আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
502 views
in সালাত(Prayer) by (17 points)
edited by
জামাতে দাড়ানোর সময় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সামনে, তারপর অউরুষের জামাতের শেষে শিশু যারা আছে তারা, পরে হিজড়া/নপুংসক তারপর মহিলারা দাড়াবে, এই ক্রমের দলিল ভিত্তিক আলোচনা করলে ভালো হয়।

এটা কতটুকু ইসলাম সম্মত?

1 Answer

0 votes
by (657,800 points)
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم  

শরীয়তের বিধান হলো,জামাতের সাথে নামাজ আদায় কালে কাতারের স্তরবিন্যাস বিন্যাস হলোঃ
 প্রথমে পুরুষেরা দাড়াবে,(এখানে গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের কোনো অগ্রাধিকার নেই,সকল পুরুষই এক্ষেত্রে সমান অধিকার রাখে।)
পুরুষদের কাতারের পর শিশুদের কাতার হবে,(তবে শিশুদের সংখ্যা যদি কম হয়,তাহলে তাদেরকে পুরুষদের কাতারের মাঝে মাঝে দাড় করাবে।)
তারপর হিজরাদের কাতার হবে,তারপর মহিলাদের কাতার হবে।
(ফাতাওয়ায়ে হিকমত ১/১২৮)

হাদীস শরীফে এসেছে  
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا وَشَرُّهَا آخِرُهَا وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا.

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, পুরুষ লোকের কাতারসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম কাতার হল প্রথম কাতার এবং সর্বনিকৃষ্ট কাতার হল শেষ কাতার, আর স্ত্রীলোকের কাতারসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম কাতার হল শেষ কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হল প্রথম কাতার (মুসলিম, মিশকাত হা/১০৯২)।
,
,
ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছে   
ویصف الرجال ثم الصبیان ثم الخناثیٰ ثم النساء ۔ نور الایضاح فصل فی اللاحق بالامامہ ۔ قال الشامی علی قول الماتن ’’ ثم الصبیان ظاہر ہ تعدد ہم فلو واحداً أدخل الصف ۔ کذا لو کان المقتدی رجلاً وصبیاً یصفہما خلفہ بحدیث انسؓ۔ ۔ ۔ وہذا بخلاف المرأۃ الواحدۃ فانہا تتأخر کالمتعدّدات

ویقف الرجال ثم الصّبیان ظاہرہ تعدّدہم فلو واحداً أدخل الصف ۔ در مختار ص ۳۸۴ ج۱ بر حاشیہ شامی طبع مجتبائی باب الامامۃ
যার সারমর্ম হলো আগে পুরুষদের কাতার হবে,তারপর শিশুদের কাতার হবে,তারপর হিজড়াদের কাতার হবে,তারপর মহিলাদের কাতার হবে।   
,
★★তবে বর্তমান যামানায় শিশুদেরকে পুরুষদের কাতারের মাঝে মাঝে দাড় করাইতে হবে।
কারন এই সময়ে শিশুদের একসাথে এক কাতারে দাড় করাইলে মসজিদে হট্রগোল শুরু হয়ে যাবে,শিশুরা মারামারি,হাসাহাসি ইত্যাদি করবে,  তাই তাদেরকে পুরুষদের কাতারের মাঝে মাঝে রাখতে হবে।   

وفى تقريرات الرافعى- قال الرحمتى ربما يتعين فى زماننا ادخال الصبيان فى صفوف الرجال لأن المعهود منهم اذا اجتمع صبيان فاكثر فيبطل صلاة بعضهم ببعض وربما بعدى ضررهم الى افساد صلاة الرجال (رد المحتار-2/73  
যার সারমর্ম হলো বর্তমান যামানায় শিশুদেরকে পুরুষদের কাতারের মাঝে মাঝে দাড় করাবে।        
,

কাতারের ক্ষেত্রে বিস্তারিতঃ 
★ইমামের সাথে মাত্র একজন মুক্তাদী (পুরুষ বা শিশু) হলে উভয়ে একই সাথে সমানভাবে দাঁড়াবে; ইমাম বাঁয়ে এবং মুক্তাদী হবে ডানে। এ ক্ষেত্রে ইমাম একটু আগে এবং মুক্তাদী একটু পিছনে আগাপিছা হয়ে দাঁড়াবে না। ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে মহানবী (সাঃ) নিজের বরাবর দাঁড় করিয়েছিলেন। (বুখারী ৬৯৭নং) মৃত্যুরোগের সময় তিনি আবূ বাক্র (রাঃ)-এর বাম পাশে তাঁর বরাবর এসে বসেছিলেন। (ঐ ১৯৮নং)

নাফে’ রাঃ বলেন, ‘একদা আমি কোন নামাযে আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ)-এর পিছনে দাঁড়ালাম, আর আমি ছাড়া তাঁর সাথে অন্য কেউ ছিল না। তিনি আমাকে তাঁর হাত দ্বারা তাঁর পাশাপাশি বরাবর করে দাঁড় করালেন।’ (মালেক, মুঅত্তা ১/১৫৪) অনুরুপ বর্ণিত আছে হযরত উমার (রাঃ) কর্তৃকও।

