আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
28 views
ago in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম।আমি  এর ২২৮ ব্যচের একজন স্টুডেন্ট ছিলাম।২০২৪ সালে অর্ধেকদ্বীনের মাধ্যমে আমার বিবাহ হয়।এখন সমস্যাটা হচ্ছে আমার সংসার জীবন নিয়ে।আমার স্বামী বিয়ের আগে একাধিক প্রেম শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।আমি প্রেম করেছি একটা কিন্তু সেটা শারীরিক সম্পর্ক অবদি যায়নি বা খুববেশি গভীরও ছিল না।অতীত সবারি কমবেশি থাকে তাই তার এই প্রেমের বিষয়টা আমি জানার পর কিছু বলিনি।এখন আমার সমস্যা হলো আমার স্বামী ইদানীং তার পুরাতন প্রেমিকাদের ছবি দেখেন।খারাপ ছবি দেখেন মেয়েদের।তিনি বলেন তিনি এটা শয়তানের ওয়াসওয়াসায় করছেন।আবার তিনি সিগারেটও খান।এটা বিয়ের পর জানছি।তিনি বলেন সিগারেট খাওয়ার মাকরূহ। এখন আমার প্রশ্ন হলো আমার স্বামী বারবার এসব নারীর ছবি দেখেন বলেন যে আর করবেন না কিন্তু আবারো করেন।এখন আমার কি করা উচিত?তাকেডির্ভোস দিয়ে দিবো?পরবর্তীতে সে পরকিয়া করার সম্ভবনা কতটুকু?

বিয়ের সময়  তারা আরো অনেককিছুই গোপন করেছে।

1 Answer

0 votes
ago by (687,930 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

আপনার স্বামী যে পূর্বের প্রেমিকার ছবি দেখেন, এটা গুনাহের কাজ, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান রক্ষা করে; এতে তাদের জন্য পবিত্রতা রয়েছে।”
— (সূরা আন-নূর ২৪:৩০)

অর্থাৎ, গায়রে মাহরাম নারীর ছবি দেখা — ইসলামে হারাম (গুনাহ)।

*তিনি গুনাহ করছেন – কিন্তু তওবা করার চেষ্টা করছেন

যদি তিনি স্বীকার করেন যে এটা ভুল, অনুতপ্ত হন, এবং বলেন “আর করব না”— কিন্তু মাঝে মাঝে আবার শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে যান,

তাহলে এটি "গুনাহ + দুর্বল ঈমান" এর লক্ষণ,
কিন্তু তিনি ইসলামের বাইরে চলে যাননি।
এখন তার দায়িত্ব হলো তওবা করে গুনাহ থেকে দূরে থাকা, এবং আপনার দায়িত্ব হলো ধৈর্য ও হিকমত (বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে সহায়তা করা।

সিগারেট খাওয়া নিয়ে আলেমদের মধ্যে কিছু মতভেদ আছে।
অনেকেই বলেন এটি হারাম, কেউ কেউ বলেন মাকরূহ তাহরিমি।

কিন্তু যেহেতু এটি শরীরের ক্ষতি করে, তাই অধিকাংশ আলেম এটিকে হারামই বলেছেন।

তবে এটি বিবাহবিচ্ছেদের কারণ নয় — বরং এটি একটি খারাপ অভ্যাস যা ধীরে ধীরে ছাড়ানো যায়।

আপনি এখন যা করবেনঃ-

ধাপ ১: আল্লাহর কাছে দোয়া ও ধৈর্য

প্রতিদিন নামাজের পর দোয়া করুন যেন আল্লাহ আপনার স্বামীকে হিদায়াত দেন।

দোয়া করুন যেন আপনার ধৈর্য ও মনের শান্তি অটুট থাকে।


ধাপ ২: শান্তভাবে কথা বলুন (রাগ বা কান্না নয়)

একটি সময় বেছে নিন যখন তিনি শান্ত থাকেন,
নরম ভাষায় বলুন:

 “আমি জানি আপনি চেষ্টা করছেন বদলাতে, আমি শুধু চাই আপনি সত্যিই আল্লাহর জন্য পরিবর্তন হোন, কারণ এসব জিনিস আমাদের সম্পর্কে আঘাত দেয়।”

এরকম কথা অপরাধবোধ তৈরি করে, কিন্তু অপমান করে না।

ধাপ ৩: তাকে সহায়তা দিন বদলাতে

মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যবহারে কিছু সীমা নির্ধারণ করতে বলুন।

একসাথে নামাজ পড়া বা ইসলামী ভিডিও দেখা শুরু করতে পারেন।

চাইলে একজন মুরব্বি, ধর্মীয় পরামর্শদাতার সাহায্য নিন।

ধাপ ৪: ডিভোর্সের আগে ভাবুন — এটা শেষ পথ

তালাক ইসলাম অনুমোদিত করেছে, কিন্তু এটা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় বৈধ কাজ।

