আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
30 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম, অনেক বছর যাবৎ এই যন্ত্রণা সহ্য করে আসছি আর পারছি না, আমার মায়ের বয়স ৪২ হবে ৭ বছর আগে আমার বাবা মারা যায়, আম্মুর একমাত্র বোনের জামাই তখন থেকে অনেক সাহায্য করছেন টাকা পয়সা দিয়ে না অন্যান্য কাজে। কিন্তু উনি আমার মায়ের দিয়ে খারাপ নজরে দেখে একদিন একটা চিঠি পেয়েছি এমন প্রেমের প্রস্তাব টাইপের যার কথা কেউ জানে না শুধু আমি আর আমার ভাই জানি। এরপর আমি মেয়ে হয়েও ওনাকে বলসি আমাদের বাসায় আর পা দিতে না কল করতে না, এভাবে অনেক মাস চলে প্রায় বছর খানিক এরপর আন্টি আমাদের সাথে আর যোগাযোগ রাখে না এড়িয়ে চলে, আমি জানি না আমার আন্টিও কি চায় তার জামাই তার বোনের সাথে সম্পর্ক রাখুক? আমার মাথা পুরোপুরি খালি হয়ে গেছিলো মনে হয়েছিলো আমিই দোষি। এরপর ১ বছর এর মাথায় সব ঠিক হয়ে যায় সম্পর্ক, এখন আবার দেখতেছি সারাক্ষণ ফোনে কথা বলে ১ টা দিনে অন্তত ৫ বার কল দেয়, যেখানে আব্বু আম্মুকে এমন কল দিত। যাইহোক আমি অনেক চিল্লাচিল্লি করি বাসায় এসব নিয়ে তাও কিছু হয় না আম্মুকে বলসি কাউকে বিয়ে করেন তাও এসব করবেন না, কিন্তু প্রশ্ন ছুড়ে দেয় আমার দিকে উনার এই কাজ ভুল উনি স্বীকারই করে না। বলি রাখি আমার বড় ভাই থাকা সত্ত্বেও সে এসবে শুধু হাসে মনে হয় যে নরমাল ব্যাপার, এমন হয়েছে যে আমার সামনে ফোনে কল আসলে আমি কেটে দেওয়ার পর আমার ভাইয়ের ফোনে কল করেছ,আর আংকেল আন্টিকে এমন ভাবে ম্যানুপুলেট করেছে যে যদি নিষেধ করে আপত্তি দেখাই এসব বিষয়ে তাহলে সম্পর্ক থাকবে না, ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যে কাউকে বাসায় ভাড়া দিবে কল করে জিজ্ঞেস করতেছে দিবে নাকি এমন কাউকে বাড়া, আমি এসব নিয়ে প্রচুর মানসিক অশান্তিতে আছি, কি করা উচিৎ আমাকে দয়া করে জানাবেন, জাযাকাল্লাহ।

1 Answer

0 votes
by (680,550 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ তাআলা বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا

“হে মুমিনগণ, তোমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনদের রক্ষা করো জাহান্নামের আগুন থেকে।” (সূরা তাহরীম: ৬)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

لاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ،… وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ، وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا، وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ،… أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ.

জেনে রেখ, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের বিষয়ে দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। নারী তার পরিবার, সন্তান-সন্ততির বিষয়ে দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। জেনে রেখ, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। (-সহীহ বুখারী, হাদিস ৭১৩)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে সন্তানদের জন্য করনীয়ঃ
 
১. পরিবারে অধিক সময় দিন, যাতে আপনার মা পরপুরুষের সাথে ফোনে কথা বলার সুযোগ না পায়।

২. তাকে ভদ্র ভাষায় অবৈধ প্রেমের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করুন। এর কারণে দুনিয়া ও আখেরাতে লাঞ্ছিত হতে হয়। পারিবারিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। সমাজে মুখ দেখানো কঠিন হয়ে পড়ে ইত্যাদি।
,
৩. যার সঙ্গে তিনি এভাবে কথা বলেন, সে লম্পটের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রাখার সকল উপায় বন্ধ করে দিন।

