আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
4,492 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (37 points)
السلام عليكم ورحمة الله

উস্তাদ,

জুলুম কী, এর প্রকারভেদ, সকল প্রকার জুলুম চেনার উপায়, মনের অজান্তে কারো প্রতি জুলুম হলে করনীয় কী, দৈনন্দিন যেসব সূক্ষ সূক্ষ কথা- কাজেও জুলুম পাওয়া যায় যেগুলো জুলুম মনে করা হয় না অথচ জুলুম,সেগুলোর যথাসম্ভব উদাহরণ যাতে বুঝে সেগুলো থেকে বাঁচা যায় ইনশা আল্লাহ।

جزاك الله خيرا

1 Answer

0 votes
by (687,520 points)
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

জুলুম একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো নির্যাতন বা অবিচার। 
জুলুমের বিভিন্ন স্তর ও ক্ষেত্র রয়েছে। বুনিয়াদিভাবে (মৌলিকভাবে) কাউকে প্রাপ্য অধিকার না দেওয়াই জুলুম। সেটা আল্লাহর ক্ষেত্রে হতে পারে। যেমন, শিরক করা। আল্লাহর অবাধ্য হওয়া। আবার বান্দার ক্ষেত্রেও হতে পারে। যেমন কারো অধিকার নষ্ট করা।

সাধারণ অর্থে কাউকে অন্যায়ভাবে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক বা যেকোনো পন্থায় অবিচার বা নির্যাতন করাকে জুলুম বলে। তবে জুলুমের সবচেয়ে উত্তম সংজ্ঞা হলো, কোনো কিছু নিজ স্থান বাদ দিয়ে অন্য কোনো স্থানে প্রয়োগ করা বা রাখা। এই সংজ্ঞাটি ব্যাপক অর্থবহ। সব ধরনের জুলুম এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
,
★জুলুম কাকে বলে? ما معنى الظلم

والظلم هو وضع الشيء في غير محله باتفاق أئمة اللغة

ভাষা বিদদের ঐক্যমতে কোন বস্তুকে তার আসল স্থানে না রেখে অন্য স্থানে রাখার নাম হচ্ছে জুলুম।

★জুলুমের প্রকারভেদঃ أنواع الظلم

জুলুম প্রথমত তিন প্রকার।

১) আল্লাহর এবাদতের ক্ষেত্রে জুলুমঃ الظلم في العبادة

মানুষের উপর আবশ্যক হল তারা তাদের সকল এবাদকে সঠিক স্থানে রাখবে তথা এককভাবে আল্লাহর এবাদত করবে। কিন্তু অনেক মানুষ তা না করে তাঁর এবাদতে এমন এমন বস্তুকে শরীক করে থাকে, যা এবাদত পাওয়ার কোন অধিকারই রাখে না। যেমন মূর্তি, গাছ, পাথর, অলী-আওলীয়া ইত্যাদিকে মানুষ আল্লাহর সাথে শরীক নির্ধারণ করে থাকে। আমাদের বাংলাদেশসহ আরও অনেক মুসলিম দেশের মাজারগুলোতে যে ধরণের শির্কের বাজার জমে উঠেছে, তা সুস্পস্ট ও বিরাট একটি জুলুম। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ

নিশ্চয়ই শিরক একটি বিরাট জুলুম। (সূরা লুকমানঃ ১৩)

২) বান্দা কর্তৃক তার নফসের উপর জুলুমঃ ظلم الإنسان لنفسه 

মানুষ তার কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে নানা অপরাধ ও পাপকাজে লিপ্ত হয় এবং তাঁর প্রভুর নির্ধারিত সীমা লংঘন করে থাকে। সেই সাথে তারা ওয়াজিব ও ফরজ এবাদতগুলো পালনে অলসতা করে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

وَمَا ظَلَمَهُمُ اللّهُ وَلـكِن كَانُواْ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ

আর আল্লাহ তাদের উপর জুলুম করেন নি। কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করতো। (সূরা নাহলঃ ৩৩)

৩) আল্লাহর সৃষ্ট ও তাঁর বান্দাদের উপর মানুষের জুলুমঃ ظلم الإنسان لغيره من عباد الله ومخلوقاته

এই প্রকারের জুলুম হয়ে থাকে অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করা, মারপিট, গালিগালাজ ইত্যাদির মাধ্যমে। সাধারণত সমাজের দুর্বল ও অসহায়দের উপরই এ প্রকারের জুলুম বেশী হয়ে থাকে।

বান্দার পারস্পরিক জুলুমের কিছু নমুনাঃ صور من ظلم الإنسان لغيره من عباد الله ومخلوقاته

ক) কারও যমিন অন্যভাবে জবর দখল করাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

