রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন আল্লাহর আদেশে ইসলামের দাওয়াত শুরু করেন, তখন মক্কার কুরাইশ নেতারা তাঁর এই আহ্বানে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা প্রথমে ব্যঙ্গ, পরে হুমকি, তারপর সামাজিক বয়কট — নানা উপায়ে চেষ্টা করেছিল তাঁকে দাওয়াত থেকে বিরত করতে।
তবে নবীজি ﷺ–এর চাচা আবু তালিব, যদিও ইসলামে প্রবেশ করেননি, তবুও তিনি তাঁর ভাতিজাকে রক্ষা করতেন।
কুরাইশের নেতারা তাই বহুবার তাঁর কাছে বিচার বা আবেদন নিয়ে গিয়েছিল — যাতে তিনি নবীজিকে দাওয়াত বন্ধ করতে বলেন।
ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী (ইবন হিশাম, ইবন ইসহাক, তাবারি প্রমুখ) কুরাইশ নেতারা তিনবার আবু তালিবের কাছে নবীজি ﷺ–এর ব্যাপারে বিচার বা অভিযোগ নিয়ে আসে।
প্রতিবারই কথোপকথন ভিন্ন রকম হয়েছিল।
★প্রথমবার: হালকা সতর্কবার্তা (প্রাথমিক দাওয়াতের পর)
ঘটনা:
রাসুলুল্লাহ ﷺ প্রকাশ্যে দাওয়াত শুরু করার পর (প্রায় ৩য় বা ৪র্থ নবুয়ত বর্ষে) কুরাইশের নেতারা আবু তালিবের কাছে আসে।
তারা বলে:
“হে আবু তালিব! আপনার ভাতিজা আমাদের দেবতাদের গালি দিচ্ছে, আমাদের বুদ্ধিমত্তাকে উপহাস করছে, আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে ভ্রান্ত বলছে। আপনি তাঁকে এসব থেকে বিরত রাখুন, নইলে আমরা ব্যবস্থা নেব।”
আবু তালিবের প্রতিক্রিয়া:
তিনি শান্তভাবে তাদের বোঝালেন — “আমি তাঁকে দেখবো এবং কথা বলব।”
এরপর নবীজিকে ডেকে নরমভাবে বললেন, “ভাতিজা, তুমি তোমার জাতিকে কষ্ট দিচ্ছ — কিছুটা হালকা করো।”
নবীজির উত্তর:
নবীজি ﷺ বলেন,
“হে চাচা, আমি তো কেবল আল্লাহর সত্য দাওয়াত দিচ্ছি। তারা যদি সূর্যকে আমার ডান হাতে আর চাঁদকে বাম হাতে রাখে তবু আমি এ কাজ ছাড়ব না — যতক্ষণ না আল্লাহ ইসলামকে বিজয়ী করেন, অথবা আমি এতে প্রাণ দিই।”
এ কথা শুনে আবু তালিব গভীরভাবে প্রভাবিত হন এবং বলেন,
“যাও ভাতিজা, তোমার দাওয়াত চালিয়ে যাও। আমি যতদিন বেঁচে আছি, কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”
★ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ২৬৫ নং পৃষ্ঠায় এসেছেঃ-
আবূ ত্বালিব সমীপে কুরাইশ প্রতিনিধি দল )وَقْدُ قُرَيْشٍ إِلَى أَبِي طَالِبٍ( :
ইবনে ইসহাক্ব বলেন যে, কুরাইশ গোত্রের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি একত্র হয়ে আবূ ত্বালিবের নিকট উপস্থি হয়ে বললেন, 'হে আবূ ত্বালিব, আপনার ভ্রাতুষ্পুত্র আমাদের দেব-দেবীগণকে গালিগালাজ করছেন, আমাদের ধর্মের নিন্দা করছেন, আমাদেরকে জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচার-বিবেকহীন, মূর্খ বলছেন এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণকে ধর্মভ্রষ্ট বলছেন। অতএব, হয় আপনি তাঁকে এ জাতীয় কাজ কর্ম থেকে বিরত রাখুন নতুবা আমাদের এবং তাঁর মধ্য থেকে আপনি দূরে সরে যান। কারণ, আপনিও আমাদের মতই তাঁর বক্তব্য মতে ভিন্নধর্মের অনুসারী। তাঁর ব্যাপারে আমরাই আপনার জন্য যথেষ্ট হব।
