আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
120 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (4 points)
আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্নটি একটু বড় হবে তাই দুঃখিত।

গত এক মাস আগে আমার একটি প্রস্তাব আসে। ছেলের ফ্যামিলি দেখতে আসলে ছেলে আমাকে বলে সে আমার মত নিকাবি মেয়েই চাচ্ছিল। সব ঠিকঠাক ছিল,শুধু বিয়ের ডেট ঠিক করা বাকি। এমন সময় ছেলের ফ্যামিলি আমার আব্বুকে ফোন দিয়ে জানায়,ছেলের ছোট ভাইয়ের সামনে আমাকে নিকাব ছাড়া মিশতে হবে,তার সাথে গল্প হাসাহাসি খাওয়াদাওয়া সব করতে হবে। আমার মত পর্দা নাকি ছেলে পছন্দ করেনা! ছেলের ভাইয়ের সাথে আমি পর্দা করবো শুনে ওদের ফ্যামিলিতে নাকি অশান্তি শুরু হয়েছে ইত্যাদি! এইসব শুনে আমার বাবা প্রচণ্ড রেগে যায়,যেহেতু সে আগে থেকেই আমার এমন পর্দা পছন্দ করতো না। বাবা আমাকে জানিয়ে দেয় যে আমাকে এইরকম এক্সট্রিম পর্দা ছাড়তে হবে এবং এখানেই বিয়ে করতে হবে। আমি 6মাস আগে অনার্স শেষ করে বাসায় এসেছি। আমার পরিবার সামর্থ্যবান ,তাই আমার বাইরে জব করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। এইসব নিয়ে পর্যন্ত বাবা রাগারাগি করে,কেনো জব করবো না? এইটা কোন ধরনের পর্দা? আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে,প্রচণ্ড ভেঙে পড়ি আমি। এরপর আমি ডিসিশন নেই যেভাবেই হোক এখানে বিয়ে করবো না,এভাবে আমি আগুনে ঝাঁপ দিতে পারিনা। উল্লেখ্য,আমি সব আত্মীয় গায়রে মাহরাম এর সামনে নিকাব শুরু করার পর থেকে বাবা প্রচণ্ড বিরক্ত এবং সবসময় মা কে এসব নিয়ে খুব মেন্টাল প্রেসার দিতো। আমি এসব কিছুই জানতাম না।
যাই হোক,এরপর আমি এখানে বিয়ে না করার বিষয়টা বাবাকে জানাই এবং সে প্রচন্ড রেগে যায় আমার উপর। বাবার সাথে জীবনে প্রথম আমি উচ্চস্বরে কথা বলি কারণ বাবা আমার সাথে প্রচণ্ড তর্ক এবং খারাপ ব্যবহার শুরু করে দিয়েছিলো আমার এই পর্দা নিয়ে। সে কিছুতেই আমার এই পর্দা মানতে নারাজ এবং আমাকে পর্দা শিথিল করে এখানেই বিয়ে করতে হবে। শেষে আমি কান্নাকাটি করে রুম থেকে চলে আসি আর বিয়ে না করার ডিসিশনে শক্ত থাকি। প্রথমে মা আমার পাশে না থাকলেও পরে মা,বোন,পরিবারের সবাই আমাকে সাপোর্ট করা শুরু করে এবং বাবা বাধ্য হয়ে এই বিয়ে ক্যান্সেল করে। কিন্তু তারপর থেকে বাবা পুরো চেঞ্জ হয়ে যায়,পরিবারের সবার সাথে  কথা বলা বন্ধ করে দেয় এবং অন্য রুমে থাকা শুরু করে। আমরা সবাই অনেক চেষ্টা করেছি বাবাকে বুঝানোর যে সে কোথায় ভুল করেছে,কিন্তু সে খুবই একরোখা মানুষ। সারাজীবন কেউ তার কোনো কথার বাইরে চলেনি,হোক সেটা ন্যায় বা অন্যায়। জীবনে প্রথম কেউ তার কথার বাইরে গেলো এবং এটা সে কিছুতেই মানতে পারেনা।
সব মিলিয়ে আমার বাড়ির পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছে। আমি প্রতিদিন পার করছি ডিপ্রেশনের মধ্য দিয়ে। আমার একবার মনে হচ্ছে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই,পর্দা করে কোনো জব খোঁজার চেষ্টা করি! আমি খুব অসহায় হয়ে গিয়েছি। আমাকে পরামর্শ দিন উস্তায! আমি কি এই বিয়ে না করে ভুল কিছু করেছি? তারা জানিয়ে দিয়েছিল আমার পর্দা তারা মানবে না এবং আমার বাবাকে অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলে বাবার আরো ব্রেনওয়াশ করে ফেলছে যে আমি বাড়াবাড়ি পর্দা করি! আমি কি এখানে বিয়ে করে আগুনে ঝাঁপ দিতাম না? দিনদিন আমার বাসায় থাকার মতো অবস্থা শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি কি করতে পারি? আমি খুবই অসহায় অবস্থায় আছি। আমাকে নাসিহা দিন!
আসলেই একটা মেয়ের পর্দা কেমন হওয়া দরকার? গায়রে মাহরাম এর সামনে কিভাবে চলা দরকার?  কিভাবে মেশা দরকার? আমি কি ভুল কিছু করছি?
by
আমার মার মত। এই প্রথম বোধহয় আমি আম্মুয সিদ্ধান্তের বাইরে গেলাম কো-ভার্সিটি ছেড়ে দিয়ে। এই অপমান কিছুতে যেন মানতে পারছেনা।শুকরিঢ়া করুন আপনাকে  বদদুআ করেনি। 
আপু আমার মনে হয় আপনার আব্বু কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ্। আল্লাহর জন্যই করেছেন অবশ্যই আল্লাহ্ আসমানি সাহায্য পাঠাবেন।

