জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
আপনি যে দরুদটি বলেছেন
اللهم صلِّ وسلم على نبينا محمد
(“হে আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ–এর উপর দরুদ ও সালাম বর্ষণ করুন”)
এই দো’আটি অর্থ ও রূপে সঠিক, শরীয়াহসম্মত এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত অর্থের অন্তর্ভুক্ত, ইনশাআল্লাহ।
★হাদীসে দুরুদের মূল রূপ
বিভিন্ন সহীহ হাদীসে নবী ﷺ দুরুদ পাঠের কয়েকটি রূপ শিখিয়েছেন। যেমন—
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে:
اللهم صلِّ على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد،
اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد.
(সহীহ বুখারী: ৩৩৭০, সহীহ মুসলিম: ৪০৫)
এটি পূর্ণাঙ্গ “দরুদে ইবরাহিম” নামে পরিচিত।
সংক্ষিপ্ত রূপে এসেছে:
اللهم صل على محمد عبدك ورسولك النبي الأمي.
(মুসলিম, হাদীস: ৪০৭)
আরেক বর্ণনায়:
اللهم صل على محمد وعلى آل محمد.
(আবু দাউদ, ৯৭২)
আরও সংক্ষিপ্ত রূপে:
কিছু সহীহ রেওয়ায়েতে সাহাবারা শুধু বলতেন
اللهم صل على النبي.
(সহীহ মুসলিম: ৪০৮)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
. “اللهم صل وسلم على نبينا محمد” — এর অবস্থান।
এটি উপরের হাদীসগুলোর অর্থবহ সংক্ষিপ্ত রূপ।
এতে রয়েছে—
“صلِّ” = দরুদ বা সালাত (রহমত ও বরকত প্রার্থনা),
“وسلِّم” = সালাম (শান্তি ও সম্মান প্রার্থনা),
“على نبينا محمد” = আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ।
তাই এটি সহীহ ও অর্থগতভাবে হাদীসসমর্থিত দুরুদ।
অনেক আলেম যেমন ইমাম নববী, ইবনুল কাইয়্যিম, ইমাম সুয়ূতি (রহ.) বলেছেন —
“নবীর উপর দরুদ পাঠের রূপ অনেক; সংক্ষিপ্ত বা পূর্ণাঙ্গ — উভয়ই জায়েয, যতক্ষণ অর্থ সহীহ থাকে।”
★আপনি এই সংক্ষিপ্ত দরুদটি পড়তে পারেন,
যিকিরের সময়,
দো’আ শেষে,
কুরআন তেলাওয়াত শেষে,
রোজকার কথাবার্তায় নবীর ﷺ নাম উচ্চারণের পর।
তবে নামাযের মধ্যে তাশাহহুদে দুরুদ পাঠের সময় (যেখানে ফরজ বা ওয়াজিব পর্যায়ের আমল)
সেখানে “দরুদে ইবরাহিম” পড়াই উত্তম ও সুন্নাহসঙ্গত।
★দরুদে ইবরাহিম” কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
যখন সাহাবারা (রাযি.) নবী ﷺ–কে জিজ্ঞেস করলেন —
“يا رسول الله، قد علمنا كيف نسلم عليك، فكيف نصلي عليك؟”
“হে আল্লাহর রাসূল, আমরা জানি কীভাবে আপনাকে সালাম দিই, কিন্তু আপনার উপর কীভাবে সালাত (দরুদ) পাঠ করবো?”
তখন নবী ﷺ তাঁদের দরুদে ইবরাহিম শিখিয়ে দিলেন—
اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد
اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد.
(সহীহ বুখারী ৩৩৭০, সহীহ মুসলিম ৪০৫)
★কেন এটি “সর্বশ্রেষ্ঠ” দুরুদ হিসেবে গণ্য?
উলামায়ে কেরাম (যেমন ইমাম নববী, ইবনুল কাইয়্যিম, ইমাম সাখাওয়ী, ইবন হাজার ইত্যাদি) বলেন:
এটি সর্বশ্রেষ্ঠ ও পূর্ণাঙ্গ দরুদ, কারণ এটি: সরাসরি নবী ﷺ–এর মুখনিঃসৃত শিক্ষা (শরীয়াহ প্রদত্ত রূপ)।
এতে নবী ﷺ ও তাঁর “আল” (পরিবার/অনুসারী) উভয়ের জন্য দো’আ রয়েছে।
এতে দরুদ + বরকত — উভয় দো’আ একসাথে আছে।
এতে নবী ইবরাহীম (আ.)–এর সাথে তুলনা করা হয়েছে — যিনি “খলীলুল্লাহ” এবং দো’আ কবুলের প্রতীক।
এটি নবীর ﷺ নামাযের অংশে নির্ধারিত (তাশাহহুদের পর)।
★সুতরাং, নবী ﷺ নিজে যেটি শিক্ষা দিয়েছেন, সেটিই সর্বোত্তম রূপ — এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তাহলে কি অন্য দরুদে কোনো ফজিলত নেই?
না, অন্য দরুদেও ফজিলত আছে —
যে কেউ নবী ﷺ–এর ওপর দরুদ পাঠ করে, সে আল্লাহর রহমতের যোগ্য হয়।
রসুল ﷺ বলেন:
“যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন।”
(সহীহ মুসলিম, ৩৮৪)
এ হাদীসে দরুদের নির্দিষ্ট রূপ বলা হয়নি — অর্থাৎ যে কোনো সহীহ দরুদ এর মাধ্যমে এই ফজিলত পাওয়া যায়।
তবে —
দরুদে ইবরাহিম হল সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ ও শ্রেষ্ঠ রূপ,
অন্য সংক্ষিপ্ত দরুদগুলো (“اللهم صل وسلم على نبينا محمد” ইত্যাদি) পড়লে ফজিলত পাওয়া যাবে,
কিন্তু “সর্বোত্তম রূপের” বরকত, সৌন্দর্য ও সুন্নাহর পূর্ণতা — দরুদে ইবরাহিমেই নিহিত।
(০২)
হ্যাঁ, হাতে এক্ষেত্রে হাতে তাসবিহ পড়ার সুন্নাহ আদায় ও ফজিলত পাওয়া যাবে।