আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
1,698 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by
edited by
যৌথপরিবার না একক পরিবার?
এক্ষেত্রে ইসলামের পছন্দনীয় পদ্ধতি কোনটি ?

1 Answer

+1 vote
by (707,840 points)
edited by

ﺑﺴْﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮّﺣْﻤﻦ ﺍﻟﺮّﺣﻴْﻢ

ﺣﺎﻣﺪﺍ ﻭ ﻣﺼﻠﻴﺎ ﻭﻣﺴﻠﻤﺎ

ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻻَ ﻋِﻠْﻢَ ﻟَﻨَﺎ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻋَﻠَّﻤْﺘَﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ

আপনি পবিত্র ! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে আপনি আমাদিগকে যা শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।(২/৩২)


আল্লাহ পাক সৃষ্টিকাল থেকেই প্রত্যেক মানুষকে তার ব্যক্তিগত নিজস্ব কিছু অধিকার দান করেছেন।স্ত্রীর উপর স্বামীর কিছু অধিকারও হক্ব দান করেছেন যেমনঃ-চাহিবামাত্র স্বামীকে সঙ্গ দেয়া ও স্বামীর সন্তানকে গর্ভে ধারণ করা এবং লালন-পালন করা ইত্যদি স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার ও হক্ব। তদরূপ স্বামীর উপর স্ত্রীরও কিছু অধিকারও হক্ব রয়েছে যেমনঃ- বিয়ের পর স্ত্রীর ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষা করে স্ত্রীকে একটি বাসস্থান ও খাদ্য এবং বস্র দান করা। এটা স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার ওহক্ব এবং শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব। 
এ সম্পর্কে কোরআনের ঘোষনা হলঃ
 ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑ 
 নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর।৪সূরা নিসা-১৯। 
 নারীদের সাথে সদ্ভাবে ব্যবহার করতে হলে তাদেরকে নিয়মমাফিক অন্ন-বস্র-বাসস্থান দিতে হবে, স্ত্রীর চিকিৎসা করানো স্বামীর উপর ওয়াজিব নয় এবং ঘরের রান্নাবান্না স্ত্রীর উপর ওয়াজিব নয়।তবে উভয়টা একটি ভালো ও উত্তম এবং প্রশংসনীয় কাজ । 

স্ত্রীর বাসস্থান কি রকম হবে? 
 এ সম্পর্কে ফুকাহায়ে কিরামদের নিম্নোক্ত কিছু আলোচনা লক্ষণীয়..... 
 আল্লামা হাসকফী রহ.বলেনঃ-
 (وَكَذَا تَجِبُ لَهَا السُّكْنَى فِي بَيْتٍ خَالٍ عَنْ أَهْلِهِ) سِوَى طِفْلِهِ الَّذِي لَا يَفْهَمُ الْجِمَاعَ وَأَمَتِهِ وَأُمِّ وَلَدِهِ (وَأَهْلِهَا) وَلَوْ وَلَدَهَا مِنْ غَيْرِهِ (بِقَدْرِ حَالِهِمَا) كَطَعَامٍ وَكُسْوَةٍ وَبَيْتٍ مُنْفَرِدٍ مِنْ دَارٍ لَهُ غَلْقٌ. زَادَ فِي الِاخْتِيَارِ وَالْعَيْنِيِّ: وَمَرَافِقَ، وَمُرَادُهُ لُزُومُ كَنِيفٍ وَمَطْبَخٍ، وَيَنْبَغِي الْإِفْتَاءُ بِهِ بَحْرٌ (كَفَاهَا) لِحُصُولِ الْمَقْصُودِ هِدَايَةٌ. وَفِي الْبَحْرِ عَنْ الْخَانِيَّةِ: يُشْتَرَطُ أَنْ لَا يَكُونَ فِي الدَّارِ أَحَدٌ - مِنْ أَحْمَاءِ الزَّوْجِ يُؤْذِيهَا، وَنَقَلَ الْمُصَنِّفُ عَنْ الْمُلْتَقَطِ كِفَايَتَهُ مَعَ الْأَحْمَاءِ لَا مَعَ الضَّرَائِرِ فَلِكُلٍّ مِنْ زَوْجَتَيْهِ مُطَالَبَتُهُ بِبَيْتٍ مِنْ دَارٍ عَلَى حِدَةٍ. - (ردالمحتار -ج:٣-ص:٥٩٩)

