আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
201 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (102 points)
ভিডিও গেম খেলার হুকুম মূলত কি?যেই গেমে মিউজিক অফ করে রাখা যায় সেই গেম কি খেলা যাবে যদি আমি নামাজ, পড়ালেখা অন্যান্য দায়িত্ত্ব যথাযথ আদায় করে শুধু বিনোদনের জন্য কিছু সময় খেলি?

অনেকে বলে ভিডিও গেম খেলা সম্পূর্ন হারাম আবার অনেকে বলে যেহেতু সরাসরি হাদীসে আসেনি তাই হারাম বলা যাবে না মাকরুহ হবে
এক্ষেত্রে কোনটি সঠিক?

এবার মূল প্রশ্ন বলি
আমি ইসলামের অন্যান্য বিধান মানলেও ভিডিও গেম খেলি। আগে জখন কেউ বলতো যে অনেক আলেমরা বলে থাকেন ভিডিও গেম হারাম আমি নানান যুক্তি দিয়ে তা হারাম নয় বুঝানোর চেষ্টা করতাম।আমি এটা জানতাম যে হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।কিন্তু আমি আগে তেমনভাবে উপলব্ধি করতে পারি নাই অনেকেই নানা যুক্তি দিয়ে হারাম নয় বুঝানোর চেষ্টা করতো আমিও তাই করতাম।এই কয়েকদিন যখন আমি ঈমান ভঙ্গের মাসআলা গুলো বিস্তারিত জানা শুরু করেছি এখন আমার উপলব্ধি হচ্ছে।তাও আবার অনেক জায়গায় দেখি হারাম আবার অনেকে বলে সরাসরি হারাম না।এক ওয়েবসাইটে দেখলাম একজন নিজেকে আলেম দাবি করে বলছিল যে যেসব গেমে বুদ্ধি বিকাশ হয় সরাসরি হারাম কিছু থাকে না তা নাকি হানাফি মাজহাব হালাল তা নাকি হেদায়া কিতাবে আছে।

এখন মূল প্রশ্ন হলো ভিডিও গেম কি হারাম নাকি মাকরুহ?

যদি হারাম হয়ে থাকে আমি যে এতদিন নানান যুক্তির কথা বলে হারাম না বুঝানোর চেষ্টা করতাম আমার কি ঈমান আছে?

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)

 

 

بسم الله الرحمن الرحمن

জবাব,

ভিডিও গেম অনর্থক খেলার মাঝে শামিল। যেহেতু এর দ্বারা শারিরিক কোন উপকার নেই। অহেতুক সময় নষ্ট করা, তাই এটি অপছন্দনীয়। কিন্তু বর্তমানের ভিডিও গেমগুলোতে নানা ধরণের হারাম মিউজিক থাকে।যা সম্পূর্ণই নাজায়েজ। আর এসব মারামারি দৃশ্যগুলো বাচ্চাদের মন মগজে খুবই খারাপ প্রতিক্রিয়া  সৃষ্টি করে থাকে। বাচ্চাদের প্রতিহিংসা পরায়ন, প্রতিশোধী মনোভাবাপন্ন বানিয়ে দেয়।

আমাদের ধারণা এসব ভিডিও গেম এবং সিনেমাগুলোর এ্যাকশন দৃশ্যগুলোর কুপ্রভাবে কম বয়সী বাচ্চাদের দ্বারাও বড় বড় অপরাধমূলক কাজ বৃদ্ধি পাচ্ছে।তাই এসব অহেতুক ভিডিও গেম থেকে বিরত রাখাই জরুরী।

ইসলাম দু ধরণের খেলাধুলাকে বৈধ রেখেছে শর্ত সাপেক্ষে। যে দুই ধরণের খেলা জায়েজ-

১-শারিরীক উপকার নিহিত।যেমন দৌড়, ফুটবল ও ক্রিকেট ও হতে পারে।

২-দ্বীনের শত্রুর বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণমূলক খেলা। যেমন তীরন্দাজী, ঘোড় দৌড় ইত্যাদি।

