আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
210 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (60 points)

আসসালামু আলাইকুম।
১।শিক্ষককে ছাত্ররা কোন উপহার দিলে সেটা গ্রহণ করা ঠিক হবে কিনা,যেহেতু এখানে সম্ভাবনা আছে যে ছাত্রদের উদ্দেশ্য হয়ত অসৎ(বেশি নম্বর পাওয়া বা এমন কোন বাড়তি সুবিধা পাওয়া)।

তাছাড়া একটা হাদিসে সম্ভবত এমন বলা হয়েছে যে, রসূলুল্লহ সল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন লোককে যাকাত সংগ্রহ করতে পাঠান।সেই লোক যাকাতের মাল থেকে কিছু নিজের জন্য রেখে দাবী করেন যে এগুলো তাকে উপহার দেওয়া হয়েছে।তার এ কথা শুনে রসূলুল্লহ সল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবাদ করেন।

২।এক্ষেত্রে ছাত্রদের মনের নিয়ত কী তা যদি জানা সম্ভব না হয় তখন করণীয় কী?

1 Answer

0 votes
by (713,640 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আবূ হুমায়দ সা‘ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। 
عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ اسْتَعْمَلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلاً عَلَى صَدَقَاتِ بَنِي سُلَيْمٍ يُدْعَى ابْنَ الْلَّتَبِيَّةِ فَلَمَّا جَاءَ حَاسَبَهُ قَالَ هَذَا مَالُكُمْ وَهَذَا هَدِيَّةٌ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَهَلاَّ جَلَسْتَ فِي بَيْتِ أَبِيكَ وَأُمِّكَ حَتَّى تَأْتِيَكَ هَدِيَّتُكَ إِنْ كُنْتَ صَادِقًا ثُمَّ خَطَبَنَا فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّي أَسْتَعْمِلُ الرَّجُلَ مِنْكُمْ عَلَى الْعَمَلِ مِمَّا وَلاَّنِي اللهُ فَيَأْتِي فَيَقُولُ هَذَا مَالُكُمْ وَهَذَا هَدِيَّةٌ أُهْدِيَتْ لِي أَفَلاَ جَلَسَ فِي بَيْتِ أَبِيهِ وَأُمِّهِ حَتَّى تَأْتِيَهُ هَدِيَّتُهُ وَاللهِ لاَ يَأْخُذُ أَحَدٌ مِنْكُمْ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّهِ إِلاَّ لَقِيَ اللهَ يَحْمِلُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَلأَعْرِفَنَّ أَحَدًا مِنْكُمْ لَقِيَ اللهَ يَحْمِلُ بَعِيرًا لَهُ رُغَاءٌ أَوْ بَقَرَةً لَهَا خُوَارٌ أَوْ شَاةً تَيْعَرُ ثُمَّ رَفَعَ يَدَهُ حَتَّى رُئِيَ بَيَاضُ إِبْطِهِ يَقُولُ اللهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ بَصْرَ عَيْنِي وَسَمْعَ أُذُنِي
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুতাবিয়্যা নামে এক লোককে বানী সুলায়ম গোত্রের যাকাত আদায়কারী নিয়োগ করলেন। যখন সে ফিরে আসল তখন তিনি তার নিকট হতে হিসাব-নিকাশ নিলেন। সে বলল, এগুলো আপনাদের মাল, আর এগুলো (আমাকে দেয়া) হাদিয়া। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে তোমার মা-বাবার ঘরে বসে থাকলে না কেন? সেখানেই তোমার কাছে হাদিয়া পৌঁছে যেত। এরপর তিনি আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করার পর তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের কাউকে এমন কোন কাজে নিয়োগ করি, যার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহ্ আমাকে মনোনীত করেছেন। কিন্তু সে কাজ করে এসে বলে, এ হল তোমাদের মাল আর এ হলো আমাকে দেয়া হাদিয়া।তাহলে সে কেন তার মা-বাবার ঘরেই বসে থাকল না, সেখানে এমনিতেই তার কাছে তার হাদিয়া পৌঁছে যেত? আল্লাহর কসম! তোমরা যে কেউ অন্যায় পন্থায় কোন কিছু গ্রহণ করবে, সে কিয়ামতের দিন তা বয়ে নিয়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। আমি তোমাদের কাউকে ভালভাবেই চিনব যে, সে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে উট বহন করে; আর উট আওয়াজ দিতে থাকবে। অথবা গাভী বহন করে, আর সেটা ডাকতে থাকবে। অথবা বক্রী বহন করে, আর সেটা ডাকতে থাকবে। তারপর তিনি আপন হাত দু’টি এতদূর উত্তোলন করলেন যে তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখা যাচ্ছিল। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? আমার দু’চোখ সে অবস্থা দেখেছে এবং আমার কান শুনেছে। (সহীহ বুখারী-৬৯৭৯)

