কোনও মুসলিমেরই থাকে না।” 

আদবের সম্পর্ক উরফ তথা সমাজের সাথে।
যেটাকে সমাজ বেয়াদবি মনে করে,সেটা বেয়াদবি।
আর যেটাকে সমাজ আদবের মধ্যেই গননা করে,সেটা জায়েজ,আদবের মধ্যেই সেটি পড়া।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১৫/৬৫)
,

الأدب: ہو الطریقۃ الحسنۃ في المعاشرۃ وغیرہا۔ (بذل المجہود ۱۳؍۲۰۵ بیروت)
সারমর্মঃ সামাজিক ভাবে যেটাকে সুন্দর তরীকা বলা হয়,সেটিই আদব।

ولا تقعدوا علی مکان أرفع مما علیہ القرآن۔ (حیاۃ المسلمین ۵۴ إدارۃ إسلامیات لاہور بحوالہ: فتاویٰ محمودیہ ۳؍۵۲۹ ڈابھیل)
এমন জায়গায় তোমরা বসোনা,যেই জায়গা কুরআন থেকে উঁচুতে। 

کرہ مد رجلیہ في نوم أو غیرہ إلیہا أو إلیٰ مصحف۔ (شامي، کتاب الصلاۃ / مطلب في أحکام المسجد ۱؍۶۵۶ کراچی)
وقال ابن حجر المکي: والأولی أن لا یستدبرہ۔ (الفتاوی الحدیثیۃ مطلب في
حکم مد الرجل للمصحف أو کتب العلم ۳۰۷ دار إحیاء التراث العربي بیروت)
সারমর্মঃ কুরআনের দিকে পা দেওয়া মাকরুহ।  
আরো জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কুরআনের জন্য শর্ত হলো পরিষ্কার ও সম্মানজনকভাবে রাখা এবং অপমানের নিয়ত না থাকা।

আরব দেশে উরু/হাঁটুর ওপর রাখা তাদের সংস্কৃতিতে অসম্মানজনক নয়।

কেননা তাদের উদ্দেশ্য শুধু আরামদায়কভাবে বসে পড়া এবং এতে তাদের কোন অসম্মানের নিয়ত থাকেনা, তাই সেটি অপমান হিসেবে গণ্য হয় না।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথা অনুযায়ী রেহাল বা টেবিলে রাখা উত্তম।

অন্যদের কষ্ট না দেওয়া এবং স্থানীয় আদব মেনে চলা সুন্নাহর অংশ।

ইসলামে কুরআনের প্রতি সম্মান দেখানো ফরজ, কারণ এটি আল্লাহর কালাম। তাই কুরআনকে অপমান বা অসম্মান করার মতো কিছু করা নিষিদ্ধ।
তবে কোন আচরণ অপমান হিসেবে গণ্য হবে, তা নির্ভর করে নিয়ত (উদ্দেশ্য), প্রচলিত সংস্কৃতি ও শরিয়তের নির্দেশনার উপর।

কুরআনকে মাটি বা নোংরা জায়গায় রাখা হারাম।
কুরআনকে পরিচ্ছন্ন ও উঁচু জায়গায় রাখা সুন্নাহ ও সম্মানের অংশ।

★আরব দেশগুলোতে যে ভঙ্গি তিনি দেখেছেন,

অনেক আরব দেশে মানুষ মাটিতে বসে পা সামনের দিকে ছড়িয়ে রাখে এবং হাঁটুর ওপরে বা উরুর ওপর কুরআন রাখে—যেমন কেউ কোলে বই রেখে পড়ে।
তারা এটিকে রেহালের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে, অপমান হিসেবে নয়।
তাদের সংস্কৃতিতে এটি অসম্মানজনক ধরা হয় না।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ইত্যাদি অঞ্চলে কুরআন সাধারণত রেহাল বা টেবিলের ওপর রাখা হয়।
এখানে পায়ের কাছে বা পায়ের ওপর রাখাকে মানুষ অসম্মানজনক মনে করে, তাই কেউ করলে অনেকে অস্বস্তি বোধ করেন।

যদি পরিষ্কার কাপড়, উরু বা হাঁটুর ওপর রেখে পড়া হয় এবং অপমানের নিয়ত না থাকে, তবে শরিয়ত অনুযায়ী তা কুরআনের অবমাননা নয়।

তবু যেখানে আপনি আছেন সেই সমাজের প্রচলিত শিষ্টাচার মেনে চলা জরুরী, যেন কারও মনে কষ্ট না লাগে।

সবসময় কুরআনকে পরিষ্কার ও উঁচু জায়গায় রাখা এবং সম্মানের সঙ্গে ধরাই সর্বোত্তম আদব।

সুতরাং আমাদের দেশে কুরআনকে পায়ের উপর রাখা আদবের খেলাফ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...