আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
221 views
in সালাত(Prayer) by (75 points)
আসসালামু আলাইকুম উস্তাদ,

১. কারো যদি আগের ওয়াক্তের ফরয নামায কাযা হয়ে যায়, নতুন ওয়াক্তের জামাত শুরু হয়ে গেছে এমতাবস্থায় কি সে আগে জামাত ধরবে নাকি আগের ওয়াক্তের কাযা আদায় করে, তারপর জামাতে দাড়াবে?

২. কারো যদি বিতির নামাজ কাযা থাকে, এমতাবস্থায় ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেছে,
তাহলে সে কি ফজরের সুন্নাত পড়ে জামাতে শরীক হবে?

নাকি আগে বিতিরের কাযা, তারপর ফজরের সুন্নাত, তারপর জামাত?

1 Answer

0 votes
by (58,260 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

হযরত হাফসা রাঃ থেকে বর্ণিত, নবীজী সা.  বলেন,

إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ لاَ يُصَلِّى إِلاَّ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ وفى رواية إلا ركعتي الفجر

‘‘রাসূল সাঃ ফজর উদিত হবার পর ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত ছাড়া অন্য কোন সালাত পড়তেন না।’’ সহীহ মুসলিম ১৭১১, সহিহ বুখারি ১১৭৩

 

ইমাম তিরমিযী রাহি. বলেন,

وهو ما أجمع عليه أهل العلم، كرهوا أن يصلي الرجل بعد طلوع الفجر إلا ركعتي الفجر.

‘‘আহলুল ইলম একমত যে, কোনো ফজরের সময় হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত সময়ে ফজরের দুই রাকাআত সুন্নাত ছাড়া অতিরিক্ত নফল পড়াকে মাকরুহ মনে করেন।’’ তিরমিজি ৭৫

 

বি.দ্র. তবে ফজরের সুন্নতের অত্যধিক গুরুত্বের কারণে ইকামাতের পরও মসজিদের কোনো কোণে তা আদায় করতে বলা হয়েছে, যদি দ্বিতীয় রাকাআত পাওয়া যাওয়ার পুরোপুরি সম্ভাবনা থাকে।

বহু সংখ্যক সাহাবী-তাবেয়ী এমন ছিলেন, যারা কখনো যদি মসজিদে এসে দেখতেন যে, ফজরের ইকামাত বা জামাত শুরু হয়ে গেছে, তাহলে মসজিদের ভেতরে জামাতের কাতার থেকে দূরে বারান্দায় বা মসজিদের এক প্রান্তে কিংবা খুঁটির আড়ালে ফজরের দু’রাকাআত সুন্নাত পড়ে নিতেন। তারপর জামাতে শরীক হতেন। আর কিছুসংখ্যক সাহাবী-তাবেয়ী মসজিদের ভেতরে তা পড়তেন না। তবে মসজিদের বাইরে ঘরে বা পথে অথবা মসজিদের দরজায় পড়তেন। তারপর ইমামের সাথে শরীক হতেন।

 

ক. আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত,(কূফার গভর্নর) সায়ীদ ইবনে আস তাঁকে এবং হুযায়ফা ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-কে ফজরের সালাতের আগে ডাকলেন। তাঁরা (কাজ শেষে) তার কাছ থেকে বিদায় নিলেন।

ثم خرجوا من عنده وقد أقيمت الصلاة، فجلس عبد الله إلى أسطوانة من المسجد، فصلى الركعتين، ثم دخل في الصلاة

‘‘ইতিমধ্যে মসজিদে ফজরের সালাতের ইকামাত শুরু হয়ে গেছে। ইবনে মাসউদ রা. মসজিদের একটি খুঁটির আড়ালে ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) পড়লেন। তারপর জামাতে শরীক হলেন।” শরহু মাআনিল আসার ১/৬১৯

 

খ. আবু মিজলায থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি ফজরের জামাত চলা অবস্থায় ইবনে আব্বাস ও ইবনে উমর রা.-এর সঙ্গে মসজিদে প্রবেশ করলাম। ইবনে উমর রা. জামাতের কাতারে প্রবেশ করলেন। আর ইবনে আব্বাস রা. ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) পড়লেন। তারপর জামাতে শরীক হলেন। -প্রাগুক্ত

 

উল্লেখ্য- কতিপয় সাহাবী-তাবেয়ী إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة  (সালাতের ইকামাত শুরু হয়ে গেলে ফরয ছাড়া অন্য সালাত পড়া জায়েয নয়)-এই হাদীসের ওপর ভিত্তি করে ইকামাত বা জামাত চলা অবস্থায় ফজরের সুন্নাত পড়তেন না। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আবু হুরায়রা রা., আবু মূসা আশয়ারী রা., মুহাম্মদ ইবনে সীরীন, ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাসীর রাহি. তাঁরা  إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة-এই হাদীসের বিধানকে সকল সালাত এমনকি ফজরের সুন্নতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য মনে করতেন। কিন্তু অন্যান্য সাহাবী-তাবেয়ী ফজরের সুন্নাত অধিক গুরুত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়ায় এই বিধান থেকে একে ভিন্ন মনে করতেন। হাদীসটিকে তাঁরা ফজরের সুন্নাত ছাড়া অন্যান্য সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে করতেন। ফজরের সুন্নতের ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাগিদ এবং আলোচ্য বিষয় সংক্রান্ত বিভিন্ন বর্ণনার পর্যালোচনা থেকেও এটাই প্রতীয়মান হয়। কোনো কোনো সাহাবী নবীজীর সামনে ফজরের ইকামাত চলাকালে মসজিদে সুন্নাত পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে নবীজী তাঁদেরকে সরাসরি নিষেধ করেননি বা এ কথা বলেননি যে, إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة  (ফরযের ইকামাত শুরু হলে অন্য সালাত পড়া নিষেধ) বরং তিনি বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেছেন। যদি ইকামাত চলা অবস্থায় ফজরের সুন্নাত পড়া সর্বাবস্থায় নাজায়েয হত, তাহলে তিনি স্পষ্ট নিষেধ করতেন বা বলতেন যে, ফরযের ইকামাত শুরু হলে অন্য সালাত পড়া নিষেধ।

বি.দ্র- সময় যদি এত কম হয় যে সুন্নাত পড়তে গেলে ফরয সালাত শেষ হয়ে যাবে, তাহলে সুন্নাত পড়া মাকরুহ।

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

 

১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সে আগে জামাত ধরবে। অতঃপর সুযোগ মত আগের ওয়াক্তের ছুটে যাওয়া নামাজ কাযা আদায় করে নিবে।

২. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সে ফজরের সুন্নাত পড়ে জামাতে শরীক হয়ে যাবে।

বি.দ্র. তবে ফজরের সুন্নতের অত্যধিক গুরুত্বের কারণে ইকামাতের পরও মসজিদের কোনো কোণে তা আদায় করতে বলা হয়েছে, যদি দ্বিতীয় রাকাআত পাওয়া যাওয়ার পুরোপুরি সম্ভাবনা থাকে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 279 views
0 votes
1 answer 365 views
+1 vote
1 answer 143 views
...