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ উনার চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী উক্ত আলোচনার বিস্তারিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা করেন,যা নিচে পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করা হল,
 قَوْلُهُ خَالٍ عَنْ أَهْلِهِ إلَخْ) ؛ لِأَنَّهَا تَتَضَرَّرُ بِمُشَارَكَةِ غَيْرِهَا فِيهِ؛؛ لِأَنَّهَا لَا تَأْمَنُ عَلَى مَتَاعِهَا وَيَمْنَعُهَاذَلِكَ مِنْ الْمُعَاشَرَةِ مَعَ زَوْجِهَا وَمِنْ الِاسْتِمْتَاعِ إلَّا أَنْ تَخْتَارَ ذَلِكَ؛ لِأَنَّهَا رَضِيَتْ بِانْتِقَاصِ حَقِّهَا هِدَايَةٌ 
( স্ত্রীকে এমন একটি বাসস্থান দান করা স্বামীর জন্য ওয়াজিব,যা স্বামীর পরিবার থেকে খালি থাকবে,কেননা সে অন্যর উপস্থিতির ধরুণ কষ্ট উপভোগ করবে,এবং তার মাল সামানা পুরোপুরি সংরক্ষিত থাকবে না।তৃতীয় কারো উপস্থিতি স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক জীবন ও একান্ত সময় অতিবাহিত করতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। এ জন্য একটি পৃথক বাসস্থান স্ত্রীর মৌলিক অধিকার।তবে যদি সে তার নিজ অধিকার বিসর্জন দিতে রাজি হয় যায় তাহলে তার জন্য অনুমিত রয়েছে (যদি এক্ষেত্রে গোনাহের কোনো সম্ভাবনা না থাকে)
 قَوْلُهُ وَبَيْتٍ مُنْفَرِدٍ) أَيْ مَا يُبَاتُ فِيهِ؛ وَهُوَ مَحَلٌّ مُنْفَرِدٌ مُعَيَّنٌ قُهُسْتَانِيٌّ. وَالظَّاهِرُ أَنَّ الْمُرَادَ بِالْمُنْفَرِدِ مَا كَانَ مُخْتَصًّا بِهَا لَيْسَ فِيهِ مَا يُشَارِكُهَا بِهِ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ الدَّارِ (قَوْلُهُ لَهُ غَلَقٌ) بِالتَّحْرِيكِ: مَا يُغْلَقُ وَيُفْتَحُ بِالْمِفْتَاحِ قُهُسْتَانِيٌّ. 
পৃথক বাসস্থানঃ- পৃথক বাসস্থানমানে যেখানে রাত্রিযাপন করা হয়,তা নির্দিষ্ট এককস্থান হতে হবে। পৃথক বাসস্থান মানে যা শুধুমাত্র তার জন্য নির্দিষ্ট থাকবে এতে স্বামীর পরিবারের অন্যকেউ শরীক থাকবে না, এবং উক্ত বাসস্থানের চাবি শুধুমাত্র স্ত্রীর হাতেই থাকবে।
 قَوْلُهُ زَادَ فِي الِاخْتِيَارِ وَالْعَيْنِيِّ) وَإذَا كَانَ لَهُ غَلَقٌ يَخُصُّهُ وَكَانَ الْخَلَاءُ مُشْتَرَكًا لَيْسَ لَهَا أَنْ تُطَالِبَهُ بِمَسْكَنٍ آخَرَ 
(যদি স্বামী তার স্ত্রীর জন্য একটি একক বাসস্থান বরাদ্দ করে এবং স্ত্রীর হাতে চাবিও অর্পণ করে,কিন্তু বাসস্থানের উঠান তার ও অন্যকারো মধ্যে শরিকানা থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে স্ত্রীর অভিযোগের কোনো সুযোগ থাকবেনা।
 قَوْلُهُ وَمُفَادُهُ لُزُومُ كَنِيفٍ وَمَطْبَخٍ) أَيْ بَيْتِ الْخَلَاءِ وَمَوْضِعِ الطَّبْخِ بِأَنْ يَكُونَا دَاخِلَ الْبَيْتِ أَوْ فِي الدَّارِ لَا يُشَارِكُهَا فِيهِمَا أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ الدَّارِ. 
স্ত্রীর জন্য বরাদ্দকৃত ঘরে একটি এটাস বাথরুম ও রান্নাঘর হতে হবে যাতে অন্যকেউ শরীক থাকতে পারবে না। 

