আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
13 views
ago in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (5 points)
اَلسَّلاَمْ عَلَيْـــــــــــكُمْ وَ رَحْمَةُ اللہِ وَبَرَكَاتُهُ

উস্তাদ,আমার এক বোন ইবনে কাসির তাফসির পড়ে ছোট ছোট নোট করছে।সে জেনারেলে পড়াশোনা করা।তবে দ্বীনের প্রতি অনেক আগ্রহ।তার নোট গুলো অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে চায়।আমি একটা অংশ তুলে ধরছি ইনশাআল্লাহ।

সূরা বাকারা, আয়াত ০৭


আল্লাহ তাদের অন্তরে এবং তাদের কানে মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের চোখসমূহে রয়েছে পর্দা। আর তাদের জন্য রয়েছে মহাআযাব।


তাফসির ইবনে কাসির হতে গৃহীত:

(মুফাসসির হযরত সুদ্দী (রঃ) বলেছেন যে, خَتَمٌ-এর অর্থ মোহর করে দেয়া। হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেনঃ ‘অর্থাৎ শয়তান তাদের উপর বিপুলভাবে জয়লাভ করেছে এবং তারা তারই আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত তাদের অন্তরে ও কানে আল্লাহর মোহর লেগে গেছে এবং চোখের উপর পর্দা পড়ে গেছে। সুতরাং তারা হিদায়াতকে দেখতেও পাচ্ছে না, শুনতেও পাচ্ছে না। এবং তা বুঝতেও পারছে না!' হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ ‘পাপ মানুষের অন্তরে চড়ে বসে এবং তাকে চারদিক থেকে ঘিরে নেয়। এটাই হচ্ছে মোহর ।


মুজাহিদ (রঃ তাঁর হাতটি দেখিয়ে বললেনঃ ‘অন্তর হাতের তালুর মত। বান্দার পাপের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। বান্দা একটা পাপ করলে তখন তার কনিষ্ঠ অঙ্গুলিটি বন্ধ হয়ে গেল। দুটো পাপ করল তখন তার দ্বিতীয় অঙ্গুলিও বন্ধ হয়ে গেল। এভাবে সমস্ত অঙ্গুলি বন্ধ হয়ে গেল। এখন মুষ্টি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেল এবং ওর ভিতরে কোন জিনিস অনুপ্রবেশ করতে পারবে না। এভাবেই নিরন্তর পাপের ফলে অন্তরের উপর কালো পর্দা পড়ে যায় এবং মোহর লেগে যায়। তখন আর সত্য তার মধ্যে ক্রিয়াশীল হয় না। একে رَيْن ও বলা হয়। ভাবার্থ হলো এই যে, তার অহমিকা, এবং সত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। যেমন বলা হয় যে, অমুক ব্যক্তি এ কথা শুনা হতে বধির হয়ে গেছে। উদ্দেশ্য হয় এই যে, অহংকার করে সে এ কথার দিকে কান দেয়নি।


ইমাম ইবনে জারীরের (রঃ) ফায়সালা এই যে, হাদীসে এসেছেঃ মুমিন যখন পাপ করে তখন তার অন্তরে একটা কালো দাগ হয়ে যায়। যদি সে পাপ কার্য হতে ফিরে আসে ও বিরত হয়, তবে ঐ দাগটি আপনি সরে যায় এবং তার অন্তর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। আর যদি সে গুনাহ করতেই থাকে তবে সেই পাপও ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত তার সমস্ত অন্তরকে ছেয়ে ফেলে। এটাই সেই মরিচা যার বর্ণনা এই আয়াতে রয়েছেঃ “নিশ্চয় তাদের খারাপ কাজের কারণে তাদের অন্তরে মরিচা পড়ে গেছে' (সুনান-ই-নাসাঈ, জামেউত তিরমিযী, তাফসীর-ই-ইবেন জারীর)। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাহলে জানা গেল যে, পাপের প্রাচুর্য অন্তরের উপর পর্দা ফেলে দেয় এবং এর পরে আল্লাহর মোহর হয়ে যায়। আল্লাহ তা'আলাই এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী জানেন।আর এটা আমাদের চোখের দেখা যে, যখন কোন জিনিসের মুখে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়, তখন যে পর্যন্ত মোহর ভেঙ্গে না যায় সে পর্যন্ত তার ভিতরে কিছু যেতেও পারে না এবং তা থেকে কিছু বেরও হতে পারে না। এ রকমই কাফিরদের অন্তরে ও কানে আল্লাহর মোহর লেগে গেছে, সেই মোহর না সরা পর্যন্ত তার ভিতরে হিদায়াত প্রবেশ করতে পারবে না এবং তা থেকে কুফরও বেরিয়ে আসতে পারবে না।)


১/আমার প্রশ্ন হচ্ছে,এমন করে গুরুত্বপূর্ণ ও সামান্য অংশ দিয়ে মানুষকে দাওয়া দেয়া যাবে কিনা। এখানে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে ইবনে কাসীর থেকে।কোনো পরিবর্তন আনেন নি ।শুধু একটা আয়াতে সব ব্যাখ্যা না করে(যেহেতু অনেক বড়) একটা অংশ হুবহু তুলে ধরেছেন। আপু উদ্দেশ্যে যেহেতু ইবনে কাসীর সম্পূর্ণ পড়ার সময় পান না অনেকেই।,বর্তমান ব্যস্ততার জীবনে ,তাই তার লেখাগুলো অন্যরা পড়ে যদি উপকৃত হন এবং আখেরাতের সওয়াবের আশায়।

