আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
215 views
in পবিত্রতা (Purity) by (42 points)
reshown by
আসসালামু আলাইকুম হুজুর,,, আমি পূর্বেও পবিত্রতা নিয়ে আপনাদেরকে অনেক প্রশ্ন করেছি। তারপরেও আমার সমস্যা ঠিক হচ্ছে না। তাই আমাকে একটা মূলনীতি শিখিয়ে দেন। যা দিয়ে আমি সব সময় বাছাই করতে পারবো যে এইটা পাক না নাপাক। যেমন,,,

প্রস্রাব করতে গেলে মনে হয় হাতে নাপাকি লেগেছে। অনেক সময় হয়ত লাগে। আমি হাত গিয়ে ঘসে শুকিয়ে ফেলি। কোথায় লেগেছে আন্দাজ করে। এখন আমার আন্দাজ ভুল হতে পারে। এই ক্ষেত্রে নাপাকি কাপড়ে লেগে যেতে পারে। কিন্তু দেখা যায় না। আবার প্রস্রাবের সময় কাপড়ে ছিটা লাগে। যা ১ দিরহামের কম হলেও ওযুর সময় ছড়িয়ে যাবে কিনা? কারণ কোথায় লেগেছে আমি নিশ্চিত না।

আবার  আমি যখন পুকুর থেকে গোসল করে উঠি বা ওজু করি তখন দেখা যায় কেও পুকুর পাড়ে বসার যায়গাই কাপড় ধোয়। হিন্দুরাও ধোয়। এই সময় সাবানের ফেনা কাপড়ে বা শরিরে লাগলে নাপাক হবে কিনা।

আমাদের টয়লেটে অনেকে দাড়িয়ে প্রস্রাব করে। তাই অনেক সময় দেখা যায় অনেকে নিচ থেকে প্রস্রাব করার কারনে যেখানে পা রেখে প্রস্রাব করি তা নাপাক থাকে বা ওয়াস রুমের জমিন নাপাক থাকে। এই অবস্থায় ওইখানে অজু করতে গেলে ট্যাপের পানি অনেক উচুতে লাগে। কাপড়ের অনেক অংশ ভিজে যায়। এখানে আমার করণীয় কি। এইটাকে কি আমি নাপাক হিসাবে ধরবো। নাপাক ধরলেতো আমার জন্য অনেক কঠিন হয়ে যাবে।

আবার এই বিষয়টা পুকুর পাড়ের ক্ষেত্রেও। পুকুর পাড়েওতো অনেক অনেক সময় নাপাক পায়ে আসা হয়ে যায়। যেহেতু পুরাটাই ইটের পথ। এই ক্ষেত্রে কেও যায় কাপড় চাপে আর আমি ওই সময় পুকুর থেকে উঠি তবে নিচ থেকে পানির ছিটা আমার পায়ে লাগবে। এইটা কি নাপাক হবে??

এইগুলাই মাথাই আসছে। আরো বিভিন্ন সমস্যা হয় বিভিন্ন সময়। আমাকে একটা নিয়ম শিখিয়ে দেন। যার মাধ্যমে আমি ধারণা করতে পারবো। এইটা পাক এইটা নাপাক। আমি এইগুলি নিয়ে খুবই সমস্যাই আছি।
by (1 point)
ভাই পরামর্শ হল, আপনি দ্রুত কোন সাইকিয়াট্রিস্ট  এর শরাণাপন্ন হোন অথবা সম্ভব না হলে সরকারি মেডিক্যালের সাইকিয়াট্রি বিভাগ এর আউটডোর এ দেখান। ওয়াসওয়াসা একটি মানসিক রোগ, যাকে মেডিক্যালের ভাষায় ওবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসওর্ডার(OCD) বলে। অনেক দিনের শয়তানি ওয়াসওয়াসা মানসিক রোগে পরিণত হয়। আপনার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ওয়াসওয়াসা, এটি মানসিক রোগে পরিনত হয়েছে, যা আপনাকে মানসিকভাবে অনেক কষ্ট দিতে থাকবে।
ইনশাআল্লাহ এ রোগ ৩/৪ মাস মেডিসিনে ও কাউন্সিলিং এ ভাল হয় এবং মেডিসিন কন্টিনিউ করতে হবে, সাথে আল্লাহর কাছেও এ রোগ মুক্তির জন্য দোয়া করতে হয়।