এ জন্যই ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে উক্ত বিষয়ক পরিচ্ছেদ বাঁধার সময় বলেন, ‘দুজন হলে (মুক্তাদী) ইমামের পাশাপাশি তার বরাবর ডান দিকে দাঁড়াবে।’ (বুখারী ৬৯৭, )

জ্ঞাতব্য যে, একক মুক্তাদীর ইমামের ডানে দাঁড়ানো সুন্নত বা মুস্তাহাব। অর্থাৎ, যদি কেউ ইমামের বামে দাঁড়িয়ে নামায শেষ করে, তাহলে ইমাম-মুক্তাদী কারো নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৭৫,:)

★ মুক্তাদী ২ জন বা তার বেশী (পুরুষ) হলে ইমামের পশ্চাতে কাতার বাঁধবে।

জাবের (রাঃ) বলেন, একদা মহানবী (সাঃ) মাগরেবের নামায পড়ার জন্য দাঁড়ালেন। এই সময় আমি এসে তাঁর বাম দিকে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে তাঁর ডান দিকে দাঁড় করালেন। ইতিমধ্যে জাব্বার বিন সাখার (রাঃ) এলেন। তিনি তাঁর বাম দিকে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি আমাদের উভয়ের হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে তাঁর পশ্চাতে দাঁড় করিয়ে দিলেন। (মুসলিম,  আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ১১০৭নং)

উল্লেখ্য যে, দুই জন মুক্তাদী যদি ইমামের ডানে-বামে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে তাহলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৭০) নামায হয়ে যাবে, কারণ ইবনে মাসঊদ আলক্বামাহ্ ও আসওয়াদের মাঝে দাঁড়িয়ে ইমামতি করেছেন এবং তিনি নবী (সাঃ)-কে ঐরুপ দাঁড়াতে দেখেছেন। (আবূদাঊদ, ) অবশ্য মহানবী (সাঃ)-এর সাধারণ সুন্নাহ্ হল, তিন জন হলে একজন সামনে ইমাম এবং দুই জনের পিছনে কাতার বাঁধা। পক্ষান্তরে আগে-পিছে জায়গা না থাকলে তো এক সারিতে দাঁড়াতে বাধ্যই হবে।

★ মুক্তাদী একজন মহিলা হলে (সে নিজের স্ত্রী হলেও) ইমাম (স্বামীর) পাশাপাশি বরাবর না দাঁড়িয়ে তার পিছনে দাঁড়াবে। (আদাবুয যিফাফ,)

★ মুক্তাদী দুই বা ততোধিক পুরুষ হলে এবং একজন মহিলা হলে, ইমামের পিছনে পুরুষরা কাতার বাঁধবে এবং মহিলা সবশেষে একা দাঁড়াবে।

একদা হযরত আনাস (রাঃ)-এর ঘরে আল্লাহর রসূল (সাঃ) ইমামতি করেন। আনাস (রাঃ) ও তাঁর ঘরের এক এতীম দাঁড়ান নবী (সাঃ)-এর পিছে এবং তাঁর আম্মা দাঁড়ান তাঁদের পিছে (একা)। (বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত ১১০৮-১১০৯নং)

★ মুক্তাদী একজন শিশু ও একজন বা একাধিক পুরুষ হলে শিশুও পুরুষদের কাতারে শামিল হয়ে দাঁড়াবে।

★ মুক্তাদী দুই বা দুয়ের অধিক পুরুষ, শিশু ও মহিলা হলে, ইমামের পিছনে পুরুষরা, অতঃপর শিশুরা এবং সবশেষে মহিলারা কাতার বাঁধবে।
হাদীস শরীফে এসেছে  
মহানবী (সাঃ) বলেন, “পুরুষদের শ্রেষ্ঠ কাতার হল প্রথম কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হল সর্বশেষ কাতার। আর মহিলাদের শ্রেষ্ঠ কাতার হল সর্বশেষ কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হল প্রথম কাতার।” (মুসলিম,  আহমাদ, মুসনাদ, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্), মিশকাত ১০৯২নং)
۔
★ ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেছেন, নামাযের কাতারে প্রথমে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষরা থাকবে। আর পিছনে থাকবে শিশুরা। কিন্তু তারা একসাথে থেকে দুষ্টুমি করার সম্ভাবনা থাকলে তাদের বড়দের কাতারের মাঝখানে মাঝখানে দাঁড় করাবে।
শিশুদের নামাযের প্রশিক্ষণের জন্য মসজিদে নিয়ে আসা উচিত। তবে খেয়াল রাখা উচিত দুষ্টুমি করে যেন অন্যদের নামাযের বিঘ্ন না ঘটায়।
فى رد المحتار- ويصح الرجل ثم الصبيان ظاهرة تعددهم فلو واحد دخل الصف (ردالمحتار-2/312-313

★কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে  শিশু ছেলেদের পৃথক কাতার করার কোন যুক্তি নেই। তাই শিশু ছেলেরাও পুরুষদের সঙ্গে কাতার করতে পারে। (তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২৮৪পৃ:)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
জাজাকুমুল্লাহ। একদম খোলাসা হয়ে গেছে। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 64 views
...