আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
223 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (48 points)
রাসুল সা. এর উসিলা গ্রহন করা যাবে?
অন্য ওলি একেরামের মাজার জিয়ারত, দোআ, উসিলা গ্রহন করা যাবে কি?

এ ব্যপারে বিস্তারিত জানালে ভালো হয়। মাজার জিয়ারত, উসিলা গ্রহন, মান্নত করা, ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাই

1 Answer

0 votes
by (712,400 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
1956 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে,
উসীলা গ্রহণ করে দু'আ করা জায়েয।চায় জীবিত মানুষের হোক বা মৃত মানুষের,চায় ব্যক্তির ব্যক্তিত্বর উসীলা হোক বা নেককাজের।সব-ই জায়েয।সকল প্রকার উসীলার সারমর্ম একটাই হবে।সেটা হল,যা উসীলা গ্রহণ করা হচ্ছে,তার উপর আল্লাহর যে বিশেষ রহম আর ফজল রয়েছে,তার উসীলা গ্রহণ করে করে দু'আ করা।কোনো ব্যক্তি বিশেষের ব্যক্তিত্বের উসীলা গ্রহণ করে দু'আ করা যাবে না। এরকম আকিদা-বিশ্বাস রেখে দু'আ করা শিরকের পর্যায়ভুক্ত।তবে উক্ত ব্যক্তির নেককাজের উসীলা গ্রহণ করে দু'আ করা যাবে।যেমন গুহায় আটকে যাওয়া তিন ব্যক্তি তারা তাদের নেককাজের উসীলা গ্রহণ করে নাজাত পেয়েছিলো।

উসীলা গ্রহণ করে দু'আ করা জায়েয কি না?
এ সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মতবিরোধ রয়েছে।বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে এ বিষয়ে হানাফী ও সালাফী উলামায়ে কেরামদেরকে বেশ মতবিরোধ করতে দেখা যায়।হানাফী উলামায়ে কেরামগণ জায়েয বলেন।অর্থাৎ নবী বা অন্য কোনো নেককারের নেক কাজের উসীলা গ্রহণ করে দু'আ জায়েয,চায় উসীলা গ্রহণকৃত ব্যক্তি জীবিত হোক বা মৃত হোক, সর্বাবস্থায় উসীলা গ্রহণ জায়েয।


জীবিত ব্যক্তিরর উসীলা না মৃত ব্যক্তির উসীলা?? এবং ব্যক্তিত্বের উসিলা না নেককাজের উসিলা??
মূলত এ বিষয়দ্বয়কে কেন্দ্র করেই হানাফী ও সালাফীদের মধ্যে মতবিরোধের সূচনা হয়েছিলো।এবং এখনো হরদম হচ্ছে।
উভয়ের কাছে দলীল প্রমাণ রয়েছে।কিন্তু যদি আমরা মূল জিনিষটা বুঝতে পারি তাহলে দেখব যে,এ বিষয়ে শাব্দিক বিরোধ ছাড়া আর কিছুও নয়।অথচ আফসোস!হায় এ বিষয়টা না বুঝে আমরা একজন আরেকজনকে কতকিছুই না বলতেছি।বেদাতি,কাফির,কোনো শব্দই আমাদের থেকে ছুটে পালিয়েও রেহাই পাচ্ছে না।

হানাফী উলামায়ে ককেরামগণ ব্যক্তি উসীলাকে জায়েয বললেও নবী ব্যতীত অন্য কারো ব্যক্তিত্বের উসীলাকে কখনো বৈধ বলেন না।

সুতরাং আমরা দেখতে পারছি যে,ব্যক্তিত্বর উসীলা বিষয়ে হানাফী উলামায়ে কেরামদের মতামত ও প্রায় সালাফী আলেমদের মত।
এ দুই দলের প্রয়োগকৃত শব্দরাজির শাব্দিক পার্থক্য বৈ অর্থগত কোনো পার্থক্য অদ্য এতে পরিলক্ষিত হচ্ছেনা।