এর জবাবে আবূ ত্বালিব অত্যন্ত ঠাণ্ডা মেজাজে পাঁচরকম কথা-বার্তা বলে তাদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বিদায় করলেন। এ প্রেক্ষিতে তাঁরা ফিরে চলে গেলেন। এ দিকে রাসূলুল্লাহ পূর্ণোদ্যমে তাঁর প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে থাকলেন। দীনের দায়োত প্রচার করতে থাকলেন এবং সেদিকে লোকেদেরকে আহ্বান জানাতে থাকলেন।'
এদিকে কুরাইশগণও বেশি দেরি করলেন না যখন দেখলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাঃ কাজ ও আল্লাহর পথে দাওয়াত পূর্ণামাত্রায় চালিয়ে যাচ্ছেনই, বরং তিনি তাঁর দাওয়াতী তৎপরতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। নিরুপায় তারা পূর্বের চেয়ে আরো ক্রোধ ও গরম মেজাজ নিয়ে আবূ ত্বালিবের নিকট পুনরায় আগমন করলেন।
---
আবূ ত্বালিবের প্রতি কুরাইশগণের ধমক )قُرَيْشُ يُهَدِّدُونَ أَبَا طَالِبٍ( :
আবূ ত্বালিবের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর কুরাইশ প্রধানগণ আবূ ত্বালিবের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আবূ ত্বালিব! আপনি আমাদের মাঝে মান-মর্যাদার অধিকারী একজন বয়স্ক ব্যক্তি। আমরা ইতোপূর্বে আপনার নিরুট আবেদন করেছিলাম যে আপনার ভ্রাতুষ্পুত্রকে আমাদের ধর্ম সম্পর্কে নিন্দাবাদ করা থেকে বিরত রাখুন। কিন্তু আপনি তা করেন নাই। আপনি মনে রাখবেন, আমরা এটা কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারছিনা যে আমাদের পিতা পিতামহ এবং পূর্ব পুরুষদের গালি-গালাজ করা হোক, আমাদের বিবেককে নির্বুদ্ধিতা বলে আখ্যায়িত করা হোক এবং আমাদের দেবদেবীর নিন্দা করা হোক। আমরা আবারও আপনাকে অনুরোধ করছি হয় আপনি তাকে সে সব থেকে নিবৃত্ত রাখুন, নচেৎ, তআামাদের দু'দলের মধ্যে এক দল ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ বিগ্রহ চলতেই থাকবে।'
,
কুরাইশ প্রধানগণের এমন কঠোর বাক্য বিনিময় এবং আস্ফালনে আবূ ত্বালিব অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়লেন। তিনি সেই মুহূর্তে তাঁর কর্তব্য স্থির করতে না পেরে নাবী কারীম (সাঃ)-কে ডেকে পাঠালেন। চাচার আহ্বানে নাবী কারীম (সাঃ) সেখানে উপস্থিত হলে আবূ ত্বালিব তাঁর নিকট কুরাইশ প্রধানগণের আলোচনা এবং আচরণ সম্পর্কে সবিস্তার বর্ণনা করার পর তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, 'বাবা! একটু বিচার বিবেচনা করে কাজ করো। যে ভার বহন করার শক্তি আমার নেই সে ভার আমার উপর চাপিয়ে দিও না।'
