সবচে’ বড় কথা হল-জঙ্গে জামালে হযরত আয়শা রাঃ যুদ্ধ করার জন্য আসেনইনি, যুদ্ধ করার কোন ইচ্ছাই ছিল না। ঘটনাক্রমে চক্রান্তের শিকার উভয় মুসলিম বাহিনী। গভীর রাতে ভুল বুঝাবুঝির কারণে সৃষ্ট বিশৃংখল যুদ্ধের নেতৃত্ব হযরত আয়শা রাঃ করেছেন একথা একটি বোকামীসূলভ মন্তব্য। তিনি হযরত জুবাইর রাঃ এবং হযরত তালহা রাঃ এর সাথে সে ময়দানে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত থাকলেই নেতৃত্ব হয়ে যায় এমন কথা বলাটা অযৌক্তিক।
এ যুদ্ধের নাম জঙ্গে জামাল।
যা হযরত আয়শা রাঃ, হযরত তালহা রাঃ , জুবাইর রাঃ এর মতামতের অনুসারী এবং হযরত আলী রাঃ এর বাহিনীর মাঝে সাবায়ীদের ঘৃণ্য চক্রান্তের কারণে সংঘটিত হয়েছিল।
,
সাবায়ী চক্র হযরত উসমান রাঃ কে নির্মমভাবে হত্যা করলে মুসলমানদের ঐক্যমত্বে হযরত আলী রাঃ কে খলীফা নিযুক্ত করা হয়। সে সময় হযরত উসমান রাঃ এর হত্যাকারীদের আগে হত্যা করা হবে? না প্রথমে সাবায়ী চক্রান্তের জালে আটকে যাওয়া ইসলামী খিলাফতকে প্রথমে শক্তিশালী করা হবে, তারপর অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হবে?
,
এ বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন সাহাবীদের মাঝে দুটি দল হয়ে যায়। হযরত আয়শা রাঃ, হযরত মুয়াবিয়া রাঃ, হযরত তালহা রাঃ, হযরত জুবায়ের রাঃ এর মত ছিল আগে হযরত উসমান রাঃ এর হত্যাকারীদের শাস্তি দেয়া হবে। আর হযরত আলী রাঃ এবং তার অনুসারীদের মত ছিল আগে ষড়যন্ত্রের জালে ভগ্নপ্রায় ইসলামী খিলাফতকে প্রথমে শক্তিশালী করা হোক, তারপর অবশ্যই হত্যাকারী অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হবে।
,
এ মতবিরোধ হওয়ার পর উভয় দল বসরার পথে এক স্থানে মুখোমুখি অবস্থান করে সন্ধিতে আসেন। শান্তিময় সন্ধিচুক্তিতে সাবায়ী চক্র প্রমাদ গুনে।
উভয় পক্ষই ছিলেন দ্বীনের পক্ষে। হকের পক্ষে। কোন দলই যুদ্ধ কামনা করেন নি। কিন্তু রাতের গভীরে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থানকারী দুই বাহিনীর উপরই এক সাথে হামলা করে বসে সাবায়ী চক্র। ফলে সৃষ্ট হয় বিভ্রান্তির। হযরত তালহা, হযরত জুবায়ের ও হযরত আয়শা রাঃ এর বাহিনী মনে করেন হযরত আলী রাঃ এর বাহিনী হামলা করেছে, আর হযরত আলী রাঃ এর বাহিনী মনে করেন অপরপক্ষ হামলা করেছে।
,
এ ভুল বুঝাবুঝির কারণে শুরু হয় এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। ইতিহাসের এক মর্মান্তিক ট্র্যাজেডীর জন্ম দেয় কুখ্যাত সাবায়ী চক্র। রাতের গভীরে সংঘটিত হওয়া এ দুঃখজনক ভুল বুঝাবুঝির যুদ্ধটিই ইতিহাসে জঙ্গে জামাল বা উটের যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ। আব্দুল্লাহ বিন সাবার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে ইতিহাসের পাতায় লেখা হয় এক মর্মান্তিক ইতিহাস। নির্দোষ ১০ হাজার মুসলমান শহীদ হন সে যুদ্ধে। (তারীখে তাবারী-৩/৫৪)
(০২)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