এখন রয়ে গেল,জীবিত না মৃত?এর উসীলা বিষয়ক মতানৈক্য।
এ সম্পর্কে হানাফী উলামায়ে কেরামদের মতামতই যুক্তিসংগত মনে হচ্ছে,
কেননা আমরাতো নেককাজের উসীলা গ্রহণ করবো,কেউ মারা যাওয়ার পূর্বে নিশ্চিতভাবে বুঝা যাবে না যে সেকি নেককার না বদকার?
যেমনঃ ইবনে মাসউদ রাযি বলেনঃ ,
عن ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ :
ﻣَﻦ ﻛﺎﻥَ ﻣُﺴْﺘَﻨًّﺎ ، ﻓَﻠْﻴَﺴْﺘَﻦَّ ﺑﻤﻦ ﻗﺪ ﻣﺎﺕَ ، ﻓﺈﻥَّ ﺍﻟﺤﻲَّ ﻻ ﺗُﺆﻣَﻦُ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻔِﺘْﻨَﺔُ
 ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺒﺮ ﻓﻲ " ﺟﺎﻣﻊ ﺑﻴﺎﻥ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻭﻓﻀﻠﻪ " ( 2/947 ـ ﺭﻗﻢ 1810 )
যদি কেউ কাউকে অনুসরণ করতে চায়,তবে যেন সে মৃত কারো অনুসরণ করে,কেননা জীবিত কারো উপর ফিতনার আশংকা থেকে নিরাপদ থাকা যায় না।
জা'মেউল বয়ান ওয়া ফাদলিহি-১৮১০;
ইবনে মাসউদ রাযি এর উপরোক্ত কথা থেকে বুঝা যায় যে মৃত ব্যক্তির (অর্থাৎ তার নেককাজের) অনুসরণ উত্তমভাবে বৈধ হবে।কেননা এক্ষেত্রে সে জীবিত মানুষের তুলনায় ফিতনা থেকে সম্পূর্ণই নিরাপদ।

কিন্তু হায়,আফসোস!
উসীলা গ্রহণ সম্পর্কে দু-পক্ষ্য থেকেই সীমালঙ্ঘন পরিলক্ষিত হচ্ছে,অথচ আমাদেরকে হুকুম দেয়া হয়েছিলো,শরীয়তের আওতাভূক্ত থাকতে।
যেমন আমাদের হানাফীদের কেউ কেউ সরাসরি ব্যক্তিত্বর উসীলাকে জায়েয মনে করেন।যা কাম্য নয়।বরং ব্যক্তিত্বর উসীলা তখনই বৈধ যখন ব্যক্তিত্বর মাধ্যমে নেককাজকে উদ্দেশ্য নেওয়া হবে।নতুবা জায়েয হবে না।
প্রশ্ন হতে পারে মৃত মানুষের উসিলা জায়েয হলে, উমর রাযি কেন নবীজীর উসীলা গ্রহণ না করে ইবনে আব্বাস রাযি এর উসীলা গ্রহণ করলেন?
মুহাদ্দিসিনে কেরামগণ উক্ত প্রশ্নের বিভিন্ন জবাব দিয়েছেন।
সর্বোত্তম জবাব হলো,এজন্য দিয়েছেন যাতে মানুষগণ জানতে পারে যে, মৃত মানুষের উসীলা গ্রহণ করাও জায়েয।
আরো.....
{আহসানুল-ফাতাওয়া, ১/৩৩১}
{ ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়্যাহ-১/৭০}
{ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়্যাহ-১/২১৭}

মাজার যিয়ারত?
মৃত মানুষের কবর যিয়ারত করা যায়।জায়েয রয়েছে।সে হিসেবে যেকোনো অলি আউলিয়ার মাজার যিয়ারত করা যাবে।তবে প্রচলিত নিয়মানুসারে বিভিন্ন মাজারে যাওয়া ও যিয়ারত করা এবং মাজার কর্তৃপক্ষের বিশেষ কিছু নিয়মকে ফলো করা, এগুলো কখনো জায়েয হবে না।

মান্নত?
মান্নত শুধুমাত্র আল্লাহর নামেই হতে হবে।আল্লাহকে রাজি খুশি করার নিমিত্তেই মান্নত করতে হবে।আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কারো যেমন,কোনো মাজারের নামে বা পীরের নামে মান্নত করা স্পষ্ট কুফরী।এত্থেকে আমাদেরকে বাঁচতে হবে।জাযাকুমুল্লাহ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...