আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
57 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (57 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ
আমরা জানি আল্লার ১অদ্বিতীয় তার কোনো শরীক নেই তিনি নিরাকার।তাহলে কাবাকে কেনো আল্লাহর ঘর বলা হয় কাবা'তে তো আল্লাহ থাকেন না।তাহলে আমরা বাইতুল্লাহ যেয়ে কার কাছে ক্ষমা চাই।আর হজ্জ বিষয়টি ও কেনো কাবাকে ঘিরে ই হয়ে থাকে।

1 Answer

0 votes
by (63,240 points)

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

পবিত্র কাবাঘরই হলো পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ইবাদতের জন্য নির্মিত ঘর। আল্লাহতায়ালা মানুষ সৃষ্টির আগে ফেরেশতা ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে একটি নির্দিষ্ট ইবাদতখানার জন্য আবেদন করলেন। আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের কাবারূপে সপ্তম আকাশে ‘বায়তুল মামুর’ নির্মাণ করেন। প্রথম সৃষ্টি মানুষ হজরত আদম (আ.) বায়তুল মামুরে ইবাদত করতেন। হজরত আদম (আ.)-কে পৃথিবীতে পাঠানো হলে তিনি আল্লাহর কাছে আসমানের বায়তুল মামুরের মতো জমিনেও একটি ঘরের আবেদন করেন। আল্লাহতায়ালা তার আবেদন কবুল করেন এবং ফেরেশতাদের বায়তুল মামুরের আকৃতি নিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। সুতরাং কাবাঘরই হলো পৃথিবীর সর্বপ্রথম গৃহ। এর আগে পৃথিবীতে কোনো ঘর নির্মিত হয়নি।

হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) পৃথিবীর সর্বপ্রথম মসজিদ কোনটি? তিনি বলেন, মসজিদুল হারাম। আমি বললাম, এর পর কোনটি? তিনি বলেন, মসজিদুল আকসা। আমি আবার বললাম, এই দুটি মসজিদ নির্মাণের ব্যবধান কত? তিনি বললেন চল্লিশ বছর (বোখারি : ৩১২৭)।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির আগে আল্লাহর আরশ পানির ওপর ছিল। ইমাম বগভী (রহ.) বলেন, জগৎ সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে আল্লাহতায়ালা এক ঘূর্ণিঝড় প্রেরণ করলে এই পানিকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়। এতে বর্তমান কাবাঘর যেখানে রয়েছে সেখানে গুম্বুজের মতো ফেনার সৃষ্টি হয়। আল্লাহতায়ালা মাটি ও পর্বতমালা সৃষ্টি করে একে স্থিতিদান করেন। পৃথিবীর স্থিতিদানকারী সর্বপ্রথম পাহাড়টি হলো আবু কুবাইস নামক পাহাড়। যা কাবাঘরের অতি নিকটেই অবস্থিত।

পবিত্র কাবাঘর পৃথিবীর সব মসজিদের প্রাণকেন্দ্র। এর রয়েছে অসাধারণ সম্মোহনি শক্তি। এর ভিত্তি হয়েছিল শিরকমুক্ত একত্ববাদের ওপর ইখলাস ও একনিষ্ঠতার উপকরণ দিয়ে। সেই আদিকাল থেকে এই ঘরটির মর্যাদা এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল যে, এখানে আপনজন হত্যাকারীকে পেলেও তাকে হত্যা করা হতো না। অপবিত্র অবস্থায় এই ঘরে প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, এতেকাফ বা অবস্থানকারী ও রুকু সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো (সুরা বাকারা : ১২৫)।

হজরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন, জাহেলিয়্যাহ যুগে কোনো ব্যক্তি যদি কাউকে হত্যা করত এবং এর পর সে তার গলায় এক টুকরো উলের কাপড় পেঁচিয়ে কাবাঘরে প্রবেশ করত, তাহলে মারাত্মক প্রাণঘাতী পিতা বা ভ্রাতার হত্যাকারীকে পেয়েও কেউ এখানে প্রতিশোধ নিত না। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ওই পবিত্র জায়গা ত্যাগ করত। এজন্য আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে ওর মধ্যে প্রবেশ করে, সে নিরাপত্তা লাভ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান : ৯৭)।

