জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
অনেক নারী এমন আছেন, যারা বিধবা হওয়ার পর দ্বিতীয়বার স্বামী গ্রহণে আগ্রহী হন না। কষ্ট হলেও একাকী জীবন যাপন করার পথকেই বেছে নেন। তাদের জন্য সান্ত¦না ও আখেরাতের খুশখবরী জানিয়ে আশ্বস্ত করেছেন রাসূল (সা:)। হাদীসে এসেছে-
عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَا وَامْرَأَةٌ سَفْعَاءُ الْخَدَّيْنِ كَهَاتَيْنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» وَأَوْمَأَ يَزِيدُ بِالْوُسْطَى وَالسَّبَّابَةِ امْرَأَةٌ آمَتْ مِنْ زَوْجِهَا ذَاتُ مَنْصِبٍ، وَجَمَالٍ، حَبَسَتْ نَفْسَهَا عَلَى يَتَامَاهَا
হযরত আউফ বিন মালিক আশজায়ী (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আমি এবং কষ্ট ও মেহনতের কারণে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া মহিলা কিয়ামতের দিন দুই আঙ্গুলের মত নিকটবর্তী হবো। রাসূল (সা:) তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলীদ্বয় পাশাপাশি করে দেখালেন। তথা বংশীয় কৌলিন্য ও সৌন্দর্যের অধিকারিনী যে বিধবা নারী প্রয়োজন থাকা সত্বেও এতিম সন্তানদের লালন পালনের উদ্দেশ্যে দ্বিতীয়বার স্বামী গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে।{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫১৪৯}
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” أَنَا أَوَّلُ مَنْ يُفْتَحُ لَهُ بَابُ الْجَنَّةِ، إِلَّا أَنَّهُ تَأْتِي امْرَأَةٌ تُبَادِرُنِي فَأَقُولُ لَهَا: مَا لَكِ؟ وَمَا أَنْتِ؟ فَتَقُولُ: أَنَا امْرَأَةٌ قَعَدْتُ عَلَى أَيْتَامٍ لِي
হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেছেন, আমিই ঐ ব্যক্তি যার জন্য সর্ব প্রথম জান্নাতের দরজা খোলা হবে। কিন্তু এক মহিলা এসে আমার আগে জান্নাতে যেতে চাইবে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করবো যে, তোমার কি হল? তুমি কে? তখন সে বলবে, আমি ঐ মহিলা যে স্বীয় এতিম বাচ্চার লালন-পালনের জন্য নিজেকে আটকে রেখেছে [বিবাহ করা থেকে]। {মুসনাদে আবী ইয়ালা,হাদীস নং-৬৬৫১}
যেসব বিধবা বিয়ের যোগ্য বয়সের নয়, আবার তাদের কোন সন্তানও নেই। সেসব বিধবাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়াকে অনেক বড় পূণ্যের কাজ বলে রাসূল (সা:) ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السَّاعِي عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالمِسْكِينِ، كَالْمُجَاهِدِ فِي
سَبِيلِ اللَّهِ، أَوِ القَائِمِ اللَّيْلَ الصَّائِمِ النَّهَارَ»
হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, বিধবা এবং মিসকিনের সহযোগিতাকারী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর ন্যায়, বা সর্বদা রাতে নামাযরত ও দিনের বেলা রোযাদার ব্যক্তির মতো। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫০৩৮,৫৩৫৩}
এরকম আরো অসংখ্য হাদীস প্রমাণ করে প্রতিটি সামর্থবান ব্যক্তি বিধবা নারীদের যথাযথ সম্মান ও প্রয়োজনে সহযোগিতা করা উচিত। এটাই ইসলামের দাবি এবং মানবতার দাবি। আসলে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা নারীর শোকে কাতর হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না। নিরাপদ আশ্রয় ও মানবিক মর্যাদা হারানোর কারণে সমাজ-সম্প্রদায়ে পরিপূর্ণ অংশগ্রহণও তার পক্ষে আর সম্ভব হয় না। একজন বিধবা নারী তার উত্তরাধিকার সম্পত্তি, সন্তান, স্বামী, সংসার, দেনমোহর, নিরাপদে কাজ করা, সমাজের কাছে সাহায্য পাওয়া, সামাজিক মর্যাদাসহ সকল সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু তারা এই অধিকারগুলো পাচ্ছেন না। একজন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য যে ধরনের মর্যাদা প্রয়োজন তা বিধবা হওয়ার মধ্য দিয়ে হারাতে হয় এবং রাষ্ট্রীয় কোনো প্রচেষ্টাও তাদের জন্য পরিলক্ষিত হয় না। পরিবার এবং সমাজে তাদের প্রতি যে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি সে কারণে তারা নিজেরাও নিজেদের গুরুত্বহীন বলে মনে করেন, ভাগ্যকে দায়ী করেন। এমতাবস্থায় বিধবা নারীদের চাহিদা মোতাবেক তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের আর্থিক, সামাজিক এবং মানসিক দুরবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, বিধবা মানেই অভিশাপ নয়। একথা আমাদের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। অসহায় বিধবাদের পাশে দাঁড়ানো প্রতিটি মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তির জন্যই জরুরী।