আপনি আমাকে সালাম দিয়ে টেক্সট করেছিলেন। কিন্তু আপনার আইডিতে রেস্ট্রিকশন দেওয়া, তাই রিপ্লাই করা যাচ্ছে না।

1 Answer

0 votes
by (63,560 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/46243/ নং ফাতাওয়াতে উল্লেখ রয়েছে-

পেশাব-পায়খানার পরপবিত্রতা অর্জন করার তিনটি পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে।

প্রথম পদ্ধতি: শুধু ঢিলা/টিস্যু ব্যবহার করা: এক্ষেত্রে তিনটি টিলা/কুলুফ ইউজ করা সুন্নাহ। এ বিষয়ে বহু হাদীস ও আছার বর্ণিত হয়েছে।

 قَدْ عَلّمَكُمْ نَبِيكُمْ كُلّ شَيْءٍ حَتى الْخِرَاءَةَ قَالَفَقَالَ: أَجَلْ لَقَدْ نَهَانَا  أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِأَقَلّ مِنْ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ

সালমান ফারসী রা.-কে বলা হলতোমাদের নবী তোমাদের সবকিছু শিক্ষা দিয়েছেনএমনকি শৌচাগার ব্যবহারের পদ্ধতিওআব্দুর রহমান বিন ইয়াযীদ রাহবলেনসালমান রাবললেন, ‘হাঁঅবশ্যইতিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেনআমরা যেন ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করিইস্তিঞ্জার সময় তিন পাথরের কম ব্যবহার না করি ’ সহীহ মুসলিমহাদীস ২৬২

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্ত আমল ও বাণী মুতাবেক অনেক সাহাবা ও তাবেয়ীনের আমল ছিল। তাঁরা পানি থাক বা না থাক শুধু ঢিলা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতেন।

এ অনুযায়ীই উম্মাহর ইমামগণের ফতোয়া। সকল ইমামের মত হলপানি থাকুক বা নাই থাকুক সর্বাবস্থাই শুধু ঢিলা দ্বারা তাহারাত হাসিল করা জায়েয। আল ইসতিযকার ১/১৪৩

 

দ্বিতীয় পদ্ধতি: ঢিলা ও পানি উভয়টা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা ঢিলা ব্যবহার করে পানি দ্বারা ধৌত করা কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফে সালেহীনের আমল দ্বারা প্রমাণিত। কারণতাতে অধিক পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হয়। তবে এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা কখনোই ঠিক হবে না। যেমনপ্রস্রাবের পর ঢিলা হাতে নিয়ে শৌচাগারের বাইরে চল্লিশ কদম দেওয়ালেফট-রাইট করাবার বার উঠা-বসা করাকেউ পানির পূর্বে ঢিলা ব্যবহার না করলে তাকে পশুর সাথে তুলনা ও ঘৃণা করা কিংবা কটু বাক্য বলে তাকে জর্জরিত করা ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

তৃতীয় পদ্ধতি: পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা। কাযায়ে হাজতের পর পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করার বিষয়ে সাহাবা ও তাবেয়ীন-যুগে দু-একজনের ভিন্নমত থাকলেও পরবর্তীতে এ বিষয়ে কোনো ইমামের মতবিরোধ নেই যেকাযায়ে হাজতের পর পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা যাবেবরং উলামায়ে কেরাম বলেনপানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করাই উত্তম।

শুধু পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করার ব্যাপারে আনাস রাযি. থেকে বর্ণিততিনি বলেন,

