প্রথমেই উল্লেখ করে নিচ্ছি আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ। একেক সময় একাধিক ডাক্তারের মতে আমি সিজোএফেক্টিভ ডিস অর্ডার, ওসিডি, ডিপ্রেশন, পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার এর মত রোগে ভুগছি। তাছাড়া, আমি বিভিন্ন রুকইয়া গ্রুপ ও কবিরাজের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আমার উপর কালোজাদু ও জ্বীনের প্রভাব রয়েছে। সত্যতা আমি জানিনা। এব্যাপারে আল্লাহ ই ভাল জানেন। আমার স্ত্রী আমাকে জানিয়েছিল তাকে বিয়ে বন্ধের জাদু করা হয়েছিল তারপর এক হুজুরের থেকে কিছু আমল আর ট্রিটমেন্ট নেয়ার ৪০ দিনের মাথায় আমাদের বিয়ে হয়।
আমার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় আমার মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে নিবেন। অনেকে বলেন ওসিডি আর ওয়াসওয়াসা রোগ নাকি সিমিলার। তাই, এ দিক টাও বিবেচনা করবেন আশা করি।
আমার কিছু লক্ষণ বলি:
১.আমি অতিরিক্ত চিন্তা করে উন্মাদের মত হয়ে যাই।
২. সারাদিন বুক ধড়ফড় করে। অকারণে ভয় পেতে থাকি সারাদিন।
৩. সন্দেহ প্রবণতা যেমন: অমুক কাজ টি করেছি কি করিনাই, তালাক দিয়েছি কি দিই নাই ইত্যাদি
৪. কুফরি চিন্তা, চিন্তায় আল্লাহর সাথে বেয়াদবি করা,আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে না পারা
৫. রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা
৬. জীবনের প্রতি মায়া না কাজ করা
ইত্যাদি।
৭. অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
আরো অনেক লক্ষণ ছিল যার দরুণ আমি ক্লিনিকালি ওসিডির রোগি ছিলাম। আমি ওয়াসওয়াসার রোগি কিনা আল্লাহ ই ভাল জানেন।
উল্লেখ্য, আমার ট্রিটমেন্ট চলমান।
১. আমার স্ত্রীর সাথে প্রায়ই ঝগড়া হয়। আমি তাকে বুঝাতে পারিনা। একবার ইসলামিক সমাধানের উদ্দেশ্যে মুফতির কাছে যেতে বলেছিলাম। সে বলেছে দরকার হলে তুমি যাও। আমি যাব না। এতে কি সে মুরতাদ হয়ে গেছে বা কুফরি করেছে? ঝগড়ার পর বলেছে। হয়ত রাগে বলেছে।
যেহেতু, বিবাদের বিষয়ে আল্লাহ আর রাসুল (সা.) এর ফয়সালা মেনে নিতে বলা হয়েছে কুরানে। আর আমি ইসলামিক সমাধান জানিনা। আবার আমিও তাকে আদেশ করেছি। আবার তাকে ছাড়া একতরফা ভাবে ফতোয়া জানাও সম্ভব নয়।
২. বিয়ের পর পর ই কি আমি স্ত্রীর কাছ থেকে প্রাপ্য হক চাইতে পারব? যেমন: আনুগত্য, সদাচরণ ইত্যাদি। অনেকে বলে, আগে স্বামী হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করতে, স্ত্রীকে পটাতে, রেসপন্সিবিলিটি পালন করতে তারপর এগুলা আশা করতে। কথাটা কি ঠিক? এক্ষেত্রে, আমার বক্তব্য হচ্ছে, স্বামী হিসেবে অযোগ্য হলে কেনই বা একটা মেয়ে বা তার ফ্যামিলি বিয়েতে রাজি হবে?
৩. স্ত্রী কি স্বামীকে হালাল শর্ত দিয়ে স্বামীকে বাধ্য করতে পারে সংসারের জন্য?
