আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
350 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (16 points)
edited by
১।আমি একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য অর্ডার করি।এখন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ,যারা পণ্য ক্রয় করেছে তাদের মধ্য থেকে লটারি করল ও ধরুন আমি লটারিতে নির্বাচিত হলাম ও একটি ঘড়ি গিফট পেলাম।এমতাবস্থায় এই গিফট নেওয়া কি জায়েজ? আমি লটারির জন্য আলাদা কোনো টাকা দেয় নি,,শুধু পণ্য কেনার জন্য অগ্রীম টাকা দিয়ে রেখেছি।
২।আমি স্কুলে পড়ার সময় কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি খেলার আয়োজন করি।খেলাই কয়েকজন মিলে চাঁদা দেয় ও একটি পুরস্কার ক্রয় করা হয়।খেলাই আমি জিতি ও পুরস্কার টি আমি পাই।

ক।এটি কি জুয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে?

খ।জুয়ার অন্তর্ভুক্ত হলে আমার এখন করণীয় কি?
গ।পুরস্কার টিই বা কি করতে হবে?

৩।স্কুল কর্তৃপক্ষ যে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সেক্ষেত্রে দেখা যায়, খেলাই অংশগ্রহণ করুক বা না করুক সবাইকেই ভর্তির সময় ক্রীড়া ফি দিতে হয়।

ক।এইসব ক্রীড়া প্রতিযোগিতাই অংশগ্রহণ করা কি জুয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে?
খ।এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কার পেলে সেটা কি জায়েজ হবে?

গ।পুরস্কারটি জায়েজ না হলে সেটি কি করতে হবে?

৪।'নগদ' যদি ১৫ টাকা রিচার্জে ৩০ টাকা ক্যাশব্যাক প্রদান করে সেটি নেওয়া কি হারাম হবে?

৫।বিকাশে লেনদেন করলে এক ধরনের রিওয়ার্ড পয়েন্ট প্রদান করে এই পয়েন্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্যাশব্যাক নেওয়া যায়।সেটি কি জায়েজ হবে?

1 Answer

0 votes
by (63,560 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

১. প্রচলিত লটারীতে শরিয়তের নিষিদ্ধميسر  (জুয়া)-এর উপস্থিতি৷ জুয়া বলা হয় এমন লেনদেনকে যাতে এক পক্ষের ক্ষতির উপর অপরপক্ষের লাভবান হওয়া নির্ভর করে ৷ লটারীতে ঠিক এমনই ৷ কারণ লটারীতে কয়েকজন টাকা দিয়ে প্রবেশ আর যে কোনো একজন বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে সব টাকাগুলো নিয়ে যায়। আর অন্যরা তা থেকে মাহরুম হয়। সুতরাং এটা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত যা নিষিদ্ধ ৷

আর জুয়া হারাম হওয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন-

يا ايها الذين امنوا انما الخمر والميسر والانصاب والازلام رجس من عمل الشيطان فاجتنبوه لعلكم تفلحون.

"হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তুশয়তানের কাজ৷ সুতরাং তোমরা উহা বর্জন কর- যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পারো৷" (সূরা মায়িদা, আয়াত: ৯০)

 

২. শরিয়তের নিষিদ্ধ جهالة  ( অজ্ঞতা )- এর উপস্থিতি৷ লটারী মূলত সম্পদ বিনিময়ের এমন এক ধরনের চুক্তি যাতে মারাত্মক ধরনের جهالة  (অজ্ঞতা) রয়েছে৷ কেননা গ্রাহক লটারীতে অংশ গ্রহণ করে সম্ভাব্যের উপর ভিত্তি করে যা ঘটতে পারে, অর্থাৎ বিজয়ী হতেও পারে আবার নাও পারে। ফলে লটারীতে অংশ গ্রহণকারীর পরিমাণটা অজ্ঞাত থেকে যায়৷ আর লেনদেনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ان تكون العاقبة معلومة  অর্থাৎ পরিণামটা জ্ঞাত হওয়া৷ আর যে লেনদেনে অজ্ঞতা রয়েছে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ৷ যেমন ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে-

...فبيع المجهول جهالة تفضي إليها غير صحيح.

