*হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ)
আসমা (রাঃ) বলেন — “আমি যুহায়র উটের দেখাশোনা করতাম, ঘাস কাটতাম, খাবার তৈরি করতাম, ময়দা পেষাতাম। আমার স্বামী যুবায়ের (রাঃ)-এর কোনো চাকর ছিল না। আমি দূর থেকে পানি নিয়ে আসতাম, আর উটের ঘাড়ে তা বহন করতাম।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ৪৮২)
তিনি একজন সাহাবিয়ার মেয়ে, তবুও চরম দারিদ্র্য ও কষ্টে জীবনযাপন করেছেন। তাঁর ধৈর্য, আত্মসম্মান ও ঈমান তাঁকে আল্লাহর কাছে মর্যাদা দিয়েছে।
ফাতিমা (রাঃ) হাত ঘষে ফেটে গিয়েছিল, কারণ তিনি নিজেই আটা পেষতেন, পানি তুলতেন। রাসূল ﷺ-এর কাছে দাসী চাইলে, নবী ﷺ বলেন,
“তুমি রাতে ঘুমানোর আগে ‘সুবহানাল্লাহ ৩৩, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩, আল্লাহু আকবার ৩৪ বার’ বলবে — এতে দাসীর চেয়ে বেশি শক্তি পাবে।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ৩১১৩)
রাসূলের কন্যা হয়েও তিনি কষ্ট ভোগ করেছেন, তবুও আল্লাহর উপর আস্থা হারাননি।
হযরত সুমাইয়া (রাঃ) — ইসলামের প্রথম শহীদা নারী
তিনি ইসলামের প্রথম দিককার মুসলিমদের একজন ছিলেন। কেবল আল্লাহর পথে ঈমান রাখার কারণে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছিল, অবশেষে আবু জাহল তাঁকে বর্শা দিয়ে হত্যা করে।
দুনিয়ার অন্যায় ও জুলুম ইসলামের নারীদের মনোবল ভাঙতে পারেনি। তাঁরা কষ্টে থেকেও ঈমান ও ধৈর্য ধরে রেখেছেন।
প্রশ্নে উল্লেখিত আন্টির মতো অবস্থায় একজন নারীর ইসলামী করণীয়
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।”
(সূরা আল-বাকারা ২:১৫৩)
এখন শরীয়তের আলোকে করণীয়গুলো নিচে দিচ্ছি —
১. স্বামী যদি ভরণপোষণ না দেয় — স্ত্রী কী করবে?
কুরআনে স্পষ্ট নির্দেশ:
“পুরুষগণ নারীদের দায়িত্বশীল, কারণ আল্লাহ তাদেরকে একের ওপর আরেককে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে।”
(সূরা আন-নিসা ৪:৩৪)
ফিকহি বিধান: যদি স্বামী ভরণপোষণ না দেয়, তবে স্ত্রী খোলা তালাক নিতে পারে,চাকরি করতে পারে, এমনকি শরীয়তসম্মত উপায়ে আদালতের মাধ্যমে তার হক আদায় করতে পারে।
(সূত্র: আল-মুগনী, ইবনে কুদামাহ, ৮/১৫২)
★২. স্বামীর সম্পদ থেকে ন্যায্যভাবে নেওয়া জায়েয
নবী ﷺ-এর যুগে এক মহিলা (হিন্দা বিনতে উতবা) অভিযোগ করেছিলেন:
“হে আল্লাহর রাসূল, আমার স্বামী (আবু সুফিয়ান) কৃপণ, আমাকে ও সন্তানদের প্রয়োজনমতো দেয় না; আমি কি তার অগোচরে কিছু নিতে পারি?”
নবী ﷺ বলেন:
“তুমি তোমার ও তোমার সন্তানদের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী নিতে পারো।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫৩৬৪)
সুতরাং আন্টি যদি চান, শরীয়ত অনুযায়ী স্বামীর সম্পদ থেকে প্রয়োজনীয় অংশ নেওয়া বৈধ, এমনকি সে অস্বীকার করলেও।
---
৩. দীন ও কষ্টের মাঝেও ঈমান রক্ষা করা সর্বোত্তম আমল
রাসূল ﷺ বলেন,
“সর্বাধিক পরীক্ষা হয় নবীদের, তারপর তাদের অনুরূপদের, তারপর ক্রমান্বয়ে অন্যদের।”
(তিরমিযি, হাদীস: ২৩৯৮)
সুতরাং দুনিয়ার কষ্ট মানেই আল্লাহ পরিত্যাগ করেছেন — এমন নয়। বরং অনেক সময় কষ্টের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে উত্তম স্থানে উন্নীত করেন।
৪. পর্দা সম্পর্কে ভুল ধারণার জবাব
পর্দা কোনো নিপীড়নের প্রতীক নয়, বরং নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রতীক।
কুরআন বলে:
“হে নবী! তোমার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ ও মুমিন নারীদের বল, যেন তারা তাদের চাদর নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তারা সহজেই চিনে নেওয়া যাবে এবং কষ্ট দেওয়া হবে না।”
(সূরা আল-আহযাব ৩৩:৫৯)
সুতরাং পর্দা নারীর সুরক্ষা, সম্মান ও আত্মপরিচয়ের ঢাল।
কিছু মানুষের অন্যায় আচরণ ইসলামী বিধানের ভুল নয়; বরং তাদের আচরণই ইসলামবিরোধী।
★আপনার ও সমাজের করণীয়ঃ-
1. ধৈর্যের সাথে আন্টিকে শুনুন, তর্ক নয়, সহানুভূতি দেখান।
– ইসলামকে ব্যাখ্যা নয়, দয়ালু আচরণের মাধ্যমে দেখান।
2. তার কষ্টে সহায়তা করুন (যাকাত, সদকা, মানসিক সমর্থন)।
3. ধীরে ধীরে ইসলামের সেই দিকগুলো দেখান, যেখানে নারী সম্মানিত।
তার স্বামীকে আইনি ভাবে চাপ দিন,যাতে পূর্ণ ভাবে তার ভরনপোষণ সহ যাবতীয় খরচ দেয়।
এক্ষেত্রে আদালতের শরণাপন্ন হতে হলেও সমাজবাসীর তাই করা উচিত।
4. মেয়েকে শিক্ষিত করুন ও ইসলামি আদব শেখান — কঠোরভাবে নয়, ভালোবাসার মাধ্যমে।
আন্টির মতো নারীর কষ্ট ইসলাম কখনো হালকাভাবে নেয় না।
আল্লাহ বলেন:
“যে নারী বা পুরুষ ঈমানদার অবস্থায় সৎকাজ করে, আমি তাকে উত্তম জীবন দান করব।”
(সূরা আন-নাহল ১৬:৯৭)
সুতরাং —
❝তাঁর কষ্ট বৃথা যাবে না, যদি তিনি ধৈর্য ও ঈমান ধরে রাখেন। আল্লাহর কাছে তিনি অবহেলিত নন।❞