আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
156 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (47 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম।
১) রাস্তায় স্বামী স্ত্রীর হাত ধরে হাটলে কিংবা "পাব্লিক প্লেসে" স্ত্রী তার স্বামীর কাধেঁ মাথা রেখে বসে থাকলে কি গুনাহহার হবেন????এমতবস্থায় যদি অন্যরা ভাবে যে তারা যিনায় লিপ্ত তাহলেও তারা গুনাহগার হবেন?
২) মনে বাজে বাজে চিন্তা আসলে এথেকে বাঁচার দোয়া এবং উপায় কি?
বিঃদ্রঃ স্ত্রী সম্পূর্ণ পর্দানশীনভাবেই থাকে।

1 Answer

0 votes
by (63,440 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

রাসুলুল্লাহ()বলেছেন,

তিনজন আছেন যাদের দিকে আল্লাহ সুবহানু তায়ালা কিয়ামাতের দিন নজর দেবেন না। যে পিতামাতার অবাধ্য, যে নারী বেশভূষায় পুরুষের অনুকরণ করে এবং দাইয়্যুস ব্যক্তি।”

[সুনান আন নাসাঈ: ২৫৬২]

ইমাম আহমাদের বর্ণনাকৃত অন্য আরেকটি সাহীহ হাদীসে ‘আল্লাহ নজর দেবেন না’ এর সাথে এসেছে দাইয়্যুস ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [মুসনাদে আহমাদ]

রাসুলুল্লাহ() আরও বলেছেন, “আল্লাহ প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্যে তার অংশের অনিবার্য জিনা লিখে রেখেছেন, হোক সে তার ব্যাপারে জ্ঞাত বা অজ্ঞাত। চোখের জিনা হল দৃষ্টিপাত করা (যে দিকে বা যার দিকে দৃষ্টি দেবার অনুমতি নেই সেদিকে দৃষ্টিপাত করা), জিহ্বার জিনা হল উচ্চারণ করা (যা উচ্চারণ করা বা বলা বৈধ নয়)। আর নফসের ইচ্ছা জাগে (জিনার জন্যে) এবং গুপ্তাংগ তা বাস্তবতায় রূপ দেয় অথবা তা অস্বীকার করে।“ [সাহীহ বুখারীঃ ৬৬১২]

একদিন সন্ধার সময়, তখনও পুরোপুরি অন্ধকার নামেনি, খলিফা হযরত ওমর রা. পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তিনি লক্ষ্য করলেন একজন পুরুষ ও মহিলা এমনভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে যা ইসলামে সমর্থিত নয়। খলিফার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে তাদেরকে আঘাত করা শুরু করলেন। তখন, তারা তাদের পরিচয়ে বলল যে, আমরা স্বামী-স্ত্রী। এ কথা শোনার সাথে সাথে খলিফার মধ্যে এক ধরণের অনুশোচনা বোধ হলো। তিনি ফিরে যেয়ে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু আইয়্যুব আনসারী (রা.) এর বাড়িতে গেলেন। তিনি খলিফাকে বসার এবং আরামের ব্যবস্থা করলেন কিন্তু এও লক্ষ্য করলেন যে তাঁকে খুব বিষন্ন এবং চিন্তিত মনে হচ্ছে। কেন যেন অনুশোচনায় ভুগছেন। সাহস করে খলিফাকে জিজ্ঞাসা করাতে তিনি ঘটনাটি খুলে বললেন। তখন হযরত আবু আইয়্যুব আনসারী (রা.) খলিফাকে আস্বস্থ করে বললেন, হে আমিরুল মু’মিনুন! আপনি যথার্থই করেছেন। স্বামী-স্ত্রী হলেও এমন কোন আচরণ প্রকাশ্যে (পাবলিক প্লেসে) করা যাবে না যাতে মানুষের মাঝে সন্ধেহের বা কুধারণার উদ্রেক হয়। স্বামী স্ত্রীর অনেক সম্পর্কই বৈধ যা তাদের একান্তে হতে হবে। এই বৈধ সম্পর্ককে অন্যকে দেখানো কিংবা অন্যের সাথে শেয়ার করা ইসলামে হারাম। সুতারাং বুঝা যাচ্ছে যে, স্বামী-স্ত্রীর একান্তের ছবি, জড়িয়ে ধরে বা অন্য কোন উপায়ের, পাবলিকলি শেয়ার করা বৈধ হবে না বরং হারাম।

উলামায়ে কিরামের মতে মুখের জিনা, চোখের জিনা, হাতের জিনা, পায়ের জিনা সবই জিনার দরজা আর অনস্বীকার্য অংশ। অতএব যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে এইসব জিনা থেকে বাধা দেবে না, সে ব্যক্তিও দাইয়্যুসের কাতারে পরে যাবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে দাইয়্যুস হওয়া থেকে হিফাজত করুন এবং মা বোনদের যথাযথভাবে পর্দা করারতাওফিক দান করুন।

 

