আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
68 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (24 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম
আমি গত বছর একটি ছেলেকে গোপনে বিয়ে করি। বিয়েতে দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক সাক্ষী উপস্থিত ছিল এবং মোহরানাও ধার্য করা হয়েছিল। কিন্ত কোনো কাজী বা কোনো কাগজ পত্রে এসব উল্লেখ হয় নি। কিন্ত এর পর ইউ টিউবে বিভিন্ন আলেম হুজুর বিভিন্ন হাদিস এ দেখি যে বাবা মেয়ের উপস্থিত ছাড়া বিয়ে বাতিল, আরও নানা রকম মাসায়েল। অনেক হুজুর আবার বলে, " বাবা মায়ের যদি কোনো যৌক্তিক কারণ থাকে, প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান কে বিয়ে না দেয়ার, তাহলে সেই সন্তান গোপনে বিয়ে করলে সেই বিয়ে হবে না"
এখন আমার বাবা মায়ের কথা হচ্ছে, আমি যাকে পছন্দ করি, তার কাছে তারা আমাকে বিয়ে দিবে কিন্ত সে একটা চাকরি পাওয়ার পর। এই কারণ টা আমার কাছে মাঝে মধ্যে যৌক্তিক মনে হয়, আবার মাঝে মধ্যে মনে হয় বাংলাদেশে চাকরির কোনো ভরসা নেই, আমার পছন্দের পুরুষ যদি ৩০ বছর বয়সে চাকরি পায়, তাহলে কি ৩০ বছর পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো? এসব ভেবে আবার অযৌক্তিক মনে হয়।

সব মিলিয়ে + ইউ টিউবে বিভিন্ন হুজুরের বিভিন্ন ফাতওয়া দেখে আমি ভেবেই নিয়েছিলাম এই বিয়ে হয়ত হয় নি। আমি তখনও দ্বিধায় ছিলাম বিয়ে হয়েছে কিনা এই ব্যাপারে এবং এখনো দ্বিধায় আছি।  তো সম্পর্ক চলাকালীন অনেকবার ব্রেইক আপ হয়েছে। সে অনেক বার বলেছে "আজ থেকে তুমি মুক্ত" "তোমার সাথে আর থাকব না" এরকম টাইপ কথা বার্তা। রাগের মাথায় আমিও বলি। কিন্তু পরেই আবার মিল হয়ে যাই এবং উনি বলেন, ওনার আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কোন উদ্দেশ্য বা নিয়ত ছিল না। একান্তই রাগের মাথায় বলেছেন।
এখন হুজুর আমার প্রশ্ন হচ্ছে যেহেতু বাবা মা বিয়েতে উপস্থিত ছিল না + বাবা মায়ের যৌক্তিক কারণ আছে এখনই আমাকে বিয়ে না দেয়ার, সে ক্ষেত্রে এই বিয়ে কি হয়েছে? আর যদি বিয়ে হয়েও থাকে, তাহলে এত বার ব্রেইক আপ হওয়া বা তোমার সাথে আর থাকব না এমন টাইপ কথা বার্তার জন্য কি আমাদের তালাক হয়ে গেছে? আর যদি তালাক হয়েও যায়, এ ক্ষেত্রে তাকে পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে যেহেতু নবী (স) বলেছেন "গোপনে বিয়ে করা আর যেনা করা একই জিনিস"?

1 Answer

0 votes
by (635,610 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

https://ifatwa.info/51564/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ-
শরীয়তের বিধান হলো যদি দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক সমঝদার সাক্ষ্যির সামনে প্রাপ্ত বয়স্ক পাত্র ও পাত্রি যদি প্রস্তাব দেয় এবং অপরপক্ষ তা গ্রহণ করে নেয়, তাহলে ইসলামী শরীয়াহ মুতাবিক বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। অভিভাবকের সম্মতি থাকুক বা না থাকুক। অভিভাবক জানুক বা না জানুক।

 তবে যদি গায়রে কুফুতে বিবাহ করে, তথা এমন পাত্রীকে বিবাহ করে, যার কারণে ছেলে বা মেয়ের পারিবারিক সম্মান বিনষ্ট হয়, তাহলে পিতা সে বিয়ে আদালতের মাধ্যমে ভেঙ্গে দিতে পারে। যদি কুফুতে বিবাহ করে, তাহলে পিতা এ অধিকারও পাবে না।

এটিই হানাফি মাযহাবের প্রাধান্য পাওয়া মত,যার উপরেই ফতোয়া।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ؛ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الْأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا.

