আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
772 views
in পবিত্রতা (Purity) by (98 points)
১.সব কাপড় ধোয়ার সময় তিনবার পানি বদলিয়ে তিনবার সম্পুর্ন বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলতে হয়? নাকি একবার শুধু বিসমিল্লাহ বললেই হয়, আর তিনবার পানি বদলানোর প্রয়োজন হয় না?
২. প্রতিদিনের পরিধান করা কাপড় কি প্রতিদিন সাবান দিয়ে ধুতে হয়?!  পানি দিয়ে ধুলে সাধারণ ময়লা থাকলে তা যায় কিনা বুঝি না তো! আবার প্রতিদিন সাবান দিয়ে ধোঁয়াও কষ্টসাধ্য! কি করা যায় এক্ষেত্রে?!
৩.কোনো কাপড়ে যদি অজান্তে প্রসাবের ছিটেফোটা লাগে সেই কাপড় ধোয়ার বিধান কি? নরমাল পানি দিয়ে ধুলেই হয়? ওয়াশরুমে গেলে ছিটেফোটা লাগলো কিনা সন্দেহ হয়!

৪.প্রসাব-পায়খানা শেষে যে কাপড়/ন্যাকড়া দিয়ে পানি মোছা হয় সেটা প্রতিদিন ধোঁয়া জরুরী?  আর পানি দিয়ে ধুলেই হবে?

৫. সালোয়ারে অল্প সাদাস্রাব লাগলে সেটা পানি দিয়ে ধুলেই পবিত্র হয়?

1 Answer

0 votes
by (675,600 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 

,
প্রথমেই নাপাক কাপড় পবিত্র করার মূলনীতি জানুনঃ
 
শরীয়তের বিধান হলো চাদর কাপড়ে নাপাকি লাগলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং প্রত্যেকবার ভালো করে চাপ দিয়ে নিংড়াতে হবে। ভালো করে নিংড়িয়ে ধোয়ার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায় কিংবা দাগ থাকে তাতে কোনো দোষ নেই। এতেই চাদর কিংবা কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে।  (হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃষ্ঠা নং ১৬১, বেহেশতি জিওর ২/৭৭ )

وغير المرئية بغسلهاثلاثا والعصر كل مرة
অদৃশ্যমান নাপাক বস্তু তিন বার ধৌত করত্র হবে।এবং প্রত্যেকবার নিংড়াতে হবে।
(নুরুল ইযাহ ৫৬)

উল্লেখ্য, তিনবারের কথা বলা হয়, যাতে সন্দেহ না থাকে। অন্যথায় যদি প্রবাহমান পানি যেমন, নদী, পুকুরে বা টেপের পানিতে এত বেশি করে ধোয়া হয়, যাতে নাপাকি দূর হওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয়ে যায় তাহলে তা পাক হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তিনবার নিংড়িয়ে ধোয়া জরুরি নয়। (রদ্দুল মুহতার ১/৩৩৩ আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৭ শরহুল মুনইয়া ১৮৩) 
★★এটাই মূলনীতি।  

হাদিস শরিফে এসেছে,আসমা রাযি. থেকে বর্ণিত,
 أَنَّ النَّبِيَّ  ﷺ قَالَ -فِي دَمِ الْحَيْضِ يُصِيبُ الثَّوْبَ-: «تَحُتُّهُ، ثُمَّ تَقْرُصُهُ بِالْمَاءِ، ثُمَّ تَنْضَحُهُ، ثُمَّ تُصَلِّي فِيهِ
হায়িযের রক্ত কাপড়ে লেগে যাওয়া প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘পানি দিয়ে ঘষা দিবে তারপর পানি দ্বারা ভালোভাবে ধৌত করবে। অতঃপর সলাত আদায় করবে।’ (বুখারী ২২৭,৩০৭)

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ فَارِسٍ، حَدَّثَنَا أَبُو مَعْمَرٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، حَدَّثَتْنَا أُمُّ يُونُسَ بِنْتُ شَدَّادٍ، قَالَتْ حَدَّثَتْنِي حَمَاتِي أُمُّ جَحْدَرٍ الْعَامِرِيَّةُ، أَنَّهَا سَأَلَتْ عَائِشَةَ عَنْ دَمِ الْحَيْضِ يُصِيبُ الثَّوْبَ فَقَالَتْ : كُنْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم وَعَلَيْنَا شِعَارُنَا وَقَدْ أَلْقَيْنَا فَوْقَهُ كِسَاءً فَلَمَّا أَصْبَحَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَخَذَ الْكِسَاءَ فَلَبِسَهُ ثُمَّ خَرَجَ فَصَلَّى الْغَدَاةَ ثُمَّ جَلَسَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ هَذِهِ لُمْعَةٌ مِنْ دَمٍ . فَقَبَضَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى مَا يَلِيهَا فَبَعَثَ بِهَا إِلَىَّ مَصْرُورَةً فِي يَدِ الْغُلَامِ فَقَالَ " اغْسِلِي هَذِهِ وَأَجِفِّيهَا ثُمَّ أَرْسِلِي بِهَا إِلَىَّ " . فَدَعَوْتُ بِقَصْعَتِي فَغَسَلْتُهَا ثُمَّ أَجْفَفْتُهَا فَأَحَرْتُهَا إِلَيْهِ فَجَاءَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِنِصْفِ النَّهَارِ وَهِيَ عَلَيْهِ

