আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
80 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (18 points)

১। কিছু মানুষ প্রাণীদের গালি দেয় সেটা দেয়া কি হারাম আর বাকি সব ক্ষেত্রেই কি গালি দেয়া হারাম ? নিম্নে এই হাদিস এ জ্বরকে গালি মাকরূহ বলা হয়েছে  এটা কি সঠিক ?

জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) উম্মে সায়েব কিংবা উম্মে মুসাইয়িবের নিকট প্রবেশ ক’রে বললেন, হে উম্মে সায়েব কিংবা উম্মে মুসাইয়িব! তোমার কি হয়েছে যে, থরথর্ করে কাঁপছ?’’ সে বলল, ’জ্বর হয়েছে; আল্লাহ তাতে বরকত না দেন।’ (এ কথা শুনে) তিনি বললেন, ’’জ্বরকে গালি দিও না। জ্বর তো আদম সন্তানের পাপ মোচন করে; যেমন হাপর (ও ভাটি) লোহার ময়লা দূর করে ফেলে।

 

২। এই হাদিস এ আল্লাহ নিজেকে আমিই তো যুগ আর আমিই তো কাল বলেছেন এর দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ’’আদম-সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়; বলে, ’হায়রে দুর্ভাগা যুগ!’ সুতরাং তোমাদের কেউ যেন অবশ্যই না বলে, ’হায়রে দুর্ভাগা যুগ!’ কারণ, আমিই তো যুগ । তার রাত ও দিনকে আমিই আবর্তন করে থাকি। অতঃপর আমি যখন চাইব তখন উভয়কে নিশ্চল করে দেব।’’ 

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ’’আল্লাহ বলেন, আদম-সন্তান আমাকে কষ্ট দিয়ে থাকে; সে কাল-কে গালি দেয়। অথচ আমিই তো কাল । আমিই দিবা-রাত্রিকে আবর্তন করে থাকি।’’ 

1 Answer

0 votes
by (678,880 points)
জবাবঃ- 
بسم الله الرحمن الرحيم


(০১)
হ্যাঁ, এ হাদীস সহীহ।
জ্বরকে গালি দেয়া যাবেনা।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

عَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ دَخَلَ عَلَى أُمِّ السَّائِبِ أَو أُمِّ المُسَيِّبِ فَقَالَ مَا لَكِ يَا أُمَّ السَّائِبِ ـ أَوْ يَا أُمَّ المُسَيَّبِ ـ تُزَفْزِفِينَ ؟ قَالَتْ : الحُمَّى لاَ بَارَكَ اللهُ فِيهَا فَقَالَ لاَ تَسُبِّي الحُمَّى فَإِنَّهَا تُذْهِبُ خَطَايَا بَنِي آدَمَ كَمَا يُذْهِبُ الكِيْرُ خَبَثَ الحَدِيدِ رواه مسلم

জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) উম্মে সায়েব কিংবা উম্মে মুসাইয়িবের নিকট প্রবেশ ক’রে বললেন, হে উম্মে সায়েব কিংবা উম্মে মুসাইয়িব! তোমার কি হয়েছে যে, থরথর্ করে কাঁপছ?’’ সে বলল, ’জ্বর হয়েছে; আল্লাহ তাতে বরকত না দেন।’ (এ কথা শুনে) তিনি বললেন, ’’জ্বরকে গালি দিও না। জ্বর তো আদম সন্তানের পাপ মোচন করে; যেমন হাপর (ও ভাটি) লোহার ময়লা দূর করে ফেলে।
(মুসলিম শরীফ ৬৭৩৫)

(০২)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَحَدَّثَنَاهُ إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَابْنُ أَبِي عُمَرَ، - وَاللَّفْظُ لاِبْنِ أَبِي عُمَرَ - قَالَ إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا وَقَالَ ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنِ ابْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي، هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يُؤْذِينِي ابْنُ آدَمَ يَسُبُّ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ أُقَلِّبُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ " .

ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ বলেন, আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়, সে সময়কে গালি দেয়, অথচ আমিই সময়, রাত ও দিন আমিই বিবর্তিত করে থাকি।
(মুসলিম ৫৬৬৮)

وَحَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنِ ابْنِ، الْمُسَيَّبِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يُؤْذِينِي ابْنُ آدَمَ يَقُولُ يَا خَيْبَةَ الدَّهْرِ . فَلاَ يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ يَا خَيْبَةَ الدَّهْرِ . فَإِنِّي أَنَا الدَّهْرُ أُقَلِّبُ لَيْلَهُ وَنَهَارَهُ فَإِذَا شِئْتُ قَبَضْتُهُمَا "

আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহীয়ান-গরীয়ান আল্লাহ বলেনঃ আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়, সে বলে, হায় সময়ের ফের-দুর্ভাগ্য! (আমার সময় মন্দ)! তোমাদের কেউ যেন ’হায় সময়ের ফের’ না বলে। কেননা আমিই তো সময়; আর রাত ও দিন আমিই পরিবর্তিত করে থাকি; যখন আমি ইচ্ছা করি, তখন তাদের দু’টিকে সংকুচিত করে দেই।
(মুসলিম ৫৬৬৯)

হাদিসগুলির ব্যাখ্যা: ‘আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়’ এর অর্থ হচ্ছে সে আমার সম্পর্কে এমন মন্তব্য করে যা আমি অপছন্দ করি। আর সে আমার দিকে এমন বস্তুর সম্পর্ক স্থাপন করে যা আমার মর্যাদার পরিপন্থী। এ থেকে উদ্দেশ্য হলো যার দ্বারা এরূপ কাজ সংঘটিত হবে সে আল্লাহর বিরাগ ও অসন্তোষের শিকার হবে। আর আল্লাহ ও তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা অপছন্দ করে এবং যার প্রতি তারা সন্তুষ্ট নন এমন কাজ করা।

‘‘যামানাকে গালি দেয়’’ এর মর্ম হলো, যখন কারো মৃত্যু ঘটে অথবা কারো ধ্বংস হয় বা সম্পদ বিনষ্ট হয়, তখন যামানাকে বলে ‘‘যামানা ধ্বংস হোক’’ জাহিলী যুগের লোকেরা কোন বিপদ মুসীবাতে পতিত হলে এরূপ বলতো। তাদের মধ্যে কেউ তো এমন ছিল যে, তারা আল্লাহ-কে বিশ্বাস করত না, তারা দিবা-রাত্রির পরিবর্তন ছাড়া আর কিছুই বুঝতো না। তাদের বিশ্বাস ছিল প্রতি ৩৬ হাজার বছর পরে সকল কিছুর পুনরাবৃত্তি ঘটে।

আবার কেউ এমন ছিল যে, তারা স্রষ্টাকে স্বীকার করতো, তবে তারা কোন অপছন্দনীয় বিষয়কে আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করাকে অপছন্দ করতো। ফলে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে তা যামানা ও যুগের সাথে সম্পৃক্ত করত। এভাবেই তারা যামানাকে গালি দিতো এবং দোষারোপ করত। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলাই হলেন যামানার সৃষ্টিকারী, এর পরিবর্তনকারী। যামানার মধ্যে কোন কল্যাণ ও অকল্যাণের সৃষ্টি করেন মহান আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্টি। অতএব কোন আদম সন্তান যখন সেই যামানাকে গালি দেয় তখন প্রকৃতপক্ষে সে গালি তার ওপরই বর্তায় যিনি এর সৃষ্টিকর্তা। যার সমর্থন পাওয়া যায় মুসনাদ আহমাদে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত সহীহ হাদীসে। এতে বলা হয়েছে ‘‘তোমরা যামানাকে গালি দিবে না’’ কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন ‘‘আমিই যামানা। দিবা রাত্রি আমারই (সৃষ্টি)। আমিই তা নতুন করে নিয়ে আসি আবার তা পুরাতন করে দিই। এক বাদশাহ্ পরে আরেক বাদশাহ্ আবির্ভাব ঘটাই।’’

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
উক্ত হাদীস গুলিতে আল্লাহ নিজেকে আমিই তো যুগ আর আমিই তো কাল বলেছেন এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যেহেতু এগুলোর স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা নিজেই,তিনিই যেহেতু রাত দিনে বিবর্তন করে থাকেন,সুতরাং এগুলোকে গালি দিলে স্রষ্টার দিকেই মূলত গালি যায়।

তাই আল্লাহ তায়ালা রাত দিনকে গালি দেয়া হতে নিষেধ করেছেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...