আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
7,412 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (5 points)
আসসালামু আ'লাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ উস্তাদ।
আমার এক পরিচিত ব্যক্তি প্রথম বিবিকে তালাক দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। স্বামীর প্রথম ঘরে সন্তান আছে। দ্বিতীয় বিয়েটা বেশিদিন টিকে নি। পরে পরিবার পরিজন সবাই আবার বুঝিয়ে শুনিয়ে প্রথম বিবিকে ফিরিয়ে নিয়ে ঘর সংসার করছেন। উল্লেখ্য প্রথম বিবির ইত্যবসরে অন্যত্র বিয়ে হয়নি। আমার জানামতে এই অবস্থায় প্রথম বিবিকে গ্রহণ করা যায় না।
আমার জানার বিষয়ঃ
১। শরীয়তের আলোকে কি প্রথম বিবিকে ফিরিয়ে আনা সঠিক হয়েছে ?

২। ২য় বার ফিরিয়ে আনার পর এই ঘরে সন্তানও আছে। এই সন্তানের হুকুম কি হবে?

উস্তাদ একটু বিস্তারিতভাবে বলে ও উক্ত ব্যক্তিকে কিভাবে এই মাসআলা হেকমতের সাথে পোছাতে পারি তার দিক নির্দেশনা দিলে উপক্রত হব।

মোঃ মাহমুদ হোসেন

স্টুডেন্ট নংঃ ১৯০১০৫০

1 Answer

0 votes
by (657,800 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

শরীয়তের বিধান হলো এক তালাক,বা দুই তালাক দিলে ঐ স্ত্রীকে পুনরায় ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী ফিরিয়ে নেওয়া যায়।
তবে তিন তালাক দিয়ে থাকলে তাকে আর ফিরিয়ে নেওয়া যায়না। 

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ক্ষেত্রে জানার বিষয় হলো উক্ত ব্যাক্তি তার ১ম স্ত্রীকে কয় তালাক দিয়েছিলো।
যদি এক তালাক বা দুই তালাক দিয়ে থাকে,তাহলে 
শরীয়তের  বিধান হল, দুই তালাক বা এক তালাক দেয়ার পর স্বামীর অধিকার থাকে, স্ত্রীকে ইদ্দত তথা তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে রাজআত করা তথা স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে আনা। এতে কোন কিছুর প্রয়োজন নেই।

 কিন্তু যদি তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে স্ত্রীকে ফিরিয়ে না আনা হয়, তাহলে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে নতুন করে মোহর ধার্য করে বিবাহ করা আবশ্যক। নতুবা স্বামী স্ত্রী হিসেবে উভয়ের বসবাস করা জায়েজ নয়। (ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ-৯/৪৪১,২৪৫)

আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلاَثَةَ قُرُوَءٍ وَلاَ يَحِلُّ لَهُنَّ أَن يَكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللّهُ فِي أَرْحَامِهِنَّ إِن كُنَّ يُؤْمِنَّ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَبُعُولَتُهُنَّ أَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِي ذَلِكَ إِنْ أَرَادُواْ إِصْلاَحًا
আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহর প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষণ করে। (সূরা বাকারা ২২৮)
★★সুতরাং যদি এক বা দুই তালাক  দিয়ে থাকে,আর প্রথম স্ত্রীর যদি তিন হায়েজ অতিক্রম করার আগেই উক্ত ব্যাক্তি তাকে ফিরিয়ে নিয়ে থাকে,তাহলে তাদের এই ঘর সংসার বৈধ হচ্ছে। 
নতুন করে কিছুই করার প্রয়োজন নেই।
২য় বার ফিরিয়ে আনার পর তাদের এই সন্তান বৈধ সন্তান।    
,
আর যদি তিন হায়েজ অতিক্রম করার পর ১ম স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনে,তাহলে তাদেরকে আবার নতুন করে বিবাহ পড়িয়ে নিতে হবে,নতুবা তাদের ঘর সংসার অবৈধ তথা যেনা হবে।   

,
কিন্তু যদি উক্ত ব্যাক্তি তার ১ম স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে থাকে,তাহলে তাদের আর একত্রে ঘর সংসার করার কোনো ছুরত নেই।
এটা সম্পুর্নভাবে নাজায়েজ হারাম।
সম্পুর্নরুপে যেনা,সন্তাটিও অবৈধ সন্তান হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
,
★তিন তালাকের বিস্তারিত মাসয়ালাঃ 

এক শব্দে,বা এক বৈঠকে তিন তালাক দেওয়া কিংবা বিভিন্ন সময় তালাক দিতে দিতে তিন পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া একটি জঘণ্য অপরাধ ও ঘৃণিত কাজ। 

