আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
89 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (14 points)
আসসালামু আলাইকুম।

প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন।

আমি হারাম রিলেশনে লিপ্ত ছিলাম,,,আল্লাহ হঠাৎ হিদায়াত দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ।। কিন্তু দীনের বুঝ তখন খুব কম ছিলো তাই হারাম রিলেশন থেকে বের হয়ে আসতে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ইজাব-কবুলের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করেছিলাম। বিবাহে কোনো মোহর ধার্য করা হয়নি।।
বিবাহের পরে আমার স্ত্রী শরীয়াহ সম্মত ভাবে সকল ফরজ বিধান মেনে চলত,, নামাজ,পর্দা সব করত।। এভাবে ২ বছর গেছে। কিন্তু সে এখন পুরোপুরি ইসলাম থেকে ছিটকে গেছে,,,পর্দা করে না,,নামাজ ঠিক ভাবে পরে না।। কয়েক মাস বুঝাইছি,,সবর করছি তাও ইসলামে ফিরে আসে নি।
এখন সে নিজে থেকে তালাক চায়,,, আমিও মনে করি তালাক দিয়ে দেওয়াটা ২ জনের জন্যই ভালো,, কোনো বোঝাপরা নাই এখন আর এই সম্পর্কে, স্বামীর সম্মান বলতে কিছুই পাই না ১ বছর থেকে।।
১.প্রশ্ন ঃ বিয়ের সময় মোহর নির্ধারন করা হয়নি,,,এখন কিভাবে আদায় করব??

২. তাকে অনেক প্রকারের দামী গিফট দিছি,,,তার সম্মতিক্রমে সেই গিফটগুলোকে একত্রে কি মোহরানা হিসেবে ধরা যাবে? সে তালাক নিতে এতোটাই ব্যকুল যে সেই গিফটগুলো যদি মোহরানা হিসেবে ধরা যায় তাহলেও তার আপত্তি নাই।

৩. মোহরানা নিয়ে একদিন তার সাথে কথা বলার সময় সে বলেছিলো মোহরানা দিতে হবে না মাফ করে দিলাম।। এতে কি মাফ হয়ে গেছে??

৪. আমি স্টুডেন্ট, এক সময় অনেক টাকা থাকলেও এখন আমার সামর্থ নেই,,মোহরানা যদি মাফ না হয়ে থাকে তাহলে সর্বনিম্ন কতো টাকা দিয়ে মোহরানা আদায় করতে পারব?

জাযাকাল্লাহ খাইরান।

1 Answer

0 votes
by (63,440 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

বিয়ের রুকুন হল,ইজাব এবং কবুল।আর বিয়ের শর্ত হল,দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতি। সুতরাং যদি দুইজন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার উপস্থিতিতে ইজাব এবং কবুল পাওয়া যায়,তাহলে বিয়ে সম্পাদন হয়ে যায়। তখন মহরে মিছিল ওয়াজিব হয়।

মহরে মিছিল বলে, পাত্রীর সমবয়স্কা সমপরিমাণ সুন্দর ও শিক্ষিত বোন বা মা, খালা কিংবা পাড়াপ্রতিবেশীর কোনো মেয়ের সমপরিমাণ মহর।

সর্বনিম্ন মহর কত হওয়া প্রয়োজন?

এমন এক প্রশ্নের জবাবে আমরা বলেছি,

বিবাহের সর্বনিম্ন মহর দশ দিরহাম।

০১ দিরহাম=৩.০৬১৮ গ্রাম।

১০*৩.০৬১৮= ৩০.৬১৮ গ্রাম রূপা।অর্থাৎ দুই তোলা সাড়ে সাত মাশা।

বর্তমানে প্রতি তোলা রূপার মূল্য ১২০০/- টাকা।

১০(১০*১২০০)দিরহামের মূল্য দাঁড়ায় ৩,১৫০/- টাকা।

এটা হলো প্রত্যেক মহিলার জন্য শরীয়তের পক্ষ্য থেকে সর্বশেষ নির্ধারিত মহর।যাকে শরীয়তের হক বলা হয়ে থাকে।এর চেয়ে কম মহর নির্ধারণ করা যাবে না।সুতরাং বর্তমান হিসেব অনুযায়ী ৩,১৫০ টাকা এর নিম্নে মহর নির্ধারণ করা যাবে না।

১০দিরহামের কম মহরের উপর স্ত্রী সন্তুষ্ট থাকলেও শরীয়ত মহিলার উপর মহরে মিছিল ওয়াজিব করবে।

** মোহর মূলত একটি সম্মানী  যা স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়ে থাকে, যার মূল উদ্দেশ্যই হল নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া। এটা শুধু কথার কথা নয়, যা শুধু ধার্য করা হয়, পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা থাকে না; বরং শরীয়তের উদ্দেশ্য হল যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীকে ঘরে আনবে তখন তাকে মর্যাদার সাথে আনবে এবং এমন কিছু উপহার দিবে, যা তাকে সম্মানিত করে।

 

শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা এতটাই অপরিহার্য যে, মোহর ছাড়া বিয়ে হয় না। আকদের সময় উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেওয়ার শর্ত করলেও মোহর বাতিল হয় না। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন-

فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

অতএব তাদের নিকট থেকে তোমরা যে আনন্দ উপভোগ করেছ (সে কারণে) তাদের ধার্যকৃত মোহর তাদেরকে প্রদান করবে। আর মোহর নির্ধারিত থাকার পরও কোনো বিষয়ে পরস্পর সম্মত হলে তাতে তোমাদের কোনো অপরাধ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা : ২৪)