1 Answer

0 votes
by (714,440 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ 'আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায়' রয়েছে,
" ﻃﺎﻋﺔ ﺍﻟﻤﺨﻠﻮﻗﻴﻦ - ﻣﻤّﻦ ﺗﺠﺐ ﻃﺎﻋﺘﻬﻢ – ﻛﺎﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ، ﻭﺍﻟﺰّﻭﺝ ، ﻭﻭﻻﺓ ﺍﻷﻣﺮ : ﻓﺈﻥّ ﻭﺟﻮﺏ ﻃﺎﻋﺘﻬﻢ ﻣﻘﻴّﺪ ﺑﺄﻥ ﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ، ﺇﺫ ﻻ ﻃﺎﻋﺔ ﻟﻤﺨﻠﻮﻕ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﺨﺎﻟﻖ " ﺍﻧﺘﻬﻰ
যাদের আদেশ-নিষেধ এর অনুসরণ শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব।যেমন-মাতাপিতা,স্বামী,সরকারী বিধিনিষেধ,এর অনুসরণ ওয়াজিব।
এ হুকুম ব্যাপক হারে প্রযোজ্য হবে না বরং ঐ সময়-ই প্রযোজ্য হবে যখন তা গুনাহের কাজ হবে না।কেননা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না।(২৮/৩২৭)

মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা মূলত তিনটি মূলনীতির আলোকে হয়ে থাকে।
(১) তাদের আদেশ কোনো মুবাহ বিষয়ে হতে হবে।কোনো ওয়াজিব তরকের ব্যাপারে হতে পারবে না।এবং কোন হারাম কাজের জড়িত হওয়ার জন্যও হতে পারবে না।
(২)যে কাজের আদেশ তারা দিবেন,এতে তাদের ফায়দা থাকতে হবে,বা শরীয়তের পছন্দসই কাজ হতে হবে।
(৩)যে কাজের আদেশ দিচ্ছেন,তা তাদের সন্তানদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারবে না।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/1707

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/1722

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
পর্দার ব্যাপারে শীতিলতা প্রদর্শনের জন্য পিতার আদেশ নির্দেশকে মান্য করা আপনার জন্য জায়েয হবে না।সুতরাং আপনি সঠিক কাজই করেছেন।এজন্য বাবা নারাজ হলেও আপনার গোনাহ হবে না। দ্বীনের কাজ করতে গেলে, দ্বীন মেনে চলতে হলে আপনাকে অবশ্যই অনেক প্রকার বিপদাপদের সম্মুখীন হতে হবে। তখন ধর্য্য সহকারে পরিস্থিতির মুকাবেলা করতে হবে। এজন্য দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তা'আলা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করবেন।আমীন।চুম্মা আমীন।

আল্লাহ তা'আলা বলেন,
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنكَرِ وَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا أَصَابَكَ ۖ إِنَّ ذَٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ -
হে বৎস, নামায কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ।( সূরা লুকমান-১৭)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...