مَنْ ظَلَمَ قِيدَ شِبْرٍ مِنَ الْأَرْضِ طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرَضِينَ

“যে ব্যক্তি কারো অর্ধহাত জমিন জবরদখল করবে কিয়ামত দিবসে তার গলায় সাতটি যমিন ঝুলিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

খ) অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করাঃ 
,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আমি কিয়ামতের দিন তোমাদের কাউকে এমন অবস্থায় দেখতে চাইনা যে, সে ঘাড়ে একটি চিৎকাররত ছাগল কিংবা ঘোড়া বহন করছে। সে আমাকে ডেকে বলছেঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করুন!! তখন আমি বলবঃ আমি তোমার কোন উপকার করতে পারবোনা। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি এবং তোমাদের কাছে আল্লাহর দ্বীন পৌঁছিয়ে দিয়েছি। তোমাদের কেউ যেন কিয়ামতের দিন গলায় এমন একটি উট ঝুলন্ত অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাৎ না করে যে উটটি আওয়াজ করতে থাকবে। সে বলবেঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন!! আমি তখন বলবঃ আমি তোমার কোন উপকার করতে পারবনা। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি এবং তোমাদের কাছে আল্লাহর দ্বীন পৌঁছিয়ে দিয়েছি। তোমাদের কেউ যেন কিয়ামতের দিন গলায় স্বর্ণ-রৌপ্য ঝুলন্ত অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাৎ না করে। সে বলবেঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন!! তখন আমি বলবঃ আমি তোমার কোন উপকার করতে পারবোনা। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি এবং তোমাদের কাছে আল্লাহর দ্বীন পৌঁছিয়ে দিয়েছি। তোমাদের কেউ যেন কিয়ামতের দিন গলায় কাপড়ের বোঝা ঝুলন্ত অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাৎ না করে। সে বলবেঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন!! তখন আমি বলবঃ আমি তোমার কোন উপকার করতে পারবনা। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি এবং তোমাদের কাছে আল্লাহর দ্বীন পৌঁছিয়ে দিয়েছি”। (বুখারী)

গ) বিনা কারণে কোন প্রাণীকে কষ্ট দেয়াঃ বিনা প্রয়োজনে কোন প্রাণী হত্যা করাও জুলুম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

عُرِضَتْ عَلَيَّ النَّارُ فَرَأَيْتُ فِيهَا امْرَأَةً مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ تُعَذَّبُ فِي هِرَّةٍ لَهَا رَبَطَتْهَا فَلَمْ تُطْعِمْهَا وَلَمْ تَدَعْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الْأَرْضِ

“আমার কাছে জাহান্নামকে পেশ করা হল। তাতে দেখলাম বনী ইসরাঈলের একটি মহিলাকে একটি বিড়াল হত্যা করার অপরাধে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। উক্ত মহিলা বিড়ালটিকে বেধে রাখত। সে নিজেও বিড়ালকে কোন কিছু খেতে দেয়নি এবং যমিন থেকে পোকা-মাকড় ধরে খাওয়ার জন্য ছেড়েও দেয়নি। এভাবে ক্ষুধার তাড়নায় বিড়ালটি মৃত্যু বরণ করল।

ঘ) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করাঃ মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا

“যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করে নিশ্চয় তারা স্বীয় উদরে অগ্নি ব্যতীত কিছুই ভক্ষণ করে না এবং সত্বরই তারা প্রজ্বলিত অগ্নিতে প্রবেশ করবে”। (সূরা নিসাঃ ১০)

ঙ) বিনা কারণে কাউকে হত্যা তরা, সুদ খাওয়া, মিথ্যা অপবাদ দেয়া ইত্যাদিঃ যারা বিনা কারণে এবং আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

اجْتَنِبُوْاالسَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللَّهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ

“তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় হতে বিরত থাকবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন সেগুলো কি কি? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা হলো (১) আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা (২) যাদু করা (৩) আল্লাহ তা’আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা (৬) যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করা (৭) সতী-সাধ্বী মু’মিন মহিলার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়া”।

এমনিভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, মানুষকে কষ্ট দেয়া, চুরি করা, কারও নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়া, শ্রমিকের অধিকার নষ্ট করা, আমানতের খেয়ানত করা, মানুষের গিবত করা, মানুষের সাথে ধোঁকাবাজি করা, ওয়াদা-অঙ্গিকার ভঙ্গ করাসহ আরও অসংখ্য জুলুম রয়েছে, যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।

★রাষ্ট্রীয়ভাবে জুলুমঃ ظلم الحكومات

বর্তমান কালে যে জুলুমটি দিবালোকের মত সুষ্পষ্ট ও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, তা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে জুলুম। এ ক্ষেত্রে আমরা মুসলিম রাষ্ট্র প্রধান বা সরকারের পক্ষ হতে জন সাধারণের উপর যে জুলুম হচ্ছে তার কিছু উদাহরণ পেশ করার চেষ্টা করবো।