# শুধুমাত্র খারাপ চিন্তা মাথায় আসার দ্বারাই কোন পাপ লিখা হয় না। বাকি এরকম চিন্তা আসার সাথে সাথেই ইস্তিগফার পড়া উচিত। সেই সাথে মন থেকে উক্ত খারাপ কাজটি দূর করে ফেলতে হবে। কুফরীর চিন্তা করার দ্বারাই কুফরী হয়ে যায় না। যদি না তা কার্যে তথা কথায় ও ঘোষণায় তা প্রতিফলিত না করা হয়।

তাই এসব চিন্তা আসার সাথে সাথেই ইস্তিগফার করে নিবে। আর মন থেকে এসব বাজে চিন্তা দূর করে ফেলতে হবে। সম্ভব হলে কোন আল্লাহওয়ালা সুন্নতের পাবন্দ বুযুর্গের সাথে সপ্তাহে বা মাসে হলেও একদিন দেখা করা, নিজের হালাত শুনানোর দ্বারাও অনেক সময় এসব বাজে চিন্তা থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা করা যায়।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فِيمَا يَرْوِي عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ: قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ ثُمَّ بَيَّنَ ذَلِكَ، فَمَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً، فَإِنْ هُوَ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ عِنْدَهُ عَشْرَ حَسَنَاتٍ إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ إِلَى أَضْعَافٍ كَثِيرَةٍ، وَمَنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً، فَإِنْ هُوَ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً»

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ আল্লাহ তাআলার শানে বলতেছিলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা পূণ্য ও পাপ লিপিবদ্ধ করেন। তারপর এর ব্যাখ্যা করেন, সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি ভাল পূণ্যময় কাজের ইচ্ছে সংকল্প করে, কিন্তু কাজটি করতে না পারে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য একটি পূর্ণ নেকী লিপিবদ্ধ করেন।আর যদি সংকল্প করা কাজটি সম্পাদন করে ফেলে, তাহলে তাকে দশ থেকে সাতশত পরিমাণ বা এর চেয়ে বেশি নেকী বৃদ্ধি করে লিপিবদ্ধ করেন। আর যে ব্যক্তি কোন পাপ কাজের সংকল্প করে, কিন্তু পাপ কাজটি না করে, তাহলেও আল্লাহ তাআলা তার জন্য একটি পূর্ণ নেকী দান করেন। আর যদি সংকল্প করা কাজটি সম্পাদিত করে ফেলে, তাহলে তার জন্য একটি গোনাহ লিখা হয়। [বুখারী, হাদীস নং-৬৪৯১]

আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/9346/

 

প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনী ভাই/বোন!

১. "পাব্লিক প্লেসে" স্বামী স্ত্রী একে অপরের হাত ধরা, কাধে মাথা রাখা, জড়িয়ে ধরা ইত্যাদী মোটেও উচিত নয়। স্বামী-স্ত্রী হলেও এমন কোন আচরণ প্রকাশ্যে (পাবলিক প্লেসে) করা যাবে না যাতে মানুষের মাঝে সন্ধেহের বা কুধারণার উদ্রেক হয়। স্বামী স্ত্রীর অনেক সম্পর্কই বৈধ যা তাদের একান্তে হতে হবে। এই বৈধ সম্পর্ককে অন্যকে দেখানো কিংবা অন্যের সাথে শেয়ার করা ইসলামে নিষিদ্ধ তাদের এমন অনাকাঙ্খিত চলাফেরার কারণে যদি কেউ তাদের প্রতি যিনার সন্দেহ করে, তাহলে যে কুধারণা  করবে সেও গুনাহগার হবে এবং যাদের দেখে এমন ধারণা হয়েছে তারাও উক্ত গুনাহের অংশীদার হবেন।

২. আমরা কোনো না কোনো খারাপ অভ্যাসের সাথে জড়িয়ে যাই। কিন্তু এক সময় গিয়ে তা আসক্তিতে পরিণত হয়। তখন আর চেষ্টা করলেও সেই খারাপ আসক্তি থেকে সহজে বেরিয়ে আসা যায় না। কিন্তু খারাপ আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবিদেরকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিয়ে গেছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার এক সাহাবিকে খারাপ আসক্তি থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর কাছে সাহায্য পাওয়ার একটি দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। হাদিসে বিষয়টি এভাবে ওঠে এসেছে-

হজরত আবু আহমাদ শাকাল ইবনু হুমাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল্লাম- আমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, তুমি বল-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّي

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কানে মন্দ কথা শোনা থেকে আশ্রয় চাই। চোখ দিয়ে মন্দ কিছু দেখা থেকে আশ্রয় চাই। জিহ্বা দিয়ে মন্দ কিছু বলা থেকে আশ্রয় চাই। অন্তরের খারাপ চিন্তা থেকে আশ্রয় চাই। দেহের কামনা-বাসনার খারাপ চিন্তা থেকেও আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ)

মুমিন মুসলমানের উচিত, হাদিসে শেখানো এ দোয়াটির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দুনিয়ার যাবতীয় অশ্লীলতা ও পর্ণ আসক্তি থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। বেশী বেশী ইস্তেগফার পড়া। আল্লাহর সাহায্য পেতে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথভাবে এ দোয়ার আমল বেশি বেশি করা। আর তাতেই দুনিয়ার যাবতীয় অশ্লীলতা ও পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...