আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
228 views
in ওয়াসওয়াসা by (12 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম।

আমার তালাকের ওয়াসওয়াসা আছে। সবসময় সন্দেহ আসতে থাকে।

(১) আমার এক বন্ধুর সাথে কক্সবাজার ঘুরতে যাবার বিষয়ে কথা বলছিলাম। কথা বলতে বলতে হঠাৎ আমার মনের ভিতর আসলো যে,

-মন চাই সবাইকে ছেড়ে ছুড়ে কক্সবাজার চলে যায়।

এমন কথা মনে আসার পর তখনি মনে হচ্ছে এমন কথা মনে আসায় আমার ওয়াইফ তালাক হয়ে যাবে কিনা। আবার মনে হচ্ছে আমি মনে হয় আমার ওয়াইফকে ছেড়ে দেবার কথা বললাম।

এজন্য কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??

(২) গত কয়েক বছর আগে থেকে আমার ওয়াইফের জন্য সংসারে অশান্তি ছিল। এখন একটু ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু এখন এই ওয়াসওয়াসা রোগ হবার কারনে তখনকার সময়ের বিভিন্ন কথা মনে আসছে ও আমার মনে হচ্ছে ওই সময় এটা হয়েছিল ওটা হয়েছিল আমি এটা বলেছিলাম ওটা বলেছিলাম এমন অনেক কথা মনে আসছে আর আমি সন্দেহে ভুগছি। কিছুদিন ভাল থাকছি আবার আগের কোন না কথা মনে এসে সন্দেহ সৃষ্টি করছে। উদাহারনসরুপ :
সেসময় আমি ও আমার পরিবারের লোক চাইতাম যে, এমন কিছু করতে যার জন্য আমার ওয়াইফ নিজে থেকে যেন আমাকে ছেড়ে চলে যায়। তাই সে কিছু চাইলে না দেওয়া অথবা তার সাথে খারাপ আচারন করা ইত্যাদি। এর জন্য কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??

(৩) ওই সময় সংসারে অশান্তি থাকার কারনে আমি বলেছিলাম যে,
(কেউ যদি আমাকে বলে, তুমি ৫ বছর জেল খাটবা, না তোমার ওয়াইফের সাথে সংসার করবা?
তখন আমি বলবো, আমি ৫ বছর জেল খাটবো।)
আগের এসব কথা এখন মনে আসছে আর আমার ওয়াসওয়াসা আরো বাড়ছে।
একথার জন্য কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??

(৪) একবার সংসারে গন্ডোগোল হওয়াতে আমার চাচা চাচিরা আমার ওয়াইফের সাইড নেওয়াতে আমি বেশ কয়েকবার বলেছিলাম যে,

(আমার ওয়াইফ তো আজ আছে কাল নেই। আমার চাচা চাচিদের কি উচিত হয়েছে তার সাপোর্ট করা।)

আবার আমার মনে হচ্ছে যে, আমি মনে হয় সেসময় বলেছিলাম যে,

(আমার ওয়াইফ তো আজ আছে। যদি তালাক দিয়ে দি তাহলে কাল থাকবে না। আমার চাচা চাচিদের কি উচিত হয়েছে তার সাপোর্ট করা।)

এমন কথা আমার মনে আসছে। যেকথা আমি বলেছি কিনা আমি সন্দিহান। তবে প্রথমের উল্লখিত কথাটি আমি বলেছি আমার মনে আছে।
এই কথার জন্য কি তালাক পতিত হবে?

(৫) আমার বন্ধুর সাথে আমার খালাতো ভাই ডিলারশিপের ব্যাবসা ছাড়ছে না, বা ছেড়ে দিলে আর নিতে পারবে না সেসব বিষয়ে কথা বলছিলাম। কিন্ত এসব কথা বলার সময় আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন আমার ওয়াইফকে ছেড়ে দেবার কথা বলছি ও আমার ওয়াইফকে না নেবার কথা বলছি।
আবার, আমার ওয়াইফ অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এক জায়গায় যাবার কথা বলাতে আমি বললাম তাহলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে যায়?

এটা বলার সাথে সাথে মনে হচ্ছে আমি মনে হয় আমার ওয়াইফকে ছেড়ে দেবার কথা বললাম।
এজন্য কি তালাক পতিত হবে শায়েখ?