https://www.ifatwa.info/1382 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে, 
হাদিয়ার বিবিধ বিধি-বিধান বর্ণনা করতে যেয়ে
ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান শাইবানী রাহ হাদিয়ার বিভিন্ন প্রকার উল্লেখ করে বলেন,
ﺃﻥ ﺍﻟﻬﺪﻳﺔ ﺃﺭﺑﻌﺔ ﺃﻗﺴﺎﻡ ﺑﺎﻋﺘﺒﺎﺭ ﺍﻟﻤُﻬﺪِﻱ ﻭﺍﻟﻤُﻬﺪَﻯ ﺇﻟﻴﻪ ﻭﻫﻲ :
( 1 ) ﺣﻼﻝٌ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﺎﻧﺒﻴﻦ ﻛﺎﻹﻫﺪﺍﺀ ﻟﻠﺘﻮﺩﺩ .
( 2 ) ﻭﺣﺮﺍﻡٌ ﻣﻨﻬﻤﺎ ﻛﺎﻹﻫﺪﺍﺀ ﻟﻴُﻌﻴﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﻇﻠﻢ .
( 3 ) ﻭﺣﺮﺍﻡٌ ﻋﻠﻰ ﺍﻵﺧﺬ ﻓﻘﻂ، ﻭﻫﻲ ﺃﻥ ﻳﻬﺪﻳﻪ ﻟﻴﻜﻒَّ ﻋﻨﻪ ﺍﻟﻈﻠﻢ .
( 4 ) ﺃﻥ ﻳﺪﻓﻌﻪ ﻟﺪﻓﻊ ﺍﻟﺨﻮﻑ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻬﺪﻱ ﺇﻟﻴﻪ ﻋﻠﻰ ﻧﻔﺴﻪ ﺃﻭ ﻣﺎﻟﻪ ﺃﻭ ﻋﻴﺎﻟﻪ ﺃﻭ ﻋﺮﺿﻪ، ﻓﻬﺬﻩ ﺣﻼﻝٌ ﻟﻠﺪﺍﻓﻊ ﺣﺮﺍﻡٌ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺪﻓﻮﻉ ﺇﻟﻴﻪ، ﻓﺈﻥ ﺩﻓﻊ ﺍﻟﻀﺮﺭ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﻭﺍﺟﺐٌ، ﻭﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺃﺧﺬ ﺍﻟﻤﺎﻝ ﻟﻴﻔﻌﻞ ﺍﻟﻮﺍﺟﺐ-
ﺍﻟﻤﻮﺳﻮﻋﺔﺍﻟﻔﻘﻬﻴﺔ ﺍﻟﻜﻮﻳﺘﻴﺔ 42/258
প্রেরক ও প্রাপক হিসেবে হাদিয়া চার প্রকার যথা-
(১)প্রেরক- প্রাপক উভয়ের জন্য হালাল।যেমন- মহব্বত বাড়ানোর উদ্দেশ্যে হাদিয়া যা সাধারণত প্রচলিত।
(২)প্রেরক-প্রাপক উভয়ের জন্য হারাম।যেমন-কারো উপর যুলুম করতে সঙ্গ দানের জন্য কাউকে হাদিয়া প্রদান।
(৩)শুধুমাত্র প্রাপকের জন্য হারাম।যেমন- কারো যুলুম থেকে নিষ্কৃতিলাভ হেতু তাকে হাদিয়া প্রদান।
(৪)নিজ জান-মাল,পরিবারবর্গ ও ইজ্জত-আব্রুকে হেফাজত করার উদ্যেশ্যে হাদিয়া প্রদাণ,প্রেরকের জন্য জায়েয।লক্ষণীয় যে,প্রেরকের জন্য হালাল হলেও প্রাপকের জন্য তা সম্পূর্ণই হারাম।
কারণ একজন মুসলমান থেকে ক্ষতিকে দূর করা অন্য মুসলমানের উপর ওয়াজিব।আর এ ওয়াজিব কাজ সম্পাদন করার জন্য বিনিময় গ্রহণ সর্বাবস্থায় নাজায়েয।

মোটকথাঃ
হাদিয়ার মৌলিকত্বে অপকারজনক কোনো দিক নেই।এবং শরীয়ত ও তাতে বাধা প্রদান করে না।বরং হাদিয়াই সামাজিক বন্ধনকে অটুট রাখে।
কিন্তু আনুষাঙ্গিক কারণে কখনো কখনো শরীয়ত হাদিয়ার আদান-প্রদানকে নিষেধ করে থাকে।

হাদিয়া প্রেরক-প্রাপক ও স্থান কাল পাত্র বেদে হাদিয়ার আদান-প্রদান কখনো জায়েয হয় আবার কখনো নাজায়েয হয়।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
ছাত্র্রর কাছ থেকে হাদিয়া গ্রহণ না করাই উত্তম। হ্যা, গ্রহণ করা অবশ্যই জায়েয রয়েছে। তবে এই হাদিয়া গ্রহণের বিনিময়ে কোনো প্রকার দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করা যাবে না। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...