২/তবে তাফসির যেহেতু অনেক গুনী মানুষের বিষয় তিনি ভয় ও পান কোনো ভুল হয় কিনা। প্রতিটা শব্দ অবিকৃত রাখার চেষ্টা করেন।এটা কি কপিরাইটের আওতায় আসবে উস্তাদ?আর এমন একটা অংশ তুলে ধরে দ্বীনি কোনো গ্রুপে সেয়ার করা যাবে কিনা যেন অন্যরা পড়তে পারে জানাবেন উস্তাদ ইনশাআল্লাহ।

1 Answer

0 votes
ago by (687,930 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“তোমার প্রভুর পথে আহ্বান কর হিকমত ও সুন্দর উপদেশ দ্বারা।”
— (সূরা আন-নাহল ১৬:১২৫)

অর্থাৎ, দাওয়াহ দিতে হবে বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে।
তাহলে স্পষ্ট বোঝা যায়,
যদি কেউ কুরআন বা হাদীসের আংশিক অংশ ব্যবহার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, সেটা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়।

রাসূল ﷺ দাওয়াহ সম্পর্কে বলেছেন
“আমার পক্ষ থেকে একটিমাত্র আয়াত হলেও পৌঁছে দাও।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৪৬১)

এই হাদীস প্রমাণ করে —
একজন ব্যক্তি চাইলে কুরআন বা হাদীসের “আংশিক” কোনো অংশ দিয়েও দাওয়াহ দিতে পারেন,
যদি সেটা সঠিকভাবে বুঝে ও যথাযথ অর্থে উপস্থাপন করেন।

অর্থাৎ, “একটি আয়াতও বলো” — কিন্তু বিকৃত না করে, সঠিক ব্যাখ্যায় বলো।


আংশিক আয়াত বা হাদীস ব্যবহার করা কখন জায়েজ! যখন নিম্নের শর্তগুলো পূরণ হয়ঃ-

১. অর্থ বিকৃত হবে না।আয়াত বা হাদীসের বাক্য এমনভাবে কাটা যাবে না যাতে ভুল অর্থ বোঝায়।

২. প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে হবেআয়াতটি কোন প্রসঙ্গে নাজিল হয়েছে বা হাদীসটি কোন বিষয়ে।  তা অন্তত সংক্ষেপে জানাতে হবে।

৩. নিজস্ব মত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।দাওয়াহ হবে আল্লাহ ও রাসূল ﷺ এর বাণীর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ব্যক্তিগত মতামত নয়।

৪. অজ্ঞ ব্যক্তি নিজের ব্যাখ্যা দিবে না।
যদি গভীর ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়, আলেমদের ব্যাখ্যা অনুসরণ করতে হবে।

৫. আংশিক উদ্ধৃতি দিলে উৎস উল্লেখ করতে হবে।
যেন মানুষ বুঝতে পারে এটা কুরআন/হাদীসের অংশবিশেষ, পুরো নয়।

আংশিক উদ্ধৃতি দিলে বিপদ কী হতে পারে

কুরআন নিজেই সতর্ক করেছে:
 “তোমরা কি কিতাবের একাংশে বিশ্বাস করো আর একাংশ অস্বীকার করো?”
(সূরা আল-বাকারা ২:৮৫)

অর্থাৎ, আংশিকভাবে তুলে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া বা নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা —
এটা আল্লাহর নিকট কঠোরভাবে নিন্দিত কাজ।

অনেক সময় দেখা যায়, কেউ আয়াতের প্রথম অংশ তুলে “নরম” বার্তা দেয়, কিন্তু শেষ অংশে থাকা সতর্কতা বা শাস্তির কথা লুকিয়ে রাখে, 
এভাবে করলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়, এবং দাওয়াহ ভুল পথে যায়।

ধরা যাক, কেউ শুধু এই অংশ বলে:
“আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমার ধর্ম তোমার জন্য, আমার ধর্ম আমার জন্য।’”
(সূরা আল-কাফিরুন ১০৯:৬)

যদি কেউ এই আয়াত দিয়ে “সব ধর্ম সমান” বোঝায়, তাহলে এটা ভুল ব্যাখ্যা,
কারণ আয়াতটির প্রকৃত অর্থ —

“আমি তোমাদের ধর্মে বিশ্বাসী নই, তোমরাও আমার ধর্মে নও।”
অর্থাৎ এটি সীমা নির্ধারণের আয়াত, “সমতার” নয়।

তাই আয়াতের আংশিক উদ্ধৃতি সঠিক নয়,
বরং সম্পূর্ণ অর্থ বুঝে দাওয়াহ দিতে হবে।

হাদীসের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম

রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামে মিথ্যা বর্ণনা করবে, সে যেন জাহান্নামে নিজের জায়গা তৈরি করে নেয়।”
 (সহীহ বুখারী, হাদীস ১০৭)

অর্থাৎ, ভুল বা অসম্পূর্ণভাবে হাদীস প্রচার করাও বড় গুনাহ।
যদি কেউ হাদীসের শুধু অর্ধেক তুলে ভিন্ন বার্তা দেয় — সেটিও “বিকৃতি”র অন্তর্ভুক্ত।

কুরআন বা হাদীসের “আংশিক” অংশ দিয়ে মানুষকে দাওয়াহ দেওয়া জায়েজ ও সওয়াবের কাজ,
কিন্তু শর্ত হলো —
আপনি যেন সেই অংশের অর্থ, প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য ঠিকভাবে বুঝে বলেন,
এবং কোনো অংশ বাদ দিয়ে ভুল বার্তা না দেন।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
প্রশ্নের বিবরণ মতে এভাবে মানুষকে দাওয়াহ দেয়া যাবে।

(০২)
প্রশ্নের বিবরণ মতে জানামতে এক্ষেত্রে এটি কপিরাইটের আওতায় আসবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...