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ধারণা করলেন, মানবকুলের মধ্যে তাঁর একমাত্র আশ্রয়দাতা ও সহায় চাচাও বোধ হয় আজ থেকে তাঁর সঙ্গ পরিত্যাগ করলেন এবং তাঁকে সাহায্য দানের ব্যাপারে তিনিও বোধ হয় দুর্বল হয়ে পড়লেন। তিনি এটাও সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করলেন যে, আজ থেকে তিনি এক নিদারুণ সংকটে নিপতিত হতে চললেন। তবুও আল্লাহ তা'আলার উপর অবিচল আস্থা রেখে তিনি বললেন,
(يَا عَمِّ، وَاللَّهِ لَوْ وَضَعُوا الشَّمْسَ فِي يَمِينِي وَالْقَمَرَ فِي يَسَارِى عَلَى أَنْ أَتْرُكَ هُذَا الْأَمْرَ - حَتَّى يَظْهَرُهُ اللَّهُ أَوْ أُهْلِكُ فِيهِ - مَا تَرَكْتُهُ)
'চাচাজান, আল্লাহর শপথ! যদি এরা আমার ডান হাতে সূর্য এবং বাম হাতে চাঁদ এনে দেয় তবুও শাশ্বত এ মহা সত্য প্রচার সংক্রান্ত আমার কর্তব্য থেকে এক মুহূর্তের জন্যও আমি বিচ্যুত হব না। এ মহামহিম কার্যে হয় আল্লাহ আমাকে জয়যুক্ত করবেন না হয় আমি ধ্বংস হয়ে যাব। কিন্তু চাচাজান! আপনি অবশ্যই জানবেন যে, মুহাম্মদ (সাঃ) কখনই এ কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হবে না।'
স্বজাতীয় এবং স্বগোত্রীয় লোকজনদের নির্বুদ্ধিতা, হঠকারিতা এবং পাপাচারে ব্যথিত-হৃদয় নাবী (সাঃ)-এর নয়নযুগলকে বাষ্পাচ্ছন্ন করে তুলল। তিনি সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করলেন যে ভবিষ্যতের দিনগুলো তাঁর জন্য আরও কঠিন হবে এবং আরও ভয়াবহতা এবং কঠোরতার সঙ্গে তাঁকে মোকাবালা করে চলতে হবে। তাঁর নয়ন যুগলে অশ্রু কিন্তু অন্তরে অদম্য সাহস। এমন এক মানসিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে তিনি চাচা আবূ ত্বালিবের সম্মুখ থেকে বেরিয়ে এলেন।
তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় ভ্রাতুষ্পুত্রের এ অসহায়ত্ব ও মানসিক অশান্তিতে আবূ ত্বালিবের প্রাণ কেঁদে উঠল। পরক্ষণেই তিনি তাঁকে পুনরায় ডেকে পাঠালেন। যখন নাবী কারীম (সাঃ) তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হলেন তখন তিনি তাঁকে সম্বোধন করে বললেন: 'প্রিয়তম ভ্রাতুষ্পুত্র! নির্দ্ধিধায় নিজ কর্তব্য পালন করে যাও। আল্লাহর কসম করে বলছি আমি কোন অবস্থাতেই তোমাকে পরিত্যাগ করব না।' তারপর তিনি নিম্নোক্ত কবিতার চরণগুলো আবৃত্তি করলেন :
**
والله لن يصلوا إليك بجمعيهم
حتى أُوَسَّد في التراب دفينا
فاصدع بأمرك ما عليك غَضَاضَة **
وابشر وقرَّ بذاك منك عيونا
অর্থ: 'আল্লাহ চান তো তারা স্বীয় দলবল নিয়ে কখনই তোমার নিকট পৌঁছতে পারবে না যতক্ষণ না আমি সমাহিত হয়ে যাব। তুমি তোমার দ্বীনী প্রচার-প্রচারণা কর্মকাণ্ড যথাসাধ্য চালিয়ে যাও তাতে কোন প্রকার বাধা বিপত্তি আসবে না। তুমি খুশি থাক এবং তোমাব চক্ষু পরিতৃপ্ত হোক।'
(ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ২৬৫-২৬৬ নং পৃষ্ঠা)
(মুখতারুস সীরাহ ৬৮)
★দ্বিতীয়বার: চাপ ও হুমকির পর্যায়
ঘটনা:
প্রথমবারের পরও দাওয়াত বন্ধ না হওয়ায় তারা আবার আসে, এবার কিছুটা কঠোর ভাষায়।
তারা বলে:
“হে আবু তালিব! আমরা আপনাকে সতর্ক করেছিলাম, কিন্তু আপনার ভাতিজা আমাদের দেবতাদের অপমান করছে। এখন হয় আপনি তাঁকে থামান, না হলে আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকব।”
আবু তালিবের প্রতিক্রিয়া:
তিনি নবীজিকে আবার ডাকলেন, বললেন,
“ভাতিজা, এখন ব্যাপারটা অনেক দূর গেছে। তোমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।”
নবীজির উত্তর:
নবীজি ﷺ আগের মতোই দৃঢ়ভাবে বলেন,
“আমি এ দাওয়াত থেকে ফিরব না। আমি আল্লাহর আদেশ পালন করছি।”
আবু তালিব এবার খোলাখুলিভাবে বললেন:
“তাহলে, আমার ভাতিজা যা বলেছে, তা-ই হবে। তোমরা সবাই চলে যাও। আমি তাঁর পাশে থাকব।”
এই কথা শুনে কুরাইশরা ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যায়।
★সীরাতে ইবনে হিশাম গ্রন্থে এসেছেঃ-
: (قُرَيْشُ بَيْنَ يَدَى أَبِي طَالِبٍ مَرَّةً أُخْرَى)
বিগত দিবসের চড়া-কড়া কথা সত্ত্বেও কুরাইশগণ যখন দেখল যে মুহাম্মদ (সাঃ) বিরত থাকা তো দূরের কথা, আরও জোরে শোরে প্রচার-প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তখন এটা তাদের কাছে পরিস্কার হয়ে গেল যে, আবূ ত্বালিব মুহাম্মদ(সাঃ)-কে পরিত্যাগ করবেন না। এ ব্যাপারে তিনি কুরাইশগণ হতে পৃথক হয়ে যেতে
---
এমনকি তাদের শত্রুতা ক্রয় করতেও প্রস্তুত রয়েছেন। কিন্তু তবুও ভ্রাতুষ্পুত্রকে ছাড়তে প্রস্তুত নয়। চড়া কড়া কথা বার্তা এবং যুদ্ধের হুমকি দিয়েও যখন তেমন কিছুই হল না তখন একদিন যুক্তি পরামর্শ করে অলীদ বিন মুগীরাহর সন্তান ওমারাহকে সঙ্গে নিয়ে আবূ ত্বালিবের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, 'হে আবূ ত্বালিব! এ হচ্ছে কুরাইশগণের মধ্যে সব চেয়ে সুন্দর এবং ধার্মিক যুবক। আপনি একে পুত্ররূপে গ্রহণ করুন। এর শোনিতপাতের খেসারত এবং সাহয্যের আপনি অধিকারী হবেন। আপনি একে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করে নিন। এ যুবক আজ হতে আপনার সন্তান বলে গণ্য হবে। এর পরিবর্তে আপনার ভ্রাতুষ্পুত্রকে আমাদের হাতে সমর্পণ করে দিন। সে আপনার ও আমাদের পিতা, পিতামহদের বিরোধিতা করছে, আমাদের জাতীয়তা, একতা এবং শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে এবং সকলের জ্ঞানবুদ্ধিকে নির্বুদ্ধিতার আবরণে আচ্ছাদিত করছে। তাঁকে হত্যা করা ছাড়া আমাদের গত্যন্ত আর নেই। এক ব্যক্তির বিনিময়ে এক ব্যক্তিই যথেষ্ট।'
