আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
982 views
in পবিত্রতা (Purity) by (17 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম।
(০১) আমার জানার বিষয় হলো, আমাদের যখন গোসল ফরজ হয় তখন আমার শরীর যদি ঘেমে যাায় সেটা কি নাপাক হবে? সেটা সহবাস বা স্বপ্নদোষ যেভাবেই হোক না কেন! বিস্তারিত জানতে চাই। জাযাকাল্লাহ।

২/ বসার আদব সম্পর্কে যেটা প্রচলিত সেটা কি সুন্নত? দুই হাটু উঠাইয়া খাওয়া! এটা কি সুন্নত?

1 Answer

0 votes
by (671,200 points)
edited by
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


শরীয়তের বিধান মতে জানাবত অবস্থার ঘাম নাপাক নয়।
(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ১/২৩৯,জামিউল ফাতওয়া ৩/৫৭০)
,
সুতরাং  যখন গোসল ফরজ হয় তখন শরীর যদি ঘেমে যায় সেটা নাপাক হবেনা।
সেটি পাক।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ
 
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، وَبِشْرٌ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنْ بَكْرٍ، عَنْ أَبِي رَافِعٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ لَقِيَنِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي طَرِيقٍ مِنْ طُرُقِ الْمَدِينَةِ وَأَنَا جُنُبٌ فَاخْتَنَسْتُ فَذَهَبْتُ فَاغْتَسَلْتُ ثُمَّ جِئْتُ فَقَالَ " أَيْنَ كُنْتَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ " . قَالَ قُلْتُ إِنِّي كُنْتُ جُنُبًا فَكَرِهْتُ أَنْ أُجَالِسَكَ عَلَى غَيْرِ طَهَارَةٍ . فَقَالَ " سُبْحَانَ اللهِ إِنَّ الْمُسْلِمَ لَا يَنْجُسُ " . - صحيح 

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনার এক রাস্তায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমার সাক্ষাত হয়। আমি তখন নাপাক অবস্থায় ছিলাম। তাই আমি পিছনে হটে গিয়ে গোসল করে আসলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবূ হুরাইরাহ্! তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে? আমি বললাম, আমি নাপাক ছিলাম বিধায় অপবিত্র অবস্থায় আপনার সাথে বসা অপছন্দ করলাম। তিনি বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! মুসলমান (কখনো) অপবিত্র হয় না।
বুখারী (অধ্যায়ঃ গোসল, অনুঃ জুনুবী ব্যক্তির ঘাম, নিশ্চয় মুসলিম অপবিত্র নয়, হাঃ ৩৮৩), মুসলিম (অধ্যায়ঃ হায়িয, অনুঃ মুসলমান অপবিত্র হয় না তার প্রমাণ)
আল-জামি‘উস সাগীর ৬১১৭, ইরওয়া ১৯৩,আবু দাউদ ২৩১)

وحکم عرق کسور (درمختار) فسور آدمی مطلفا ولو جنبا او کافر اا لخ ظاھر (الدر المختار علی ہامش ردالمحتارمطلب فی السور ج۱ ص ۲۰۵۔ط۔س۔ج۱ص۲۲۲)ظفیر۔
,
সারমর্মঃ মানুষের ঘামের বিধান মানুষের ঝুটার ন্যায়, সুতরাং মানুষের ঝুটা যদিও সে নাপাকি হালতে হোক,অথবা কাফের হোক,পাক।
  
وفی مبسوط السرخسی:(وَإِذَا عَرَقَ الْجُنُبُ، أو الْحَائِضِ فِي ثَوْبٍ لَمْ يَضُرَّهُ) لِمَا رُوِيَ «أَنَّ النَّبِيَّ - صلي الله عليه وسلم - كَانَ يَأْمُرُ الْحَائِضَ مِنْ نِسَائِهِ بِالِاتِّزَارِ، ثُمَّ كَانَ يُعَانِقُهَا ۔۔۔۔۔، وَالْحَرُّ حَرُّ الْحِجَازِ فَكَانَا يَعْرَقَانِ لَا مَحَالَةَ، وَلَمْ يَتَحَرَّزْ رسول الله - صلي الله عليه وسلم - مِنْ عَرَقِهَا»، وَلِأَنَّهُ لَيْسَ عَلَى بَدَنِ الْإِنْسَانِ الْجُنُبِ، وَالْحَائِضِ نَجَاسَةٌ عَيْنِيَّةٌ فَهُوَ وَأَعْضَاءُ الْمُحْدِثِ سَوَاءٌ.(المبسوط للسرخسي ج 1ص70)
সারমর্মঃ যদি জুনুবি ব্যাক্তি ঘেমে যায়,অথবা হায়েজাহ মহিলা ঘেমে যায়,তাহলে কোনো সমস্যা নেই।,,,