এসব খেলা জায়েজ থাকার জন্য শর্ত দু’টি। যথা-

১- ফরজ ও ওয়াজিব কোন ইবাদতে বিঘ্ন না হতে হবে।

২-এর সাথে আর কোন গোনাহের বিষয় মিলিত না হতে হবে। যেমন জুয়া, বেপর্দা ইত্যাদি।

কম্পিউটার ও মোবাইলে বেশিরভাগ গেমসে অনেক মন্দ ও গোনাহর বিষয় যুক্ত থাকে। যেমন, ১. প্রাণীর ছবি। ২. মিউজিক, গান, বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র। ৩. বেপর্দা নারীদের নগ্ন ও অশ্লীল ছবি।  ৪. কাফেরদেরকে সম্মান করা, তাদের নষ্ট সংস্কৃতিকে প্রচার করে মুসলিম শিশু-কিশোর ও যুবসমাজকে ধ্বংস করা। ৫. কাফেরদের ধর্মীয় শিরকি-কুফুরী বিশ্বাস ও কাফেরদের চিহ্নকে কৌশলে মুসলিমদের মাঝে প্রচার করা। এছাড়াও আরো বহু মন্দ-বিষয় এসব গেমসে থাকে। সুতরাং এজাতীয় গেম খেলা জায়েয হবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন,

 إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ ٱلۡفَٰحِشَةُ فِي ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ 

যারা চায় যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার ঘটুক তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।’’ (সূরা নূর: ১৯)

তবে যে সব গেমসে কোনো জীবজন্তুর ছবি এবং উল্লেখিত গোনাহর বিষয়গুলো থাকে না। যেমন, বিমান, হুণ্ডা, হেলিকপ্টার, রকেট, নৌযান, সাবমেরিন, গাড়ী, জাহাজ, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি। অথবা জীবজন্তু হলেও খুব ছোট কিংবা অস্পষ্ট হওয়ার কারণে নাক, কান, চোখ, মুখ ইত্যাদি বুঝা যায় যায় না, বরং এগুলোকে কেবল নকশার মতো মনে হয়। সেসব গেমস কিছু শর্ত সাপেক্ষে বিনোদন লাভের উদ্দেশ্যে খেলা জায়েয আছে। শর্তগুলো হলো-১. তাতে জুয়া থাকতে পারবে না। ২. নামাজ নষ্ট হতে পারবে না। ৩. বান্দার হক নষ্ট হতে পারবে না। ৪. লেখাপড়া ও জরুরি কাজে কোনো ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারবে না। ৫. খেলায় একেবারে বিভোর হওয়া যাবে না।

এসব শর্তের কোনো একটি শর্ত অনুপস্থিত থাকলে এজাতীয় গেমসও খেলা জায়েয হবে না। (মাহমুদিয়া : ১৭/৩১৮)

সর্বোপরি যেকোনো গেমস খেলা মানে নিজের অমূল্য সম্পদ সময়কে অপচয় করা এবং অল্প থেকে ধীরে ধীরে এটা নেশায় পরিণত হওয়া।  সুতরাং একজন মুসলিম হিসাবে এ থেকে বিরত থাকা উচিত।

আবু হুরাইরা রাযি. বলেন, রাসূল্লাহ বলেছেনمن حُسنِ إسلام المرءِ تركُهُ ما لا يعنيهএকজন ব্যক্তির ইসলামের পরিপূর্ণতার একটি লক্ষণ হল যে, তার জন্য জরুরী নয় এমন কাজ সে ত্যাগ করে। (জামে তিরমিযী : ২২৩৯)

 প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/ বোন!

১.উপরোক্ত শর্তগুলি যদি পাওয়া না যায় তাহলে ভিডিও গেম খেলা জায়েয হবে না। আর যখন শর্ত পাওয়া যাবে তখন তা জায়েয হলেও উক্ত কাজকে  মাকরূহ বা অহেতুক কাজ বলা হয়েছে,যা পরিহার করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য উচিৎ।

২.আপনি যেহেতু আপনার উক্ত কাজের উপর অনুতপ্ত বিধায় আপনার ঈমান ঠিক আছে । তবে উক্ত কাজের জন্য আল্লাহর কাছে বেশী বেশী তওবা করতে হবে এবং ইসলাম যেই কাজকে সমর্থন করে না এমন কাজকে কখনই প্রমোট করা যাবে না। এজাতীয় কাজ থেকে দূরে থাকার অোপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (102 points)
ঈমান যখন ঠিক আছে তাহলে কি আর পুনরায় কালেমা পরে নবায়ন করা লাগবে?নাকি তওবা করলেই হবে?
by (102 points)
মুফতী মুজিবুর রহমান হুজুর একটু জানান দয়া করে
আমি আগে একটা গেম খেলেছিলাম যেখানের ক্যারেক্টার শিরকী কাজ যেমন গির্জায় যায় তাওহীদ বিরোধী বিশ্বাস অর্থাৎ হিন্দুদের মত অনেক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে।কিন্তু আমি এরকম আকিদা কখনও রাখি নাই আর বাস্তবেও এমন কিছু করি নাই।আমার কি ঈমান ঠিক আছে? একটু জানান দয়া করে

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...