كَانَ رَسُوْلُ اللهِ  صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُ الْخَلاَءَ، فَأَحْمِلُ أَنَا وَغُلاَمٌ نَحْوِيْ إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ وَعَنَـزَةً، فَيَسْتَنْجِيْ بِالْمَاءِ

“রাসূলুল্লাহ সা. পায়খানায় গেলে আমি এবং আমার সমবয়সী একটি ছেলে এক লোটা পানি ও একটি হাতের লাঠি নিয়ে রাসুল সা. অপেক্ষায় থাকতাম। অতঃপর তিনি পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতেন সহীহ বুখারীহাদীস নং ১৫০

 

ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার আমলঃ

ইবনে হাজার আল-হাইছামি তাঁর ‘আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা’ গ্রন্থে (১/১৪৯) এসেছে, তাঁকে এর প্রতিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان – فإنه متى لم يلتفت لذلك لم يثبت بل يذهب بعد زمن قليل كما جرب ذلك الموفقون , وأما من أصغى إليها وعمل بقضيتها فإنها لا تزال تزداد به حتى تُخرجه إلى حيز المجانين بل وأقبح منهم

অর্থাৎ, এর ঔষধ একটাই সেটা হচ্ছে– ওয়াসওয়াসাকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও। কেননা কেউ যদি সেটাকে ভ্রুক্ষেপ না করে তাহলে সেটা স্থির হবে না। কিছু সময় পর চলে যাবে; যেমনটি তাওফিকপ্রাপ্ত লোকেরা যাচাই করে পেয়েছেন। আর যে ব্যক্তি ওয়াসওয়াসাকে পাত্তা দিবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে সে ব্যক্তির ওয়াসওয়াসা বাড়তেই থাকবে; এক পর্যায়ে তাকে পাগলের কাতারে নিয়ে পৌঁছাবে কিংবা পাগলের চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছাবে।

 

এর সর্বোত্তম প্রতিকার হচ্ছে– বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা, لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ পড়া, আউযুবিল্লাহ্ পড়া তথা বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

 

রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

اَلْحَمْدُ لِلهِ الَّذِىْ رَدَّ اَمْرَهُ عَلَى الْوَسْوَسَة

সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহর যিনি শয়তানের বিষয়টি কুমন্ত্রণা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন।’ (নাসাঈ)

 

ইবনে হাজার আল-হাইতামি রহ. বলেন,

له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان

ওয়াসওয়াসার কার্যকরী চিকিৎসা হল, একে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও।’ (আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)

 

পাক-নাপাক সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/53602/    

সুঁই মাথার মত নাপাকির ছিটা মাফ- https://ifatwa.info/52485/

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

১. পেসাব লেগে গিয়েছে শুধু এই সন্দেহের উপর ভিত্তি করে হাত ঘষে শুকিয়ে ফেলার প্রয়োজন নেই। বরং আপনি যখন নিশ্চিত হবেন যে, হাতে পেসাব লেগেছে তখন ধুয়ে ফেলবেন। উল্লেখ্য যে, সুঁইয়ের মাথার মত নাপাকির ছিটা মাফ।

২. না, শুধু সন্দেহের উপর ভিত্তি করে ঐ সাবানের ফেনা শরীর বা কাপড়ে লাগলে শরীর বা কাপড় নাপাক হবে না।

৩. আপনি উক্ত টয়লেটে প্রস্রাব-পায়খানা করার সময় জুতা পরে প্রবেশ করবেন। তাহলে সেখানে নাপাকি থাকলেও আপনার আর পায়ে লাগলো না। আর প্রশ্নোক্ত ওয়াসরুমে ওজু করার আগে এক মগ পানি দিয়ে ওয়াসরুমের জমিন ধুয়ে ফেলবেন। তাহলে আর মনের মধ্যে সন্দেহ থাকবে না। উল্লেখ্য যে, সুঁইয়ের মাথার মত নাপাকির ছিটা মাফ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...