মানুষের ঘাম পাক। তবে তার সাথে নাপাক বস্তুর মিশ্রণ ঘটলে নাপাক হয়ে যায়। এই ঘাম কোন পাক জিনিসের সাথে লাগলে তাও নাপাক হয়ে যাবে।
(কিতাবুন নাওয়াযিল ৩/১৫৩)
,
গোসল ফরয এমন অবস্থায় বা পোশাক নাপাক এমন অবস্থায় কোন কাজ করার সময় যদি ঘাম দ্বারা নাপাক জায়গা ভিজে যায় এবং সেখান থেকে ঘাম পাক বস্তুতে পরে তবে তা নাপাক হবে। 
,
(০২)
খাবার আল্লাহ তাআলার বড় নিআমত। এ নিআমত গ্রহণের সময় আমরা বিনয়ের সাথে গ্রহণ করব, কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহণ করব। আল্লাহ রিযিকদাতা আর আমরা রিযিক গ্রহণকারী। আল্লাহ আমাদের রব আর আমরা আল্লাহর বান্দা-আল্লাহর গোলাম। সুতরাং মনিবের সামনে গোলাম যেভাবে বসে, খাবার গ্রহণ করার সময় আমরা সেভাবেই বসব।
,
 বিনয় প্রকাশ পায় এমনভাবে বসব।
 এমনটিই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা। 
নবীজী বলতেন- 
آكُلُ كَمَا يَأْكُلُ الْعَبْدُ، وَأَجْلِسُ كَمَا يَجْلِسُ الْعَبْدُ. 

গোলাম যেভাবে খায় আমিও সেভাবে খাব। গোলাম যেভাবে বসে (খাওয়ার সময়) আমিও সেভাবেই বসব। -মুসনাদে আবু ইয়া‘লা, হাদীস ৪৯২০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১৪২১০; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৫৫৭২ ২৯.
,
 উপুড় হয়ে শুয়ে খাব না অনেককে উপুড় হয়ে শুয়ে খেতে দেখা যায়। এভাবে খাওয়া ঠিক নয়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপুড় হয়ে খেতে নিষেধ করেছেন।
 সাথে সাথে তা স্বাস্থ্যসম্মতও নয়। হাদীস শরীফে এসেছে-
 نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنْ يَأْكُلَ الرّجُلُ، وَهُوَ مُنْبَطِحٌ عَلَى وَجْهِهِ. 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপুড় হয়ে খেতে নিষেধ করেছেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৩৭০; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৭৭৪ সুতরাং আমরা উপুড় হয়ে শুয়ে খাব না।

আবু জুহাইফা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- 
لاَ آكُلُ مُتّكِئًا
 আমি টেক লাগিয়ে বা হেলান দিয়ে বসে খাই না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৩৯৮ তো এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম, নবীজী হেলান দিয়ে বা টেক লাগিয়ে বসে খেতেন না। সুতরাং আমরাও এভাবে বিনা কারনে বসে খাব না। 
,
 
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত বসার পদ্ধতিই শুধু একমাত্র সুন্নাত এমনটি বলা যাবেনা।
তবে এইভাবেই রাসুলুল্লাহ সাঃ খেয়েছেন,তাই এটিও সুন্নাত পদ্ধতি। 
তবে ইহা ছাড়াও আরো সুন্নাত পদ্ধতি রয়েছে।
,
    
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم جَالِساً مُقْعِياً يَأكُلُ تَمْراً . رواه مسلم