 আল্লাহতায়ালা অন্য আয়াতে বলেন, ‘অতএব তারা ইবাদত করুক এই গৃহের রবের, যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং ভয়ভীতি থেকে তাদের নিরাপদ করেছেন।’ (সুরা কুরাইশ : ৩-৪)।

কাবাঘর বিশ্বশান্তি ও স্থায়িত্বের কারণ:আল্লাহতায়ালা কাবাঘরকে বিশ্ববাসীর স্থিতিশীলতা ও শান্তির কারণ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, আল্লাহ সম্মানিত গৃহ কাবাকে মানুষের স্থীতিশীলতার কারণ করেছেন এবং সম্মানিত মাসগুলোকে। (সুরা মায়েদা : ৯৭)।

 হজরত আতা (রা.) বলেন, পবিত্র কাবা বিশ্বের স্তম্ভ, যতদিন এর দিকে মুখ করা হবে এবং হজ পালিত হবে, ততদিনই জগৎ প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যদি কোনো সময় খানায়ে কাবার সম্মান বিলুপ্ত হয়ে যায়, তখন মহাবিশ্বকেও বিলীন করে দেওয়া হবে। সমগ্র বিশ্ব মুসলিমের অন্তরে আল্লাহতায়ালা কাবা শরিফের মর্যাদাকে এমনভাবে স্থাপন করে দিয়েছেন, যার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য যাবতীয় ভাবাবেগ ও প্রবৃত্তিকে বর্জন করতেও মানুষ কুণ্ঠাবোধ করে না। যে একবার দেখে তার মনে ওই ঘরকে পুনরায় দেখার আগ্রহ তৈরি হয়। হজরত মুজাহিদ (রহ.) বলেন, কোনো মানুষ কাবাঘরের জেয়ারত করে তৃপ্ত হয় না, বরং প্রতিবার জেয়ারতের পর পুনরায় যাওয়ার বাসনা নিয়ে ফিরে আসে।

বায়তুল্লাহর হজ বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মেলন: বিশ্বের সব মুসলমান যে এক উম্মত, হজ মৌসুমে এর বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এখানে সমবেত হয়। হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর নির্মিত হলে আল্লাহতায়ালা আদেশ দেন, ‘বিশ্ববাসীকে এই ঘর তাওয়াফের জন্য আহ্বান জানাও।’ তিনি আরজ করলেন, হে প্রভু! এত জনমানবহীন প্রান্তর। আমার আহ্বান জগদ্বাসী কীভাবে শুনবে? আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমার দায়িত্ব কেবল ঘোষণা দেওয়া আর মানুষের কানে পৌঁছানো আমার কাজ। অতঃপর তিনি মাকামে ইবরাহিমের ওপর দাঁড়িয়ে বা আবু কুবাইস পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন- ওহে লোকজন তোমাদের পালনকর্তা নিজ গৃহ নির্মাণ করে তার জিয়ারত তোমাদের ওপর ফরজ করে দিয়েছেন, সুতরাং তোমরা এই ঘর প্রদক্ষিণ কর। পয়গাম্বরের এ আহ্বানে আল্লাহতায়ালা বিশ্বের সব কোণে পৌঁছে দেন। যারা এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে লাব্বাইক বলেছে, তারা এ ঘরের জেয়ারত লাভে ধন্য হবে।

বায়তুল্লাহ শরিফে সালাত আদায়ের ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, কাবাগৃহের ওপর প্রতিদিন ১২০টি রহমত নাজিল হয়। তাওয়াফকারীদের জন্য ৬০টি, নামাজ আদায়কারীদের জন্য ৪০টি এবং যারা কাবাঘরের দিকে তাকিয়ে থাকে, তাদের জন্য ২০টি রহমত বরাদ্দ থাকে (বায়হাকি)। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, কোনো বান্দা যদি নিষ্ঠার সঙ্গে মর্যাদাবান এই ঘরে এক রাকাত নামাজ আদায় করে, তাকে আল্লাহতায়ালা এক লাখ রাকাত নামাজের সমান সাওয়াব দান করবেন। (মুসনাদে আহমদ)। অপর হাদিসে রয়েছে, যে ব্যক্তি যথাযথভাবে সাতবার বায়তুল্লাহ তথা কাবাঘর তাওয়াফ করে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করে, তার একটি গোলাম আজাদ করার সওয়াব হয়। আল্লাহতায়ালা তাওয়াফের প্রতি কদমে একটি করে গোনাহ মাফ করেন, একটি নেকি দান করেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (তিরমিজি-৯৫৯)।

