বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
অনুচ্চস্বরে
পড়া নামাজে সূরা ফাতিহা পড়া সংক্রান্ত:
১. হযরত জাবির রা. বলেছেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,যে ব্যক্তির ইমাম আছে,তার ইমামের কেরাতই তার কেরাত বলে গণ্য হবে।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা,হাদীস
নং ৩৮২৩) এ সনদটি সহীহ।
এ
হাদীসে মুলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে, মুকতাদীর
জন্য আলাদা করে সূরা ফাতেহা বা অন্য কোন সূরা পড়ার প্রয়োজন নেই। বরং ইমামের কেরাতই
তার জন্য যথেষ্ট হবে।
কেননা
সূরা ফাতেহা হলো আল্লাহর দরবারে হেদায়াতের আবেদন। সকলের পক্ষ থেকে আবেদন একজনই পেশ
করে। ইমামকেই সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রুকু, সেজদা, তাকবীর ও তাসবীহ হলো উক্ত দরবারের আদব। এজন্য
এগুলো সকলকে পালন করতে হয়।
২. হযরত আবূ হুরায়রা রা.
বলেছেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমরা
সেজদায় থাকাবস্থায় যদি তোমরা নামাযে শরীক হও তবে তোমরাও সেজদা করবে। সেটাকে কিছু
গণ্য করবে না। যে ব্যক্তি রুকু পেল সে নামায (অর্থাৎ ঐ রাকাত ) পেল। আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৮৯৩; মুসান্নাফে
আব্দুর রাযযাক, ২/২৮১।
এ
হাদীস থেকেও বোঝা গেল, মুকতাদীর
ফাতেহা পড়ার প্রয়োজন নেই । ইমামের সঙ্গে রুকু পেলেই তার রাকাত পূর্ণ হবে।
৩. হযরত আবূ বাকরা রা. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
রুকুতে থাকাবস্থায় তিনি এসে পৌঁছলেন,এবং
কাতারে যাওয়ার পূর্বেই রুকুতে চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে তিনি ব্যাপারটি জানালে তিনি বললেন, আল্লাহ
তোমার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন। তবে এমনটি আর করো না। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং : ৭৮৩)
ইমাম
বুখারী কিতাবুল কিরাআতে ও তাবারানী (দ্র, ফাতহুল
বারী) একথাও উল্লেখ করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এমন
কে করেছ? তিনি
বললেন,আপনার সঙ্গে আমার এ
রাকাতটি ছুটে যাওয়ার আশংকা করেছিলাম (তাই আমি এমনটি করেছি)।
এ
হাদীসটি থেকে বোঝা গেল,রুকু পেলেই মুকতাদীর রাকাত
পূর্ণ হয়, এবং
সূরা ফাতেহা পড়া মুকতাদীর জন্য ফরজ নয়। অন্যথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আবূ বাকরা রা.কে পুনরায় নামায পড়তে বলতেন।
৪. আতা
ইবনে ইয়াসার র. বলেছেন,
أَنَّهُ سَأَلَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ عَنِ الْقِرَاءَةِ مَعَ الإِمَامِ فَقَالَ لاَ قِرَاءَةَ مَعَ الإِمَامِ فِى شَىْءٍ . أخرجه مسلم (٥٧٧) في باب سجود التلاوة. والنسائي في باب ترك السجود في النجم. (٩٦٠)
অর্থ: তিনি ইমামের সঙ্গে কুরআন পড়া সম্পর্কে
যায়দ ইবনে ছাবিত রা.কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি জবাব দিলেন, কোন নামাযেই ইমামের সঙ্গে কোন কিছু পড়বে না।
