আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
195 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (31 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ মহতারাম,

একটা লিঙ্ক এ গিয়ে জিডিপি ক্যালকুলেটর এ দেখলাম 2010 সালে আমি যেই জিনিসটা 100 টাকা দিয়ে কিনতে পারতাম আজকের 2020 সালে আমাকে ওই একই জিনিস কিনতে 194 টাকা ব্যয় করতে হয়। তো আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমি যদি 2010 সালে কাউকে 100 টাকা ধার দেই, আর আজকে যদি সে আমাকে 100 টাকা ফেরত দেয় তাহলে আমি তো ওই 100 টাকা দিয়ে একই রকমের জিনিস কিনতে পারছিনা তো এখানে তো আমার ক্ষতি হচ্ছে আবার বেশি নিলেও তো সুদ। এইখানে ইসলামিক সমাধান টা কি?

1 Answer

0 votes
by (711,040 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
টাইম ভ্যালু অপ মানি সম্পর্কে বিশিষ্ট গবেষক 'সালেহ আল মুনাজ্জিদ' বলেন,
ঋন বা পাওন কারো কাছে কয়েকভাবে থাকতে পারে।হয়তো চুরি, আত্মসাৎ ইত্যাদির কারণে কারো নিকট পাওন থাকতে পারে।আবার কারো নিকট পরস্পরের সম্মতিতে কোনো লেনদেনের বকেয়া অবশিষ্ট থাকতে পারে।
والحاصل : أن الواجب على الغاصب والسارق رد العملة بحسب قيمتها يوم الغصب والسرقة ، وإن كان المسروق من الأشياء العينية فإنه يضمن ما طرأ عليها من نقص في السعر.
যদি কারো কাছে চুরি ডাকাতি বাবৎ কোনো পাওনা থাকে,তাহলে হুকুম হল,ঐ টাকা বা জিনিষের বর্তমান মূল্য হিসেবে মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে।যদি কেউ কারো নিকট থেকে কোনো মালকে চুরি করে নেয়,এবং সেই নির্দিষ্ট মালের বর্তমান বাজারমূল্য কমে যায়,তাহলে সেই মালকেও ফিরত দিতে হবে,এবং সাথে সাথে যে পরিমাণ মূল্যহ্রাস হয়েছে,সেই পরিমাণ মূল্যকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
وأما الديون الأخرى ، فيفرق فيها بين التغير اليسير والتغير الكثير في قيمة العملة : فإن كان التغير يسيراً لا يصل إلى ثلث الدين : فالواجب رد المثل ، ولا ينظر إلى القيمة
চুরি ইত্যাদি ব্যতীত অন্যান্য পাওনা সম্পর্কে বলা হবে,বর্তমান বাজার মূল্যে যদি তেমন কেনো কমবেশ না হয়,তথা এক তৃতীয়াংশ পরিমাণ কমবেশ না হয়,তাহলে ঐ টাকা বা জিনিষ বা এর মত কোনো জিনিষকে হুবহু ফিরিয়ে দিলেই চলবে।তখন বাজার মূল্যর দিকে দৃষ্টি দেয়া হবে না।
وأما إذا كان التغير كثيراً يصل إلى الثلث فأكثر : فالواجب الصلح بينهما بتوزيع الضرر على الطرفين .
وفي حال الرجوع للقيمة : يتم تقديرها بحسب سعر الذهب وقت الدين أو بحسب قوة النقد الشرائية في ذلك الوقت ، ويكون السداد بعملة مختلفة عن العملة التي تم بها القرض .
কিন্তু যদি বর্তমান বাজার মূল্যে বেশী পরিবর্তন চলে আসে,এক তৃতীয়াংশর চেয়ে বেশী কমবেশ হয়ে যায়,তাহলে তখন উভয় লেনদেন কারীর মধ্যে আপসে বসে মীমাংসা মূলক সন্ধি করতে হবে।যাতেকরে কারো কোনো প্রকার কষ্ট না হয়।সুতরাং বর্তমান বাজার মূল্যকে সামনে রেখে উভয়কে মধবর্তী একটি সিদ্ধান্তে পৌছতে হবে।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
রিবা বা সূদ কাকে বলে?
বর্ণিত রয়েছে  এ ব্যপারে উলামায়ে কেরামগণ একমত যে, প্রত্যেক ঐ ঋণ যা মুনাফাকে টেনে নিয়ে আসবে তাই রিবা বা সুদ হিসেবে পরিগণিত হবে।যেমন,
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺑَﻜْﺮٍ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺣَﻔْﺺٌ، ﻋَﻦْ ﺃَﺷْﻌَﺚَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺤَﻜَﻢِ، ﻋَﻦْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ، ﻗَﺎﻝَ : « ﻛُﻞُّ ﻗَﺮْﺽٍ ﺟَﺮَّ ﻣَﻨْﻔَﻌَﺔً، ﻓَﻬُﻮَ ﺭِﺑًﺎ » ﻣﺼﻨﻒ ﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺷﻴﺒﺔ 
তরজমাঃ-প্রত্যেক ঐ ঋণ যা মুনাফাকে টেনে নিয়ে আসবে তাই রিবা বা সুদ।(মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ-২০৬৯০)