وَعَنْ عَائِشَةَ : أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ كَانَ يَمْكُثُ عِنْدَ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ وَشَرِبَ عِنْدَهَا عَسَلًا فَتَوَاصَيْتُ أَنَا وَحَفْصَةُ أَنَّ أَيَّتَنَا دَخَلَ عَلَيْهَا النَّبِىُّ ﷺ فَلْتَقُلْ : إِنِّىْ أَجِدُ مِنْكَ رِيحَ مَغَافِيرَ أَكَلْتَ مَغَافِيرَ؟ فَدَخَلَ عَلَى احْدَاهُمَا فَقَالَتْ لَه ذٰلِكَ فَقَالَ : «لَا بَأْسَ شَرِبْتُ عَسَلًا عِنْدَ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ فَلَنْ أَعُوْدَ لَه وَقَدْ حَلَفْتُ لَا تُخْبِرِىْ بِذٰلِكِ أَحَدًا» يَبْتَغِىْ مَرْضَاةَ أَزْوَاجِه فَنَزَلَتْ : (يٰاَيُّهَا النَّبِىُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللهُ لَكَ تَبْتَغِىْ مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ) [سورة التحريم 66 : 1] الْآيَةُ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী যায়নাব বিনতু জাহশ-এর নিকট তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (কিছু সময় বেশি) অবস্থান করতেন। অতঃপর একদিন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর নিকট মধু পান করেন। এ সংবাদ পেয়ে আমি ও হাফসাহ্ উভয়ে পরামর্শ করলাম যে, আমাদের মধ্যে যার নিকটই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হবেন, সে যেন বলে, আমি আপনার (মুখ) হতে মাগাফীর-এর (দুর্গন্ধযুক্ত ফলের রস যা মৌমাছি সঞ্চয়ন করে) গন্ধ পাচ্ছি, আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁদের [‘আয়িশাহ্ ও হাফসাহ্ (রাঃ)] কোনো একজনের নিকট পৌঁছলে একজন বললেন। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি যায়নাব বিনতু জাহশ-এর নিকট মধু খেয়েছি। আমি শপথ করছি, আর কক্ষনো মধু খাবো না, কিন্তু তুমি এটা কাউকেও বলো না। মূলত তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সহধর্মিণীগণের সন্তুষ্টি কামনার্থে এটা (শপথ) করেছিলেন। এমতাবস্থায় কুরআন মাজীদের আয়াত নাযিল হয়- ‘‘হে নাবী! আল্লাহ যা তোমার জন্য হালাল করেছেন তা তুমি কেন হারাম করছ? (এর দ্বারা) তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি পেতে চাও?’’ (সূরা আত্ তাহরীম ৬৬ : ১)।
সহীহ : বুখারী ৪৯১২, মুসলিম ১৪৭৪, নাসায়ী ৩৭৯৫, আহমাদ ২৫৮৫২, ইরওয়া ২৫৭৩।
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধু পছন্দ করতেন। ‘আসর নামাযের পর তিনি প্রত্যেক স্ত্রীর খোঁজ খবর নেয়ার জন্য তাদের ঘরে যেতেন। এ সময় তার স্ত্রী যায়নাব বিনতু জাহ্শ তাকে মধু পান করাতেন। মানব স্বভাবসুলভ কারণে অন্যান্য স্ত্রীদের অনেকের কাছেই এটা অপছন্দনীয় ছিল। উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এবং হাফসাহ্ (রাঃ) উভয় মিলে ফন্দি আটলেন এবং যুক্তি পাকালেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যার কাছেই আসে সে বলবে আপনার কাছ থেকে মাগাফীরের গন্ধ পাচ্ছি। আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন?,,,
এর ভিত্তিতে তার থেকে বর্ণিত হাদীস না নেওয়া,হাদীসই মানতে অনাগ্রহ দেখানো কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
আর যেখানে উম্মতের সমস্ত ইসলামী স্কলারগন বিনা বাক্যে আয়েশা রাঃ এর হাদীস গ্রহন করেছেন,সেখানে এই ব্যাপারে কথা বলা,অনাগ্রহ দেখানো ঈমানের জন্য মারাত্মক হুমকি।