আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
39 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (5 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমার একজন প্রতিবেশী আন্টি প্রশ্ন করেছে। উনার প্রেক্ষাপট আগে জানিয়ে নিচ্ছি, তাহলে সুবিধা হবে। আন্টির স্বামী একাধিক বিয়ে করেছিলো। আন্টিকে এবং তার কন্যা সন্তানকে কোনপ্রকার ভরণপোষণ-সম্পদ দেয়নি, উনার সতীনের ফ্যামিলিতেই উনার স্বামী সবকিছু দিয়েছেন। উনি নিঃস্ব, অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করতেন। সারাদিন রাত কঠোর পরিশ্রম করতেন উপার্জনের জন্য। কোনদিন মাছ-মাংস-সবজি-ডাল-ফলমুল এসব খেতে পারতেন না অর্থাভাবে। কোন কোন দিন ভাতও খেতে পারেন না, শুধু পানি খেয়ে দিন পার করতে হয়। চরম অপুষ্টিতে ভুগে উনার মেয়ে অনেক দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলো। উনি বাসা ভাড়াও দিতে পারতেন না, তাই বাড়িওয়ালা গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছিলো। পরিচিত মানুষদের সহযোগিতায় চলতেন তিনি। উল্লেখ্য যে, আন্টি শিক্ষিত এবং সম্মানিত একজন মহিলা, উনার স্বামীর প্রচুর সম্পদ থাকা সত্ত্বেও উনাকে কিছুই দেননি উনার স্বামী। উনি অর্থাভাবে, খাদ্য ও মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হতে হতে কঠোর প্রকৃতির হয়ে গিয়েছেন এবং প্রায়ই ইসলাম বিদ্বেষী কথাবার্তা বলেন। উনি এখন আমাদের প্রশ্ন করেছেন যে, এমন কোন মহিলা সাহাবীর উদাহরণ আছে কি যিনি এমন অবস্থায় দিনাতিপাত করেছেন এবং এর সমাধানই বা কি? উনি উনার মেয়েকে পর্দা করাতে নারাজ। উনার ভাষ্যমতে পর্দা করলেই মেয়েরা বেশি অত্যাচারিত হয়, এমনকি উনি উনার বিয়েও দিতে চান না। উনার মেয়ের স্বভাবেও মেয়েলি প্রভাব কম, কঠোরতা বেশি, নারিবাদী প্রভাব প্রচুর। তবে আমি ছোট বেলা থেকে তাদের দেখেছি, তাই আমি জানি এই ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব একদিনে তৈরি হয়নি, তারা জুলুমের শিকার হতে হতে এমন হয়েছে, তাই তাদের প্রতি মায়া লাগে। কিন্তু তাদের ইসলামের কথা বললে অন্যভাবে যুক্তি দেখাতে থাকে যা ইসলামের সাথে যায় না। উনার ধারনা, উনার মতো কোন উদাহরণ ইসলামে নেই, উনিই শুধুমাত্র এত কষ্ট করেছেন। এখন উনি চাচ্ছেন এমন উদাহরণ থাকলে তা যেন আমরা বের করে দেই। উনাদের আরো ধারণার মধ্যে আছে, দোয়া কোন কাজের না, আল্লাহ কবুল করেন না। পর্দার জন্য আল্লাহ পাকড়াও করবেন না, শুধু আখলাক ভালো থাকলেই হবে। মেয়েদের ছেলেদের মতো হতে হবে, নাহলে পস্তাতে হবে। বিয়ে একটা ফাদ- ইত্যাদি আরো অনেক ভুল ধারণা আছে উনার।

1 Answer

0 votes
by (703,830 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


*হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ)
আসমা (রাঃ) বলেন — “আমি যুহায়র উটের দেখাশোনা করতাম, ঘাস কাটতাম, খাবার তৈরি করতাম, ময়দা পেষাতাম। আমার স্বামী যুবায়ের (রাঃ)-এর কোনো চাকর ছিল না। আমি দূর থেকে পানি নিয়ে আসতাম, আর উটের ঘাড়ে তা বহন করতাম।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ৪৮২)

তিনি একজন সাহাবিয়ার মেয়ে, তবুও চরম দারিদ্র্য ও কষ্টে জীবনযাপন করেছেন। তাঁর ধৈর্য, আত্মসম্মান ও ঈমান তাঁকে আল্লাহর কাছে মর্যাদা দিয়েছে।

ফাতিমা (রাঃ) হাত ঘষে ফেটে গিয়েছিল, কারণ তিনি নিজেই আটা পেষতেন, পানি তুলতেন। রাসূল ﷺ-এর কাছে দাসী চাইলে, নবী ﷺ বলেন,
“তুমি রাতে ঘুমানোর আগে ‘সুবহানাল্লাহ ৩৩, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩, আল্লাহু আকবার ৩৪ বার’ বলবে — এতে দাসীর চেয়ে বেশি শক্তি পাবে।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ৩১১৩)

রাসূলের কন্যা হয়েও তিনি কষ্ট ভোগ করেছেন, তবুও আল্লাহর উপর আস্থা হারাননি।

হযরত সুমাইয়া (রাঃ) — ইসলামের প্রথম শহীদা নারী

তিনি ইসলামের প্রথম দিককার মুসলিমদের একজন ছিলেন। কেবল আল্লাহর পথে ঈমান রাখার কারণে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছিল, অবশেষে আবু জাহল তাঁকে বর্শা দিয়ে হত্যা করে।

দুনিয়ার অন্যায় ও জুলুম ইসলামের নারীদের মনোবল ভাঙতে পারেনি। তাঁরা কষ্টে থেকেও ঈমান ও ধৈর্য ধরে রেখেছেন।

প্রশ্নে উল্লেখিত আন্টির মতো অবস্থায় একজন নারীর ইসলামী করণীয়

আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।”
(সূরা আল-বাকারা ২:১৫৩)

এখন শরীয়তের আলোকে করণীয়গুলো নিচে দিচ্ছি —

১. স্বামী যদি ভরণপোষণ না দেয় — স্ত্রী কী করবে?