যেমন: আমার স্ত্রী আমাকে শর্ত দেয় ওর কথামত চলতে। শর্তগুলো হালাল।
যেমন:
১. স্মোকিং ছেড়ে দেয়া
২. জব প্রিপারেশন নেয়া
৩. ওর সাথে খারাপ ব্যাবহার না করা
৪. দ্বীনের পথে চলা ইত্যাদি।
সমস্যা হল, তার এই চাওয়ার মাঝে আদবের ঘাটতিও আছে। যেমন: এই চাওয়ার সাথে সে এটাও উল্লেখ করেছে আমি নাকি স্বামী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারিনা। ভাল ব্যাবহার করিনা। ইত্যাদি।
আমি বলেছি, হালাল কথা শুনব। যদি সেটা ভালবেসে শুনার মত করে বল।
উল্লেখযোগ্য, আমি আগে তার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতাম ঝগড়া হলে। সবসময় না। তাও, ঝগড়া করতে চাইতাম না। বলতাম, আমাকে একা থাকতে দাও। আমার রাগ উঠেছে। এ কথা বলায় সে আরো চাপ দিত। আবার ঝগড়া না করার জন্য মাঝে মাঝে তার কাছ থেকে দূরে যেতে চাইলেও বাধা দিত৷ অর্থাৎ, আমার মতে, আমি অনেকটাই বাধ্য হয়ে খারাপ ব্যবহার করতাম। কারণ, আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেস্টা করলেও সে জেদের কারণে তা করতে দেয়নি।
আবার তাকে যুক্তি, ইসলাম আর বাস্তবতা দিয়ে বোঝালেও কিছুই বুঝবেনা। খালি পাল্টা যুক্তি দেয়। অপরাধ করলেও সরি বলতে চায়না। অনুশোচনা নেই। কিন্তু আমার মাঝে সরি বলার অভ্যাস আছে।
আবার আমি খারাপ ব্যাবহার করলেও তার কাছে মাফ চেয়ে, পায়ে ধরে, আদর ভালবাসা দিয়ে মন ভাল করার চেস্টাও করতাম।
যদিও বর্তমানে তা থেকে অনেকটাই বের হয়ে এসেছি। এখন চুপ থাকার চেস্টা করি। যদিও তর্ক/মনোমালিন্য হয়। এটাকে খারাপ ব্যবহার বলে কিনা জানিনা। আলহামদুলিল্লাহ।
তারপরেও সে আমাকে চাপ দেয় বলে তার কথায় সরাসরি হা বললেই কেবল সংসার করবে। এখন আমি সরাসরি হা বলিনাই আর বলতেও চাইনা কারণ আমার আশংকা আমার স্ত্রী এই হা বলার অপব্যাবহার করবে। যেমন: আমাকে ডমিনেট করবে অথবা এমন হালাল কিছু চাইবে যা আমার পক্ষে মানা সম্ভব না ও হতে পারে। অর্থাৎ আমি কথা দিয়ে নাও রাখতে পারি। যাতে দাম্পত্য জীবনে অশান্তি সৃষ্টি করবে। আমার এই ধরণের আশংকার জন্য আমার স্ত্রীর পূর্বের আচরণ জড়িত যেমন: আমার স্ত্রী পূর্বে কোন একসময় ঝগড়া হলে চিল্লাচিল্লি করে আমার বাসার পরিবেশ নস্ট করেছে, আমার পরিবারের সামনে তুই তোকারি করেছে, পাগল/অসভ্য বলেছে আর ডিভোর্স দিবে বলেছে। আমার সম্মানহানি করেছে।
অবশ্য আমার স্ত্রীর কথায় সরাসরি না ও বলিনি বা নারাজি হইনি।
তাই, আমার অবস্থান হচ্ছে স্ত্রীর চাওয়া হালাল হলে আর তা সামর্থ্যের মাঝে থাকলে আমি তা পূরণ করার চেস্টা করব। কিন্তু তাকে সরাসরি বলতে চাইনা আমি তোমার কথামত চলব। আমার অবস্থান কি ভুল?
৪. এখন তার এই কথা বলায় বা আচরণে অর্থাৎ হালাল জিনিস চেয়েছে কিন্তু আমার মনে হয়েছে সে আদবের খেলাপ হয়েছে এমতাবস্থায়আমি তার উপর অসন্তুষ্ট হতে পারব?
