আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
79 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (4 points)
আসসালামু আলাইকুম। আমি সকল ধরনের পড়া মনে মনে পড়ি।আমি কুরআন ও মনে মনে পড়ি। কিন্তু পড়ার সময় তাজবিদ এর ব্যাপারে খেয়াল রাখি। আমি আমার শুধু ঠোঁট নাড়িয়ে কুরআন পড়তে বেশি পছন্দ করি।এতে আমার কষ্ট কম হয় এবং আমি অনেক বেশি সময় পড়তে পাড়ি। কিন্তু শব্দ করে না পড়লে  নাকি কুরআন পড়া হয় না।নবীজি (সা)আবু বকর (রাযি) কে শব্দ করে কুরআন পড়তে বিশেষ করে নির্দেশ দিয়েছেন।এর ব্যাপার জানতে চাই।

1 Answer

0 votes
by (63,440 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

কুরআন তিলাওয়াতের সময় সর্বনিম্ন কতটুকু আওয়াজে তিলাওয়াত করলে তিলাওয়াত হিসেবে ধর্তব্য হবে এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের মাঝে মতভিন্নতা রয়েছে। কিছু কিছু ফিকাহবিদের মত হলো, কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত অন্তত এতটুকু আওয়াজে করা জরুরি যে, মুখ দ্বারা তা উচ্চারিত হয় এবং নিজের তিলাওয়াত নিজ কান পর্যন্ত পৌঁছায়৷ এভাবে তিলাওয়াত না করলে তা তিলাওয়াত হিসেবেই ধর্তব্য হবে না।

و أدنى (الجهر إسماع غيره و) أدنى (المخافتة إسماع نفسه) ومن بقربه… ونقل في المجتبی عن الهندواني أنه لا یجزیه مالم تسمع أذناہ

অর্থ : ‘জাহর’ তথা জোরে পড়ার সর্বনিম্ন স্তর হলো অন্যকে শুনানো৷ আর আস্তে পড়ার সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে, নিজেকে ও কাছের লোককে শুনানো৷ ‘মুজতাবায় হিন্দওয়ানী সূত্রে’ বর্ণিত হয়েছে যে, নিজের কানে না শুনলে (তিলাওয়াত) যথেষ্ট হবে না৷ (রদ্দুল মুহতার : ২/২৫২)

তবে কিছু ফিকাহবিদের মত হল, জিহ্বা ও ঠোঁট নাড়িয়ে হরফসমূহ যথাযথভাবে উচ্চারণ করে তিলাওয়াত করলেই তিলাওয়াত হিসেবে গণ্য হবে।

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত

عَنْ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ : لَمْ يُخَافِتْ مَنْ أَسْمَعَ أُذُنَيْهِ.

যে নিজ কানকে শুনাল সে তো আস্তে পড়ল না। (মুসান্নাফ, ইবনু আবী শাইবা, হাদীস-ক্রম : ৮১৭৫)

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু’র এই বক্তব্য থেকে বুঝা যায় আস্তে পড়ার জন্য নিজ কানকে শুনাতে হয় না। বরং নিজ কান পর্যন্ত পৌছলে সেটি আর আস্তে পড়াই থাকে না।

ইমাম কারখী রাহিমাহুল্লাহ বলেন

وأدنى المخافتة تصحيح الحروف لأن القراءة فعل اللسان دون الصماخ

অর্থাৎ আস্তে পড়ার সর্বনিম্ন স্তর হল হরফসমূহ সঠিকভাবে উচ্চারণ করে পড়া। কারণ পড়াটা জিহ্বার কর্ম, কর্ণকুহরের নয়। (আল-হিদায়া : ১/৮০; আল-ইনায়াহ : ২/৩৮)

আল্লামা আলাউদ্দীন কাসানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন

ما قاله الكرخي أقيس وأصح ، وفي كتاب الصلاة لمحمد إشارة إليه فإنه قال : إن شاء قرأ في نفسه ، وإن شاء جهر وأسمع نفسه ا هـ

‘কারখী রাহিমাহুল্লাহ’র বক্তব্যই অধিকতর বিশুদ্ধ এবং অধিকতর যুক্তিসঙ্গত। মুহাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহ’র কিতাবুস সালাতে (আলমাবসুতে) এ দিকে ইঙ্গিত রয়েছে। তিনি বলেছেন : (একাকী ব্যক্তি জাহরী নামাযে) ইচ্ছা করলে শব্দ না করে পড়বে। ইচ্ছা করলে শব্দ করে নিজ কানকে শুনিয়ে পড়বে।’ (বাদায়িউস সানায়ি : ১/৩৯৭)