আরো জানুনঃ-
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা নারীর ভরণ-পোষণ ও তত্ত্বাবধানের প্রধান দায়িত্ব তার সন্তানদের। অতঃপর তার ভাইদের। অতঃপর সর্বাধিক নিকটবর্তী আত্মীয়গণ।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের সন্তানগণ তোমাদের পবিত্রতম উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত। অতএব তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপার্জন থেকে ভক্ষণ কর’
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ: أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنَّ لِي مَالًا وَإِنَّ وَالِدِي يَحْتَاجُ إِلَى مَالِي قَالَ: «أَنْتَ وَمَالُكَ لِوَالِدِكَ إِنَّ أَوْلَادَكُمْ مِنْ أَطْيَبِ كَسْبِكُمْ كُلُوا مِنْ كَسْبِ أَوْلَادِكُمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ ماجة
আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমার নিকট ধন-সম্পদ আছে এবং আমার পিতা দারিদ্র্যতার দরুন আমার ধন-সম্পদের মুখাপেক্ষী। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি এবং তোমার ধন-সম্পদ তোমার পিতার। তোমাদের সন্তান-সন্ততিগণ তোমাদের উত্তম রিযক। সুতরাং তোমরা সন্তানের উপার্জন খাও।
(আবূ দাঊদ ৩৫৩০, ইবনু মাজাহ ২২৯২, আহমাদ ৬৬৭৮, সহীহ আল জামি‘ ১৪৮৭।)
এছাড়া নিকটতম রক্তসম্পর্কীয়দের মধ্যে ভাইয়ের গুরুত্ব সর্বাধিক। জাবের (রাঃ) তার ছোট বোনদের দেখাশুনার জন্য একজন তালাকপ্রাপ্তা মহিলাকে বিবাহ করলে রাসূল (ছাঃ) তার প্রশংসা করেন (বুখারী হা/৬৩৮৭; মুসলিম হা/৭০১৫; মিশকাত হা/৩০৮৮)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যার তিনটি মেয়ে বা তিনটি বোন থাকে অথবা দু’টি মেয়ে বা দু’টি বোন থাকে। আর সে যদি তাদের সাথে সব সময় সদাচরণ করে এবং তাদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে, তবে তার জন্য রয়েছে জান্নাত (আহমাদ হা/১২৬১৫; ছহীহাহ হা/২৯৫)।
রাসূল (ছাঃ) বোনের মানত ভাই পূরণ করবে মর্মে নির্দেশনা দিয়েছেন (নাসাঈ হা/২৬৩২; আহমাদ হা/২১৪০)।
তবে ভাই বা রক্তসম্পর্কিত নিকটাত্মীয় না থাকলে সমাজ বা সরকার তাদের দায়িত্ব বহন করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি তারা ঝগড়া করে, তাহ’লে সরকার ঐ ব্যক্তির অভিভাবক হবে, যার কোন অভিভাবক নেই’
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ وَلَيِّهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَإِنْ دَخَلَ بِهَا فَلَهَا الْمَهْرُ بِمَا اسْتَحَلَّ مِنْ فَرْجِهَا فَإِنِ اشْتَجَرُوا فَالسُّلْطَانُ وَلِيُّ من لَا ولي لَهُ»
’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোনো নারী তার ওয়ালীর (অভিভাবকের) অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে; তার বিয়ে বাত্বিল (না-মঞ্জুর, পরিত্যক্ত), তার বিয়ে বাত্বিল, তার বিয়ে বাত্বিল। যদি এরূপ বিয়েতে স্বামীর সাথে সহবাস হয়ে থাকে, তবে স্ত্রীর মোহর দিতে হবে তার (লজ্জাস্থান) উপভোগ (হালাল) করার জন্যে। আর যদি তাদের (ওয়ালীগণের) মধ্যে আপোসে মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে যার ওয়ালী নেই শাসক (প্রশাসন) তার ওয়ালী (বলে বিবেচিত) হবে।
(আবূ দাঊদ ৩০৮৩, তিরমিযী ১১০২, ইবনু মাজাহ ১৮৭৯, আহমাদ ২৪২০৫, দারিমী ২২৩০, ইরওয়া ১৮৪০, সহীহ আল জামি‘ ২৭০৯।)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আপনি কোনোভাবেই তাদের উপর জুলুম করছেননা।
বরং শরীয়তের আইন অনুযায়ী এখন আপনার ভরনপোষণ,বাসস্থান সহ যাবতীয় আবশ্যকীয় খরচের দায়িত্ব আপনার ভাইয়ের উপর।
সন্তান বড় হলে আপনার ভরনপোষণ,বাসস্থান সহ যাবতীয় আবশ্যকীয় খরচের দায়িত্ব আপনার সন্তানের উপর বর্তাবে।
(০২)
চাইলে কাহারো সাথে বিবাহ বসতে পারেন।
বিবাহ বসতে না চাইলে ঈমান আমল হেফাজত থাকার নিমিত্তে বাবার কাছেই থাকবেন।
আপনার বাবা ও ভাই আপনার ভরনপোষণ এর ব্যবস্থা করবে।
(০৩)
তারা বড় হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের দেখাশোনা আপনার ভাই করবে।
তাদের যাবতীয় আবশ্যকীয় খরচ আপনার ভাই দিবে।
আপনার খরচ দেয়া আবশ্যক নয়।
তাদের উপর এটি সমস্যাকর হলে মহিলাদের প্রাইভেট পড়িয়ে,দর্জীর কাজ করে বা অন্য কোনোভাবে আপনি ঘরে থেকে বৈধবভাবে ইনকাম করতে পারেন।
চাইলে শরীয়ত সম্মত কোনো চাকরি পেলে সেই চাকরি করতে পারেন।
চাইলে অনলাইনে পূর্ণ শরীয়ত মেইনটেইন করে ব্যবসা করতে পারেন।
মহিলাদের চাকুরী সংক্রান্ত বিস্তারিত বিধান জানুনঃ