(৬) আমার অতিরিক্ত ওয়াসওয়াসা থাকার কারনে সবসময় মনের ভিতর তালাক নিয়ে বিভিন্ন চিন্তা বা তালাক দিয়ে দিলাম এমন কথা আসতে থাকে। সারাদিন এই তালাক নিয়ে চিন্তা ভাবনা আসতে থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় তালাক উচ্চারন করে ফেলছি। যদিও আমি নিজের কানে স্পষ্ট ভাবে তালাক শব্দ শুনছি না। তারপরেও মনে হয় এই বুঝি উচ্চারন করলাম। যে কারো উপরে রাগ হলেও মনে হচ্ছে আমি তাকে তালাক বলে ফেলবো। ওয়াইফের সাথে ফোনে কথা বলতে গেলে ফোন ধরা মাএ আগে তালাক শব্দ মনে আসে। যতক্ষন কল না কাটি মনে হয় তালাক শব্দ উচ্চারন করে ফেলবো।মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলার সময় মনে হয় উচ্চারন করে ফেলছি, এমন সন্দেহও হয়। কোন  কারনে ওয়াইফের উপর সামান্য রাগ হলেও মনে হচ্ছে তালাক বলে ফেলবো। মাঝে মাঝে মনে হয় দেয়াল এর সাথে মাথা ঠুকি। ঘুমের ভিতরে তালাক নিয়ে বিভিন্ন আজে বাজে স্বপ্ন দেখি এবং ঘুম ভাংগার পর সাথে সাথে মনে হয় তালাক উচ্চারন করে ফেলছি। এমন সন্দেহ আমাকে মানসিকভাবে খুবই কষ্ট দিচ্ছে শায়েখ। এসব কারনে কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??

(৭) আল্লাহকে নিয়ে অনেক আজে বাজে চিন্তা আসে। অনেক সময় মনে হয় আমি আল্লাহকে পরোয়া করি না, এত হালাল হারামের চিন্তা করলে চলবে না, এছাড়া আরো অনেক শিরিকি ও কুফুরি কথা মনে আসে। আমি একটা এপ্সে এড দেখে সামান্য কিছু টাকা ইনকাম করার চেষ্টা করছি। আমি জানি এটা হারাম।এটা করা ঠিক না। কিন্তু তখনি আমার মনের ভিতর হচ্ছে আমি আল্লাহকে পরোয়া করি না। মাঝে মাঝে এই সমস্যা এত তিব্র হয় মনে হয় আমি এসব কথা উচ্চারন করে ফেলবো। এমনকি উচ্চারন করে ফেললাম কিনা ভেবেও সন্দেহ হয়। এতে কি আমার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে শায়েখ??

(৮)একটা ওয়াজে শুনলাম যে, কেউ যদি মনে করে খারাপ কিছু শয়তানের পক্ষ থেকে হয় তাহলে শিরিক হবে। কারন ভাল খারাপ সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। শয়তানের কোন ক্ষমতা নেই।

এটা শোনার পর থেকে মনে হচ্ছে আমিও মনে হয় খারাপ কিছু শয়তানের পক্ষ থেকে হয় বিশ্বাস করতাম। এমন কথা মনে আসছে। কিন্তু আমি এটা মন থেকে বিশ্বাস করি যে,  শয়তানের কোন ক্ষমতা নেই। আল্লাহ তাকে ওয়াসওয়াসা দেবার ক্ষমতা দিয়েছেন তাই সে ওয়াসওয়াসা বা খারাপ কাজের পরোচনা দিতে পারে।

এতে কি আমার শিরিক হবে শায়েখ?
(৯) ওয়াইফ ফোনে টাকা ভরে দিতে বলায় আমি বললাম যে, তুমি তো এখন তোমার বাবার বাসায় আছো, তাহলে কার সাথে কথা বলবা?

