আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
35 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (28 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,


১. সহশিক্ষা আছে এমন প্রতিষ্ঠান এর শিক্ষার্থীরা কি দ্বীনি আলোচনার গ্ৰুপ তৈরি করতে পারবে?

২.দ্বীনি আলোচনার গ্ৰুপে পড়াশোনা সংক্রান্ত আলোচনা, সাহায্য করা কি জায়েজ?

৩. এই গ্ৰুপ দাওয়াত এর উদ্দেশ্যে খোলা হলে যাদের প্রোফাইলে নারীর ছবি, খেলোয়াড় এর ছবি আছে তাদের গ্ৰুপে রাখা কি জায়েয?

৪. আমার কুরআন তেলাওয়াত সহীহ কি না তা বুঝবো কি করে?( আমি ছোট বেলায় কুরআন শিখেছিলাম আর এছাড়াও বড় হওয়ার পর অনলাইনে কয়েকটি কুরআন এর ক্লাস করেছি)

৫.আমার পাশের রুমের জানালা খুলা ছিল।ঐখান দিয়ে যাওয়ার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে জানালা দিয়ে চোখ যায়। সেখানে একজন নারী ছিল।তার সাথে চোখাচোখি হয়। এরপর আমি তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি সরিয়ে নেই।এখন আমি যদি ঐ নারীর নামে কিছু টাকা (২০-৫০ টাকা) সাদকা করি তবে কি আমি দায়মুক্ত হবো?

৬.ঢেকুর এর ফলে গলায় পানির মত কি যেনো উঠে এসেছিল পরে আবার গিলে ফেলি। এতে অযু ভেঙ্গে যাবে?

৭. ফেসবুকে ব্যাবসায়িক কাজে আমার পেজের প্রচারণা চালানোর জন্য যদি নন-মাহরামদের পোস্টে কমেন্ট করি, কমেন্ট এর রিপ্লাইয়ে পেজ প্রমোট করি তা কি জায়েয হবে?( আমি থ্রিপিস ব্যাবসা করি)

৮.যদি নামাজে ১ম রাকাতে ভুল করে কেউ যদি বৈঠকে বসে আর সে যদি আল্লাহু আকবার না বলে বা আল্লাহু আকবার বলে উঠে গিয়ে নিয়মমত নামাজ পড়ে আর সাহু সিজদা আদায় করে তার নামাজ কি হয়ে যাবে?( বিতর ২২ শে নভেম্বর ২০২৫)

৯. যদি বাড়ির কাছে  মসজিদের জমি হারাম টাকায় হয় বা মসজিদটি যদি পুরোপুরি বা আংশিক বা কিছু অংশ হারাম টাকায় নির্মিত হয়। তবে এখানে তাবলীগ জামাতের গাশতে যাওয়া,তালিমে বসা,তালিম করা কি জায়েজ?

১০. আমি একবার মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার পর দেখি জুতাগুলো অগোছালো অবস্থায় ছিল।আমি আমার একটি জুতা পরি কিন্তু আরেকটা জুতা পাইনি।পরে আমার জুতার মত আরেকটি জুতা পাই ও পরে ফেলি।এটা আমার জুতা কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।এখন আমি যদি জুতার মালিকের নামে জুতার অর্ধেক টাকা অনুমান করে সাদকা করি তবে কি আমি দায়মুক্ত হবো?আর আমি জুতাটি কি ব্যাবহার করতে পারবো?

১১.  ১০ নং এ বর্ণিত জুতাটি যদি সাদকা করার পূর্বে ব্যাবহার করি তবে তা কি জায়েয হবে? এবং এর জন্য কি আলাদা করে হক আদায় করতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (704,100 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّ السَّمْعَ وَالبَصَرَ وَالفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا.
...নিশ্চয় কান, চোখ, হৃদয় এর প্রতিটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৩৬

قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠] 

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١] 

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}

يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩২}

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}

হাদীস শরীফে এসেছেঃ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।

فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস সমূহ হতে পরিস্কার জানা যায় যে মেয়েদের অন্যের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে, অপ্রয়োজনে কথা বলতে, আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। যা পরিস্কার ভাষায় জানাচ্ছে যে, প্রয়োজন ছাড়া ছেলেদের জন্য মেয়েদের সাথে এবং মেয়েদের জন্য ছেলেদের সাথে কথা বলা জায়েজ নয়।

দ্বীনী বা বৈধ কোন জরুরী বিষয় থাকলে পর্দার আড়ালে থেকে কম কথায় শেষ করে নিবে। অযথা কথা বলা হারাম।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(১-২)
এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ছেলে শিক্ষার্থীরা গ্রুপ তৈরি করতে পারবে, সে গ্রুপে কোন মেয়ে শিক্ষার্থী থাকতে পারবে না।

অনুরূপভাবে শুধুমাত্র মেয়েরা গ্রুপ তৈরি করতে পারবে সে গ্রুপে কোন ছেলে শিক্ষার্থী থাকতে পারবে না।

(০৩)
জায়েজ নেই।

(০৪)
আপনি যদি পুরুষ হন, সেক্ষেত্রে এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে আপনি তিলাওয়াত শোনাতে পারেন। অথবা যিনি শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন,এমন কোন ব্যক্তির কাছে গিয়ে আপনি কোরআন তেলাওয়াত শোনাতে পারেন।

আর আপনি যদি মেয়ে হন, সেক্ষেত্রে আপনার এলাকায় তিনি শুদ্ধ ভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন, তার কাছে গিয়ে আপনি তিলাওয়াত শোনাতে পারেন।

অথবা আপনার এলাকায় বা আপনার জেলায় কোন মহিলা মাদ্রাসায় গিয়ে কোন মহিলা শিক্ষিকার নিকট তিলাওয়াত শোনাতে পারেন।

(০৫)
আপনি যেহেতু চোখ পড়া মাত্র তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছিলেন,সুতরাং আপনার গুনাহ হয়নি।

(০৬)
না,এতে অযু ভেঙ্গে যাবেনা।

(০৭)
বৈধ আলোচনা করলে তাহা জায়েজ। 
তবে ফিতনার আশংকা থাকা যাবেনা।

(০৮)
প্রশ্নের বিবরণ মতে তার নামাজ হয়ে যাবে। 

(০৯)
সেখানে তাবলীগ জামাতের গাশতে যাওয়া,তালিমে বসা,তালিম করা জায়েজ আছে।

(১০-১১)
এক্ষেত্রে আপনার জন্য উচিত ছিল সমস্ত মুসল্লিদের বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

সমস্ত মুসল্লিদের বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরেও যদি আপনার আরেকটি জুতা না পেতেন, সেক্ষেত্রে অনুরূপ যে আরেকটি জুতা সেখানে আছে সেটি নিয়ে যাওয়া আপনার জন্য বৈধ হতো।

কারণ এক্ষেত্রে এটি বুঝা যাচ্ছে যে আপনার মত কোন একজন ব্যক্তির সেইম জুতা আছে, যে ভুল করে আপনার একটি জুতা নিয়ে চলে গিয়েছে। তাই তার রেখে যাওয়া আরেকটি জুতা আপনার জন্য নেওয়া বৈধ।

তদুপরি আপনি যদি জুতার মালিকের নামে জুতার অর্ধেক টাকা অনুমান করে সাদকা করে দেন,সেক্ষেত্রে আপনি দায়মুক্ত হবেন।
এমতাবস্থায় আপনি জুতাটি ব্যাবহার করতে পারবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...