যুগে যুগে অনেক জালেম সরকার বা রাষ্ট্র নায়ক পৃথিবীর বুকে আগমণ করেছে। তাদের প্রত্যেকেই করুণ ও ভয়াবহ পরিণতির শিকার হয়ে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ফেরাউন ভেবেছিল সে দুর্বলের উপর জুলুম করে চিরস্থায়ী হতে পারবে। কিন্তু সে আল্লাহর পাকড়াও হতে রেহাই পায় নি। কুরআন বলছে, সকাল-বিকাল ফেরাউন সম্প্রদায়ের সামনে জাহান্নামের আযাব পেশ করা হয়। কিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ করা হবে।

নমরুদ তাই ভেবেছিল। সেও একই ভাবে পৃথিবী হতে বিদায় নিয়েছে। এমনি আরও অনেক সৈরাচার পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে আল্লাহর বান্দাদেরকে কষ্ট দিয়ে শেষ রক্ষা পায়নি।
,
★★দৈনন্দিন যেসব সূক্ষ সূক্ষ কথা- কাজেও জুলুম পাওয়া যায় যেগুলো জুলুম মনে করা হয় না অথচ জুলুম,সেগুলোঃ
মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, মানুষকে কষ্ট দেয়া, চুরি করা, কারও নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়া, শ্রমিকের অধিকার নষ্ট করা, আমানতের খেয়ানত করা, মানুষের গিবত করা, মানুষের সাথে ধোঁকাবাজি করা, ওয়াদা-অঙ্গিকার ভঙ্গ করা। বিনা কারণে কোন প্রাণীকে কষ্ট দেয়া,
ইত্যাদি ইত্যাদি,,,, 
,  
জুলুম একটি সামাজিক ব্যাধি। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এটি। অন্যের ওপর অন্যায় বা অবিচার করে নিজের পতন ও ধ্বংস ডেকে আনে জালিমরা। আপদ-বিপদ ও দুর্যোগ-বিশৃঙ্খলায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো জুলুম। 
,
তাই আল্লাহ তাআলা সবাইকে তা থেকে নিষেধ করেছেন। এমনকি আল্লাহ নিজের জন্যও এটিকে হারাম করেছেন। 
রাসুল (সা.) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘
يا عبادي إني حرمت الظلم على نفسي وجعلته بينكم محرماً، فلا تظالموا
হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)
,
আল্লাহ তাআলা সবাইকে ন্যায়পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো মানবজীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায়পন্থা, অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়দের হক প্রদানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে নিষেধ করেন।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০)
,
মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বিত্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন, নিপীড়ন করে। ফলে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে নেমে আসে নানা বিপদ-আপদ। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)।
,
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ২২৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৭)
,
পবিত্র কুরআন ও রাসূলের সুন্নাতে জুলুমকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তার সাথে আবার জুলুমের নিন্দাও করা হয়েছে এবং এর ভয়াবহ পরিণামের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।


রাসূল (সাঃ) আরও বলেনঃ

أتقوا الظلم فإن الظلم ظلمات يوم القيامة
তোমরা জুলুম থেকে বিরত থাকো। কেননা কিয়ামতের দিন জুলুমের পরণিাম হবে খুবই অন্ধকার। (মুসলিম)


★জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। 
জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১১)
,
সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ৪১)
,
মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)
,
রাসুল (সা.) আরো বলেন,

اتقوا دعوة المظلوم وإن كان كافراً؛ فإنه ليس دونها حجاب

 ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’  (বুখারি, হাদিস : ১৪৯৬)

আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ

وَلاَ تَحْسَبَنَّ اللّهَ غَافِلاً عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الأَبْصَارُ مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لاَ يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاء

জালেমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ্কে কখনও বেখবর মনে করো না। তাদেরকে তো ঐ দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুসমূহ অবনত হবে। তারা মস্তক উপরে তুলে ভীত-বিহ্বল চিত্তে দৌড়াতে থাকবে। তাদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরে আসবে না এবং তাদের অন্তর উড়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীমঃ ৪২-৪৩)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ
আর তোমার পরওয়াদেগার যখন কোন জুলুমপূর্ণ জনপদকে ধরেন, তখন এমনিভাবেই ধরে থাকেন। নিশ্চয় তার পাকড়াও খুবই মারাত্মক, বড়ই কঠোর। (সূরা হুদঃ ১০২)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنقَلَبٍ يَنقَلِبُونَ
জালেমরা শীঘ্রই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল কিরূপ? (সূরা শুআরাঃ ২২৭)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 127 views
...