উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
শিরক দুই প্রকার: এক. শিরকে জলী, দুই. শিরকে খফী। শিরকে জলী সবচেয়ে মারাত্মক। শিরকে জলীর অনেক প্রকার রয়েছে।
যেমন ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহ তাআলার হক, তাতে আল্লাহ ছাড়া কাউকে শরীক করা, উপায়-উপকরণের ঊর্ধ্বের বিষয়ে গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা, উপায়-উপকরণকে উপায়-উপকরণের সৃষ্টিকর্তার মান দেওয়া, গাইরুল্লাহকে উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতাধারী মনে করা ইত্যাদি।
,
কিছু বিষয় আছে এমন, যা তাওহীদ-পরিপন্থী তো নয়, তবে তা ‘তাওয়াক্কুলে’র সর্বোচ্চ স্তর থেকে নিম্নস্তরের। এ ধরনের বিষয়গুলোকে শিরক বলা স্পষ্ট ভুল। যে বিষয়ে যতটুকু কমতি আছে তাতে ততটুকু কমতির কথাই বলা উচিত। বাড়াবাড়ি করে বিদআতকে শিরক বলে দেওয়া অথবা তাওয়াক্কুলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পরিপন্থী বিষয়কে তাওহীদের পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে শিরক বানিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।
,
শিরকের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন।
আল্লাহর কাছে সবচে’ ঘৃণ্য ও জঘন্যতম পাপ হল শিরক। কুরআন মাজীদে পুত্রের প্রতি লুকমান হাকীমের ওসিয়তগুলো বিশেষ গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে তিনি নিজ পুত্রকে ওসিয়ত করে বলেন-
وَ اِذْ قَالَ لُقْمٰنُ لِابْنِهٖ وَ هُوَ یَعِظُهٗ یٰبُنَیَّ لَا تُشْرِكْ بِاللهِ اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌ.
স্মরণ কর, যখন লুকমান উপদেশচ্ছলে নিজ পুত্রকে বলেছিল, বৎস! তুমি আল্লাহ্র সাথে শরীক করো না। কেননা র্শিক নিশ্চয় মারাত্মক অবিচার ও পাপ। -সূরা লুকমান (৩১) : ১৩
আল্লাহ তাআলা নবীকে সতর্ক করে বলেছেন-
وَ لَقَدْ اُوْحِیَ اِلَیْكَ وَ اِلَی الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَىِٕنْ اَشْرَكْتَ لَیَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَ لَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ.
নিশ্চয় আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি এই ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, যদি আপনি শিরক করেন তাহলে অবশ্যই আপনার সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং নিশ্চিত আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন। -সূরা যুমার (৩৯) : ৬৫
অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেছেন-
اِنَّهٗ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَیْهِ الْجَنَّةَ وَ مَاْوٰىهُ النَّارُ.
আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। -সূরা মায়েদা (৫) : ৭২
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-
اِنَّ اللهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرٰۤی اِثْمًا عَظِیْمًا.
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। এবং যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে এক মহাপাপ করে। -সূরা নিসা (৪) : ৪৮
একজন মানুষ যত ভালো কাজই করুক কিন্তু সে যদি র্শিক করে আল্লাহ তাআলার কাছে তার কোনো কিছুরই মূল্য নেই। এজন্য কিয়ামতের দিবসে মুশরিকরা যত ভালো কাজই নিয়ে আসুক আল্লাহ তাআলা সেগুলোকে ধুলিকণা-রূপ করে দিবেন। আল্লাহ বলেন-
وَ قَدِمْنَاۤ اِلٰی مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنٰهُ هَبَآءً مَّنْثُوْرًا.