মুসলিম শরীফ, হাদীস
নং ৫৭৭, নাসাঈ
শরীফ (৯৬০), আবু
আওয়ানা (১৯৫১), বায়হাকী
(২৯১১)।
৫. নাফে র. থেকে বর্ণিত:
أن عبد الله بن عمر كان إذا سئل هل يقرأ أحد خلف الإمام قال إذا صلى أحدكم خلف الإمام فحسبه قراءة الإمام وإذا صلى وحده فليقرأ قال وكان عبد الله بن عمر لا يقرأ خلف الإمام. موطا مالك صـ ٢٩
অর্থ:
হযরত ইবনে উমর রা.কে যখন জিজ্ঞেস করা হতো, ইমামের
পেছনে কুরআন পড়া যাবে কিনা? তিনি
বলতেন, তোমাদের
কেউ যখন ইমামের পেছনে নামায পড়ে তখন ইমামের পড়াই তার জন্য যথেষ্ট হয়। আর যখন একাকী
পড়ে, তখন
যেন নিজেই কেরাত পড়ে। নাফে বলেন, ইবনে
উমর রা. ইমামের পেছনে কুরআন পড়তেন না। (মুয়াত্তা মালেক, পৃ২৯, (৪৩), আব্দুর
রাযযাক (২৮১৪), মুসনাদে
ইবনুল জাদ (১১৫০), তাহাবী
(১৩১২, ১৩১৭)
দারাকুতনী (১৫০৩), বায়হাকী
(২৯০১, ২৯০৩)।
৬. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসউদ রা. এর ফতোয়া:
عن أبي وائل : جاء رجل إلى عبد الله فقال: اقرأ خلف الإمام؟ فقال له عبد الله إن في الصلاة شغلا وسيكفيك ذلك الإمام
আবু ওয়াইল রহ. থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.কে
জিজ্ঞেস করলেন, আমি
কি ইমামের পেছনে কেরাত পড়বো? তিনি
বললেন, নামাযে
খুবই মগ্নতা আছে। কেরাত পড়ার জন্য ইমামই তোমার পক্ষে যথেষ্ট। মুসান্নাফে ইবনে আবী
শায়বা (৩৭৮০), মুসান্নাফে
আব্দুর রাযযাক (২৮০৩), তাহাবী
(১৩০৭), তাবারানী
কৃত আল আওসাত (৪০৪৯), মুজামে
কাবীর (৯৩১১)
৭. হযরত
জাবির রা. বলেছেন,
من صلى ركعة لم يقرأ فيها بأم القرآن فلم يصل إلا أن يكون وراء الإمام. أخرجه الترمذي (٣١٣) وقال هذا حديث حسن صحيح ومالك في الموطا صـ ٢٨
অর্থ: যে ব্যক্তি নামাযের কোন রাকাতে সূরা
ফাতেহা পড়ল না, সে
যেন নামাযই পড়ল না। তবে যদি সে ইমামের পেছনে নামায পড়ে। (তাহলে তার ব্যাপার ভিন্ন।)
তিরমিযী, হাদীস
নং ৩১৩; তিনি
এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। মুয়াত্তা মালেক, পৃ
২৮, নং
৩৮; মুসান্নাফে
আব্দুর রাযযাক (২৭৪৫) মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা (৩৬২১), আল কিরাআতু খালফাল ইমাম লিল বুখারী (১৭৪), নাসাঈ কুবরা (২৮৯৯), শারহু মুশকিলিল আছার (১৩০১), বায়হাকী (১২৪২), মারিফাতুস সুনান ওয়াল আছার (৩২০৩) আল কিরাআতু
খালফাল ইমাম লিল বায়হাকী (৩৫৮)
এ হাদীসে জাবির রা. স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, সূরা ফাতেহা পড়া ইমাম বা একাকী নামায
আদায়কারীর জন্য আবশ্যক। মুক্তাদীর জন্য সেটা আবশ্যক নয়।
আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/1987/
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
১. না, জামায়াতে নামাজ আদায় করার
সময় ইমামের পিছনে মুক্তাদি সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না।
২. না, তখন তেলাওয়াত শোনা গেলেও
মুক্তাদি ইমামের পিছনে ফাতিহা পাঠ করবে না।
আরো বিস্তারিত দলীলসহ জানুন-
https://ifatwa.info/1987/