আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
36 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (27 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ।
এক বোন হারাম রিলেশন থাকা অবস্থায় ওই ছেলের সাথে ফিজিক্যালি ক্লোজ হয়ে যায়।পরিপূর্ণ ফিজিক্যাল সম্পর্ক হয়নি,তবে এমন কিছু ছবি ওই ছেলের কাছে আছে যেগুলো দেখলেই বোঝা যায় ওরা যে ফিজিক্যালি ক্লোজ হয়েছে।

রিলেশন চলাকালীন মেয়ের পরিবার জানতে পারলে (ফিজিক্যালি সম্পর্কের কথা জানে না) অনেক শাসণ করে,বকাঝকা করে।যার ফলে ওই বোন ছেলেটার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।বর্তমানে বোনটার মধ্যে অনুশোচনা কাজ করছে এবং আল্লাহর ভয় এসেছে।কিন্তু ছেলেটার সাথে কথা বন্ধ রাখলে ছেলেটা ব্ল্যাকমেইল করে এবং বলে এই ছবিগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিবে।ব্ল্যাকমেইল করার কারনে ওই বোন ভয়ে কথা বলতে হয়।১০-১৫ দিন একবার দুইবার কথা বলে।একবার অনেকদিন কথা বন্ধ রাখায় ছেলেটা তার চাচাতো ভাইকে ছবিগুলো পাঠায়।এসব করে ওই বোনকে কথা বলতে বাধ্য করে।এটা দ্বারা বোঝা যায় কথা বন্ধ করলে সে আসলেই ছবিগুলো আপলোড করবে।

ওই বোন এখন অসহায়ের মতো আছে।পরিবারকে শেয়ার করলে উল্টো বোনকেই ভুল বুঝবে।বোনটা তওবা করে ফিরে আসতে চাইছে এটা তার পরিবার বুঝবে না।সম্মানের ভয়ে কারো কাছে শেয়ার করতে পারছে না।বোনটার এখন করনীয় কি।কিভাবে এটা থেকে মুক্তি পাবে?উস্তাদ প্লিজ একটা উত্তম পরামর্শ দিন।

1 Answer

0 votes
by (683,400 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আপনি যেই বিষয় প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন,
সেটি খুবই সংবেদনশীল, বেদনাদায়ক, এবং একই সঙ্গে এমন এক পরিস্থিতি যেখানে মানসিক, সামাজিক ও ধর্মীয়—সব ধরনের সাপোর্ট দরকার।

প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ – ভয় পেও না, আল্লাহর রহমত অনেক বড়

 ﴿قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ﴾
“হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।”

(সূরা আয-যুমার ৩৯:৫৩)

অর্থাৎ যত বড় গোনাহই হোক, আন্তরিক তওবা করলে আল্লাহ তা মাফ করে দেন।
তাই প্রথম কাজ — সত্যিকারের তওবা করা।

আন্তরিকভাবে কাঁদা,
ওই কাজের সব রাস্তা বন্ধ করা,
আবার যেন সে কাজের কাছে না যায় — এই দৃঢ় সংকল্প নেওয়া।

★ছেলেটার ব্ল্যাকমেইল — এটা স্পষ্ট “অপরাধ” (জুলুম ও ডিজিটাল ব্ল্যাকমেইল)

এই অবস্থায় ওই ছেলেটা গুরুতর অপরাধ করছে, ইসলামী দৃষ্টিতেও এবং দেশের আইনে (ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন অনুযায়ী) এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

তাই বোনটির উচিত:
ছেলেটার সব হুমকির প্রমাণ (চ্যাট, ভয়েস, স্ক্রিনশট) গোপনে সংরক্ষণ করা।

সরাসরি নয়, বরং বিশ্বস্ত মহিলা আত্মীয় বা আল্লাহভীরু বড় ভাই/আপু, বা ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার/নারী সাপোর্ট সংগঠনের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া।