মসজিদ আল্লাহর নিকট দুনিয়ার সবচেয়ে প্রিয় স্থানআবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

أَحَبُّ الْبِلاَدِ إِلَى اللَّهِ مَسَاجِدُهَا وَأَبْغَضُ الْبِلاَدِ إِلَى اللَّهِ أَسْوَاقُهَا

আল্লাহ তাআলার জন্য নিকট সবচাইতে পছন্দনীয় স্থান হল মসজিদ এবং সবচাইতে অ পছন্দনীয় স্থান বাজার।”(সহিহ মুসলিম হা/1402)

 মসজিদ আল্লাহর ঘরহাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

عن أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ مَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ تَعَالَى يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلاَّ نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلاَئِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ ” .

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ” যখন কিছু মানুষ আল্লাহর কোনো ঘরে (মসজিদে) সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরে তা নিয়ে আলোচনা করে, তখন তাদের উপর প্রশান্তি বর্ষিত হয়, তাদেরকে রহমত ঢেকে নেয়, ফেরেশতাগণ তাদেরকে ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তাঁর নিকটস্থ ফেরেশতাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন।” (সহীহ মুসলিম হা/1455)

 দুনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মসজিদ হল কাবা শরীফ। আল্লাহ তাআলা এই কাবাকে ‘তাঁর ঘর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন: নিম্নোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَإِذۡ جَعَلۡنَا ٱلۡبَيۡتَ مَثَابَةٗ لِّلنَّاسِ وَأَمۡنٗا وَٱتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبۡرَٰهِـۧمَ مُصَلّٗىۖ وَعَهِدۡنَآ إِلَىٰٓ إِبۡرَٰهِـۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡعَٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ

যখন আমি কা’বা গৃহকে মানুষের জন্যে সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গা (মাকামে ইব্রাহীম) কে নামাযের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে তওয়াফ কারী, ইতিকাফ কারী ও রুকু-সেজদা কারীদের জন্য পবিত্র রাখ।” (সূরা বাকারা: ১২৫)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

আল্লাহর ঘর মানে এই না যে এটাতে আল্লাহ থাকেন “নাঊযুবিল্লাহ”। আল্লাহর ঘর মানে এই ঘরে গিয়ে আল্লাহকে ডাকা হয়, আল্লাহর ইবাদাত করা যায়। শুধু কা‘বা নয় বরং পৃথিবীর প্রতিটি মসজিদিই আল্লাহর ঘর। মসজিদের প্রতি গুরুত্ব এবং সম্মান বুঝাতে এগুলোকে “আল্লাহর ঘর” বলা হয়েছে। কেননা মসজিদ নির্মাণ করার উদ্দেশ্য হল, এক আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া ও ইস্তিগফার, কুরআন তিলাওয়াত, কুরআনের জ্ঞান শিক্ষা এবং কেবল তাঁকে সেজদা করার উদ্দেশ্যে।

সুতরাং মসজিদ সমূহ যেহেতু পৃথিবীতে আল্লাহর ঘর সেহেতু আল্লাহর ঘর সমূহের সম্মান রক্ষা করা, তা হেফাজত করা এবং তার হক আদায় করা আমাদের জন্য অপরিহার্য।

এবং আল্লাহ তায়ালার হুকুম যে, পুরো বিশ্ব থেকে যাদেরকে আল্লাহ সামার্থ্য দিয়েছেন তারা সেখানে গিয়ে তার বিধান হ্জ্জ ও উমরা পালন করবে। এটি একান্ত তারই নির্দেশ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...