“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত বৈধ কাজ হলো তালাক।” — (আবু দাউদ)

তালাক তখনই যুক্তিযুক্ত হয় যখন:
স্বামী সম্পূর্ণভাবে বদলাতে অস্বীকার করে,পরকীয়াতে লিপ্ত হয়,কোনোভাবেই পরকীয়া থেকে ফিরতে না চায়,
আপনাকে মানসিক,শারীরিকভাবে কষ্ট দেয়,বা গুনাহে নিমগ্ন থেকে সংসার ভেঙে ফেলছে।

যদি তিনি অনুতপ্ত হন, চেষ্টা করেন পরিবর্তনের —তাহলে একটু সময় দিন।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
তার অন্তরে আপনার প্রতি প্রবল মুহাব্বত ভালোবাসা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করুন।

এক্ষেত্রে কিছু কৌশল ও কর্মপন্থা আছে,
যেগুলো অবলম্বন করলে স্ত্রী স্বামীর
ভালোবাসা পেতে পারেন। যেমন- 

তার সামনে সুন্দর/আকর্ষণীয় পোশাক পড়ুন। আপনার চুল সব সময় আঁচড়ে রাখুন। 

আপনার স্বামী বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার সময় দরজায় এমন ভাবে ছুটে যান যেন আপনি তারই অপেক্ষায় ছিলেন। দরজা খোলার সাথে সাথেই হাসিমুখে সালাম দিন। ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই সমস্যার কথা বলা শুরু করবেন না। তাকে কিছুটা মানসিক বিরতি দিন। 

শাশুড়ির সাথে ভাল আচরণ করুন।
আপনার স্বামীর এমন বিষয়ে প্রশংসা করুন যে বিষয়ে তিনি নিজে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নন।

আপনার স্বামীকে মাঝে মধ্যে কোন গৃহস্থালি কাজ দিন, কাজটি করে ফেললে তাকে ধন্যবাদ জানান। এতে সে আরও উৎসাহিত হবে। সে যখন কোন একঘেয়ে কথা বলে, তার কথা ধৈর্য ধরে শুনুন। 

আপনার স্বামীকে বারবার বলুন আপনি তাকে ভালোবাসেন, ভালোবাসেন।

স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাহিরে যাবেন না, আর তাকে না জানিয়ে তো অবশ্যই বের হবেন না। আপনার স্বামী আপনার জন্য কষ্ট করে কাজ করে উপার্জন করছেন এবং আপনার খাওয়া-পরার বন্দোবস্ত করছেন- এই ব্যপারটির সবসময় প্রশংসা করুন। 

প্রতি ওয়াক্তের নামাজে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আপনাদের মধ্যকার ভালবাসার ও সহমর্মিতার বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে দেন এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করেন। দোয়ার মত কার্যকরী কিছুই নেই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা তখনই থাকে যখন আল্লাহ তাদের মাঝে এটা দেন। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় তাকে ডাকুন এবং আপনার সাথে তাকেও নামাজ পড়তে বলুন। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আপনাদের দুজনকেই মুত্তাকী হতে সাহায্য করেন। 
সর্বাগ্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা করুন। যদি সমস্ত স্ত্রীরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টায় রত থাকে, নিশ্চিতভাবেই তারা তাদের স্বামীদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারবে। 
(সংগৃহীত।)

তবে কেহ কেহ নিম্নের আমলের কথা বলেছেন,যদিও আমলটির দলিল নেই,তবে বুযুর্গানে দ্বীন বলে থাকতে পারেন।
এ আমলটি করা যেতে পারে।

ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻣَﻦْ ﻳَﺘَّﺨِﺬُ ﻣِﻦْ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻧْﺪَﺍﺩًﺍ ﻳُﺤِﺒُّﻮﻧَﻬُﻢْ ﻛَﺤُﺐِّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﺷَﺪُّ ﺣُﺒًّﺎ ﻟِﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﻮْ ﻳَﺮَﻯ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻇَﻠَﻤُﻮﺍ ﺇِﺫْ ﻳَﺮَﻭْﻥَ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏَ ﺃَﻥَّ ﺍﻟْﻘُﻮَّﺓَ ﻟِﻠَّﻪِ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﻭَﺃَﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺷَﺪِﻳﺪُ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏِ
(সুরা বাকারা : আয়াত ১৬৫)

যদি কোনো স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে তখন স্ত্রী মিষ্টি জাতীয় বস্তুর ওপর এ আয়াত পাঠ করে দম (ফুঁ) করবে এবং স্বামীকে তা আহার করাবে। আল্লাহর ইচ্ছায় অসন্তুষ্ট স্বামী স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট হবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...