আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
9 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (26 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
রিসেন্টলি আমি জানতে পারি যে আমার বাবা পরকীয়ায় আসক্ত হয়েছে। উনি এসব কাজ এর আগেও অনেক বার করেছে। এসব দেখার পরে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি এবং বাবার সাথে অনেক বাজে আচরণ করে ফেলি এবং ওনাকে বলি যে "আপনি আমার বাবা না"। আমার আম্মু এবং আমরা বোনেরা সবসময় আমাদের আব্বুকে টাকা পয়সা, স্বর্ন, জায়গা জমি ইত্যাদি দিয়ে সাহায্য করেছি। উনার কাছে কখনো কোনো কিছুর জন্য কোন হাত খরচ চাইনি। সব সময় উনার জন্য সবকিছু অনেক শিথিল করে দিয়েছিলাম। চাহিদা অনেক লিমিটের মধ্যে রেখে দিতাম। শুধুমাত্র উনি আমাদের জন্য বাজার করত। এতটুকু পর্যন্ত সবকিছু সীমাবদ্ধ ছিল। এর বাহিরে আর কোনো চাহিদা কখনো পুরন করে নি আর আমরাও আবদার করি নি। শুধুমাত্র উনার উপর যাতে প্রেশার না পরে সে কারনে।
এর পরেও উনি আমাদেরকে ধোকা দিয়ে আরেক মহিলার সাথে পরোকিয়ায় লিপ্ত হয়। এই জিনিসটা আমি একদম মেনে নিতে পারিনি। তাই ওনার সাথে অনেক বাজে আচরণ করে ফেলি। এখন মনে হচ্ছে যে আল্লাহ তায়ালা তো বাবার সাথে বাজে আচরণ করতে মানা করেছেন। এখন আমার খুব অনুশোচনা হচ্ছে কিন্তু আমি ওনার সাথে কোন ধরনের কথা বলতে চাই না। তার দিকে তাকাতেও ইচ্ছা করছে না। ক্ষমা চাইতেও ইচ্ছা করছে না কারণ উনি এখনো ওই মহিলাকেই সাপোর্ট করছে। এখন এটা কি আমার গুনাহ হবে? অথবা আমার দোয়া কি কবুল হবে না এই কারনে?
বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে কি উনি ক্ষমা করে দিবেন নাকি বাবার কাছেও ক্ষমা চাইতে হবে?

আমি শুধু চাচ্ছি এসবের চক্করে যাতে আমি আল্লাহ কে না হারিয়ে ফেলি। বা আমার দোয়ায় এসবের যাতে কোনো ইফেক্ট না পরে!

1 Answer

0 votes
by (704,100 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

মা বাবার সর্বদায় আনুগত্য করতে হবে,তাদের কথার নাফরমানী করা যাবেনা।
তাদের সাথে সর্বদায় ভালো ব্যবহার করতে হবে।

তারা কষ্ট পায়,এমন কাজ কখনোও করা যাবেনা।
তাদের হক বা অধিকারসমূহ এবং তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক।

পিতামাতার খরচ বহন করা; তাদের খোঁজ-খবর নেয়া; প্রয়োজনের সময় বিশেষ করে বার্ধক্যে তাদের পাশে থাকা আবশ্যক ।

মাতাপিতার দেখভাল করা ও তাদের সাথে উত্তম আচরণ করা শরীয়ত কর্তৃক ফরয ঘোষনা করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا

“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস।” (সূরা আহকাফ-১৫)

আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন,

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।(সূরা বনী ইসরাঈল-২৩)

أن جاهمة جاء إلى النبي صلى الله عليه وسلم، فقال: يا رسول الله، أردت أن أغزو وقد جئت أستشيرك، فقال: «هل لك من أم؟» قال: نعم، قال: «فالزمها، فإن الجنة تحت رجليها»

“হযরত জাহিমাহ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণের ইচ্ছা করেছি, আপনার কাছে পরামর্শ নিতে এসেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, “তোমার কি মা আছেন?” সাহাবী জবাব দিলেন, “হ্যাঁ!”। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, “তাঁর সেবাকে নিজের উপর আবশ্যক করে নাও। নিশ্চয়ই তাঁর দুই পায়ের নিচে রয়েছে জান্নাত।” (সুনানে নাসাঈ: ৩১০৪)

হাদিস শরীফে আরও এসেছে,

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : "جاء رجلٌ إلى رسول الله -صلى الله عليه وسلم- فقال : يا رسول الله، من أحق الناس بحسن صحابتي؟، قال: (أمك) ، قال: ثم من؟ قال: (أمك) ، قال: ثم من؟ قال: (أمك) ، قال: ثم من؟ قال: (أبوك) متفق عليه .

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক সাহাবী এসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে কে আমার সর্বাধিক মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি জিজ্ঞেস করলো, “তারপর কে?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলো, “তারপর কে?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, “তারপর কে?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার পিতা।”(বুখারী ও মুসলিম)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনার বাবা খুবই অন্যায় কাজ করছেন এবং তাকে বোঝানোর পরেও দ্বীনের পথে ফিরে না আসা এবং অনৈতিক কাজে যুক্ত থাকার দরুন তিনি মারাত্মক অপরাধী হিসেবে শামিল।

তদুপরি সন্তান হিসেবে আপনি যে আপনার বাবার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করেছেন এটি ঠিক হয়নি ।

আপনার জন্য উচিত ছিল যে শরয়ী সীমারেখার মধ্যে থেকে আপনার বাবাকে অনবরত বুঝানো, পারিবারিকভাবে পরবর্তীতে সামাজিক ভাবে চেষ্টা করে তাকে এহেন কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা।

এতেও কাজ না হলে প্রয়োজনে তার থেকে দূরত্ব অবলম্বন করতে পারেন,কথাবার্তা কমিয়ে দিতে পারেন,সাময়ীক ভাবে সম্পর্ক ছিন্নও করতে পারেন।

আপনি আল্লাহর কাছে ছুটি চাইবেন,বাবার কাছেও ক্ষমা চাইবেন।

এখন বাবার কাছে ক্ষমা না চাইলে পরবর্তীতে সংশোধন হওয়ার পর অবশ্যই ক্ষমা চেয়ে নিবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

...