একথা বলার সময় মনে হচ্চিল আমি যেন তাকে সন্দেহ করছি। ও সে অন্য কোন ছেলের সাথে কথা বলবে তাই আমি তাকে জিগ্গাসা করছি কার সাথে কথা বলবা। এমন বহু আজে বাজে কথা মনে হয়। আবার কোন সময় কোন বন্ধুর সাথে (প্যারা) শব্দ উচ্চারন করলে বা উচ্চারন করার আগে থেকেই মনে হয় আমি যেন আমার ওয়াইফকে প্যারা বলছি।

এসব কারনে কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??
(১০) আমি এই মানসিক সমস্যার জন্য আমাদের জেলা শহরের এক মানসিক ডাক্তারের থেকে ১৫ দিন মত ঔষধ খেয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। হয়তোবা আরো ভাল ট্রিটমেন্ট করাতে হবে। এমন অবস্থায় আমার কি দুইজন মুসলমান ডাক্তার এর কাছে যেতে হবে? এবং তারা আমাকে ওয়াসওয়াসার রুগি না বলা পর্যন্ত কি আমি ওয়াসওয়াসার রুগি বলে বিবেচিত হব না?

(১১)আমি ক্লান্ত শায়েখ এমন ওয়াসওয়াসার জন্য। এসব চিন্তা করতে করতে আমি পাগলপ্রায়। আশা করি আপনি মনের গভীর থেকে আমার সমস্যা গুলি অনুধাবন করবেন। এবং আমার কিছু পরামর্শ দিবেন। এমন অবস্থায় আমার জন্য শরিয়তে কি কোন ছাড় রয়েছে?
না দুইজন মুসলমান ডাক্তার আমাকে মানসিক রুগি না বলার আগে পর্যন্ত আমার জন্য শরিয়তে কোন ছাড় নেই?

আর থাকলে সেটা কিরকম ছাড় জানাবেন শায়েখ।

1 Answer

0 votes
by (677,640 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


শরীয়তের বিধান হলো, মুখে উচ্চারণ না করে শুধু মনে মনে তালাক দিলে বা মনে মনে শর্ত যুক্ত তালাক দিলে তাহা পতিত হবেনা।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ عَنْ زُرَارَةَ بْنِ أَوْفٰى عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِه„ أَنْفُسَهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَتَكَلَّمْ
قَالَ قَتَادَةُ إِذَا طَلَّقَ فِي نَفْسِه„ فَلَيْسَ بِشَيْءٍ.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ আমার উম্মতের হৃদয়ে যে খেয়াল জাগ্রত হয় তা ক্ষমা করে দিয়েছেন, যতক্ষণ না সে তা কার্যে পরিণত করে বা মুখে উচ্চারণ করে।

ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেনঃ মনে মনে তালাক দিলে তাতে কিছুইতালাক হবে না। [বুখারী শরীফ ৫২৬৯.২৫২৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৮)

অন্য এক হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا، مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَكَلَّمْ ".

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (আমার বরকতে) আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে। (সহীহ বুখারী ২৫২৮)

আরো জানুনঃ- 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(০১)
এজন্য তালাক পতিত হবেনা।

(০২)
এর জন্য তালাক পতিত হবেনা।

(০৩)
এ কথার জন্য তালাক পতিত হবেনা।

(০৪)
এ কথার জন্য তালাক পতিত হবেনা।

(০৫)
এ জন্য তালাক পতিত হবেনা।

(০৬)
এসব কারনে তালাক পতিত হবেনা। 

(০৭)
এতে আপনার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবেনা।

(০৮)
এতে আপনার শিরক হবেনা।

(০৯)
এসব কারনে তালাক পতিত হবেনা। 

(১০)
বিশেষজ্ঞ দুইজন মুসলিম ডাক্তার আপনাকে ওয়াসওয়াসা রুগী বলে থাকলে আপনি ওয়াসওয়াসার রুগী। 
বা বিজ্ঞ মুফতী সাহেব আপনাকে ওয়াসওয়াসা রুগী বলে থাকলে আপনি ওয়াসওয়াসার রুগী। 

(১১)
প্রশ্নের বিবরণ মতে ওয়াসওয়াসার দরুন আপনি যেহেতু পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছেন। তার মানে আপনি আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।

আপনার জীবন অসহনীয় হয়ে গিয়েছে।
কোনোভাবেই এর থেকে বের হতে পারছেননা।
জেলা শহরের এক মানসিক ডাক্তারের থেকে ১৫ দিন মত ঔষধ খেয়েও সুস্থ্য হননি।

সুতরাং আপনি ওয়াসওয়াসা রুগী হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছেন।

সুস্থ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনার কোনো তালাক পতিত হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...