মুনাফার শর্তে ঋণ দিলে তা রিবার অন্তর্ভুক্ত।তবে শর্ত ব্যতীত যদি ঋণদার ঋণ পরিশোধের সময় কিছুটা বেশী দিয়ে দিলে তা রিবার অন্তর্ভুক্ত হবে না।বরং তা বৈধ-ই হবে।

যেমন এক হাদীসে এসেছে
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত
عن ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﻟِﺮَﺟُﻞٍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺳِﻦٌّ ﻣِﻦْ ﺍﻹِﺑِﻞِ ﻓَﺠَﺎﺀَﻩُ ﻳَﺘَﻘَﺎﺿَﺎﻩُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺃَﻋْﻄُﻮﻩُ ، ﻓَﻄَﻠَﺒُﻮﺍ ﺳِﻨَّﻪُ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍ ﻟَﻪُ ﺇِﻻ ﺳِﻨًّﺎ ﻓَﻮْﻗَﻬَﺎ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ( ﺃَﻋْﻄُﻮﻩُ ، ﺇِﻥَّ ﺧِﻴَﺎﺭَﻛُﻢْ ﺃَﺣْﺴَﻨُﻜُﻢْ ﻗَﻀَﺎﺀً ) 
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে জনৈক ব্যক্তির একটি বাচ্ছা বয়সী উট পাওনা ছিলো,অতঃপর যখন সে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে এসে তা চাইলো।তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ উনার পাওনা উনাকে বুঝিয়ে দাও।সাহাবায়ে কেরাম (সদকার মালের মধ্যে খুজে)উক্ত ব্যক্তির পাওনা কমবয়সী উট পেলেন না।বরং তার থেকে একটু বেশী বয়সী উট পেলেন।তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেনঃ তোমরা তা তাকে দিয়ে দাও,কেননা তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে ঋণ পরিশোধের সময় উদারতা প্রদর্শন করে।তথা অতিরিক্ত দিয়ে দেয়।(সহীহ বুখারী-২৩৯৩,সহীহ মুসলিম-১৬০০)

মুহতারাম প্রশ্নকর্তা দ্বীনী ভাই!
যেহেতু আপনারা কম বেশী কিছু অতিরিক্ত দেয়ার শর্তে ঋণ দেন,তাই কম হোক আর বেশী হোক যাই অতিরিক্ত উসূল করা হবে সবই রিবার অন্তর্ভুক্ত হয়ে হারাম হবে।হ্যা যদি কাউকে কোনো প্রকার শর্তারোপ ছাড়া এমনিতেই ঋণ প্রদাণ করা হয়,অতঃপর ঐ বিচারা ঋণ পরিশোধের সময় অতিরিক্ত কিছু দিয়ে দেয় তাহলে তা বৈধ হবে, রিবা হবে না।বিস্তারিত জানুন- ৪২৬৭

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
যদি জোরজবরদস্তি করে বা চুরি করে কারো টাকাকে আত্মসাৎ করা হয়ে থাকে,তাহলে ঐ টাকার বর্তমান ভ্যালু অনুযায়ী পরিশোধ করতে হবে।যেমন আপনার বিবরণ অনুযায়ী ১৯৪ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

তবে যদি পারস্পারিক সম্মতিতে অনুষ্টিত কোনো লেনদেন বা করযে হাসানার কোনো টাকা কারো নিকট বাকী থাকে,তাহলে বর্তমানে পরিশোধের সময়,উভয় লেনদেনকারী নিজ নিজ সম্মতিতে কমবেশ করে সমাধা করতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

...