তাছাড়া জিহ্বা ও ঠোঁট নাড়িয়ে কোনো কিছু পড়াকে সমাজে পড়া হিসেবেই গণ্য করা হয়।

তাই আমাদের নিকট এই মতটিই অগ্রগণ্য। তবে যেহেতু কিছু ফকীহ’র মত হল, নিজ কানে শুনতে হবে সেহেতু তার উপর আমল করে এতটুকু জোরে পড়া নেয়াই উত্তম, যেন নিজ কানে শুনতে পায়। তবে কেউ চাইলে শুধু জিহ্বা ও ঠোঁট নাড়িয়ে হরফসমূহ যথাযথভাবে উচ্চারণ করেও তিলাওয়াত করতে পারবে।

উল্লেখ্য, জিহ্বা নাড়িয়ে তিলাওয়াত করলে তা তিলাওয়াত হিসেবে গণ্য হলেও জিহ্বা না নাড়িয়ে শুধু মনে মনে ধ্যান করাকে কেউই তিলাওয়াত হিসেবে গণ্য করেন না। অনেক ভাইকে দেখা যায় এমনটি করে থাকেন। নামাযে কেউ যদি সূরা-কিরাআত তিলাওয়াতের সময় শব্দ উচ্চারণ না করে মনে মনে এভাবে ধ্যান করে তাহলে তার কিরাআতই আদায় হবে না। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। (কিতাবুল আছল : ১/৬; আততাসহীহ ওয়াত তারজীহ আলা মুখতাসারিল কুদূরী, পৃষ্ঠা-ক্রম : ৭৪; আলবাহরুর রায়িক : ১/৩৩৬; ইলাউস সুনান : ৪/১৩; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ১/১৫৫)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

ইসলামিক স্কলারদের মতে, সুন্দর, সুললিত ও মিষ্টি কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করাকে মোস্তাহাব। কুরআনের নির্দেশনা ও হাদিসের আলোকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, মধুরকণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করা উত্তম। কুরআন সশব্দে ও নীরবে তেলাওয়াত করা যায়। ক্বারীর অবস্থা ও পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী কখনও সরবে ও কখনো নীরবে পড়া উত্তম। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,

مَا أَذِنَ اللهُ لِشَىْءٍ مَا أَذِنَ لِنَبِىٍّ حَسَنِ الصَّوْتِ يَتَغَنَّى بِالْقُرْآنِ يَجْهَرُ بِهِ،

মহান আল্লাহ অন্য কিছু এত মনোযোগ দিয়ে শুনেন না, যেভাবে তিনি নবীর সুমধুর কন্ঠে স্পষ্ট উচ্চারণে কুরআন পাঠ শুনেন’। (মুসলিম হা/৭৯২-৯৩; আবূদাঊদ হা/১৪৭৩; নাসাঈ হা/১০১৭)

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,الْجَاهِرُ بِالْقُرْآنِ كَالْجَاهِرِ بِالصَّدَقَةِ وَالْمُسِرُّ بِالْقُرْآنِ كَالْمُسِرِّ بِالصَّدَقَةِ، উচ্চৈঃস্বরে কুরআন তেলাওয়াতকারী প্রকাশ্যে দানকারীর মতো এবং নিঃশব্দে কুরআন তেলাওয়াতকারী গোপনে দানকারীর মতো’। (আবূদাঊদ হা/১৩৩৩; তিরমিযী ‘ফাযায়িলে কুরআন’ অধ্যায় হা/২৯১৯; নাসাঈ হা/১৬৬২ ‘ক্বিয়ামুল লাইল’ অধ্যায়, ‘স্বরবের উপর নীরবের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/২২০২)

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, নীরবে তেলাওয়াত লৌকিকতামুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি লৌকিকতার ভয় করে তার জন্য নীরবে তেলাওয়াত করা উত্তম। আর যদি রিয়ার আশঙ্কা না করে তাহলে সরবে তেলাওয়াত করা উত্তম। তবে শর্ত হল অন্য মুসল্লী, ঘুমন্ত ব্যক্তি কিংবা অন্য কাউকে কষ্ট দেওয়া না হয়। অন্যথা নীরবে উত্তম। আর সরবে তেলাওয়াত উত্তম হওয়ার কারণ হল এরূপ আমল সাধারণত অধিক করা হয়, এতে অন্যেরা উপকৃত হয়, শ্রবণ, শিক্ষা, অনুসরণ করা এবং এটা দ্বীনের নিদর্শন হওয়ার কারণে। তাছাড়া এতে ক্বারীর অন্তর জাগ্রত হয়, তার মনোযোগ এর প্রতি নিবদ্ধ হয়, এর প্রতি তার কর্ণ প্রত্যাবর্তিত হয়; এর দ্বারা ক্বারীর ঘুম দূর হয়, তার উদ্যম বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে ঘুমন্ত ও উদাসীন ব্যক্তি জাগ্রত, সচেতন ও উৎসাহী হয়। তাই এরূপ নিয়তে সরবে তেলাওয়াত করা উত্তম। (মির‘আত, ৭/২৮৪ পৃঃ)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...