কুরআনে স্পষ্ট নির্দেশ:
 “পুরুষগণ নারীদের দায়িত্বশীল, কারণ আল্লাহ তাদেরকে একের ওপর আরেককে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে।”
(সূরা আন-নিসা ৪:৩৪)

ফিকহি বিধান: যদি স্বামী ভরণপোষণ না দেয়, তবে স্ত্রী খোলা তালাক নিতে পারে,চাকরি করতে পারে, এমনকি শরীয়তসম্মত উপায়ে আদালতের মাধ্যমে তার হক আদায় করতে পারে।
(সূত্র: আল-মুগনী, ইবনে কুদামাহ, ৮/১৫২)

★২. স্বামীর সম্পদ থেকে ন্যায্যভাবে নেওয়া জায়েয

নবী ﷺ-এর যুগে এক মহিলা (হিন্দা বিনতে উতবা) অভিযোগ করেছিলেন:

“হে আল্লাহর রাসূল, আমার স্বামী (আবু সুফিয়ান) কৃপণ, আমাকে ও সন্তানদের প্রয়োজনমতো দেয় না; আমি কি তার অগোচরে কিছু নিতে পারি?”
নবী ﷺ বলেন:
“তুমি তোমার ও তোমার সন্তানদের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী নিতে পারো।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫৩৬৪)

সুতরাং আন্টি যদি চান, শরীয়ত অনুযায়ী স্বামীর সম্পদ থেকে প্রয়োজনীয় অংশ নেওয়া বৈধ, এমনকি সে অস্বীকার করলেও।
---
 ৩. দীন ও কষ্টের মাঝেও ঈমান রক্ষা করা সর্বোত্তম আমল

রাসূল ﷺ বলেন,
“সর্বাধিক পরীক্ষা হয় নবীদের, তারপর তাদের অনুরূপদের, তারপর ক্রমান্বয়ে অন্যদের।”
(তিরমিযি, হাদীস: ২৩৯৮)

সুতরাং দুনিয়ার কষ্ট মানেই আল্লাহ পরিত্যাগ করেছেন — এমন নয়। বরং অনেক সময় কষ্টের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে উত্তম স্থানে উন্নীত করেন।

৪. পর্দা সম্পর্কে ভুল ধারণার জবাব

পর্দা কোনো নিপীড়নের প্রতীক নয়, বরং নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রতীক।

কুরআন বলে:

“হে নবী! তোমার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ ও মুমিন নারীদের বল, যেন তারা তাদের চাদর নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তারা সহজেই চিনে নেওয়া যাবে এবং কষ্ট দেওয়া হবে না।”
(সূরা আল-আহযাব ৩৩:৫৯)

সুতরাং পর্দা নারীর সুরক্ষা, সম্মান ও আত্মপরিচয়ের ঢাল।
কিছু মানুষের অন্যায় আচরণ ইসলামী বিধানের ভুল নয়; বরং তাদের আচরণই ইসলামবিরোধী।

★আপনার ও সমাজের করণীয়ঃ-

1. ধৈর্যের সাথে আন্টিকে শুনুন, তর্ক নয়, সহানুভূতি দেখান।
– ইসলামকে ব্যাখ্যা নয়, দয়ালু আচরণের মাধ্যমে দেখান।

2. তার কষ্টে সহায়তা করুন (যাকাত, সদকা, মানসিক সমর্থন)।

3. ধীরে ধীরে ইসলামের সেই দিকগুলো দেখান, যেখানে নারী সম্মানিত।
তার স্বামীকে আইনি ভাবে চাপ দিন,যাতে পূর্ণ ভাবে তার ভরনপোষণ সহ যাবতীয় খরচ দেয়।

এক্ষেত্রে আদালতের শরণাপন্ন হতে হলেও সমাজবাসীর তাই করা উচিত। 

4. মেয়েকে শিক্ষিত করুন ও ইসলামি আদব শেখান — কঠোরভাবে নয়, ভালোবাসার মাধ্যমে।

আন্টির মতো নারীর কষ্ট ইসলাম কখনো হালকাভাবে নেয় না।
আল্লাহ বলেন:

“যে নারী বা পুরুষ ঈমানদার অবস্থায় সৎকাজ করে, আমি তাকে উত্তম জীবন দান করব।”
(সূরা আন-নাহল ১৬:৯৭)

সুতরাং —
❝তাঁর কষ্ট বৃথা যাবে না, যদি তিনি ধৈর্য ও ঈমান ধরে রাখেন। আল্লাহর কাছে তিনি অবহেলিত নন।❞


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...