(অন্তরের কাছে ফতোয়া জানতে চাওয়ার একটি হাদিস অনুযায়ী আমি দীর্ঘদিন নিরপেক্ষ ভাবে চিন্তা করে দেখেছি আমার স্ত্রীর চাওয়ার মাঝে আদবের খেলাপ ছিল। আমার অন্তর এটাই বলছে)
আর এই অসন্তুষ্টির কারণে স্ত্রী গোনাহগার হবে কিনা? বা তার ক্ষেত্রে হাদিসগুলো প্রযোজ্য হবে কিনা যেসব হাদিসে সেসব স্ত্রীর কথা বলা হয়েছে যাদের উপর স্বামী অসন্তুষ্ট।
যেমন টা বলা আছে শুনেছি, যে স্ত্রীর উপর স্বামী অসন্তুষ্ট তার ইবাদত কবুল হবেনা।
উল্লেখ্য, আমি তাকে অসন্তুষ্টির কথা মুখে বললেও সে ভ্রুক্ষেপ করেনা, সরি বলেনা। আমিও তাকে মাফ করতে পারিনা।
৫। আমার স্ত্রী ঝগড়ার মধ্যে কথায় কথায় ডিভোর্স চায়। আমি চাইতাম না। তাই একবার রাগ করে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে তাকে এক তালাক লিখে দিই। এর ২ সপ্তাহের মধ্যে ফোন করে মুখে মুখে তালাক তুলে নিই। এতে কি তালাক অকার্যকর হয়েছে? উল্লেখ্য, আমার স্ত্রীর সাথে দেখা করা সম্ভব হচ্ছেনা। কারণ সে তার বাবার বাসায়। আর তার ফ্যামিলি তাকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে দিচ্ছেনা।
৬। আমার স্ত্রী একবার ঝগড়ার মধ্যে বলেছিল : আমার ভাইরা ঠিকই বলে, নুহান একদিন ভাল কিছু করলে দেখবি তোকে ডাম্প করবে মানে ছেড়ে যাবে। এথেকে আমি নিশ্চিত হই, তার ফ্যামিলি তাকে কানপড়া দেয়। তারা চায়না আমরা একসাথে থাকি। এক্ষেত্রে, দুটা কারণ আমি মনে করছি:
প্রথমত, ঝগড়া হলে আমার স্ত্রী তার বাসায় আমার নামে বাড়ায়া বাড়ায় বলে (যার প্রমাণ পেয়েছি আগেই) যে কারণে তার ভাইরা এমন বলে
দ্বিতীয়ত, তার ফ্যামিলি চায়না এ সংসার টিকে থাক কারণ এমনিতেই অনেক ঝামেলা করে বিয়ে করেছিলাম। আমাদের ফ্যামিলি রাজি ছিল না।
এমতাবস্থায়, আমি চাই আমার স্ত্রী আমার কাছেই থাকুক আর তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে হলে আমার সামনেই করুক। যাতে আমাদের দাম্পত্য সম্পর্কে তার ফ্যামিলি ঝামেলা করতে না পারে। আমি চাইনা, সে তার বাবার বাসায় যাক। কারণ, বাবার বাসায় গেলেই তার সাথে আমার ঝামেলা বেশি করে বাধে। আবার তার ফ্যামিলি ভয়াবহ উগ্র মনে হওয়ায় নিরাপত্তার খাতিরে আমিও তাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিনা।
আমার এই চাওয়া কি বৈধ?
৭। আমি স্ত্রীর কাছে নিচের বিষয় গুলা আশা করি। আমার স্ত্রী কি মুমিন হিসেবে আমার এই আশা গুলো আদায় করতে বাধ্য থাকবে কিনা?