যদি একেবারেই না পারে, তবে স্থানীয় থানার সাইবার ইউনিট বা “সাইবার ক্রাইম” শাখায় নারী অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করা (বাংলাদেশে ৯৯৯-এ ফোন দিলে তারা গোপনে সাহায্য করে এবং পরিচয় গোপন রাখে)।

ছেলেটাকে একদম ভয় দেখিয়ে বা রাগিয়ে কিছু বলা ঠিক না, বরং আইনি ও বুদ্ধিমত্তার পথে কাজ করা দরকার।

★ওই বোনের জন্য মানসিক ও আত্মিক করণীয়

আল্লাহর দিকে ফিরে আসা (তওবা ও ইস্তেগফার):

প্রতিদিন নামায পড়া (যদি না পড়তে পারে, আজ থেকেই শুরু করা)।

“আস্তাগফিরুল্লাহ” বেশি বেশি পড়া।

রাতে একাকী অবস্থায় আল্লাহর কাছে কান্না করে বলা:

 “ইয়া আল্লাহ! আমি ভুল করেছি, তুমি আমাকে মাফ করে দাও, আমাকে নিরাপদ রাখো, আর যেন আমি সেই পথে না ফিরি।”

কিছু বিশেষ দোআ পড়তে পারে:

 اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي وَاحْصُنْ فَرْجِي وَطَهِّرْ قَلْبِي

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমার গোনাহ ক্ষমা করো, আমার লজ্জাস্থানকে হেফাজত করো, আমার অন্তরকে পবিত্র করো।”

★পরিবারকে বলা নিয়ে ভয় থাকলেও…যদি একেবারে ভরসাযোগ্য কেউ থাকে —
যেমন: মা, খালা, বড় আপু, বা আল্লাহভীরু আত্মীয় — তাহলে তাদের সঙ্গে আংশিক সত্যি শেয়ার করা যায়, যেমনঃ
“একজন ছেলে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছে, আমার কিছু ছবি আছে ওর কাছে। আমি এখন বিপদে।”
 সম্পূর্ণ বিস্তারিত না বললেও হবে; শুধু মূল বিপদ বললেই অনেক সময় পরিবার প্রতিরক্ষা দিতে পারে।


যেহেতু সম্পূর্ণ শারীরিক সম্পর্ক হয়নি, কিন্তু “ফিজিক্যাল ক্লোজনেস” হয়েছে — এটি বড় গোনাহ (কবীরা গুনাহ) হলেও তওবার দরজা খোলা।

অতএব, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ —
সেই ছেলেটির সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করা,
দোআ, নামায, রোযা, কুরআন তেলাওয়াত ও দান-সদকা মাধ্যমে আত্মাকে শুদ্ধ করা।

আন্তরিকভাবে তওবা করা
ছেলেটার হুমকির প্রমাণ সংরক্ষণ করা
বিশ্বস্ত কারও (বিশেষত মহিলা) সহায়তা নেওয়া
প্রয়োজনে ৯৯৯ বা সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ করা
নামায, দোআ, রোযার মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্যে ফেরা
ভবিষ্যতে বিপদ থেকে বাঁচতে একা পুরুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ থেকে বিরত থাকা

শেষ কথা:
এই বোনটির জন্য সবচেয়ে বড় আশ্রয় হচ্ছে আল্লাহ। তিনি ستر (লজ্জা ঢেকে রাখা) ভালোবাসেন, তাই যতক্ষণ বোন নিজে গুনাহ প্রকাশ না করে, আল্লাহ তা দুনিয়া ও আখিরাতে ঢেকে রাখবেন ইনশা’আল্লাহ।

 النبي ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি অন্যের (নিজের বা অন্যের) গোপন দোষ ঢেকে রাখে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।”
 সহীহ মুসলিম (হাদীস: ২৫৯০)

(কিছু তথ্য সংগৃহীত।) 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...