আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
100 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (21 points)
আসসালামু আলাইকুম হুজুর, হুজুর আমার একটা প্রশ্নের উত্তর জানা খুবই জরুরি। দয়া করে যদি উত্তরটা জানাতেন তাহলে খুবই উপকৃত হতাম। আমি এর আগে বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করিনি তাই এবার সুন্দর করে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।

আমার জানার বিষয়টি হচ্ছে,
বিয়ের আগে থেকেই একটা মেয়ে একটা ছেলের সাথে কথা বলতো। এরপর মেয়েটার অন্য একজনের সাথে বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরেও কিছুদিন স্বামীকে না জানিয়ে ওই ছেলের সাথে ফোনে কথা বলে মেয়েটা। ওই সময় মেয়েটা ওই ছেলের নাম্বারে মেসেজের মাধ্যমে কথা বলার চেষ্টা করে। আর ওই ছেলের বিষয়ে ডাইরিতে তার দুর্বলতার কথা লিখে রাখে। কিন্তু পরবর্তীতে ওই ছেলের সাথে আর যোগাযোগ রাখেনি। যোগাযোগ বন্ধ করার কয়েক মাস পরে হঠাৎ করে মেয়েটির স্বামী সেই ডাইরির লেখা গুলো আর মোবাইলের মেসেজ গুলো দেখে ফেলে। যদিও এগুলো আগের ছিল আর তার স্ত্রীর সেগুলো নষ্ট করে ফেলতে মনে ছিল না। এগুলো দেখে স্বামী খুবই কষ্ট পায় এবং উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তখন স্বামী তার স্ত্রীকে বলে যে, "যদি আর কখনো এরকম কিছু দেখি বা শুনি/ এরকম কিছু করো, তাহলে সেদিন বলবো যে, সম্পর্ক শেষ, আমার মুখে কিছু বলতে হবে না, এমনিতেই সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে।" স্ত্রী পরে আর কখনো কথা বলেনি ওই ছেলের সাথে বা চেষ্টাও করেনি কথা বলার।
কিন্তু একদিন ফেইসবুকে ঢুকে ওই ছেলের আইডিটা শুধুমাত্র দেখতে চেয়েছিলো(অন্য কোনো উদ্দেশ্যে না) তাই ফেইসবুকের সার্চ অপশন এ গিয়ে ওই ছেলের নামের শুধুমাত্র দুই অক্ষর লিখে আবার মুছে ফেলে, পুরো নাম লেখেনি আর সার্চ অপশনে ক্লিক ও করেনি কিছু। আর এটা স্বামী জানে ও না। এখন স্ত্রীর এইটুকু কাজের জন্য কি কোনো সমস্যা হয়েছে?
উল্লেখ্য স্বামী তার ওই কথাটি তালাকের নিয়ত করে বলেছে কিনা সেটাও নিশ্চিত না। যদি তালাকের নিয়ত না, শুধুমাত্র ভয় দেখানোর জন্য বা রাগে বলে তাহলে কি বিধান এক্ষেত্রে? আর নিয়ত করে বললে বা করণীয় কি? এই বিষয়ে যদি একটু আলাদা ভাবে বুঝিয়ে বলতেন।

আর স্ত্রীর এইটুকু কাজের জন্য কি কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা দয়া করে জানাবেন হুজুর। আর সমস্যা হয়ে থাকলে কি করণীয়? তারা কি আর সংসার করতে পারবে?
উত্তরটা দ্রুত জানালে খুবই উপকৃত হতাম হুজুর।

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ " .

কাসীর  ইবন  উবায়দ .......... ইবন  উমার  (রাঃ)  নবী  করীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হতে  বর্ণনা  করেছেন যেআল্লাহ্  তা‘আলার  নিকট  নিকৃষ্টতম  হালাল বস্তু  হল  তালাক। (আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০, যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।)

★★শরিয়তের পরিভাষায় অস্পষ্ট বাক্যে তালাক দেয়াটাকে বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷

সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)

ফাতওয়ার কিতাবে আছেঃ

وَالضَّرْبُ الثَّانِي: الْکِنَايَاتُ، وَلاَيَقَعُ بهَا الطلاَقُ إلاَّبِنِيَةٍ، اَوْ دَلالَةٍ حَالٍ. وَهِيَ عَلَی ضَرْبَيْنِ: مَنْها ثَلاَثَةُ اَلْفَاظٍ يَقَعُ بهَا الطّلاقُ الرَّجْعِيُّ،وَلاَيَقَعُ بهَا إِلا وَاحَدَةٌ، وَهِيَ قَوْلُهُ: اعْتَدِّي، وَاسْتَبْرِئِي رَحِمَکِ، وَاَنْتِ وَاحِدَةٌ، وَبَقِيَةُ الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً، وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ: اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ، وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ، وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ، وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ، وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي، وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ، وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ، وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ، وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.