আল্লাহ তাআলা এর শাস্তি হিসেবে এই বিধান দিয়েছেন যে, তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পুনরায় একসাথে বসবাস করতে চাইলে স্ত্রীর ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর অন্যত্র তার বিয়ে হওয়া এবং সে স্বামীর সাথে তার মিলন হওয়া অপরিহার্য। এরপর কোনো কারণে সে তালাকপ্রাপ্তা হলে কিংবা স্বামীর মৃত্যু হলে ইদ্দত পালনের পর এরা দু’জন পরস্পর সম্মত হলে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।

প্রমাণ–
وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাযি. এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো, তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। (সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩)


হযরত হারুন ইবনে আনতারা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেছেন, আমি একদিন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. এর নিকট বসা ছিলাম। ইতিমধ্যে এক লোক এসে বলল, সে তার স্ত্রীকে এক বারেই একশো তালাক দিয়েছে। সে জানতে চাইল, এতে কি এক তালাক গণ্য হবে নাকি তিন তালাক গণ্য হবে? আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বললেন, তিন তালাক কার্যকর হয়ে তোমার স্ত্রী তোমার থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আর বাকি সাতানব্বই তালাকের গুনাহ তোমার উপর বর্তাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা আসার নং ১৮১০১)

উপরোক্ত হাদীস ও আসার থেকে বিষয়টি সুপ্রমাণিত যে. এক সাথে তিন তালাক দিলে (যেমন আপনার উক্ত আত্মীয় দিয়েছেন) তিন তালাকই হবে । এক তালাক নয়।

এজন্যই বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনুল হুমাম রহ. (মৃত.৬৮১হি.) আলোচ্য মাসআলাটি যে সাহাবাযুগ থেকেই অবিসংবাদিত তা উল্লেখ করার পর লিখেছেন- (তরজমা) “আর এ জন্যই যদি কোন (শরয়ী) আদালতের বিচারক এই সিদ্ধান্ত দেয় যে, এক সাথে তিন তালাক দিলে এক তালাক হয়, তাহলে তার ফায়সালা গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা বিষয়টিতে নতুন ইজতিহাদ ও সিদ্ধান্তের কোন সুযোগ নেই। সুতরাং নতুন কোন সিদ্ধান্ত দেয়া হলে তা শরীয়তসম্মত ‘মতপার্থক্য’ নয়; শরীয়ত গর্হিত ‘বিচ্ছিন্নতা’ হিসাবেই গণ্য হবে।”

আর তিন তালাক হয়ে গেলে বিধান কী- এসম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। (সূরা বাকারা-২৩০)

এ মর্মে হাদীস শরিফে এসেছে,
আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বরণিত, রাফায়ার স্ত্রী বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার স্বামী রাফায়া আমাকে এক সাথে তিন তালাক দিয়েছে? এরপর আমি আব্দুর রাহমানের সাথে বিবাহ করেছি। এখন রাফায়ার কাছে যেতে পারবো কিনা? নবীজী বললেন, আবদুর রহমান তোমার সাথে সহবাস করলে এরপর রাফায়ার নিকট যেতে পারবে। (সহীহ বুখারী ৫২৬১)

সম্মানিত দীনি ভাই, সুতরাং আপনার উক্ত পরিচিত ব্যাক্তি যদি ১ম স্ত্রীকে তিন তালাকই দিয়ে থাকে, তাহলে তার জন্য আবশ্যক হল, এখনি স্বামী স্ত্রী আলাদা হয়ে যাওয়া। যেহেতু তিন তালাকের মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং এখন একসাথে থাকা জিনার গোনাহ হচ্ছে।

এখন নিয়ম মাফিক  স্ত্রীর যদি অন্যত্র বিয়ে হয়, তারপর কোন  কারণে দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তারপর ইদ্দত শেষে উক্ত মহিলাকে আপনার উক্ত আত্মীয় দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারবেন। এছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।
,

মহিলা দ্বিতীয় বিয়ে ব্যতীত আবার ঐ স্বামীর সাথে সংসার স্থাপন করলে সেটা বৈধ হবে না।
এক্ষেত্রে সর্বদাই ব্যভিচারের গোনাহ হবে।
আর বিবাহিত পরুষ বা মহিলা কর্তৃক ব্যভিচার প্রমাণিত হলে এর শাস্তি হল,পাথর মেরে হত্যা করা।তবে এ দায়িত্ব সরকারের জনগণের নয়।
আর আখেরাতে তো রয়েছে এর জন্য  ভয়ঙ্কর শাস্তি।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (0 points)
খোলা তালাকের পর নতুন করে বিবাহ করলে স্বামী কত তালাকের মালিক হবে,,,

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...