আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
100 views
in সালাত(Prayer) by (12 points)
শাইখ,
আমার এ-ই অতি জরুরী প্রশ্নটা একটু মনোযোগে শুনে উত্তর দিন,

একজন আল্লাহর বান্দা,নাম বলতে অনিচ্ছুক, তিনি এখন আল্লাহর রহমতে দ্বীন চর্চা করছে তবে উনার সমস্যা হলো
উনার কাযা নামায নিয়ে,তিনি বুঝতে পারছেন না যে তিনি কত বছর বয়স হতে কাযা নামাযের হিসাব করে নামাযগুলো আদায় করবেন।

সাধারণত নবীজির হাদীস হলো ৭বছর বয়স হতে ছেলে দের নামাযের আদেশ দিতে আর ১০বছর বয়সে মারধর করতে যদি নামায না পড়ে।

১|তবে তিনি সমস্যায় পড়লেন যে তিনির কি ৭বছর বয়স হতে নামাযের কাযা আদায় দিবেন নাকি ১০বছরের,
মানে তিনি যদি ছোটকালের  ৭বছরের থেকে হিসাব করেন তাহলে উনার ৫বছরের নামায কাযা আদায় বাকি আছে,
আর যদি বয়স ১০ বছর হতে ধরেন তাহলে বাকি আছে ৯ বছর এ-র কাযা নামায।
এখন তিনি কোন বছর হতে শুরু করবেন?

২|আর একটা কথা নামায যদি নাবালকের উপর ফরজ না হয় তাহলে ৭/১০ বছরের শিশু কি নাবালক?যার কারণে রাসূল কেন তাদের মারতে বললেন।আমাকে বুঝিয়ে দিন।

৩|আমার উক্ত দ্বীনি ভাইয়ের বয়স যখন ৫/৬ তখন তিনি উনার সম বয়সী এক নারীর প্রতি ভালোবাসা অনুভব করেছিলেন,তবে অথটা গভীর নয় তবে পছন্দের নারীকে পাওয়ার বাসনা তার মনে ছিল।তবে তিনি তখন ও প্রেম কাকে বলে তা ভালোভাবে জানতেন না,তবে উনার মনে ওই বয়সেই কেমন করে ভালোবাসার ছোয়া অনুভব হলো তা তিনি জানেন না(আল্লাহই ভালো জানেন)। উনি যেহেতু ছেলেমেয়ে একই রুমে পড়া স্কুলে পড়েছিলেন তাই ঐই ৫/৬বছর বয়সে একটা সম ক্লাস রুমে মেয়েকে তিনি মনে মনে পছন্দ করতেন আর তাকে নিয়ে মনে মনে কল্পনা ও করতেন,
এখন উনার ও-ই ছোটকালে এমন চিন্তাভাবনা অনুযায়ী তিনি কি তখন ও নাবালক ছিলেন নাকি বালক হয়ে গিয়ে নামায ফরজ হয়ে গিয়েছিল?
আসলে যেহেতু তিনি ভুল করেছিলেন তাই তিনি এখন আল্লাহর কাছে তওবা করেছেন।

৪|আর উনার বালক হওয়ার বিষয়ের যতদূর তিনি জানেন তাহলো ২০১৭সালের দিকে উনার শরীর হতে,,,,, বের হয়"
এছাড়া তিনি আর কিছু মনে নেই।
তাহলে কি উনার বালক হওয়া ২০১৭সাল হতে ধরে নিতে হবে নাকি ৫/৬ বছর তথা ২০০৯/২০১০ সাল হতে হবে?

আমি আপনাদের নিকট স্পষ্ট ও যথাযথ উত্তর আশা করছি।
আল্লাহ আপনাদের উসিলায় সঠিক উত্তর দিতে সাহায্য করুক।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল লাহ্

1 Answer

0 votes
by (63,040 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

ছেলে বা মেয়ের বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হবার মূল নিদর্শন বীর্যস্খলন হওয়া। এটির প্রকাশক অনেক কিছুই হতে পারে। যেমন

 

১. ছেলে মেয়েদের সেটি স্বপ্নদোষের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে।

. ছেলেদের দাড়ি গোফ উঠা আর মেয়েদের স্তন বড় হওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে।

. মেয়েদের হায়েজ আসা, গর্ভধারণ করা ইত্যাদির মাধ্যমেও বালেগ হওয়া সাব্যস্ত হয়।

 

وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنكُمُ الْحُلُمَ [٢٤:٥٩]

 

তোমাদের সন্তান-সন্ততিরা যখন বায়োঃপ্রাপ্ত হয়, [সূরা আননূর-৫৯]

 

এইতো গেল নিদর্শন হিসেবে বালেগ হওয়া নির্ধারণ করা। যা নির্ধারণ করা খুবই সহজ। কিন্তু কথা হল, যদি নিদর্শন বুঝা না যায়,তাহলে বয়স হিসেবে কিভাবে বালেগ হওয়া নির্ধারণ করবে?