i. আমার বাধ্য থাকা
ii. আমার বা আমার বাড়ি সম্পর্কে সে যেন কোন নেতিবাচক কথা তার পরিবারে না জানায় কারণ তার পরিবার মিউচুয়ালের পরিবর্তে ঝামেলা করতে বেশি আগ্রহী। আবার সে বাড়ায় বাড়ায় বলে যা অনেকসময় সত্য না।
iii. আমার স্ত্রী আমার অনুমতি ছাড়া বের হবেনা। এমনকি বাবার বাসায় ও যাবেনা। কারণ টা হল একবার ঝগড়া করে সে বাবার বাড়ির কথা বলে বেড়িয়ে গেছিল। এরপর সে কোথায় গিয়েছিল তা আজো জানতে পারিনি। যদিও সে ফিরে এসেছিল আর বাবার বাসায় যায়নি।
iv. আমার স্ত্রী আমার অনুমতি ব্যতীত বা আমার অগোচরে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারবেনা। কারণ, তার মাঝে বাড়ায় বলা, মিথ্যা বলা, আমার সম্মান নস্ট করার প্রবণতা আছে। আমি এ ব্যাপারে তাকে অনেক বুঝিয়েও তাকে বিরত রাখতে পারিনি।
v. বৈধ ব্যাপারে শ্রদ্ধা আর আনুগত্যের প্রশ্নে স্ত্রী তার বাবা মা বা অন্য যেকারো ক্ষেত্রে আমাকেই প্রায়োরিটি দিক। যেমন: তার বাবা মা চায় সে ঘন ঘন বাবার বাড়ি যাক, কিন্তু আমি তা চাইনা। যদি উভয় পক্ষের চাওয়াই হালাল হয় তাহলে স্ত্রী যেন আমার কথাই শোনে।
৮। পরিশেষে আমার ও দোষ আছে। যেমন: আমি রাগ করি, খারাপ ব্যাবহার করি, আগে অনেক নামাজ পড়তাম কিন্তু এখন গাফেলতি এসে গেছে। আমি সিগারেট খাই। আমি তাকে ফিজিকালি, ইমোশনালি, ফিনান্সিয়ালি হ্যাপি রাখতে পারিনা। ইত্যাদি। তবে, বর্তমানে আমার ইনকাম নেই। একটাসময় ছিল। আমি যেভাবে চলি,যা খাই,স্ত্রীকেও সেভাবে রাখি,খাওয়াই। হাতে আলাদা টাকা দিতে পারিনা তবে প্রয়োজন পূরণ করি সাধ্যমত৷ যেমন: থাকা,খাওয়া, চিকিৎসা,প্রয়োজনীয় জামাকাপড় তাকে দিই। এর বাইরে কিছু পারিনা। কারণ, আমাদের ফিনান্সিয়াল অবস্থা।
অপরদিকে, আমার শারীরিক সমস্যা রয়েছে। সাইকিয়াট্রিস্ট এর ওষুধ খাওয়ার পর এসমস্যা হয়েছে। বিয়ের আগে বুঝতে পারিনি কারণ,আমি যিনায় লিপ্ত হইনি৷ বুঝতে পারলে বিয়েই করতাম না।
আমার এদোষগুলোর পেছনে আমার অসুস্থতা, কালো জাদু এগুলোর প্রভাব ও থাকতে পারে। আবার রাগারাগি,খারাপ আচরণ এগুলোর পেছনে তার ডমিনেন্স মনোভাব, ইগো, আমাকে রাগিয়ে দেয়া বা সেরকম পরিস্থিতি তৈরি করে দেয়া এগুলোর ও ভুমিকা থাকতে পারে। কোন কিছুই ইচ্ছা করে করিনা।
এমতাবিস্থায় কি আমি ইসলামি প্রদত্ত স্বামীর হক পাব না বা চাইতে পারব না?
৯। উপরোক্ত পরিস্থিতির আলোকে আমার স্ত্রীর কাকে মান্য করা জরুরি? আমাকে নাকি তার পরিবার কে? তার পরিবার কি জুলুম করছে আমাদের উপর?
উল্লেখ্য, আমি তালাক দিয়েও মুখে তা উঠিয়ে নিয়েছি। আর তার পরিবার আমাদের বাধা দিচ্ছে মিলিত হতে। বিভিন্ন কথায় আমি বর্তমানে, নিরাপত্তার আশংকা করছি। আমার স্ত্রী আমাকে নিজ মুখে বলেছে সে নাকি আমাকে ভালবাসে আর ইসলামিভাবে আমার সাথে থাকতে চায়।
১০. বিয়ের সময় কাবিন নামার ১৮ নাম্বার ঘরের ব্যাপারে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। জ্ঞান না থাকায় আমিও জানতে চাইনি। আমাকে জানানো হলে আমি অবশ্যই স্ত্রীকে তালাকের অধিকার দিতাম না। আমি এখনো জানিনা স্ত্রীকে তালাকের অধিকার দেয়া আছে কিনা।
এমতাবস্থায়, আমার স্ত্রী কি তালাক দিতে পারবে?
আবারো উল্লেখ করে নিচ্ছি, আমার মাঝে ওসিডি আছে। অনেকে তাকে ওয়াসওয়াসা রোগীর সাথে তুলনা করে। এদিক বিবেচনা নিয়ে ফতোয়া দিবেন আশা করি।