আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“তোমার প্রভুর পথে আহ্বান কর হিকমত ও সুন্দর উপদেশ দ্বারা।”
— (সূরা আন-নাহল ১৬:১২৫)
অর্থাৎ, দাওয়াহ দিতে হবে বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে।
তাহলে স্পষ্ট বোঝা যায়,
যদি কেউ কুরআন বা হাদীসের আংশিক অংশ ব্যবহার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, সেটা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়।
রাসূল ﷺ দাওয়াহ সম্পর্কে বলেছেন
“আমার পক্ষ থেকে একটিমাত্র আয়াত হলেও পৌঁছে দাও।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৪৬১)
এই হাদীস প্রমাণ করে —
একজন ব্যক্তি চাইলে কুরআন বা হাদীসের “আংশিক” কোনো অংশ দিয়েও দাওয়াহ দিতে পারেন,
যদি সেটা সঠিকভাবে বুঝে ও যথাযথ অর্থে উপস্থাপন করেন।
অর্থাৎ, “একটি আয়াতও বলো” — কিন্তু বিকৃত না করে, সঠিক ব্যাখ্যায় বলো।
আংশিক আয়াত বা হাদীস ব্যবহার করা কখন জায়েজ! যখন নিম্নের শর্তগুলো পূরণ হয়ঃ-
১. অর্থ বিকৃত হবে না।আয়াত বা হাদীসের বাক্য এমনভাবে কাটা যাবে না যাতে ভুল অর্থ বোঝায়।
২. প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে হবেআয়াতটি কোন প্রসঙ্গে নাজিল হয়েছে বা হাদীসটি কোন বিষয়ে। তা অন্তত সংক্ষেপে জানাতে হবে।
৩. নিজস্ব মত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।দাওয়াহ হবে আল্লাহ ও রাসূল ﷺ এর বাণীর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ব্যক্তিগত মতামত নয়।
৪. অজ্ঞ ব্যক্তি নিজের ব্যাখ্যা দিবে না।
যদি গভীর ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়, আলেমদের ব্যাখ্যা অনুসরণ করতে হবে।
৫. আংশিক উদ্ধৃতি দিলে উৎস উল্লেখ করতে হবে।
যেন মানুষ বুঝতে পারে এটা কুরআন/হাদীসের অংশবিশেষ, পুরো নয়।
আংশিক উদ্ধৃতি দিলে বিপদ কী হতে পারে
কুরআন নিজেই সতর্ক করেছে:
“তোমরা কি কিতাবের একাংশে বিশ্বাস করো আর একাংশ অস্বীকার করো?”
(সূরা আল-বাকারা ২:৮৫)
অর্থাৎ, আংশিকভাবে তুলে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া বা নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা —
এটা আল্লাহর নিকট কঠোরভাবে নিন্দিত কাজ।
অনেক সময় দেখা যায়, কেউ আয়াতের প্রথম অংশ তুলে “নরম” বার্তা দেয়, কিন্তু শেষ অংশে থাকা সতর্কতা বা শাস্তির কথা লুকিয়ে রাখে,
এভাবে করলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়, এবং দাওয়াহ ভুল পথে যায়।
ধরা যাক, কেউ শুধু এই অংশ বলে:
“আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমার ধর্ম তোমার জন্য, আমার ধর্ম আমার জন্য।’”
(সূরা আল-কাফিরুন ১০৯:৬)
যদি কেউ এই আয়াত দিয়ে “সব ধর্ম সমান” বোঝায়, তাহলে এটা ভুল ব্যাখ্যা,
কারণ আয়াতটির প্রকৃত অর্থ —
“আমি তোমাদের ধর্মে বিশ্বাসী নই, তোমরাও আমার ধর্মে নও।”
অর্থাৎ এটি সীমা নির্ধারণের আয়াত, “সমতার” নয়।
তাই আয়াতের আংশিক উদ্ধৃতি সঠিক নয়,
বরং সম্পূর্ণ অর্থ বুঝে দাওয়াহ দিতে হবে।
হাদীসের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম
রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামে মিথ্যা বর্ণনা করবে, সে যেন জাহান্নামে নিজের জায়গা তৈরি করে নেয়।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস ১০৭)
অর্থাৎ, ভুল বা অসম্পূর্ণভাবে হাদীস প্রচার করাও বড় গুনাহ।
যদি কেউ হাদীসের শুধু অর্ধেক তুলে ভিন্ন বার্তা দেয় — সেটিও “বিকৃতি”র অন্তর্ভুক্ত।
কুরআন বা হাদীসের “আংশিক” অংশ দিয়ে মানুষকে দাওয়াহ দেওয়া জায়েজ ও সওয়াবের কাজ,
কিন্তু শর্ত হলো —
আপনি যেন সেই অংশের অর্থ, প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য ঠিকভাবে বুঝে বলেন,
এবং কোনো অংশ বাদ দিয়ে ভুল বার্তা না দেন।