ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/118985/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلَا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَأْخُذُوا مِمَّا آَتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلَّا أَنْ يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
"এ তালাক দু'বার, অতঃপর স্ত্রীকে হয় বিধিসম্মতভাবে রাখবে অথবা সদয়ভাবে বিদায় দেবে। আর স্ত্রীকে দেয়া কোন কিছু ফেরৎ নেয়া তোমাদের পক্ষে উচিত নয়। তবে যদি তাদের উভয়ের আশংকা হয় যে তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না এবং তোমরা যদি আশংকা কর যে তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না, তবে (সে অবস্থায়) স্ত্রী কোন কিছুর বিনিময়ে (স্বামী থেকে) নিষ্কৃতি পেতে চাইলে তাতে (স্বামী-স্ত্রীর) কারো কোনো পাপ নেই। এসব আল্লাহর সীমারেখা। কাজেই তা লংঘন কর না। যারা আল্লাহর (নির্দিষ্ট) সীমারেখা লংঘন করে তারাই অত্যাচারী।" সূরা বাকারা, আয়াত নং ২২৯
,
তিনি আরো বলেন-
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। [সূরা বাকারা-২৩০]
,
হাদীস শরীফে এসেছে-
وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রা. এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন, “যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}
,
হাদীস শরীফে এসেছে-
عن مجاهد قال كنت عند ابن عباس فجاء رجل فقال إنه طلق امرأته ثلاثا. قال فسكت حتى ظننت أنه رادها إليه ثم قال ينطلق أحدكم فيركب الحموقة ثم يقول يا ابن عباس يا ابن عباس وإن الله قال (وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا) وإنك لم تتق الله فلم أجد لك مخرجا عصيت ربك وبانت منك امرأتك
অর্থ: হযরত মুজাহিদ রহ. বলেন, আমি ইবনে আব্বাস রা. -এর পাশে ছিলাম। সে সময় এক ব্যক্তি এসে বলেন- ‘সে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রা. চুপ করে রইলেন। আমি মনে মনে ভাবছিলাম- হয়ত তিনি তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার কথা বলবেন (রুজু করার হুকুম দিবেন)। কিছুক্ষণ পর ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তোমাদের অনেকে নির্বোধের মত কাজ কর; [তিন তালাক দিয়ে দাও!] তারপর ‘ইবনে আব্বাস! ইবনে আব্বাস! বলে চিৎকার করতে থাক। শুনে রাখ আল্লাহ তা‘য়ালা বাণী- “যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘য়ালাকে ভয় করে আল্লাহ তা‘য়ালা তার জন্য পথকে খুলে দেন। তুমিতো স্বীয় রবের নাফরমানী করেছো [তিন তালাক দিয়ে]। এ কারণে তোমার স্ত্রী তোমার থেকে পৃথক হয়ে গেছে। {সুনানে আবু দাউদ-১/২৯৯, হাদীস নং-২১৯৯, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৪৭২০, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৪৩}
,
শরীয়তের বিধান হলো এক বৈঠকে ৩ তালাক দেওয়া হোক, বা একাধিক বৈঠকে, এক শব্দে ৩ তালাক দেওয়া হোক বা একাধিক শব্দে ৩ তালাক দেওয়া হোক, সব ছুরতেই ৩ তালাকই পতিত হয়ে যাবে।
,
https://ifatwa.info/15409/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,
কেউ যদি তার স্ত্রীকে এক তালাক রাজয়ী দেয়, তাহলে সে আবার ঐ স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবে। ঠিক এভাবে দুই তালাক দেয়ার পরও ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবে।
এভাবে এক তালাক বাঈন বা দুই তালাক বাঈন দেয়ার পর নতুন বিয়ের মাধ্যমে আবার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায়। কিন্তু তিন তালাক দেয়া হয়, (চায় উক্ত প্রদত্ত তালাক রাজয়ী হোক বা বাঈন হোক) তাহলে তখন তালাক মুগাল্লাজা হবে।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
الطَّلاَقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلاَ يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَأْخُذُواْ مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلاَّ أَن يَخَافَا أَلاَّ يُقِيمَا حُدُودَ اللّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ يُقِيمَا حُدُودَ اللّهِ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللّهِ فَلاَ تَعْتَدُوهَا وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللّهِ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
তালাকে-‘রাজঈ’ হ’ল দুবার পর্যন্ত তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সহৃদয়তার সঙ্গে বর্জন করবে। আর নিজের দেয়া সম্পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য জায়েয নয় তাদের কাছ থেকে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম।
فَإِن طَلَّقَهَا فَلاَ تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىَ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ فَإِن طَلَّقَهَا فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللّهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/2729
,
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
,
তিন তালাক পতিত হওয়ার পর উক্ত স্বামী স্ত্রী আর একত্রে বসবাস করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ যদি ঐ স্ত্রীর অন্য কোথাও বিয়ে হয়, এবং কোনো কারণে দ্বিতীয় স্বামীর সাথে তালাক হয়ে যায় এবং দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সহবাস হয়ে থাকে, তখন আবার সে প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এখানে দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সহবাস হওয়া শর্ত।
মহিলা দ্বিতীয় বিয়ে ব্যতীত আবার ঐ স্বামীর সাথে সংসার স্থাপন করলে সেটা বৈধ হবে না। এক্ষেত্রে সর্বদাই ব্যভিচারের গোনাহ হবে। আর বিবাহিত পরুষ বা মহিলা কর্তৃক ব্যভিচার প্রমাণিত হলে এর শাস্তি হলো, পাথর মেরে হত্যা করা। তবে এ দায়িত্ব সরকারের জনগণের নয়। আর আখেরাতে তো রয়েছে এর জন্য ভয়ঙ্কর শাস্তি।
,
টাকা দিয়ে কারো কাছে বিয়ে দিয়ে আবার তালাক নিয়ে প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া মাকরুহে তাহরিমী। তেমনী ভাবে চুক্তি করে বিয়ে করলে তাদের উপর লানতের কথা বলা হয়েছে।
তবে যদি ঐ দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সহবাস হয়ে থাকে, তাহলে মাকরুহে তাহরিমী হলেও প্রথম স্বামীর সাথে বিয়ে বৈধ হয়ে যাবে।