"অতএব অস্পষ্ট বিষয় যাতে বিতর্কের সম্ভাবনা রয়েছে, তার লেনদেন চুক্তি অবৈধ৷"  

  (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৩/২)

 

৩. শরীয়তের নিষিদ্ধ غرر (গারার)- এর উপস্থিতি৷

হাদীস শরীফে এসেছে- نهي عن بيع الغرر  অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল লেনদেনে সব ধরনের غرر কে নিষিদ্ধ করেছেন৷( সহীহ মুসলিম:২/২)

 

ইমাম সারাখসী রহ. غرر এর সংজ্ঞা এভাবে দিয়েছেন যে,

ما يكون مستور العقبة.

অর্থাৎ যার পরিণাম অস্পষ্ট তা-ই গারার৷(আল মাবসূত:১২/১৯৪)

 

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন-

الغرر هو مجهول العاقبة، فإن بيعه من الميسر الذي هو القمار.

"গারার হচ্ছে ঐ কারবার যার পরিণাম অনিশ্চিত৷ কারণ এর দ্বারা সেটা  ميسر  (মাইসির) এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় যা জুয়ারই অপর নাম৷"  

(মাজআতুল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া:২৯/২২)

আর আমরা দেখি যে, লটারীতেও পরিণামটা  অস্পষ্ট থাকে৷ অংশগ্রহণকারীরা পাবে না পাবে না এটা অস্পষ্ট ও অনিশ্চিত৷ আর এটাই উল্লেখিত গারারের অন্তর্ভুক্ত যা হাদীস দ্বারা নিষিদ্ধ৷

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত গিফট নেওয়া জায়েজ। তা নিষিদ্ধ লটারীর মধ্যে পড়বে না। পণ্য ক্রয়ের পর লটারী সম্পর্কে আরো জানুন - https://ifatwa.info/1505/?show=1505#q1505

 

.

. হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সেটি জুয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে

খ. আপনার করণীয় হলো এ ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকা। আর অতীতের এ ধরণের কর্মের জন্য   আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া।

. যদি সম্ভব হয় তাহলে উক্ত পুরস্কারটি বিক্রয় করে উক্ত খেলায় অংশগ্রহণকারীরকে পুরস্কারটির বিক্রয় লব্ধ টাকা ফিরত দিবেন আর এটা সম্ভব না হলে উক্ত পুরস্কারটি সদকাহ করে দিবেন


. কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময় ক্রীড়া ফি গ্রহণ করে থাকে যা সব ছাত্র-ছাত্রীকেই দিতে হয় এখন যদি কর্তৃপক্ষ যে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে এবং তার জন্য যদি আলাদাভাবে ফি না নিয়ে থাকে তাহলে উক্ত ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা জায়েজ আছে। তবে যদি আলাদাভাবে ফি নিয়ে থাকে তাহলে উক্ত ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা জায়েজ হবে না।


. যদি আলাদাভাবে ফি না নিয়ে থাকে তাহলে উক্ত ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা জায়েজ আছে। তবে যদি আলাদাভাবে ফি নিয়ে থাকে তাহলে উক্ত ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা জায়েজ হবে না।


খ. পুস্কারের হুকুম উপরের হুকুমের উপর নির্ভর করবে।

গ. লটারী থেকে প্রাপ্ত পণ্য হারাম। সুতরাং এমন পণ্য কারো হস্তগত হয়ে গেলে সেই পণ্যকে সদকাহ করে দিতে হবে।

৪. উক্ত ক্যাশব্যাক নেওয়া জায়েজ আছে।

৬. হ্যাঁ, তা নেওয়া জায়েজ হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...