তারা (দুনিয়ায়) যা-কিছু আমল করেছে, আমি তার ফায়সালা করতে আসব এবং সেগুলোকে শূন্যে বিক্ষিপ্ত ধুলোবালি (-এর মত মূল্যহীন) করে দেব। -সূরা ফুরকান (২৫) : ২৩
,
★★ইসলামে ঔষধঃ
ইসলামের আগমনের পূর্বে জাহিলিয়্যাতের যুগে রোগ-বালাই থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে কয়েক ধরনের উপায় ও পন্থা অবলম্বন করা হত। তন্মধ্যে একটি হল ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা। ঐ যুগে যেহেতু আল্লাহপ্রদত্ত কোনো ধর্ম তারা অনুসরণ করত না তাই তাদের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তাওহীদ-পরিপন্থী কর্ম ও চরিত্র এবং মানবতা বিবর্জিত বহু বিষয় তাদের ধর্ম বা রীতিতে পরিণত হয়েছিল। ইসলাম এসে তাদের পূর্বের সকল রীতিনীতি পর্যবেক্ষণ করে; যেগুলো তাওহীদ-পরিপন্থী সেগুলো নিষিদ্ধ করে আর যেগুলো এসব থেকে মুক্ত সেগুলোকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দেয়।
ঔষধ-পত্রের মাধ্যমে চিকিৎসাতে যেহেতু তাওহীদ-পরিপন্থী তেমন কিছু নেই তাই ইসলাম এসে তা পূর্বের ন্যায় বহাল বা বৈধ রাখে। তবে, ইসলাম তাতে এ সংশোধনী অবশ্যই এনেছে যে, ঔষধকে সুস্থতাদানকারী মনে করা যাবে না; বরং সুস্থতাদানকারী হলেন একমাত্র আল্লাহ আর ঔষধ মাধ্যমমাত্র। আর যারা এ চিকিৎসাকর্মে নিজেকে নিয়োজিত করবে সে যেন পরিপূর্র্ণরূপে চিকিৎসা-জ্ঞান অর্জন করে এবং পুরো পারদর্শী হয়ে এ কাজে ব্রত হয়; আংশিক বা ভুল জ্ঞান ও অপরিপক্ক জ্ঞান নিয়ে যেন এ কাজে অগ্রসর না হয়।
,
নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস পেশ করা হল :
হযরত আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি চিকিৎসাজ্ঞান অর্জন করা ছাড়া চিকিৎসা শুরু করে, আর তার চিকিৎসায় কেউ মারা যায় বা ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে এর দায় ঐ ব্যক্তির উপরই বর্তাবে (তার ক্ষতিপূরণ তাকেই বহন করতে হবে)। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৫৭৭
,
হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম থেকে বর্ণিত, নবীজীর যুগে এক ব্যক্তির শরীর যখম হয় এবং ফুলে রক্ত-পুঁজ জমে যায় তখন লোকটি বনী আনমারের চিকিৎসক দুই ভাইকে ডাকলেন। নবীজী তাদের উভয়জনকে দেখে বললেন, চিকিৎসায় তোমাদের মধ্যে কে বেশি পারদর্শী? তারা দুজনে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! চিকিৎসাকর্ম কি ভালো? তখন নবীজী বললেন, যিনি রোগ নাযিল করেছেন তিনি চিকিৎসাও নাযিল করেছেন। -মুয়াত্তা মালেক, হাদীস ১৭৫৭
,
হযরত সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. বলেন, আমি একদা অসুস্থ হই, তখন নবীজী আমাকে দেখতে আসেন এবং তাঁর হাত আমার বক্ষে রাখেন। আমি তাঁর হাতের শীতলতা আমার কলিজা পর্যন্ত অনুভব করি। তখন নবীজী আমাকে বললেন, তুমি হৃদরোগী, তুমি হারেস ইবনে কালদার কাছে যাও, সে চিকিৎসক। সে যেন সাতটি আজওয়া খেজুর নেয় এবং তা বিচিসহ চূর্ণ করে, অতপর যেন তোমাকে পান করায়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৭১
,
হযরত আবুদ দারদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ রোগও নাযিল করেছেন এবং তার নিরাময়কও। আর তিনি প্রত্যেক রোগের জন্য নিরাময়কও রেখেছেন তাই তোমরা চিকিৎসা কর, তবে হারাম বস্তু দিয়ে চিকিৎসা করো না। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৭০
,
ঔষধ গ্রহনকারী যদি বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ ব্যতীত এসব জিনিসের নিজস্ব শক্তি রয়েছে, তাহলে সে বড় শির্ককারী হিসাবে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে যদি সে বিশ্বাস করে যে, সবকিছু আল্লাহ্র হাতে; কিন্তু এগুলি অসিলা আর সুন্নাত মাত্র এবং এগুলির নিজস্ব কোনো শক্তি নেই, তাহলে তা জায়েজ আছে।
,
মুসলিম যেহেতু তাওহীদে বিশ্বাসী, তাই সে সুস্থতা-অসুস্থতা, আপদ-বিপদ, সুখ-শান্তি একমাত্র আল্লাহর থেকেই হয় বলে বিশ্বাস করে। ঔষধ গ্রহনের ক্ষেত্রেও সে এই বিশ্বাস মনে জাগ্রত রাখবে। ঔষধ গ্রহণ করলে এই বিশ্বাস মনে রাখতে হবে যে এটি ওসীলা মাত্র।
ঔষধের কোনো ক্ষমতা নেই,সব ক্ষমতা আল্লাহর হাতে।
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে ঔষধ,ডাক্তার,যারা ভরনপোষনের দায়িত্ব পালন করে,তাদের ব্যপারে এই আকীদা রাখবে যে এগুলো সবই ওসিলা মাত্র।