 বাসস্থানের ধরণ কি রকম হওয়া চাইঃস্ত্রীকে পৃথক ঘর দিতে হবে, নাকি পৃথক বাড়ী/বাসা দিতে হবে ? এ সম্পর্কে ইবনে আবেদীন শামী রহ.বলেন,
 قُلْت: وَالْحَاصِلُ أَنَّ الْمَشْهُورَ وَهُوَ الْمُتَبَادَرُ مِنْ إطْلَاقِ الْمُتُونِ أَنَّهُ يَكْفِيهَا بَيْتٌ لَهُ غَلَقٌ مِنْ دَارٍ سَوَاءٌ كَانَ فِي الدَّارِ ضَرَّتُهَا أَوْ أَحْمَاؤُهَا. 
আমি মনে করি ফুকাহায়ে কিরামদের আলোচনা থেকে এটাই বুঝা যাচ্ছে যে,বাসস্থানের জন্য পৃথক একটি রুম-ই যথেষ্ট হবে, যদি সেই রুমের সমস্ত কর্তৃত্ব স্বীকে দিয়ে দেয়া হয় ,চায় ঐ বাড়ির অন্যান্য রুম গুলাতে স্বামীর আত্বীয়-স্বজন থাকুক অথবা স্বামীর অন্যকোনো স্ত্রী(সতীন)থাকুক।এতে কোনো অসুবিধা নেই (যদি শরয়ী অন্যান্য বিধি-বিধান লঙ্ঘনের আশংকা না থাকে)
 لَا يَكْفِي ذَلِكَ إذَا كَانَ فِي الدَّارِ أَحَدٌ مِنْ أَحْمَائِهَا يُؤْذِيهَا، وَكَذَا الضَّرَّةُ بِالْأَوْلَى 
যদি স্বামীর আত্বীয়-স্বজন স্ত্রীকে কোনো কষ্ট দেয় অথবা শরয়ী বিধি-বিধান লঙ্ঘনের আশংকা থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে স্ত্রীকে পৃথক বাড়ী/ বাসা দিতে হবে, পৃথক রুম দিলে হবে ওয়াজিব আদায় হবে না।
 أَنَّ ذَلِكَ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ النَّاسِ، فَفِي الشَّرِيفَةِ ذَاتِ الْيَسَارِ لَا بُدَّ مِنْ إفْرَادِهَا فِي دَارٍ، وَمُتَوَسِّطِ الْحَالِ يَكْفِيهَا بَيْتٌ وَاحِدٌ مِنْ دَارٍ. وَمَفْهُومُهُ أَنَّ مَنْ كَانَتْ مِنْ ذَوَاتِ الْإِعْسَارِ يَكْفِيهَا بَيْتٌ وَلَوْ مَعَ أَحْمَائِهَا وَضَرَّتِهَا كَأَكْثَرِ الْأَعْرَابِ وَأَهْلِ الْقُرَى وَفُقَرَاءِ الْمُدُنِ الَّذِينَ يَسْكُنُونَ فِي الْأَحْوَاشِ وَالرُّبُوعِ، وَهَذَا التَّفْصِيلُ هُوَ الْمُوَافِقُ، لِمَا مَرَّ مِنْ أَنَّ الْمَسْكَنَ يُعْتَبَرُ بِقَدْرِ حَالِهِمَا، وَلِقَوْلِهِ تَعَالَى - {أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنْتُمْ مِنْ وُجْدِكُمْ} [ الطلاق: 6] 
তবে এ বিষয়টা স্থান-কাল-পাত্র বেধে ভিন্ন ও হতে পারে,সুতরাং স্ত্রী পর্দানশীন- সচ্চরিত্রা ও ধনী হলে তাকে পৃথক বাড়ী/বাসা দিতে হবে,মাধ্যম পর্যায়ের হলে পৃথক ঘর-ই যথেষ্ট হবে,আর একেবারে নিম্ন পর্যায়ের হলে একটি ঘর-ই যতেষ্ট হবে যদিও তাতে স্বামীর আত্বীয়-স্বজন(নারী) থাকে,যেমন বেদুইন জাযাবর,ও নেহায়েত গরীবদের পারিবারিক জীবনাতিপাথ।এ ব্যখ্যা-ই সূরা ত্বালাকের ৬নং আয়াত সাথে বেশী সঙ্গতিপূর্ণ। "তোমরা তোমাদের সামর্থঅনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর, তাদেরকেও বসবাসের জন্যে সেরূপ গৃহ দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না"।
إذْ لَا شَكَّ أَنَّ الْمَعْرُوفَ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ الزَّمَانِ وَالْمَكَانِ، فَعَلَى الْمُفْتِي أَنْ يَنْظُرَ إلَى حَالِ أَهْلِ زَمَانِهِ وَبَلَدِهِ، إذْ بِدُونِ ذَلِكَ لَا تَحْصُلُ الْمُعَاشَرَةُ بِالْمَعْرُوفِ، وَقَدْ قَالَ تَعَالَى - {وَلا تُضَارُّوهُنَّ لِتُضَيِّقُوا عَلَيْهِنَّ} 