অন্যত্র তিনি বলেন-

وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا

এবং তোমরা নারীদেরকে দাও তাদের মোহর খুশিমনে। এরপর তারা যদি স্বেচ্ছায় স্বাগ্রহে ছেড়ে দেয় কিছু অংশ তোমাদের জন্য তাহলে তা স্বচ্ছন্দে ভোগ কর।(সূরা নিসা : ৪)

দুই. উক্ত আয়াতদ্বয় থেকে কিছু বিষয় প্রমাণিত হয়। তন্মধ্যে অন্যতম হল-

১. মোহর আদায় করা ফরয। কেননা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা মোহর আদায়ের আদেশ করেছেন। সুতরাং স্বামীর কর্তব্য যথাযথভাবে মোহর পরিশোধ করা।

২. মোহর যদিও একটি মধুর লেনদেন এবং ঐভাবেই তা আদায় করা উচিত, তবে তা নিছক উপহার নয় যে, ইচ্ছা হলে দেওয়া যায়, ইচ্ছে হলে বিরত থাকা যায়; বরং তা হল স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার। স্ত্রী যেমন প্রীতি ও ভালবাসার সাথে নিজেকে অর্পণ করেছে, স্বামীরও কর্তব্য সম্মান ও মর্যাদার সাথে তার মোহর আদায় করা। অতএব, মোহরের উপর নারীর অধিকার সাব্যস্ত হওয়ার পর তা পরিশোধ না করা, কিংবা অন্যায়ভাবে ফেরত নেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ ও হারাম।

৩. স্ত্রী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয় কিংবা গ্রহণ করার পর স্বামীকে উপহার দেয় তাহলে স্বামী তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করতে পারবে। পূর্ণ মোহর ছেড়ে দেওয়ার বা পূর্ণ মোহর স্বামীকে উপহার দেওয়ারও অধিকার স্ত্রীর রয়েছে, তবে সাধারণ অবস্থায় পূর্ণ মোহর না দিয়ে কিছু অংশ দেওয়াই ভালো।

৪. স্ত্রীর মোহর ফাঁকি দেওয়া অতি হীন কাজ। কারণ এর অর্থ দাঁড়ায়, ভোগ করতে রাজি, কিন্তু বিনিময় দিতে রাজি নয়। যে স্বামীর মনে স্ত্রীর মোহর আদায়ের ইচ্ছাটুকুও নেই হাদীস শরীফে (মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/৫২২-৫২৩)  তাকে বলা হয়েছে ‘ব্যাভিচারী’।

৫. স্বামী যদি চাপ দিয়ে বা কৌশলে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশ মাফ করিয়ে নেয় তাহলে আল্লাহর বিচারে তা মাফ হবে না। (দেখুন-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৫৭-৫৮; তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/৪৪২; বয়ানুল কুরআন ২/৯৩; তাফসীরে উছমানী, পৃ. ১০০)

তিন. কারো মনে হতে পারে, জীবনে তো কত কিছুই স্ত্রীকে দিয়েছি। সবকিছু তো আমার উপর অপরিহার্যও ছিল না। সুতরাং বিয়ের সময় সামান্য যে কটি টাকা ধার্য করা হয়েছিল তা নিয়ে এত চুলচেরা হিসাব-নিকাশের কী প্রয়োজন? এই ধারণাও ঠিক নয়। কেননা মোহর আদায়ের নিয়ত ছাড়া নিছক উপহার হিসেবে যা কিছু দেওয়া হয় তার দ্বারা মোহর আদায় হয় না। আর পাওনাদারের পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রে চুলচেরা হিসাব করা দোষের বিষয় নয়; বরং হক্ব আদায়ে সতর্কতার কারণে হলে তা প্রশংসনীয়ও বটে। তেমনি পাওনাদারও যদি চুলচেরা হিসাব করে পাওনা বুঝে নিতে চায় তাহলেও তার নিন্দা করার অবকাশ নেই। কারণ এটা তার অধিকার। তবে কুরআন-হাদীসে উভয় পক্ষকেই সহজ ও উদার হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

১,৪. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মহরে মেছাল ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ স্ত্রীর অন্যান্য বোন, ফুফু ও খালার মহর যেমন। এই ক্ষেত্রে  স্ত্রীর অন্যান্য বোন, ফুফু ও খালার মহর নির্ধারণে যার মহরটা মধ্যম পর্যায়ের বলে মনে হবে সেই পরিমাণ মহর পরিশোধ করতে হবে। আরো জানতে ভিজিট করুন:

https://www.ifatwa.info/25596/

২. জ্বী না। উক্ত গিফটগুলি দেওয়ার সময় আপনি তাকে মোহরানা হিসেবে দেননি বরং গিফট হিসেবে দিয়েছেন। বিধায় সেগুলি দিয়ে মোহরানা পরিশোধ করা যাবে না। যখন দিয়েছেন তখন মোহরানার নিয়ত থাকলে তা জায়েয হতো।

৩. স্ত্রী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয় কিংবা গ্রহণ করার পর স্বামীকে উপহার দেয় তাহলে স্বামী তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করতে পারবে। পূর্ণ মোহর ছেড়ে দেওয়ার বা পূর্ণ মোহর স্বামীকে উপহার দেওয়ারও অধিকার স্ত্রীর রয়েছে, তবে সাধারণ অবস্থায় পূর্ণ মোহর না দিয়ে কিছু অংশ দেওয়াই ভালো। আর যদি স্ত্রীকে বাধ্য করে মোহরানা মাফ নেওয়া হয়, তাহলে তা মাফ হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...