প্রয়োজনে ফোন ব্যবহার করতেই দিবেননা।

৪. তাঁকে পর্দা করে চলতে এবং পরপুরুষের সঙ্গে কথাবার্তা না বলার জন্য বাধ্য করুন। 

৫. সর্বোপরি তাঁর অন্তরে আল্লাহভীতি জাগিয়ে তুলুন। এ জন্য বাসায় তালিমের ব্যবস্থা চালু করতে পারেন  কিংবা কোনো মুত্তাকী আলেমের নসিহত শুনানোর ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।

৬. এ সকল উপায় অবলম্বন করার ক্ষেত্রে এটা ভুলে যাবেন না যে, তিনি আপানার মা। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই তাঁকে অবহেলা করা যাবে না, মারধর করা যাবে না, অশালীন ভাষায় গালি দেয়া যাবে না; বরং এসব পন্থা অবলম্বন করবেন ভদ্র ও শালীনভাবে। এক্ষেত্রে তাঁর থেকে প্রাপ্ত কষ্টে ধৈর্য ধারণ করবেন। 

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদব্যবহার কর। (সূরা ইসরা ২৩)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:

وَوَصَّيْنَا الْأِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْناً عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ

“আর আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে (সন্তানকে) কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট।” (সূরা লোকমান: ১৪) 

(কিছু তথ্য সংগৃহীত)

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘এক মহিলা কয়েক সন্তানের মা। কিন্তু সে পরপুরুষের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত। যখন বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে গেল তখন সে নিজের স্বামীকে ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। এমতাবস্থায় উক্ত মহিলা কি তাঁর সন্তানদের উপর কোনো প্রকার অধিকার রাখে? সন্তানরা তাঁর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলে তাদের কোনো গুনাহ হবে কি? যে সন্তানের কাছে সে ধরা পড়েছে সে কি তার মাকে গোপনে হত্যা করতে পারবে? যদি করে তাহলে সে গুনাহগার হবে কি?’
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন,

الواجب على أولادها وعصبتها : أن يمنعوها من المحرمات ، فإن لم تمتنع إلا بالحبس : حبسوها ، وإن احتاجت إلى القيد : قيَّدوها ، وما ينبغي للولد أن يضرب أمََّه ، وأمَّا برُّها : فليس لهم أن يمنعوها برَّها ، ولا يجوز لهم مقاطعتها بحيث تتمكن بذلك من السوء ، بل يمنعوها بحسب قدرتهم ، وإن احتاجت إلى رزق وكسوة رزقوها وكسوها ، ولا يجوز لهم إقامة الحد عليها بقتلٍ ولا غيره ، وعليهم الإثم في ذلك

সন্তানদের উপর এবং তার অভিবাবকদের উপর ওয়াজিব হল, তাকে উক্ত হারাম কাজ থেকে নিষেধ করা। যদি সে না শুনে তাহলে প্রয়োজনে তাকে আটক করে রাখবে। কোনো অবস্থায় কোনো সন্তান তাকে মারধর করতে পারবে না। কোনো অবস্থাতেই সন্তানরা তার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করতে পারবে না এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না; যাতে সে তার অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। বরং তাকে এ কাজ থেকে নিজেদের সাধ্যানুপাতে ফিরিয়ে রাখবে। যদি তার ভরণ-পোষণের প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে তা দিতে হবে। হত্যা কিংবা অন্য কোনো পন্থায় তার উপর দণ্ডবিধি কায়েম করা সন্তানদের জন্য জায়েয হবে না। যদি করে তাহলে গুনাহগার হবে। (মাজমুউ’ল ফাতাওয়া ৩৪/১৭৭,১৭৮)

অবৈধ প্রেম,ভালোবাসা থেকে বাঁচার উপায় গুলো জেনে সেই বিষয়ে আপনার মাকে নসিহত করুনঃ-

পারিবারিক মুরব্বিদের মাধ্যমে মিটিং করে আপনার মাকে দ্রুত কোথাও বিবাহ দেয়ার চেষ্টা করুন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...