উম্মু জাহদার আল-‘আমিরিয়্যাহ সূত্রে বর্ণিত। তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হায়িযের রক্ত কাপড়ে লেগে গেলে কি করতে হবে? ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, এক রাতে আমি (হায়িয অবস্থায়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে রাত যাপন করলাম। আমাদের গায়ে নিজ নিজ কাপড় ছিল। সেটির উপর আমরা একটি চাদরও জড়িয়ে নিলাম। ভোর হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ চাদরখানি পরিধান করে ফজরের সলাত আদায়ে চলে গেলেন। তিনি সলাত আদায় করার পর বসলেন। তখন এক লোক বলল, হে আল্লাহর রসূল! এতে রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাগ ও তার আশেপাশের অংশ হাতের মুঠোয় ধরে ঐ অবস্থায়ই এক গোলামের দ্বারা চাদরটি আমার কাছে পাঠিয়ে দিলেন এবং বললেনঃ এটা ধুয়ে ভাল করে চিপে নিয়ে আবার আমার নিকট পাঠিয়ে দাও। আমি এক পাত্র পানি নিয়ে তা ধুয়ে ভাল করে পানি নিংড়িয়ে (শুকিয়ে) তাঁর নিকট পাঠিয়ে দিলাম। দুপুরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ চাদরটি গায়ে দিয়ে (ঘরে) ফিরলেন।
(আবু দাউদ ৩৮৮)
,
নাপাক কাপড় পরে গোসল করার ক্ষেত্রে যদি বেশি পরিমাণ পানি কাপড়ের উপর ঢালা হয় এবং কাপড় ভালোভাবে কচলে ধোয়া হয় যার ফলে কাপড় থেকে নাপাকি দূর হওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয় তাহলে এর দ্বারা কাপড়টি পাক হয়ে যাবে। আর দৃশ্যমান কোনো নাপাকি থাকলে ঐ নাপাকি কচলে ধুয়ে দূর করে নিলে কাপড় পাক হয়ে যাবে। 
উল্লেখ্য, শরীর বা কাপড়ের কোনো অংশে নাপাকি লেগে থাকলে তা গোসলের আগেই পৃথকভাবে ধুয়ে পাক করে নেওয়া উচিত।
 
-আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৩৩; শরহুল মুনইয়া ১৮৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৮; আননাহরুল ফায়েক ১/১৫০
,
(০১)
প্রত্যেক কাজ শুরুর জন্য যেইভাবে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলার বিধান এসেছে,   
সেই হিসেবে কাপড় ধোয়ার সময় বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলা হয়।
এটি জরুরি বিধান নয়।
না বললেও কোনো সমস্যা নেই। 
,
আর এটি যেহেতু প্রত্যেক কাজের শুধু শুরুতে বলার কথা  এসেছে,তাই প্রশ্নে উল্লেখিত  সব কাপড় ধোয়ার সময় তিনবার পানি বদলিয়ে তিনবার সম্পুর্ন বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলতে হবেনা।
,
শুধু মাত্র ১ম কাপড় ধোয়ার সময় একবার বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলাই যথেষ্ট। 
,
(০২)
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী সাবান দিয়ে ধোয়া জরুরি নয়।
,
(০৩)         
নরমাল পানি দিয়ে ধুলেই হবে,তবে তিনবার ধুতে হবে।
এবং প্রতিবার নিংড়াতে হবে।
,
(০৪)
প্রসাব-পায়খানা শেষে যে কাপড়/ন্যাকড়া দিয়ে পানি মোছা হয় সেটাতে যদি নাপাকি লাগে,তাহলে তো সেটা ধুতে হবে।
কারন এটিই আবার পরে ব্যবহার করতে হয়।
তাই এতে নাপাক লেগে থাকলে পরবর্তীতে শরীরের পানি মোছার সময় শরীরও নাপাক হয়ে যাবে।
,
তবে যদি এতে নাপাকি না লাগে,বরং প্রসাব-পায়খানা শেষে একেবারে পাক হয়ে যদি সেটি দিয়ে মোছা হয়,তাহলে সেটি পাক।
এটি ধোয়া কোনো বাধ্যতামূলক নয়।
,
ধোয়া না ধোয়া সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা। 
চাইলে  নাও ধুয়ে দিতে পারেন।
 প্রতিদিন ধোঁয়া জরুরী নয়।
,
(০৫)
সালোয়ারে অল্প সাদাস্রাব লাগলে সেটা পানি দিয়ে ধুলেই পবিত্র হবে।
তবে তিনবার ধুয়ে নিতে হবে।
এবং প্রতিবার নিংড়াতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 149 views
...