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উঁচু হয়ে বসে খেজুর খেতে দেখেছি।’ 
(মুসলিম ২০৪৪, আবূ দাউদ ৩৭৭১, আহমাদঃ, ১২৬৮৮, দারেমী ২০৬২।) 

উঁচু হয়ে বসার পদ্ধতি এই যে, পায়ের নলা দুখানা উঁচু করে বুকের সাথে লাগিয়ে মাটিতে বা কোন আসনে পাছা ঠেকিয়ে বসা।
.
এই হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
 (رَأَيْتُ النَّبِىَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُقْعِيًا يَأْكُلُ تَمْرًا)
 ‘‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দু’পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসে খেজুর খেতে দেখেছি। দু’পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসে অথবা পায়ের গোড়ালির উপর নিতম্ব রেখে সলাত আদায় করা মাকরূহ। কিন্তু দু’ পায়ের নলা খাড়া রেখে নিতম্বের উপর বসে খাওয়া মাকরূহ নয়। কেননা এ রকম বসাটা দাসদের বসার সাথে সাদৃশ্য যা নম্রতা প্রকাশ করে। ইবনু সা‘দ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি দাসদের মতো খাব এবং দাসদের মতো বসব। 

শামায়িলে তিরমিযীতে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট খেজুর আনা হলে আমি তাকে ক্ষুধার তাড়নায় দু’ পায়ের নলা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসা অবস্থায় খেতে দেখেছি। অর্থাৎ ক্ষুধায় দুর্বল হয়ে যাওয়ার করণে তিনি নিতম্বের উপর ভর দিয়ে বসে খেয়েছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
.
খাওয়ার সময়, সুন্নাহ পদ্ধতিটি হ'ল উভয় পায়ের উপর ভড় দিয়ে  সোজা হয়ে বসা (তাশাহুদের ন্যায়) বা ডান পা উপরে উঠানো এবং বাম পা ছড়িয়ে যায় এই ভাবে বসা।
,
 চার যানু হয়ে বসা সুন্নাহ পরিপন্থী , তবে ওযরের কারনে কোনো সমস্যা  নেই । 
.
أقول ان المستحسن عند الأکل الجلوس علی رکبتیہ،أو مقعیاً ،أما التربیع فجلوس قبیح․(العرف الشذی:۲/۵) ویبسط رجلہ الیسری وینصب الیمنی․(شامی:۹/۴۹۱) 

أحسن الجلسات للأکل الاقعاء علی الورکین ونصب الرکبتین ،ثم الجثی علی الرکبتین وظہور القدمین ثم نصب الرجل الیمنی والجلوس علی الیسار․(شامی:۱۰/۴۸۸کتاب الخنثی)

সারমর্মঃ  উত্তম পদ্ধতি হলো পায়ের সম্মুখভাগ এবং নলার উপর হাঁটুগেড়ে বসা । অথবা ডান পা খাড়া করে বাম পায়ের উপর বসা। 

দারুল উলুম দেওবন্দ এর 158596 নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে খাবার খাওয়ার সময় তাশাহুদের ন্যায় বসা অর্থাৎ ডান পা খাড়া করে,এবং বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার  উপরে বসা।

দুই যানু হয়ে বসা,বা ডান পা কে খাড়া করে বাম পায়ের উপর বসাকে ফুকাহায়ে কেরামগন মুস্তাহাব বলেছেন।

শুধু মাত্র দুই পা খাড়া করে বসাকেই একমাত্র সুন্নাত বলা যাবেনা।
তবে রাসুলুল্লাহ সাঃ এউ ভাবে খেজুর খেয়েছিলেন মর্মে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১৬/৩৭)

,
فالمستحب في صفۃ الجلوس للآکل أن یکون جاثیًا علی رکبتیہ وظہور قدمیہ، أو ینصب الرجل، یجلس علی الیسریٰ۔ (فتح الباري، کتاب الأطعمۃ / باب الأکل متکأً، الجزء التاسع ۱۲؍۶۷۶ تحت رقم: ۵۳۹۹ دار الکتب العلمیۃ بیروت)

সারমর্মঃ পায়ের সম্মুখভাগ এবং নলার উপর হাঁটুগেড়ে বসা । অথবা ডান পা খাড়া করে বাম পায়ের উপর বসা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...