احمد بن محمد البغدادي المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت

برهان الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية

সারমর্মঃ  ২য় প্রকার,কেনায়া বাক্য। এর দ্বারা তালাক হবেনা, কিন্তু তালাকের নিয়ত অথবা অবস্থার ভিত্তিতে তালাক হবে। কেনায়া বাক্য দুই প্রকার। এর মধ্যে তিনটি শব্দ এমন আছে, যার দ্বারা  তালাকে রজয়ী পতিত হয়।

সেগুলো হলোঃ- তুমি ইদ্দত পালন করো,তুমি তোমার গর্ভাশয় মুক্ত করো,তুমি এক। আর কেনায়া তালাকের অন্যান্য শব্দ (যেক্ষেত্রে তালাকের নিয়ত করলে বায়েন তালাক হয়।)

যেমনঃ- তুমি বিচ্ছিন্ন, তুমি সম্পর্ক মুক্ত,তুমি ভিন্ন,তুমি হারাম,তুমি শুণ্য,তুমি মুক্ত,তোমার রশি তোমার কাঁধে,তুমি তোমার পরিবারবর্গের সাথে মিলিত হও,আমি তোমাকে তোমার পরিবারের জন্য হেবা-দান করলাম,আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম,আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম,তোমার বিষয় তোমার হাতে,তুমি আযাদ,তুমি ঘোমটা পড়,তুমি ওড়না দ্বারা নিজেকে আবৃত করো,তুমি আড়াল হও (পর্দা করো), তুমি বিদূরিত হও, তুমি বের হয়ে যাও,তুমি চলে যাও,তুমি দন্ডায়মান হও (দাঁড়িয়ে যাও), তুমি অন্য স্বামী খুজো।

স্বামীর যদি এখানে নিয়ত না থাকে,তাহলে এ সব বাক্য দ্বারা তালাক হবেনা। তবে মুযাকারায়ে তালাকের ক্ষেত্রে হলে তালাক হবে। (কুদুরী ৩৬৩.৩৬৪. হেদায়া শরহুল বিদায়াহ ১/২৪১,শরহে বিকায়াহ ২/৭৭)

বিস্তারিত জানুনঃ- https://www.ifatwa.info/24050/

সম্পর্ক শেষ’ এমন শব্দ যা তালাক ও অন্য অর্থ বহন করে। শরিয়তের পরিভাষায় এজাতীয় শব্দে তালাক দেয়াটাকে বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷

সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে স্বামী যদি তালাকের নিয়তে “এরকম কিছু দেখি বা শুনি/ এরকম কিছু করো” দ্বারা যদি একথা বুঝায় যে, “যদি ঐছেলেকে কখনো ম্যাসেজ করো বা তাকে কেন্দ্র করে ডাইরী লেখ তাহলে সম্পর্ক শেষ” তাহলে ফেসবুকে ঐ ছেলের নাম সার্চ দেওয়ার দ্বারা তালাক পতিত হবে না। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (21 points)
আসসালামু আলাইকুম, হুজুর এক তালাক বায়েন পতিত হলে সেক্ষেত্রে আবার ও তার সাথে সংসার করার উপায় কি আছে? আর থাকলে কিভাবে? দয়া করে জানাবেন

by (21 points)
আর হুজুর নামটা তো সে সার্চ ও করেনি, নাম সার্চ দেয়ার আগেই সে কেটে দিয়েছিল। পুরো নাম ও উঠায়নি। তাহলে এতে কি সমস্যা হবে? হুজুর কেউ যদি কিছু একটা করার আগেই সেখান থেকে ফিরে আসে তাহলে ও কি সমস্যা? দয়া করে দয়া করে দয়া করে জানাবেন হুজুর।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...