 

বয়সের ভিত্তিতে বালেগ ও নাবালেগ নির্ধারণে ফুক্বাহায়ে কেরামের মাঝে বিস্তর মতভেদ হয়ে গেছে। আসলে এটি নির্ণয় করা একটু দূঃরহ ব্যাপারও। কারণ সমাজ, পরিবেশ এবং রাষ্ট্রের আবহওয়ার ভিন্নতার কারণে মানুষের শারীরিক গঠনে, আচরণে ভিন্নতা দেখা দেয়। সেই হিসেবে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া না হওয়ার বিষয়টিও যেহেতু শরীরের সাথে অনেকটা সম্পর্কিত, তাই এটির বয়সসীমা নির্ধারণও বেশ দুঃসাধ্য বিষয়।

 

এ কারণেই ফুক্বাহায়ে কেরামের মাঝে বালেগ হবার বয়স নির্ধারণে মতভেদ হয়ে গেছে। যেমন- ক). সতের বছর। খ). পনের বছর। ইত্যাদি।

 

তবে প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্য হল, বালেগ হবার উপরোক্ত আলামতগুলো যদি কোন ছেলে বা মেয়ের মাঝে প্রকাশিত না হয়, তাহলে সন্তানের বয়স পনের বছর হলেই উক্ত ছেলে মেয়ে বালেগ হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।

عن ابن عمر رضي الله عنهما أنه عُرِض على النبي صلى الله عليه وسلم يوم أُحدٍ وله أربع عشرة سنة فلم يُجِزْه، وعُرِض عليه يوم الخندق وله خمس عشرة سنة فأجازه.

ইবনে উমর রাঃ উহুদের জিহাদে অংশ নেবার অনুমতি চাইলেন, তখন তার বয়স ছিল চৌদ্দ বছর। রাসূল সাঃ তাকে অনুমতি প্রদান করেননি। কিন্তু খন্দকের জিহাদের অংশ নিতে অনুমতি চাইলে অনুমতি দেয়া হয়, তখন তার বয়স ছিল পনের বছর। [আলআহাদ ওয়ালমাছানী, হাদীস নং-৭৪৬]

বুঝা গেল, শরীয়তের মুকাল্লাফ হতে হলে আর কোন আলামত না থাকলে বয়স হিসেবে কমপক্ষে পনের বছর হতে হয়। আল ইনায়া শারহুল হেদায়া ৮/২০১;আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৫৩;তাফসীরে কুরতুবী ১২/১৫১, -সহীহ বুখারী হাদীস : ২৬৬৪, ৪০৯৭; আললুবাব ফী শরহিল কিতাব ২/১৬।

 

হাদীস শরীফে এসেছে-

مروا أولادكم بالصلاة وهم أبناء سبع سنين واضربوهم عليها وهم أبناء عشر وفرقوا بينهم في المضاجع

অর্থ : তোমাদের সন্তানদেরকে নামাযের আদেশ দাও যখন তাদের বয়স সাত বছর হবে। আর দশ বছর বয়স হলে নামাযের জন্য তাদেরকে প্রহার কর এবং তাদের পরস্পরের বিছানা আলাদা করে দাও। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৯৫

 

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ عَلِيٍّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَشِبَّ وَعَنِ الْمَعْتُوهِ حَتَّى يَعْقِلَ " .

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির উপর থেকে দন্ডবিধি রহিত করে দেওয়া হয়েছে, ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, শিশু যতক্ষন না সাবালক হয়, বেহুশ ব্যক্তি যতক্ষণ না তার হুশ ফিরে এসেছে। - ইবনু মাজাহ ২০৪১, ২০৪২, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১৪২৩ [আল মাদানী প্রকাশনী]

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!


১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বালেগ হওয়ার পর থেকে যত নামাজরোজা করেনি সবগুলোর কাযা আদায় করবে। ৭ বছর বয়স বা ১০ বছর বয়স থেকে নয়। নিয়ত এভাবে করবে ‘আমি জীবনের সর্ব প্রথম ফজরের নামাজের কাযা আদায় করছি।’ আবার নিয়ত করবে ‘আমি জীবনের সর্ব প্রথম ফজরের নামাজের কাযা আদায় করছি।’ এভাবে সব ফজর নামাজগুলোর কাযা আদায় করবে। এভাবে নিয়ত করার কারণ হলো যখন সে জীবনের সর্ব প্রথম ফজরের নামাজের কাযা আদায় করে ফেলবে তখন অটোমেটিক জীবনের দ্বিতীয় ফজরের নামাজ প্রথমে হয়ে যাচ্ছে। এভাবে জহরআসরমাগরীবইশা ও বেতরের নামাজ কাযা আদায় করবে।

তেমনীভাবে রোজার নিয়ত করে কাযা আদায় করবে অর্থাৎ এভাবে নিয়ত করবে ‘আমি জীবনের সর্ব প্রথম রোজার কাযা আদায় করছি।’

২. ১০ বছর বয়সে বাচ্চা নামাজ না পড়লে এই জন্যে মারতে বলা হয়ে যাতে করে বালেগ হয়ে সে কোন নামাজ কাযা না করে এবং ছোট থেকেই যেনো নামাজ পড়ায় অব্যস্থ হয়ে যায়।

৩. যেহেতু সে ঐ সময় নাবালেগ ছিলো। তাই ঐ সময়ের গুনাহ ও খারাপ চিন্তা মাফ। সুতরাং এতে পেরেশানীর কোন কিছু নেই।

 ৪. বালেগ হওয়ার আলামত যেই বছর থেকে প্রকাশ পেয়েছে সেই বছর থেকে নামাজ, রোজা কাযা করবে।

(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

...