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ-
 ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑ 
নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর।(সূরা নিসা-১৯)
এতে কোনো সন্দেহ নেই মা'রুফ বা সদ্ভাবে জীবন-যাপন স্থান-কাল-পাত্র বেধে ভিন্নতর হয়ে থাকে,সুতরাং মুফতী মহোদয় স্থান-কাল দেখে উক্ত বিষয়ে সিদ্বান্ত নিবেন।স্থান-কালের প্রতি লক্ষ্য না করে সিদ্বান্ত নিলে তা কখনো কোরআনে বর্ণিত সদ্ব্যবহার হবে না আর অসদ্ব্যবহার কখনো বৈধ হবে না। কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ- তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না।( রদ্দুল মুহতার৩/৫৯৯-৬০০-৬০১। (দারুল ফিকর বাইরুত, মাকতাবা থেকে ৬ খন্ডে প্রকাশিত, ১৪১২হিঃ-১৯৯২ইং।) 
 উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিয়মান হয় যে একক পরিবার ও যৌথপরিবার উভয়-ই ইসলামে স্বীকৃত,কোনোটিকেই বেদআত বা অনিসলামিক বলা যাবে না, যদি যৌথপরিবারে পুরোপুরি শরিয়তকে মানা হয়,এবং পর্দাপুশিদার পুরোপুরি এহতেমাম করা হয়, নয়তো পরিবারের অশান্তি আর বিশৃঙ্খলা লেগেই তাকবে, গোনাহতো আছেই কেননা নবীজী সাঃদেবরকে তার ভাই স্ত্রীর(বাবির) সামনে যেতে নিষেধাত্মক ভয় দেখিয়েছেন। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে,
 ﻋﻦ ﻋﻘﺒﺔ ﺑﻦ ﻋﺎﻣﺮ : " ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : " ﺇﻳﺎﻛﻢ ﻭﺍﻟﺪﺧﻮﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ، ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺟﻞ ﻣﻦ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻓﺮﺃﻳﺖ ﺍﻟﺤﻤﻮ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺍﻟﺤﻤﻮ ﺍﻟﻤﻮﺕ " 
হযরত উক্ববাহ ইবনে আমির রাঃথেকে বর্ণিত, নবীজী সাঃবলেনঃসাবধান তোমরা মহিলাদের নিকট প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকো,এক ব্যক্তি বলল হে রাসুলুল্লাহ সাঃদেবর সম্পর্কে হুকুম কি? (আমাদের বুলুন)নবীজী সাঃবললেন দেবর হল মূত্যু সমতুল্য।(সহীহ বুখারী -৪৯৩৪;সহীহ মুসলিম-২১৭২)
সুতরাং স্ত্রীর জন্য জায়েয হবেনা স্বামীর কোনো পুরুষ আত্বীয়র সাথে নির্জনে বসবাস করা, আর যৌথভাবে বসবাস করলে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক।তবে যদি এত ছোট বা বড় হয় যাদের থেকে ফিতনার আশংকা থাকেনা তাহলে তাদের সাথে পর্দামত একবাড়িতে ভিন্ন ভিন্ন ঘরে অবস্থান করা যাবে, বৈধ আছে। যৌথপরিবারে থাকলে অনেক সময় শুধুমাত্র দেবর বা স্বামীর অন্যান্য পুরুষ আত্বীয়দের সাথে স্ত্রীর ঘরে অবস্থান করতে হয় যা হাদীসে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে,
 (ﻻَ ﻳَﺨْﻠﻮﻥَّ ﺭَﺟُﻞٌ ﺑِﺎﻣْﺮَﺃﺓٍ ﺇِﻻَّ ﻭَﻣَﻌَﻬﺎ ﺫُﻭ ﻣَﺤْﺮَﻡ ) 
কোনো পুরুষ কোনো মহিলার সাথে মহিলার মাহরাম না থাকা অবস্থায় নির্জনে একাকী বসবাস করতে পারবে না।(সহীহ বুখারী-৫২৩৩;সহীহ মুসলিম-১৩৪১)

