জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَلَا تُلْقُوْا بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ»
‘‘তোমরা কখনো ধ্বংসের দিকে নিজ হস্ত সম্প্রসারিত করো না’’। (বাক্বারাহ্ : ১৯৫)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ.
‘‘না তুমি নিজ বা অন্যের ক্ষতি করতে পারো। আর না তোমরা পরস্পর (প্রতিশোধের ভিত্তিতে) একে অপরের ক্ষতি করতে পারো’’। (ইবনু মাজাহ্ ২৩৬৯, ২৩৭০)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ অপরের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং কেউ অপরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। (অথবা কেউ অপরের ক্ষতি করবে না এবং অপরের ক্ষতি করার পরিবর্তেও ক্ষতি করবে না।)(আহমাদ ২৮৬৫, ইবনে মাজাহ ২৩৪১, সহীহুল জামে’ ৭৫১৭)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
ব্রয়লার হলো কৃত্রিমভাবে পালন ও দ্রুত বেড়ে ওঠা মুরগি,
যাকে সাধারণত বিশেষ খাবার ও ভিটামিন–ইনজেকশন দিয়ে বড় করা হয়।
স্বাভাবিক মুরগির মতো নয়; ৩০–৩৫ দিনের মধ্যেই বিক্রির উপযোগী করা হয়।
এখন প্রশ্ন হলো — এতে ইসলামী দৃষ্টিতে কোনো নিষিদ্ধ উপাদান বা ক্ষতি আছে কি না?
ইসলাম খাদ্য সম্পর্কে কী বলে?
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“হে মানুষ! পৃথিবীতে যা হালাল ও পবিত্র আছে তা খাও।”
(সূরা আল-বাকারা ২:১৬৮)
আরও বলেন:
“তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।”
(সূরা আল-বাকারা ২:১৯৫)
অর্থাৎ, যা নাপাক, ক্ষতিকর বা মানবদেহের ক্ষতি করে —
তা ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে।
ব্রয়লার মুরগি এটি প্রাকৃতিক মুরগির একটি পরিবর্তিত জাত, কোনো হারাম প্রাণী নয়।
এতে হারাম উপাদান (শূকরজাত, রক্ত, ময়লা, রাসায়নিক বিষ) নেই।
যদি ইসলামি নিয়মে যবেহ করা হয় (বিসমিল্লাহ পড়ে, ধারালো ছুরি ইত্যাদি)
তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই।
তাহলে ইসলামী ফিকহ অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি হালাল ও ব্যবসা জায়েজ।
★তাহলে “সাইড ইফেক্টস” বা স্বাস্থ্য ক্ষতির বিষয়টি কী?
বর্তমানে অনেক স্থানে ব্রয়লার মুরগি বড় করার জন্য রাসায়নিক বা হরমোন ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়।
যদি এগুলো মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়,
তাহলে ইসলামি নীতিতে এটি “মাকরূহ” বা “হারাম” হতে পারে, কারণ:
“যে জিনিস ক্ষতি করে, ইসলাম তা নিষিদ্ধ করেছে।”
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫৬৪৪)
তবে মনে রাখতে হবে —
সব ব্রয়লার খামারি এমন নয়। অনেকেই এখন প্রাকৃতিক খাদ্য ও অ্যান্টিবায়োটিকবিহীন পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
সুতরাং, বিষয়টি “ব্রয়লার” হওয়ার কারণে নয়, বরং তার খাওয়ানো ও পালন পদ্ধতির কারণে হালাল বা সন্দেহজনক হয়।
দারুল উলূম দেওবন্দ (ভারত)
“যদি ব্রয়লার মুরগিকে হারাম খাদ্য খাওয়ানো না হয় এবং ইসলামীভাবে যবেহ করা হয়, তবে তা হালাল ও ব্যবসা জায়েজ।”
(ফতোয়া: ১১২৪/বি–৬৬)
মাজলিসে উলামায়ে হিন্দ ও মিশরীয় আলেমগণ একই মত দিয়েছেন।
★ব্রয়লার ব্যবসা জায়েজ ও হালাল, তবে শর্তগুলো মনে রাখতে হবেঃ-
১. মুরগির খাদ্য হালাল ও স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে।
২. কোনো ক্ষতিকর ইনজেকশন বা রাসায়নিক ব্যবহার করা যাবে না।
৩. ক্রেতাকে প্রতারণা করা যাবে না (যেমন– অস্বাস্থ্যকর মুরগি বিক্রি করা)।
৪. ইসলামি যবেহ পদ্ধতি মানতে হবে।
এভাবে করলে —
ব্রয়লার ব্যবসা পুরোপুরি হালাল ও সওয়াবের কাজ (কারণ এতে হালাল রুজি উপার্জন হয়)।