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৮৮৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪২১)

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ: ” جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ أَبِي وَنِعْمَ الْأَبُ هُوَ، خَطَبَنِي إِلَيْهِ عَمُّ وَلَدِي فَرَدَّهُ، وَأَنْكَحَنِي رَجُلًا وَأَنَا كَارِهَةٌ. فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَبِيهَا، فَسَأَلَهُ عَنْ قَوْلِهَا، فَقَالَ: صَدَقَتْ، أَنْكَحْتُهَا وَلَمْ آلُهَا خَيْرًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا نِكَاحَ لَكِ، اذْهَبِي فَانْكِحِي مَنْ شِئْتِ

হযরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক মেয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এল। এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা! কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসূল সাঃ তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়। তখন রাসূল সাঃ মেয়েটিকে বললেন, “এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও”। {মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১০৩০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৩}

حَدَّثَنَا حُسَيْنٌ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: ” أَنَّ جَارِيَةً بِكْرًا أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَتْ أَنَّ أَبَاهَا زَوَّجَهَا وَهِيَ كَارِهَةٌ فَخَيَّرَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ”

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। কুমারী মেয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমার অপছন্দ সত্বেও বিয়ে দিয়েছে, তখন রাসূল সাঃ সে মেয়েকে অধিকার দিলেন, [যাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে বা এ বিয়ে রাখতেও পারে]। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৫}

عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: جَاءَتْ فَتَاةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: ” إِنَّ أَبِي زَوَّجَنِي ابْنَ أَخِيهِ، لِيَرْفَعَ بِي خَسِيسَتَهُ، قَالَ: فَجَعَلَ الْأَمْرَ إِلَيْهَا، فَقَالَتْ: قَدْ أَجَزْتُ مَا صَنَعَ أَبِي، وَلَكِنْ أَرَدْتُ أَنْ تَعْلَمَ النِّسَاءُ أَنْ لَيْسَ إِلَى الْآبَاءِ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ “

হযরত বুরাইদা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক মহিলা নবীজী সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে, যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাবী বলেন, তখন রাসূল সাঃ বিষয়টি মেয়ের ইখতিয়ারের উপর ন্যস্ত করেন, [অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে, ইচ্ছে করলে ভেঙ্গেও দিতে পারবে] তখন মহিলাটি বললেন, আমার পিতা যা করেছেন, তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের [চূড়ান্ত] মতের অধিকার নেই্ {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৪}

উক্ত মাসয়ালায় চার মাযহাবের অবস্থান দলীল,বিপরীত মুখি হাদীসের জবাব সহ বিস্তারিত জানুন-

আরো জানুনঃ- 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে বিবাহের সময় আপনি বালেগাহ হয়ে থাকলে উক্ত বিবাহ শরীয়তের দৃষ্টিকোন থেকে শুদ্ধ হয়েছে।

এক্ষেত্রে তিনি যে বাক্য গুলো বলেছেন,সেগুলো যেহেতু তালাকের উদ্দেশ্যে বলেননি,সুতরাং তালাক হয়নি।

এমতাবস্থায় আপনাদের বিবাহ বহাল রয়েছে।

পরিবারের সম্মতিতে আবারো বিবাহ পড়িয়ে নিলে সেক্ষেত্রে এটি অনার্থক বলে গন্য হবে।
শরীয়তে এর কোনো ধর্তব্য নেই।

বরং আপনাদের আগের বিবাহই বহাল থাকবে।

(তবে এক্ষেত্রে পারিবারিক ঝামেলা এড়াতে পরিবারের সম্মতিতে আবারো বিবাহ পড়িয়ে নিতে পারেন।)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (24 points)
edited by
হুজুর, আপনি বললেন যে "আজ থেকে তুমি মুক্ত" এই কথা টা আমার স্বামী মন থেকে না বলার কারনে তালাক পতিত হয় নি। কিন্ত গত ১ সপ্তাহ আগে উনি আবার বলেছেন, উপরুক্ত কথা টা নাকি মন থেকেই বলেছিলেন। 

গতকাল মন ভালো হওয়ার পর তিনি আবার বললেন, মন থেকে বলেন নি। আমাকে থামানোর উদ্দেশ্যে বলেছেন। 
এখন হুজুর,  উনি যে বললো, "আজ থেকে তুমি মুক্ত " কথাটি মন থেকেই বলেছিলেন। এখন কি আমাদের তালাক হয়ে গিয়েছে? 
"আজ থেকে তুমি মুক্ত "    এই কথাটি তিনি তিন বার বলেছিলেন। আর    "এই কথা টা মন থেকেই বলেছিলাম"    এই বাক্য টা তিনি দুই বার বলেছেন। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...