 যৌথপরিবারে থাকলেও স্বামীর খেদমত ব্যতীত আর কারো খেদমত এমনকি সবার রান্নাবান্নার দায়িত্ব ও স্ত্রীর উপর ওয়াজিব নয় বরং তার নৈতিক দায়িত্ব।তবে রান্নাবান্না সম্পর্কে মতানৈক্য রয়েছে এবং বিষয়টা ব্যাখ্যা সাপেক্ষও । পারিবারিক দন্ধ,পরনির্ভরশীল মনমানসিকতা সৃষ্টি সহ আরো নানাবিধ কারণ যৌথপরিবারে রয়েছে যদ্দরুন থানবী রহ সহ অনেক ফেকাহবিদগণ এককপরিবারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অপরদিকে একক পরিবার প্রথা মানুষের জান মাল ও ঈমান রক্ষার্থে সব চেয়ে বেশী ভুমিকা রাখে।  যেমনঃ- 
  1.  সারাদিন কাজকর্মের শেষে মানুষ একটু নির্জনে আরাম করতে চায়,এবং প্রতিটা নারীই চায় তার পৃথিবীকে সে নিজের মত করে সাজাতে, এবং যখনই প্রয়োজন তখনই স্বামীর সাথে একান্তে সময় অতিবাহিত করতে, এটা একমাত্র একক পরিবারেই সম্ভব যৌথপরিবারে কখনো সম্ভব হবে না। 
  2.  একক পরিবার হলে প্রতিটা মানুষ হালাল ত্বরিকায় তার পাথেয় সংগ্রহে ব্যস্ত থাকবে কারণ এখন তাকে অন্য কেউ খাওয়াবে না, তাই রুজি করতে হবে, এতে করে সে স্বনির্ভর হতে পারবে, কারো উপর বুঝা হবেনা বা হওয়ার চেষ্টা করবে না। প্রথমে সব কিছু পৃথক করে নিলে পরে ওরাসতের সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হবেনা, সে পিতার সম্পত্তি থেকে যা কিছুই পাবে তা নিয়ে প্রথম থেকেই নিজের মনে করে চিন্তাভাবনা করার সুযোগ পাবে। 
  3.  একক পরিবারের ব্যবস্থা হলে পর্দার মত গুরুত্বপূর্ণ বিধি-বিধান মানা ও পালন করা স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের জন্য সম্ভবপর হবে। তাছাড়া নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে কিছু সময় মানুষ ঘরে তার বস্ত্র খোলে আরাম করবে এটা তার মৌলিক অধিকার যা কোরআন তাকে দিয়েছে এমতাবস্তায় কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না এমনকি নিজ বালিগ সন্তাদি ও সেবক-সেবিকারাও প্রবেশ করতে পারবে না,যৌথ পরিবার হলে বস্ত্র খোলে আরাম করা কখনো সম্ভব হবেনা। আল্লাহ তা'আলা বলেন।
 ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻟِﻴَﺴْﺘَﺄْﺫِﻧﻜُﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣَﻠَﻜَﺖْ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧُﻜُﻢْ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻟَﻢْ ﻳَﺒْﻠُﻐُﻮﺍ ﺍﻟْﺤُﻠُﻢَ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﺛَﻠَﺎﺙَ ﻣَﺮَّﺍﺕٍ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞِ ﺻَﻠَﺎﺓِ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ﻭَﺣِﻴﻦَ ﺗَﻀَﻌُﻮﻥَ ﺛِﻴَﺎﺑَﻜُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻈَّﻬِﻴﺮَﺓِ ﻭَﻣِﻦ ﺑَﻌْﺪِ ﺻَﻠَﺎﺓِ ﺍﻟْﻌِﺸَﺎﺀ ﺛَﻠَﺎﺙُ ﻋَﻮْﺭَﺍﺕٍ ﻟَّﻜُﻢْ ﻟَﻴْﺲَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺟُﻨَﺎﺡٌ ﺑَﻌْﺪَﻫُﻦَّ ﻃَﻮَّﺍﻓُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻳُﺒَﻴِّﻦُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﺂﻳَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ﺣَﻜِﻴﻢٌ (58 
হে মুমিনগণ! তোমাদের দাসদাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি তারা যেন তিন সময়ে তোমাদের কাছে অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের নামাযের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা বস্ত্র খুলে রাখ এবং এশার নামাযের পর। এই তিন সময় তোমাদের দেহ খোলার সময়। এ সময়ের পর তোমাদের ও তাদের জন্যে কোন দোষ নেই। তোমাদের একে অপরের কাছে তো যাতায়াত করতেই হয়, এমনি ভাবে আল্লাহ তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
 ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻎَ ﺍﻟْﺄَﻃْﻔَﺎﻝُ ﻣِﻨﻜُﻢُ ﺍﻟْﺤُﻠُﻢَ ﻓَﻠْﻴَﺴْﺘَﺄْﺫِﻧُﻮﺍ ﻛَﻤَﺎ ﺍﺳْﺘَﺄْﺫَﻥَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻠِﻬِﻢْ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻳُﺒَﻴِّﻦُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢْ ﺁﻳَﺎﺗِﻪِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ﺣَﻜِﻴﻢٌ   
তোমাদের সন্তান-সন্ততিরা যখন বায়োপ্রাপ্ত হয়, তারাও যেন তাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় অনুমতি চায়। এমনিভাবে আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।(সূরা নূর-৫৮)  