প্রত্যুত্তরে আবূ ত্বালিব বললেন, 'তোমরা যে কথা বললে এর চেয়ে জঘন্য এবং অর্থহীন কথা আর কিছু হতে পারে কি? তোমরা তোমাদের সন্তান আমাকে এ উদ্দেশ্যে দিচ্ছ যে আমি তাকে খাইয়ে পরিয়ে লালন-পালন করব আর আমার সন্তানকে তোমাদের হাতে তুলে দিব এ উদ্দেশ্যে যে, তোমরা তাকে হত্যা করবে। আল্লাহর শপথ! কক্ষনোই এমনটি হতে পারবে না।'
এ প্রেক্ষিতে নওফাল বিন আবদে মানাফের পুত্র মুতয়িম বিন 'আদী বলল: 'আল্লাহর কসম হে আবূ ত্বালিব! তোমার জ্ঞাতি গোষ্ঠির লোকজন তোমার সঙ্গে বিচার বিবেচনা সুলভ কথাবার্তা বলছে, কাজকর্মের যে ধারা পদ্ধতি তোমার জন্য বিপজ্জনক তা থেকে তোমাকে রক্ষার প্রচেষ্টাই করা হয়েছে। কিন্তু আমি যা দেখছি তাতে আমার মনে হচ্ছে যে, তুমি তাদের কোন কথাকেই তেমন আমল দিতে চাচ্ছনা।'
এর জবাবে আবূ ত্বালিব বললেন, 'আল্লাহর কসম! তোমরা আমার সঙ্গে বিচার বিবেচনা প্রসূত কোন কথাবার্তাই বলো নি। বরং তোমরা আমার সঙ্গ পরিত্যাগ করে আমার বিরোধিতায় লিপ্ত হয়েছ এবং বিরুদ্ধ বাদীদের সাহায্যার্থে কোমর বেঁধে লেগেছ। তবে ঠিক আছে তোমাদের যেটা করণীয় মনে করবে তাইত করবে।'
কুরাইশগণ যখন এবারের আলোচনাতেও হতাশ হলেন এবং আবূ ত্বালিব রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে নিষেধ করতে ও আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া বাধা প্রদান করারা ব্যাপারে একমত হলেন না। তখন কুরাইশগণ অগত্যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে সরাসরি শত্রুতা পোষণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো
★তৃতীয়বার: “বদলে তরুণ” প্রস্তাব (চূড়ান্ত প্রচেষ্টা)
ঘটনা:
যখন তারা বুঝল, কোনোভাবে আবু তালিব রাজি হচ্ছেন না, তখন তারা এক অভিনব প্রস্তাব নিয়ে আসে।
তারা বলে:
“হে আবু তালিব! আমরা তোমার ভাতিজার পরিবর্তে আমাদের এক তরুণ, আমরা ইবন ওয়ালিদ (খ্যাতনামা, শক্তিশালী যুবক)–কে তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি। তুমি তাঁকে পুত্রের মতো লালন করো। কিন্তু আমাদের একটাই অনুরোধ — তোমার ভাতিজাকে আমাদের হাতে দাও, আমরা তাঁকে হত্যা করব। এতে আমরা সবাই শান্তি পাব।”
আবু তালিব বিস্মিত হয়ে বলেন:
“তোমরা তোমাদের সন্তানকে আমার হাতে দেবে যাতে আমি তাকে খাওয়াই, আর আমার নিজের ভাতিজাকে তোমাদের হাতে দিই যাতে তোমরা তাকে হত্যা করো? আল্লাহর কসম! এটা কখনোই হবে না।”
তারা হতাশ হয়ে চলে যায়।
★এই তিনবারের মধ্যে কুরাইশরা বুঝে যায় —
আবু তালিব কখনোই তাঁর ভাতিজাকে ছাড়বেন না।
তখনই তারা ভিন্ন কৌশল নেয় —
নবীজির অনুসারীদের নির্যাতন,
বনী হাশিমের ওপর বয়কট,
এবং শেষে শিআবে আবি তালিবে অবরোধ (প্রায় তিন বছর)।
(কিছু অংশ সংগৃহীত।)
সূত্রসমূহ
(ইবন ইসহাক, “সীরাতু রাসূলিল্লাহ”
ইবন হিশাম, “আস-সীরাতুন নববিয়্যাহ”
আত-তাবারী, “তারিখ আল-উমাম ওয়াল-মুলূক”
ইবন কাসির, “আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া”)