অবশ্য এককপরিবার ব্যবস্থা হলেও মাতা-পিতা ও মা'যুর ভাই বোনদের লালন-পালন ও বোনকে বিয়ে দেয়ার(বাবার অনুপস্থিতে) দায়িত্ব আপনার উপরই,এবং আপনি ধনী হলে আপনার ভাই-বোনদেরকে পর্যাপ্ত পরিমান সাহায্য-সহযোগিতা করা আপনার একান্ত কর্তব্যও দায়িত্ব। আশরাফ আলী থানভী(র,) বলেন পুত্রবধুকে আলাদা করে দিন পারিবারিক অশান্তি অনেকটাই কমে যাবে। (ইরশাদাতে হাকিমূল উম্মতঃ৪০৯) 
এমনকি ওয়াজিব খোরপোশের অভিন্ন একটি অংশই হল স্ত্রীকে পৃথক বাসস্থান দেওয়া!তবে স্ত্রী স্বেচ্ছায় একত্রে থাকতে সম্মত হলে ভিন্ন কথা। (ইসলাহে ইনকিলাবে উম্মতঃ২।১৮৭) 
শশুর-শাশুড়ীর খেদমত করতে যে সব স্বামীরা স্ত্রীর উপর আমানবিক নির্যাতন করে,তাদের জেনে রাখা উচিত -একেতো তাদের খেদমত স্ত্রীর উপর ওয়াজিব নয়!দ্বিতীয়ত শশুরের খেদমতে ফিতনার আশংকা আছে! তাই স্বামী নিজে আপন মাতা-পিতার খেদমত করবে অথবা পারিশ্রমিক দিয়ে করাবে। স্ব ইচ্ছায় শাশুড়ীর খেদমত করা বধুর নৈতিক দায়িত্ব ,কিন্তু এক্ষেত্রে বধুর উপর কোন রকম চাপ প্রয়োগ করা যাবেনা,এবং বধুর খেদমতকে অনুগ্রহ বিবেচনা করাও শ্বাশুড়ীর নৈতিক দায়িত্ব। 


 মোটকথাঃ- 

এককপরিবার ব্যবস্থা ও যৌথপরিবার ব্যবস্থা উভয়ই বৈধ। আমাদের দেশে যেহেতু পূর্ব থেকেই যৌথপরিবার ব্যবস্থা চলে আসছে, এবং এককপরিবার ব্যবস্থাকে মা-বাবা সহ অনেকেই মেনে নিতে পারেন না।এমনকি অনেকে এককপরিবার ব্যবস্থাকে কটাক্ষ করে ও নিন্দা মনে করে,তাই যৌথপরিবারই আমাদের জন্য আপাতদৃষ্টিতে মাননসই ও গ্রহণযোগ্য হবে,তবে যাতে শরীয়তের কোনো বিধি-বিধান লঙ্ঘন না হয় সেদিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টি অত্যান্ত গুরুত্বতার সাথে রাখতে হবে, আল্লাহ না করুক যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়,সেক্ষেত্রে সমস্ত দায়-দায়িত্ব কিন্তু আপনার-ই। যখন আমাদের সমাজ এককপরিবার ব্যবস্থাকে মেনে নিবে তখন সেটাই সবার জন্য মঙ্গলজনক ও নিরাপদ হবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...